নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।
দৈনিক প্রথম আলো'র অধীনস্থ সৃজনশীল প্রকাশনা সংস্থা প্রথমা প্রকাশন ঘোষিত এ বছরের বহুল আলোচিত-সমালোচিত-বিতর্কিত ‘জীবনানন্দ দাশ পুরস্কার ১৪২১’ বাতিল করেছে প্রকাশনা সংস্থাটি। ১৬ জুন প্রথম আলোতে প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে প্রথমা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সাইয়েদ জামিলের ‘কায়কাউসের ছেলে’ শীর্ষক পাণ্ডুলিপির জন্য জানুয়ারি মাসে এ পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছিল। পুরস্কারের শর্ত ছিল, পাণ্ডুলিপিটি প্রথমা থেকে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হবে। কিন্তু বই হিসেবে বেরোনোর আগেই একই নামে লেখকের একটি পাণ্ডুলিপি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়। তাতে প্রথমায় জমা দেওয়া পাণ্ডুলিপির অনেকগুলো কবিতা ছিল। বই প্রকাশের আগেই পাণ্ডুলিপিটির উল্লেখযোগ্য অংশ প্রকাশিত হয়ে যাওয়ায় এ পুরস্কার বাতিল করা হয়েছে। একই বিজ্ঞপ্তিতে প্রথমা শিগগিরই ‘জীবনানন্দ দাশ পুরস্কার ১৪২২’-এর জন্য নতুন করে পাণ্ডুলিপি আহ্বান করার কথা জানায়।
চলতি বছর ২৮ জানুয়ারি প্রথমা ঘোষিত ‘জীবনানন্দ দাশ পুরস্কার ১৪২১’ নিয়ে আমি একটা নিবন্ধ লিখেছিলাম। যেখানে আমি বলেছিলাম প্রথম আলো বাংলাদেশে প্রবর্তিত একটি পুরস্কারকে দিনদুপুরে ছিনতাই করেছে। এর আগে 'ধানসিড়ি সাহিত্য সৈকত', 'ছোটকাগজ দূর্বা' ও 'আড্ডা ধানসিড়ি' নামে তিনটি সংস্থা যৌথভাবে ২০০৭ সাল থেকে 'কবি জীবনানন্দ দাশ পুরস্কার' দিয়ে আসছে। প্রতিবছর জীবনানন্দ দাশের জন্মমাস ফেব্রুয়ারিতে পুরষ্কারপ্রাপ্ত সাহিত্যিকদের নাম ঘোষণা করে থাকে আয়োজকরা। আর পুরস্কারপ্রাপ্তদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয় জীবনানন্দ দাশের মহাপ্রয়ানের মাস অক্টোবর মাসে। সাধারণত দুইটি ক্যাটাগরিতে তারা পুরস্কার প্রদান করেন। একটি কবিতায় অন্যটি গদ্যসাহিত্যে। প্রথম আলো'র সিস্টার কনসার্ন প্রথমা প্রকাশনা একই নামে 'জীবনানন্দ দাশ পুরস্কার' নামে যে পুরস্কার প্রবর্তনের ঘোষণা দিয়েছিল, সেটি জীবনানন্দ দাশ গবেষক মার্কিন প্রবাসী কবি ক্লিনটন বি সিলি'র অর্থায়নে প্রতিষ্ঠিত। একই নামে দুই পুরস্কারের মোটা দাগে পার্থক্য হল, আগের আয়োজকরা দিতেন প্রকাশিত বইয়ের কবি ও লেখককে। কিন্তু প্রথমা দেবে প্রকাশিতব্য পাণ্ডুলিপি'র উপর। আর সেটি বই আকারে প্রকাশ করবে প্রথমা।
