নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।
সবচেয়ে বড় কথা, এই ভারতীয় দলটি আত্ম অহংকারে প্রথম আওয়াজ তুলেছিল, তারকা খেলোয়াড়রা বাংলাদেশে আসবে না। ধোনি, কোহলি, রোহিতরা ছুটি কাটাবে। ভারতীয় দ্বিতীয় একাদশ পাঠিয়ে বাংলাদেশকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্ল করবে। আমার এখনো মনে আছে, লিটল মাস্টার সুনীল গাভাস্কার যেদিন বললেন, এই বাংলাদেশ পাকিস্তানকে বাংলাওয়াশ করেছে। বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনাল খেলেছে। ওদের মোটেও হালকাভাবে নেওয়া উচিত হবে না ভারতের। সেদিনই কোহলিদের অবকাশযাপন বাতিল হল।
তারপর কোহলিরা এমন ভাব ধরল, খেলতে আসছি সেই কত। আসব, খেলব, জিতব, চলে যাব। কিন্তু বিশ্বের দুই নাম্বার দলটির সেই অহংকার আজ কোথায়? ভারতীয় সাংবাদিক গৌতম ভট্টাচার্য বলেছেন, 'বাংলাদেশ দল ওয়ানডে ক্রিকেটে একটি ভালো টিম হয়ে উঠছে। এই টিমকে যারা যারা উপেক্ষা করবে, যারা যারা আত্মতুষ্টিতে ভুগবে, তাদের আজকের ভারতের মতো বুড়িগঙ্গায় যেয়ে পড়তে হবে।' প্রেস কনফারেন্সে এক ভারতীয় সাংবাদিক ক্যাপ্টেন এমএস ধোনিকে প্রশ্ন তুলেছেন, `আপনি কি ক্রিকেটটা আর উপভোগ করছেন? মনে হচ্ছে না, ওয়ান ডে অধিনায়কত্বেও এবার একটা বদল দরকার? ঠিক যা করে বিরাট কোহলিকে টেস্টে আনা হয়েছে?' জবাবে ধোনি বলেছেন, 'আপনাদের যদি মনে হয়, আমার জন্যই ভারতীয় ক্রিকেট ডুবছে, আমাকে সরিয়ে দিলেই সব সমস্যা মিটে যাবে, তা হলে দিন না। আমাকে সরিয়ে দিন।'
আইসিসি'র বিতর্কিত সেই বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনালের পর থেকে টাইগার্স বাহিনী যে ভারতীয়দের ধবল ধোলাই দেবার শুধু ক্ষণ গুনেছে, অপেক্ষা করেছে, সেই কথা তো আমরা জানি। বাংলাদেশ ভারতের বিপক্ষে যোগ্য দল হিসেবে, ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং, টিম স্পিরিট, অদম্য চেষ্টা, পারফরমেন্স, চৌকশ সব ক্রিকেটিয় ল্যাংগুয়েজের সকল দিক দিয়েই জিতেছে। ভারতীয় বেস্ট ইলেভেনের বিপক্ষেই ক্রিকেটের সকল শাখায় দাপট দেখিয়ে সরাসরি জিতেছে।
টাইগার্সদের এই জয়ের পেছনে কোনো শ্রীনিবাসনের কূটকৌশলের শ্রাদ্ধ লাগেনি। টাইগার্সদের এই জয়ের পেছনে পাকিস্তানের আলীম ধর ও ইংল্যান্ডের ইয়ান গৌল্ডের মত বিতর্কিত আম্পায়ারের সহযোগিতা লাগেনি। টাইগার্সদের এই জয়ের পেছনে লাগেনি কোনো তৃতীয় পক্ষের পেছন দরজার লেনদেন। টাইগার্স বাহিনী এই জয়ের জন্য তীব্র আত্মবিশ্বাস নিয়েই মুখিয়ে ছিল। টাইগার্সদের এই জয়ই প্রমাণ করেছে, ১৯ মার্চ মেলবোর্নে ভারতীয় দল কোন কোন তৃতীয় পক্ষের সহযোগিতায় সেমিফাইনালে উঠেছিল।
সেদিন আইসিসি'র প্রধান যে ব্যাখ্যাটি ছিল, ওয়েস্ট ইন্ডিজে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে আইসিসি লোকসান করেছে। ভারতীয় দল গ্রুপ পর্যায়ে বা সেমি-ফাইনালের আগে বিদায় নিলেই আইসিসি'র নাকি লোকসান গুনতে হয়। আইসিসি লোকসান ঠেকাতেই সেদিন মেলবোর্নে টাইগার্সদের বলি দিয়েছিল। এটা এখন দিবালোকের মত সত্য। শ্রীনিবাসনের সেই কীর্তিকলাপ ক্রিকেটের ইতিহাসে চিরদিন কালো অধ্যায় হয়ে থাকবে।
টাইগার্সদের সামনে সেমি-ফাইনালে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে ফাইনালে যাবার সুযোগ ছিল। সুযোগ ছিল ফাইনালে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে স্বপ্নের বিশ্বকাপ জেতার। সেই স্বপ্নে বাংলাদেশ শ্রীনিবাসনের ছলছাতুরির ভারতীয়দের কলাকৌশলের কাছে হেরেছে। মাঠের খেলায় যে হারেনি, তার প্রমাণ হল মিরপুরের শেরে বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামের সেই ভারতীয় দলের বিপক্ষেই সকল বিভাগে দাপট দেখিয়ে এই সিরিজ জয়। বাংলাদেশের এই সিরিজ জয়কে যারাই অবহেলা করবে, তাদের মাঠেই আমরা দাঁত ভাঙ্গা জবাব দেব ব্যাটে-বলে।
