নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

রেজা ঘটক

ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।

রেজা ঘটক › বিস্তারিত পোস্টঃ

মোদি\'র বাংলাদেশ সফরে যেসব বিষয় আমাদের গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে!!!

২৭ শে মে, ২০১৫ রাত ২:৫১

আগামী ৬ জুন দুই দিনের সফরে বাংলাদেশে আসছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। গত বছর মে মাসে ভারতের ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হবার পর এটাই হবে মোদি'র প্রথম বাংলাদেশ সফর। ক্ষমতায় আরোহনের পর থেকেই মোদি প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের উপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই এক বছরে প্রতিবেশী দেশ ভূটান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার ছাড়াও পূর্ব এশিয়ার সিঙ্গাপুর, জাপান, চীন, মাঙ্গোলিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া; দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ব্রাজিল; উত্তর আমেরিকার দেশ যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা; ইউরোপের দেশ ফ্রান্স ও জার্মানি এবং অস্ট্রেলিয়া সফর করেছেন। এর আগে গত বছর সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে এবং নেপালে অনুষ্ঠিত সার্ক শীর্ষ সম্মেলনের সময় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে মোদি'র সাক্ষাত হয়েছে। দু'বারই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তাঁকে বাংলাদেশে আসার আমন্ত্রণ জানান। আজ মঙ্গলবার বাংলাদেশ ও ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পৃথক পৃথক বিজ্ঞপ্তি দিয়ে আগামী ৬ ও ৭ জুন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি'র বাংলাদেশ সফরের তথ্য নিশ্চিত করেছে।

কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর এ সফরের সময় বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বেশ কয়েকটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সাক্ষরের প্রস্তুতি চলছে। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দীর্ঘ ৩০২ বছরের সীমান্ত জটিলতা দূর করার ঐতিহাসিক স্থল সীমান্ত চুক্তি সাক্ষর হবে। যা উভয় দেশের সম্পর্কে একটি নতুন মাইলফলক রচনা করবে। স্থল সীমান্ত চুক্তি'র আওতায় উভয় দেশের মধ্যে ১৬২টি ছিটমহল বিনিময় হবে। যার মাধ্যমে ছিটমহলবাসীরা পেতে যাচ্ছেন নাগরিক সুবিধা। এছাড়া এই চুক্তির আওতায় উভয় দেশের মধ্যে বিরোধপূর্ণ সীমান্ত এলাকার বিষয়েও স্থায়ী নিস্পত্তি হবে। উভয় দেশের দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতাকে আরো নিবিড় করতে কিছু নতুন প্রকল্প বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত হতে পারে। বিশেষ করে নেপাল ও ভূটানে যেভাবে ভারত বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে, এবার বাংলাদেশেও তারা একই ধরনের প্রকল্প শুরু করতে আগ্রহী। কুমুদিনী ট্রাস্টের একটি পানি প্রকল্পের মাধ্যমে হয়তো এর সূচনা হবে। মোদি'র এই সফরে বহুল আলোচিত তিস্তা চুক্তি সাক্ষর হবার সম্ভাবনাও রয়েছে।

এছাড়া উভয় দেশের মধ্যে স্বাক্ষরের জন্য উপকূলীয় জাহাজ চলাচল চুক্তি, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তি নবায়ন, অভ্যন্তরীণ নৌ প্রটোকল নবায়ন, সামুদ্রিক অর্থনীতি, জলবায়ু পরিবর্তন, দুর্যোগ মোকাবিলা, শিক্ষা, সংস্কৃতি, দুই দেশের মান নিয়ন্ত্রণ সংস্থার মধ্যে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) চূড়ান্ত করার প্রস্তুতি চলছে। নতুন একটি ঋণ চুক্তিও সাক্ষর হতে পারে। গত এপ্রিলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাত করে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বহুপক্ষীয় ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিষয়ক সচিব সুজাতা মেহতা দ্বিতীয় মেয়াদে সহজ শর্তে এক বিলিয়ন ডলার ঋণের প্রস্তাব করেছিলেন। যার ভিত্তিতে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) ১১টি উন্নয়ন প্রকল্পের একটি খসড়াও ইতোমধ্যে তৈরি করেছে। এছাড়া মোদি'র সফরের সময় বাংলাদেশে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়াতে ভারতকে একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্দিষ্ট করে দেওয়ার বিষয়েও আলোচনা হবে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই সফরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করবেন। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ওপর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বক্তৃতা দিবেন। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের জন্য ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপির নেতা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপেয়ীকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে দেওয়া স্বাধীনতা সম্মাননা গ্রহণ করবেন মোদি।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা, পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন ও শক্তিশালী করার যে নতুন কৌশল গ্রহন করেছেন, তা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে পরাস্পরিক সম্পর্ক আরো দৃঢ় করবে। ওয়ান ইলেভেনের পর গোটা বিশ্বে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন জোট এককভাবে যেভাবে বাজার অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করে আসছিল, তার বিপরীতে চীন ও ভারতের মধ্যে নতুন সম্পর্ক উন্নয়নের যে পূর্বাভাস দেখা যাচ্ছে, তা কেবল এশিয়া অঞ্চলেই বাজার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠিত করবে না, বরং গোটা বিশ্বে মার্কিন আধিপত্যকে নতুন চ্যালেঞ্জ জানাবে। দক্ষিণ-এশিয়ায় ভারতের একক বাজারের বিপরীতে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি দূরীকরণে ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নে ছোট দেশগুলোকে ভারতের গুরুত্ব দেওয়ায়, এই অঞ্চলে শান্তি ও পরাস্পরিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় নরেন্দ্র মোদি'র কূটনৈতিক তৎপরতা ভবিষ্যতে সুদূরপ্রসারী প্রভাব বিস্তারে সক্ষম হবে।

ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বিশাল বাণিজ্য ঘাটতি স্বত্ত্বেও ভৌগলিক অবস্থানগত সুবিধার কারণে বর্তমানে ভারত বাংলাদেশের কাছে অনেক ইস্যুতেই নমনীয় আচরণ করছে। বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব সীমান্তে ভারতের সাতটি প্রদেশের অবস্থান। ভারতের অন্যান্য এলাকার চেয়ে এই সাতটি প্রদেশ অর্থনৈতিক দিক দিয়ে অনেকটা পিছিয়ে। তাছাড়া সেখানে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের অনেকটাই নিয়ন্ত্রণের বাইরে। বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনকে দমাতে হলে এ্ই সাতটি প্রদেশে কেন্দ্রীয় সরকারের আরো নিয়ন্ত্রণ এখন জরুরী। জবরদস্তিমূলক নিন্ত্রয়ণ নীতি এই সাতটি প্রদেশকে ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারে, সেই আশংকায় নরেন্দ্র মোদি সেখানে উন্নয়ন কর্মসূচি জোড়দার করতে ইচ্ছুক। সেজন্য বাংলাদেশের ভেতর থেকে স্থল, নৌ ও আকাশ পথে সেখানে নানান প্রকল্প বাস্তবায়ন এখন ভারতের মুখ্য বিষয়।

নরেন্দ্র মোদি'র বাংলাদেশ সফরে ঐতিহাসিক স্থল সীমান্ত চুক্তি সাক্ষরের আড়ালে ভারতের প্রধান টার্গেট ট্রানজিট সুবিধা ও চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর ব্যবহারের সুবিধা। সীমান্ত বিরোধ মিটিয়ে ভারত ট্রানজিট ও বন্দর ইস্যুতে সুবিধা নিতে চায়। শীঘ্রই কলকাতা-ঢাকা-আগরতলা সরাসরি বাস ও ট্রেন সার্ভিস চালুর চিন্তা করছে ভারত। এছাড়া শিলং-তমাবিল-চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম-কুমিল্লা-আগরতলা, দার্জেলিং-পাটগ্রাম-ঢাকা-কলকাতা, সিকিম-বাংলাবান্দা-সোনামসজিদ-কলকাতা এমন অনেক রুটে পণ্য চলাচল ও যাত্রীবাহী বাস সার্ভিস চালুর পরিকল্পনা রয়েছে ভারতের। এছাড়া কলকাতা-যশোর-মংলা রুট দিয়ে মংলা বন্দর ব্যবহারের ইচ্ছাও ভারতের পরিকল্পনায় রয়েছে। আবার মংলা বন্দর থেকে ঢাকা-সিলেট-শিলং রুটে পণ্য চলাচল সুবিধার চিন্তাও ভারতের রয়েছে। যে কারণে মংলার কাছে রামপাল কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে ভারতের বিনিয়োগ এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পূর্বসংকেত।