সাইয়েদ জামিলের ‘কায়কাউসের ছেলে’ শীর্ষক পাণ্ডুলিপির জন্য ঘোষিত ওই পুরস্কার এখন বাতিল করে প্রথম আলো তথা প্রথমার আরেকবার নৈতিক পরাজয় হয়েছে। আগেরবার একই নামে পুরস্কার প্রবর্তনের ঘোষণা দিয়ে প্রথম আলো একটি পুরস্কার ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটিয়েছিল। এবার সেই পুরস্কার বাতিল করে তারা কবি সাইয়েদ জামিলকে চরম ভাবে অপমান করেছেন। প্রথমা ঘোষিত ওই পুরস্কারের শর্তে যদি থাকে পুরস্কারপ্রাপ্ত পাণ্ডুলিপিটি প্রথমা থেকে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হবে। আর সেখানে যদি এমন শর্ত না থাকে যে, ওই পাণ্ডুলিপি অন্য কোনো মাধ্যম বা কোথাও প্রকাশ করা যাবে না। এমন কি অনলাইন বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা কোনো লিটল ম্যাগাজিন বা কোনো দৈনিক পত্রিকার সাময়িকী বা কোনো প্রিন্ট মাধ্যম বা অন্য কোনো প্রকাশকের মাধ্যমে এটি বই আকারে আংশিক বা সম্পূর্ণ প্রকাশ করা যাবে না মর্মে সুনির্দিষ্ট শর্ত যদি সেখানে না থাকে, তাহলে কবি সাইয়েদ জামিল এখন প্রথমার বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করতে পারেন।
আর যদি সত্যি সত্যি ওই পান্ডুলিপি কোথাও প্রকাশ না করার এমন সুনির্দিষ্ট শর্তাবলী পুরস্কার প্রাপ্তির নিয়মাবলীতে থেকে থাকে, তাহলে কবি সাইয়েদ জামিল প্রথমা'র সঙ্গে এক ধরনের চুক্তি ভঙ্গ করেছেন। যে কারণে যৌক্তিকভাবেই প্রথমা বহুল আলোচিত-সমালোচিত-বিতর্কত ওই পুরস্কার বাতিল করার এখতিয়ার রাখে। কিন্তু তা মোটেও প্রবর্তিত একটি পুরস্কার ছিনতায়ের প্রবঞ্চনা থেকে প্রথমাকে দায়মুক্তি প্রদান করে না। বরং প্রথমা প্রবর্তিত ওই পুরস্কার নিয়ে এতো আলোচনা-সমালোচনা ও বিতর্কের পর যখন সেই পুরস্কারটি বাতিল ঘোষণা করার মত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তখন বুঝতে হবে প্রথমা এই বিড়ম্বনার কাঁটাটি না পারছে গিলতে, না পারছে বমি করতে। তাই এক ধরনের মধ্যম পন্থা হিসেবে পুরস্কার বাতিলের পথ অবলম্বন করেছে।
প্রথমত প্রথমা একটি প্রবর্তিত পুরস্কার ছিনতাই করে একটি গর্হিত কাজ করেছে। দ্বিতীয়বার সেটি বাতিল করে পুরস্কারপ্রাপ্ত কবিকে অপমানপূর্বক আরেকবার চরম নৈতিক হীনতার পরিচয় দিয়েছে। এখানে পুরস্কার বাতিলের ঘোষণায় প্রথমা যে বিষয়টি উল্লেখ করেনি সেটি হল, কবি সাইয়েদ জামিলের বহুল আলোচিত-সমালোচিত ও বিতর্কিত সেই কবিতাগুলোর শিল্পমান বা কাব্যিক গুণাগুণ নিয়ে প্রথমা কোনো মন্তব্য করেনি। তার মানে কবি সাইয়েদ জামিলের কবিতাগুলো প্রথমার বিচারে পুরস্কার প্রাপ্তের যোগ্য। কিন্তু কবি চুক্তির শর্তাবলী ভঙ্গ করায় প্রথমা এখন এই পুরস্কার বাতিল করল।
নাকি এই পুরস্কার নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনার প্রেক্ষিতে মিস্টার ক্লিনটন বি সিলি পুরস্কারের অর্থ ছাড়ের বিষয়টি স্থগিত করে রেখেছেন। অথবা জীবনানন্দ দাশ পুরস্কার এখন প্রথম আলো কর্তৃপক্ষের হাতে নেই। মিস্টার ক্লিনটন বি সিলি প্রথমাকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশে অন্য কোনো প্লাটফরম হয়তো খুঁজে পেয়েছেন। কারণ একই নামে একটি পুরস্কার বাংলাদেশে চালু আছে শোনার পর স্বাভাবিক ভাবেই মিস্টার ক্লিনটন বি সিলি'র মনে প্রশ্ন জাগবে বতর্কিত বিয়ষে নতুন আরেকটি পুরস্কার প্রদানের কোনো মানে আছে কিনা? কিংম্বা এই প্রকল্পে আর অর্থ ছাড়া যৌক্তিক হবে কিনা? এসব ভেবে ঘটনার অন্তরালের খুটিনাটি ব্যাপার গুলো জানার পরই হয়তো মিস্টার ক্লিনটন বি সিলি প্রথম আলো থেকে মুখ গুটিয়ে নিয়েছেন।