ভারতীয় ক্যাপ্টেন এমএস ধোনি মিস্টার কুল নামে পরিচিত। ইতোমধ্যে তিনি টেস্ট দল থেকে অবসর নিয়েছেন। এখন ভারতীয় মিডিয়ার বাড়াবাড়িতে মিস্টার কুল হয়তো বাংলাওয়াশ সম্পন্ন হলেই একদিনের ক্রিকেটকেও বিদায় জানাবেন। সেটা হবে ভারতীয় দলের জন্য এবং গোটা ক্রিকেটপ্রেমীদের জন্য এক দুঃখজনক ঘটনা। ভারতের এখন পর্যন্ত সবচেয়ে সফল ক্যাপ্টেন এমএস কে যারা এভাবে তীর ছুড়ছেন, তারা কিন্তু ভারতীয় দলের কোনো উপকার করতে পারেনি।
ঘটনা কি শুধু ক্যাপ্টেন ধোনি'র ঘাড় মটকানোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে? আমার তা মনে হয় না। বিশ্বের সবচেয়ে দামি কোচ হবার যে মওকা এখন রবী শাস্ত্রীর সামনে ঝুলানো, সেই সুতাটি টাইগার্সদের কাছে বাংলাওয়াশ হলেই উড়ে যেতে পারে। কপাল ভাঙতে পারে রবী শাস্ত্রীরও।
টাইগার্স বাহিনী ভারতীয় দলকে ঘোষণা দিয়েই হারিয়েছে। হারিয়ে প্রমাণ করেছে যে বিশ্বকাপের সেই অঘটন, সেই বিতর্ক, সেই শ্রীনিবাসন থিউরি কোনোটাই মিথ্যে ছিল না। মেলবোর্নে ১৯ মার্চের কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচে বাংলাদেশের জয়ই ছিল আসল কথা। আইসিসি ও ক্রিকেট বিশ্ব যতদিন সেকথা মনেপ্রাণে না মানবে, ততদিন টিম টাইগার্স এমন আত্মবিশ্বাস নিয়েই বিশ্বের বড় বড় অহংকারী দলগুলোকে ভারতের মত ধবল ধোলাই দিয়ে হারিয়ে বুড়িগঙ্গায় ভাসাবে।
বিশ্বকাপে বাংলাদেশের কাছে হেরে গ্রুপ পর্ব থেকেই ইংল্যান্ড বিদায় নিয়েছিল। বিশ্বকাপের পর সেই ইংল্যান্ড দলে বিশাল পরিবর্তন এসেছে। শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে ভারতকে বাংলাওয়াশ করতে পারলে ভারতীয় দলেও সেই ধরনের বিশাল পরিবর্তন যে আসন্ন, তা তিন ম্যাচ সিরিজের দুই ম্যাচে ভারতের হারে ভারতীয় মিডিয়ার ফুঁসে ওঠার তীব্রতা দেখেই আন্দাজ করা যাচ্ছে।
তবে, আসল কথা, মাঠে বাংলাদেশ দল যোগ্যতা প্রমাণ করেই সকল সেক্টরে ভারতকে হারিয়ে জিতেছে। আমরা এই জয়টাকেই ধারাবাহিক করতে চাই। দক্ষিণ আফ্রিকার আসন্ন বাংলাদেশ সফরেও টিম টাইগার্সের উপর যে ক্রিকেট বিশ্ব সমীহ নজরে তাকাবে, সে কথা এখনই বলা যায়।
এই লেখা শেষ করতে চাই টিম টাইগার্স নিয়ে কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকার সাংবাদিক রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়ের কথা দিয়ে। তিনি কাল টিম টাইগার্সের সিরিজ জয়ের পর লিখেছেন, ''হাজার-হাজার বোতল রাতের ঢাকা আকাশে ছুঁড়ে, বাঘের রঙে নিজেকে রাঙিয়ে, বুকে ডোরাকাটা দাগ এঁকে, ঝরঝরিয়ে কেঁদে ফেলে রবিবাসরীয় মীরপুরে নতুন ক্রিকেট-সূর্য এনে ফেলল বাংলাদেশ। ভারতকে প্রথম বারের জন্য ওয়ান ডে সিরিজে হারিয়ে দেশের ক্রিকেটকে এবার ইতিহাসের পাতায় তুলে ফেললেন মাশরফি মর্তুজার টিমের এগারো বাঙালি। তিন ম্যাচের সিরিজ রবিবারেই শেষ, অন্তিম ম্যাচ এখন মহেন্দ্র সিংহ ধোনিদের সম্মানরক্ষার প্রয়োজনেই পড়ে। কোনও সন্দেহ নেই ঢাকা আজ ঘুমোবে না। কুমিল্লা ঘুমোবে না। চট্টগ্রাম ঘুমোবে না। প্রথমে নিউজিল্যান্ড। তারপর ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তারপর পাকিস্তান। শেষে ভারত। সোনার বাংলার ক্রিকেট-ইতিহাসে নতুন স্বর্ণ পালকের জন্ম হয় যে রাতে, সেখানে আর ঘুমনো সম্ভব?''
জয়তু টিম টাইগার্স। জয়তু বাংলাদেশ ক্রিকেট।
................................
২২ জুন ২০১৫
ঢাকা
২| ২২ শে জুন, ২০১৫ বিকাল ৩:৫১
ইমতিয়াজ ১৩ বলেছেন: দক্ষিণ অফ্রিকা দলেও একজন আছে যে বাংলাদেশ এসে তার মূলবান সময় নষ্ট করতে পায় না, তিন নিশ্চই এখন বুঝতে পারছেন কত ধানে কত ভাত???
©somewhere in net ltd.
১| ২২ শে জুন, ২০১৫ বিকাল ৩:৩৬
মামুন হাসান১৩৯৮ বলেছেন: Click This Link