ভারত যেমন বাংলাদেশ ভূ-খণ্ড ব্যবহার করে অনেকগুলো সমস্যা সমাধানে আগ্রহী, তার বিপরীতে বাংলাদেশকেও এখন কূটনৈতিক দূতিয়ালীতে অনেক বেশি দক্ষতার পরিচয় দিতে হবে। ভারতের প্রতিটি পাওনার বিপরীতে বাংলাদেশকেও এখন অনেক কিছু আদায় করার কৌশল গ্রহন করতে হবে। স্থল সীমান্ত বিরোধের আড়ালে সবগুলো রুটে ভারতের এককভাবে ট্রানজিট সুবিধা ভারতকে কিছুটা এগিয়ে রাখবে। চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্র বন্দর ব্যবহারে সুবিধা প্রদান এবং অনেকগুলো রুটে ভারতকে ট্রানজিট সুবিধা প্রদানের আগে অবশ্যই ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বিদ্যমান আন্তর্জাতিক সকল নদীর বিরোধ নিস্পত্তি হওয়া জরুরী। কেবল তিস্তা নদী নয়, গঙ্গা ও পদ্মায় পানির ন্যায্য হিস্যা বুঝে নিতে হবে বাংলাদেশকে। পাশাপাশি ফেনী, মুহুরী, সুরমা নদী থেকে ভারত উজানে থাকায় যে পরিমাণ সুবিধা নিচ্ছে তার বিপরীতে বাংলাদেশকে তার ন্যায্য হিস্যা বুঝে নিতে হবে।

তিস্তার উজানে ভারতের সিকিম রাজ্য সরকার একাধিক বাঁধ দিয়ে বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে। সিকিম সরকারের এসব প্রকল্প অব্যাহত থাকলে আগামীতে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের তিস্তা চুক্তি হলেও বাংলাদেশের তেমন লাভ হবে না। তাই কাগজে কলমে তিস্তা চুক্তি করে বাংলাদেশের কোনো লাভ হবে না। তিস্তার উজানে ভারতের চলমান প্রকল্পগুলোর সুদূরপ্রসারী নেগেটিভ ফলাফল ভবিষ্যতে বাংলাদেশকেই বহন করতে হবে। ওদিকে হিমালয় থেকে উৎপন্ন হওয়া ব্রহ্মপুত্রের উজানে বাঁধ দিয়ে চীন সরকার দুই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ভারত ও বাংলাদেশে বন্যা ও নদী ভাঙনের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হবে। উজানের যে কোনো আন্তর্জাতিক নদীতে ভারত ও চীনের যে কোনো প্রকল্প বাস্তবায়নে ভাটি অঞ্চলের বাংলাদেশের ক্ষয়ক্ষতি সবচেয়ে বেশি হবে। এসব বিষয় যথাযথভাবে বিবেচনায় না রাখলে, দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশে নদী অববাহিকার দু’পাশের জনগণের অপূরণীয় ক্ষতি হবে। উজানে পানি প্রত্যাহার করা হলে ভাটির অঞ্চলের জীববৈচিত্র্যও নষ্ট হবে।

এসব সমস্যা সমাধানের জন্য আন্তর্জাতিক নদীগুলোর ব্যবস্থাপনার জন্য নদীর উৎসস্থল থেকে সমুদ্র পর্যন্ত সব দেশের অংশগ্রহণে যৌথ নদী কমিশন গঠন করতে হবে। এটা না করলে প্রতিবেশী দেশগুলোর আস্থার সংকট বাড়তে থাকবে। আন্তর্জাতিক নদীতে কোনো একক দেশের ইচ্ছায় কোনো নদীর উজানে পানি প্রত্যাহার করলে সংশ্লিষ্ট এলাকার জনগণ সাময়িকভাবে উপকৃত হলেও ভাটির অঞ্চলের জনগণের সম্মতি ছাড়া এ ধরনের প্রকল্প যাতে কেউ নিতে না পারে, সে বিষয়ে বাংলাদেশকে আরো জোড়ালো ভূমিকা পালন করতে হবে। কারণ এ ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে উজান ও ভাটির অঞ্চলের জনগণের মধ্যকার আস্থার সংকটে যে ক্ষতি হবে, ভবিষ্যতে তা কোনোভাবেই পূরণ করা সম্ভব হবে না। বর্ষা মৌসুমে পানি ধরে রাখার জন্য যৌথ উদ্যোগে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া না হলে বাংলাদেশ ও ভারতের অভিন্ন নদীগুলো শুষ্ক মৌসুমের তিস্তার মত করুণ দশায় পরিনত হবে। বাংলাদেশকে এই বিষয়গুলো নিয়ে শুধু ভারত নয় চীনের সঙ্গেও জোড়ালো কূটনৈতিক তৎপরতা চালাতে হবে।