আরেকটি মজার ব্যাপার হল, যদি কবি সাইয়েদ জামিল সত্যি সত্যি চুক্তির কোনো শর্ত ভঙ্গ না করে থাকেন, তাহলে তিনি এখন প্রথমা'র বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করতে পারেন। তবে তিনি মামলা করুন আর না করুন, প্রথমা প্রবর্তিত জীবনানন্দ দাশ পুরস্কার ১৪২১ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যম ও ঢাকার সাহিত্যপাড়ায় বারবার আলোচিত হওয়ায়, ব্যক্তিগত ভাবে কবি সাইয়েদ জামিলের কবিতার বিশাল একটি পরিচিতি কিন্তু ঘটেছে। সেদিক দিয়ে তিনি বিনা ইনভেস্টে অনেক লাভবান হয়েছেন।
বাংলাদেশের সাহিত্যপাড়ায় পুরস্কার নিয়ে যে ধরনের ঘটনা ঘটছে, তাতে নতুন আরেকটি সন্দেহ কারো মনে এখন উকি দিতে পারে। সেটি হল, সত্যি যদি মিস্টার ক্লিনটন বি সিলি পুরস্কারের অর্থ দেবার বিষয়টি প্রথম আলো কর্তৃপক্ষকে না করে দেন, তাহলে প্রথমা আবারো হয়তো ‘জীবনানন্দ দাশ পুরস্কার ১৪২২’-এর জন্য নতুন করে পাণ্ডুলিপি আহ্বান করার মাধ্যমে বিষয়টির অর্থপ্রাপ্তির সূত্রটি এড়িয়ে গিয়ে, নিজেদের অর্থায়নে এটি চালু রাখতে পারে। এবং কয়েক বছর এটি চালু রেখে বিতর্ক এড়ানোর নতুন কৌশল অবলম্বন করতে পারে।
মোদ্দাকথা, প্রথমা এই পুরস্কার প্রবর্তনের কথা, পুরস্কার ঘোষণার কথা এবং দীর্ঘ বিরতিতে সেই পুরস্কার বাতিল ঘোষণার মাধ্যমে বাংলাদেশের সাহিত্যপাড়ার জন্য যে দুঃসংবাদটি নিয়ে আসল, সেটি হল এই পুরস্কার প্রবর্তনে প্রথমা'র প্রধান উদ্দেশ্য কোনোভাবেই বাংলাদেশের সাহিত্যের পৃষ্ঠপোষকতা ছিল না। বরং পুরস্কারের নামে সেখান থেকে প্রথমা'র ব্যবসায়িক মুনাফা লাভের কৌশলই ছিল প্রধান টার্গেট। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা ও বিতর্ক ওঠায়, এখন ব্যবসায়িক মুনাফা না হওয়ার সম্ভাবনা দেখেই প্রথমা এই পুরস্কার বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যা বাংলাদেশের সাহিত্যের জন্য একটি অশনিসংকেত।
তাহলে এখন প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক যে, বাংলাদেশের যে কোনো সাহিত্য পুরস্কার ব্যাপারটিকে প্রথম আলো কি স্রেফ ব্যবসায়িক লাভ লোকসানের মাপকাঠিতে যাচাই বাছাই করে থাকে? বাংলাদেশের সাহিত্য পুরস্কারগুলোর কি সত্যি সত্যি অন্য কোনো মর্যাদা আসলে নেই? বাংলাদেশের সাহিত্যপাড়ার জন্য পুরস্কার ব্যাপারটিকে তাহলে কি প্রথমা বা প্রথম আলো এই লাভক্ষতির মাপকাঠিতে যাচাই বাছাই করে অভ্যস্থ? সবচেয়ে বড় যে প্রশ্নটি আসে সেটি হল, নৈতিক প্রশ্ন। তাহলে একজন কবি বা সাহিত্যিককে পুরস্কার দেওয়ার পেছনে কি একটি প্রকাশনা সংস্থা কেবল ব্যবসায়িক লাভ লোকসান নিয়ে দর কষাকষি করে? পুরস্কার টুরস্কার সব লোক দেখানো। ব্যবসায়িক লাভ লোকসানই আসল কথা!
