নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

রেজা ঘটক

ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।

রেজা ঘটক › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমিনুর রহমান মুকুলের স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবি \'অবরোধ\' : শতাব্দীর আশ্চর্য কুয়াশা বৃত্তের অনন্ত পরিধি ।।

২৮ শে জুন, ২০১৫ ভোর ৫:৩১

আজ থেকে ঠিক একশো এক বছর আগে ১৯১৪ সালের ২৮ জুন অস্ট্রিয়ার যুবরাজ আর্চডিউক ফ্রাঞ্চ ফার্ডিন্যান্ড ও তার স্ত্রী প্রিন্সেস সোফিয়াকে সারায়োভোতে হত্যা করাকে কেন্দ্র করে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সূত্রপাত হয়েছিল। দীর্ঘ পাঁচ বছর যুদ্ধের পর ১৯১৯ সালের ২৮ জুন প‌্যারিসে এক শান্তি চুক্তির মাধ্যমে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘটেছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তিকে কেন্দ্র করেই গঠিত হয়েছিল লিগ অব নেশান্স। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ গোটা বিশ্বের মানুষকেই জিম্মি করেছিল। যুদ্ধের ভয়ালগ্রাসে অবরুদ্ধ হয়েছিল গোটা পৃথিবীর মানুষ। যুদ্ধের পরিণাম যে কতোটা ভয়ংকর, গোটা পৃথিবীর মানুষ তখন এটা ভোগ করেছে।

দ্বিতীয়বার ১৯৩৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর জার্মানির পোল্যান্ড আক্রমণের মাধ্যমে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা। দীর্ঘ সাত বছর যুদ্ধের পর ১৯৪৫ সালের ২ সেপ্টেম্বর জাপানের আনুষ্ঠানিক আত্মসমর্পণের মাধ্যমে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটেছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা ছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধের চেয়েও ভয়ংকর। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আনুষ্ঠানিক পরিসমাপ্তিকে কেন্দ্র করেই গঠিত হয়েছিল ইউনাইটেট ন্যাশন্স বা জাতিসংঘ।

কিন্তু লিগ অব ন্যাশন্স কিংম্বা ইউনাইটেড ন্যাশন্স কি পৃথিবী থেকে সেই ভয়ংকর যুদ্ধ পুরোপুরি বন্ধ করতে পেরেছে? পৃথিবী থেকে যুদ্ধ যেমন চিরতরে বন্ধ হয়নি, তেমনি দেশে দেশে রাজনৈতিক ক্ষমতাকে কেন্দ্র করে মানুষকে জিম্মি করার সেই পুরানো খেলাও এখনো বন্ধ হয়নি। চিরকাল রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের কাছেই পৃথিবীবাসী বন্দি থেকেছে। মানুষকে জিম্মি করেই চিরকাল রাজনৈতিক খেলা, ক্ষমতার লড়াই, রাষ্ট্রে রাষ্ট্রে দ্বন্দ্ব, যুদ্ধ ও শান্তির এক মানুষ সৃষ্ট ভয়ংকর রাজনৈতিক খেলা চলেছে। এই খেলায় সবসময় জিম্মি হয় দেশের সাধারণ মানুষ। আবার মানুষই সেই জিম্মিদশাকে কাটিয়ে একদিন বিজয় ছিনিয়ে আনে।

২০১৫ সালের প্রথম তিন মাসের বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতাও এই রাজনৈতিক খেলার একটি পূর্বপরিকল্পিত লড়াই বা নীলনকশা। বিরোধীদল বিএনপি টানা তিন মাস সরকার উৎখাতের জন্য দেশব্যাপাী লাগাতার অবরোধ পালন করে। সরকার পক্ষও বিরোধীদলের ডাকা অবরোধকে পাত্তা না দিয়ে বা রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা না করে, দমন-পিড়নের নীতি অনুসরন করে। এক সময় বিরোধী দলের অবরোধ সহিংসতায় রূপ নেয়। চোরাগুপ্তা হামলা, যাত্রীবাহী বাসে পেট্রোল বোমা ছুঁড়ে নিরীহ সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে চলতে থাকে সেই অবরোধ। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মানুষের আর্ত-চিৎকারে একুশ শতকের সভ্যতা গড়াগড়ি যায়। একদিকে সরকার সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা দিতে সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ। অন্যদিকে বিরোধীদল সরকার পতনের আন্দোলন করতে গিয়ে জনগণকে জিম্মি করে এক সময় জনগণকেই প্রতিপক্ষ বানিয়ে ফেলল।