কারণ ভারত ও চীন উভয়েরই এখন বাংলাদেশের কক্সবাজারের অদূরে সোনাদিয়া গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের কাজটি পেতে চায়। একই প্রকল্প পেতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, সিঙ্গাপুর, বৃটেনসহ অনেকেই একপায়ে দাঁড়ানো। বাংলাদেশের উচিত হবে আন্তর্জাতিক নদীগুলোতে পানির ন্যায্য হিসাব কড়ায় গণ্ডায় বুঝে নিয়ে তবেই এসব বিষয়ে দক্ষ পদক্ষেপ নেওয়া। সেক্ষেত্রে সোনাদিয়া গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণে কোনো একটি দেশকে একক দায়িত্ব না দিয়ে একেক দেশকে একেক ধরনের দায়িত্ব দিয়ে বাংলাদেশের উচিত হবে আসল চাবিটি নিজেদের হাতে রাখা। কারণ, ভারত বাংলাদেশকে পানির হিসাব পুরোপুরি না বুঝিয়ে দিয়ে বিভিন্ন বাণিজ্য সুবিধা দেবার নামেই ট্রানজিটসহ অন্যান্য সুবিধা নেবার চেষ্টা করবে। এর আগে মায়ানমার ও ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশ সমুদ্র সীমা জয়ের পর তড়িঘড়ি করে যেভাবে সমুদ্র ও যৌথ নদীগুলোতে ভারতকে বেশি সুবিধা প্রদান করেছে, যা বাংলাদেশের জন্য এক ধরনের কূটনৈতিক পরাজয় ছিল। রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের নামে ভারত বাংলাদেশের সুন্দরবনের যে ক্ষতি করবে, তা বাংলাদেশ এখনো পুরোপুরি বুঝতে অক্ষম রয়ে গেছে। ইতোমধ্যে সুন্দরবন অঞ্চলে নৌ দুর্ঘটনার যে হিরিক পড়েছে, এটা সুন্দরবন ধ্বংসের নীলনকশারই প্রতিফলন। যে ঘটনায় প্রতিবারই বাংলাদেশের মানুষকে সরকার বারবার ভুল ব্যাখ্যা দিচ্ছে।

নেপাল ও ভুটান বাংলাদেশের সমুদ্র বন্দর ব্যবহারে আগ্রহী। বাংলাদেশের সমুদ্র বন্দর ব্যবহার করতে হলে দেশ দুটিকে পণ্য পরিবহণের ক্ষেত্রে ভারতের সহযোগিতা প্রয়োজন হবে। প্রয়োজনীয় অবকাঠামো তৈরির পর এ বিষয়ক জটিলতা দূর করতে তেমন সময় লাগার কথা নয়। ভারত, মিয়ানমার, নেপাল, ভুটানের সঙ্গে বাংলাদেশ যৌথ উদ্যোগে কতভাবে লাভবান হতে পারে তা আমাদের নিজস্ব উদ্যোগেই দ্রুত চিহ্নিত করা দরকার। বিভিন্ন বিষয়ে আমাদের দেশীয় বিশেষজ্ঞদের দিয়ে এখনই এসব অপরচুনিটিগুলো চিন্থিত করা খুবই প্রয়োজন। এমনিতে বিশ্বমন্দা দীর্ঘায়িত হওয়ার প্রেক্ষাপটেই ভারত প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করার উপর গুরুত্ব দিয়েছে। বাংলাদেশকেও সুদূরপ্রসারী অর্থনৈতিক দিকগুলো বিবেচনায় নিতে হবে। ভারত-বাংলাদেশ-মায়ানমার-চীন যে গ্র্যান্ড এশিয়ান হাইওয়ের কথা আলোচনা হচ্ছে, যা এশিয়া ও ইউরোপের সঙ্গে সড়ক পথে বাংলাদেশকে সরাসরি যুক্ত করবে, সেসব অপরচুনিটি নেবার আগে ভারত, মায়ানমার ও চীনের সঙ্গে আমাদের দ্বিপাক্ষিক ইস্যুগুলো মেটানোর উপর সবার আগে গুরুত্ব দিতে হবে।