সবচেয়ে বড় কথা, ভীনদেশি একজন জীবনানন্দ দাশ ভক্ত ক্লিনটন বি সিলি কবি'র নামে একটি পুরস্কার প্রবর্তন করে বাংলা সাহিত্যের যে সেবা করতে চেয়েছিলেন, সেটিকে প্রথম আলো কর্তৃপক্ষ বা প্রথমা প্রকাশনা সম্পূর্ণ ব্যবসায়িক লাভ লোকসান হিসেবে নিয়েছে। বাংলা সাহিত্যের পৃষ্ঠপোষকতার আড়ালে যাদের আসল উদ্দেশ্য চরম ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গি। যা বাংলাদেশের সাহিত্যপাড়ায় হয়তো ভবিষ্যতেও তুমুল আলোচনা-সমালোচনা ও বিতর্কের সূত্রপাত ঘটাবে। যা বাংলা সাহিত্যের জন্য মোটেও কোনো সুসংবাদ নয়।
তবে কবি সাইয়েদ জামিলের ‘কায়কাউসের ছেলে’-এর কবিতাগুলো যে প্রতিবারই এই আলোচনায় নতুন করে ঘি ঢালবে, সে কথা সাহিত্যপাড়ার পুরাতন-নতুন-উদীয়মান কবি-লেখক মাত্রই স্বীকার করতে বাধ্য হবেন। নতুন করে এখন প্রশ্ন উঠতে পারে, প্রথম আলো জীবনানন্দ দাশ পুরস্কার ১৪২১ বাতিল করে একজন সাম্প্রদায়িক ও অশ্লীল কবির ভার কাঁধ থেকে নামিয়ে সংবাদব্যবসা রক্ষা করলেও এই কবিকে পুরস্কারযোগ্য বলে যেসব বিচারক সেদিন রায় ঘোষণা দিয়েছিলেন, তাদের বেলায় কী হবে? প্রথম আলো কর্তৃপক্ষ বা প্রথমা কি এখন সেই বিচারকদেরও একদফা দণ্ড দিয়ে নিজেদের পত্রিকায় তাদের নাম ছাপিয়ে দেবে?
...........................
১৭ জুন ২০১৫
ঢাকা
২| ১৭ ই জুন, ২০১৫ দুপুর ১২:৫৪
চন্দ্রের অর্ধ... বলেছেন: দুনিয়ার সবকিছুতেই এখন ব্যবসা ঢুকে গেছে। ওরা ছলাকলা করলে দোষ কি? চুপ করেই থাকি।
৩| ১৮ ই জুন, ২০১৫ রাত ১:৪১
আহমাদ ইবনে আরিফ বলেছেন: সর্দার সদা ব্যবসায়িক। ইহা আর নতুন কি।
মতিচুর বলে কথা
৪| ২০ শে জুন, ২০১৫ দুপুর ২:২০
ডি মুন বলেছেন: ব্লগার সাদরিলের মন্তব্যের সাথে পুরোপুরি একমত।
বিতর্ক সৃষ্টির মাধ্যমে নিজেদের প্রচারণার ব্যাপারটিই কাজ করেছে বলে আমিও মনে করি। প্রথম আলোর ব্যবসায়িক মনোভাব একেবারে সুস্পষ্ট।
©somewhere in net ltd.
১| ১৭ ই জুন, ২০১৫ সকাল ৯:৩৯
সাদরিল বলেছেন: ধন্যবাদ বিষয়টি তুলে ধরার জন্য। আমার মনে হয় তারা বিতর্ক তৈরীর মাধ্যমে নিজেদের প্রচারণা চেয়েছিলো। সাইদ জামিলের কবিতার মতো বড় বিতর্ক তারা আর কোথায় পেতো! এখন প্রচারণা সম্পন্ন, তাই সাইদ জামিল কাটা ফেলে দিয়েছে। এরপর থেকে যখনই এ পুরস্কার ঘোষনা হবে লোকজন চোখ রাখবে কে পাচ্ছে। এটি হয়তো তারা চেয়েছিলো।