ভারতকে যে কোনো ধরনের সুবিধা প্রদানের আগে তার বিপরীতে বাংলাদেশের ন্যায্য পাওনা কড়ায় গণ্ডায় বুঝে নিতে হবে। গঙ্গা পানি বণ্টন চুক্তি এখনো ভারত পুরোপুরি মেনে চলে না। তিস্তার উজানের বিষয়গুলোর সমাধান না বুঝে দায়সারা গোছের নামকাওয়াস্তে তিস্তা চুক্তি করা হলেও তা বাংলাদেশের জন্য কোনো সুফল বয়ে আনবে না। মনে রাখতে হবে, সমুদ্রে ভারতীয় নৌবাহিনীকে অবাধ চলাচলের সুবিধা দিতে গিয়ে ইতোমধ্যে আমরা ভারতের কাছ থেকে সুন্দরবন ধ্বংসের রামপাল কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প গ্রহন করেছি। পাশাপাশি রায়মঙ্গল ও হাড়িয়াভাঙ্গা নদীর উপর বাংলাদেশের একক আধিপত্য ভারতের কাছে বিসর্জন দিয়েছি। মোদি'র বাংলাদেশ সফরে স্থল সীমান্ত চুক্তির আড়ালে তেমন কোনো বিসর্জনের পাল্লা যেনো ভারী না হয়, সেদিকেই বাংলাদেশকে সজাগ থাকতে হবে। ট্রানজিট ও সমুদ্রবন্দর যেমন বাংলাদেশের পক্ষের ঘুটি, তেমনি তিস্তা, গঙ্গা, ফেনী, মুহুরী, সুরমা নদীগুলো ভারতের পক্ষের ঘুটি। কূটনৈতিক দক্ষতা ও হিসাব নিকাশে একটু ভুল করলেই মূলা ঝুলিয়ে ভারত তাদের সকল সুবিধা আদায় করে নিয়ে যাবে। কারণ, ভারত ইতোমধ্যে বাংলাদেশের সামনে যে এক বিলিয়ন ডলার ঋণের মূলা ঝুলিয়েছে, সেই আহলাদে যেনো সরকার বাহাদুর অন্যান্য বিদ্যমান ইস্যুতে চোখে টিনের চশমা এটে চুপ করে না থাকে, সে বিষয়ে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি'র আসন্ন সফর বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কূটনৈতিক হিসাব নিকাশে এক চুলও ছাড় দিলে তা হবে ভবিষ্যতে বাংলাদেশকে ভারতের একটি প্রদেশে পরিনত হওয়ার চূড়ান্ত নীলনকশা। তাই সরকার বাহাদুরকে প্রতিটি চালই বুঝে শুনে হিসাব কষে দিতে হবে। এখানে আরেকটি জিনিস পরিস্কারভাবে মনে রাখতে হবে যে, মোদি বাংলাদেশে আসছেন গোটা ভারতের সকল দলের যৌথ মতামত ও সিদ্ধান্তকে পকেটে পুরে। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার এখনো কোনো ইস্যুতেই দেশের অন্যান্য বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কোনো আলোচনাই করেনি। ভারতের সঙ্গে যে কোনো ইস্যুতে চুক্তি করার আগে সরকারের উচিত এসব বিষয় নিয়ে মোদি'র পথ অনুসরণ করেই সকল রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে নেওয়া। নইলে ভারতের সঙ্গে যে কোনো চুক্তিতে বাংলাদেশের যে কোনো ধরনের চুল পরিমাণ পরাজয়ের দায়ও কিন্তু বর্তমান সরকারকেই বহন করতে হবে। অতএব সাধু সাবধান।

.................................
২৭ মে ২০১৫
ঢাকা

মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে মে, ২০১৫ রাত ১২:৫২

তৌফিক মাসুদ বলেছেন: আসলে যতই যে যা বলুক না কেন। বড় দেশগুলোর ব্যপারে আমার ধারণা একই রকম। এরা পাশের দেশগুলোকে সব সময় শাসন করতে চায়। নিজেদের ইচ্ছে মত ব্যবহার করতে চায়। শুধু আমরাই যে ভারত দ্বারা নির্যাতনের শিকার তা নয়। যুক্ত্রাষ্ট্রের পাশের দেশ মেক্সিকো, চীনের পাশের তাইওয়ান, ভিয়েতনাম, হংকং, রাশিয়ার পাশের দেশগুলো, সৌদিআরব এর পাশের দেশগুলোও কিন্তু একই ভাবে নির্যাতনের শিকার। আমরা যদি নিজেদের মালোয়েশিয়া, সিংগাপুর না বানাতে পারি তাহলে অষ্ট্রেলিয়ার মত বোয়াল মাছদের সাথে পেরে উঠব না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.