ক্ষমতার রাজনীতিকে কেন্দ্র করে একুশ শতকের বাংলাদেশে ২০১৫ সালে এসেও সরকার ও বিরোধীদলের সাধারণ মানুষকে জিম্মি করার এই যে বাস্তবতা, এই যে ক্ষমতার লড়াইয়ের একটি টাটকা স্মৃতি, এটাকেই উপজীব্য করে চলচ্চিত্র নির্মাতা আমিনুর রহমান মুকুল নির্মাণ করেছেন স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র 'অবরোধ'। হাজার হাজার বছর ধরে পৃথিবীতে মানুষ সৃষ্ট ক্ষমতার লড়াইয়ে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করার যে জঘন্য কৌশল, তাকেই যেন আমরা মাত্র ২৪ মিনিট ৫০ সেকেন্ডের স্ন্যাপশটে প্রতীকি হিসেবে দেখতে পাই। এখানে মাত্র ২৪ মিনিট ৫০ সেকেন্ডের স্ন্যাপশটে যে গল্পটি বা যে ঘটনাটি আমরা ঘটতে দেখি, দেশ-কাল-পাত্রের উর্ধ্বে পৃথিবী নামক গ্রহে হাজার বছর ধরে মানুষকে জিম্মি করে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব-লড়াইয়ের চিরায়ত ক্যানভাসই যেন 'অবরোধ' চলচ্চিত্রে আমাদের চোখের সামনে ফুটে ওঠে।

মুকুলের 'অবরোধ' চলচ্চিত্রের গল্পটি খুবই সহজ, সরল ও সাধারণ। শীতকাল। একদিকে বিরোধীদলের ডাকা লাগাতার অবরোধ চলছে। অন্যদিকে জীবন বাজি রেখে সাধারণ মানুষ কাজের জন্য ঘর থেকে বের হয়। রাজধানী ঢাকা ও দক্ষিণে পদ্মার ওপারের মাদারীপুরের মধ্যে যাদের কাজের জন্য ঘরের বাহির যেতে হয়, নানান শ্রেণীপেশার সেসব মানুষকে কনকনে শীতের মধ্যেও বিশাল পদ্মা নদীর এপার-ওপার করতে হয়। এসব কর্মব্যস্ত মানুষের পদ্মা নদী পারাপারের উপায় মাত্র ফেরি, লঞ্চ, স্পিডবোট বা ইঞ্জিননৌকা।
বিভিন্ন বয়স ও শ্রেণীপেশার কয়েকজন যাত্রীকে নিয়ে একটি স্পিটবোট পদ্মা নদীতে সেই ঘন কুয়াশায় অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে।

দেশব্যাপী রাজনৈতিক অবরোধের মধ্যে জীবন বাজি রেখে কাজে বের হওয়া এই মানুষগুলো আবার প্রাকৃতিক দুর্যোগে আরেক-দফা পদ্মায় কুয়াশা অবরোধের শিকার। ঢাকার মতিঝিলে একটি যাত্রীবাহী বাসে পেট্রোল বোমার আক্রান্তের খবর এই বোটের একজন তরুণির মাধ্যমে অন্য যাত্রীদের মত দর্শক হিসেবে আমরাও অবগত হই। একজন যাত্রী তরুণির নোটবুক থেকে খবরটি বিস্তারিত পড়ার পর থেকে একটু চিন্তাগ্রস্থ হন। দর্শক হিসেবে আমাদেরও তখন সেই টেনশন ছোবল মারে। কারণ মতিঝিলেই ওই যাত্রীর স্ত্রী মেয়েকে নিয়ে স্কুলে যাবার কথা। আর তারা পাবলিক বাসেই যাতায়াত করেন। এক সময় স্পিটবোটের সেই যাত্রীর মোবাইলে ঢাকা থেকে একটি ফোন আসে। তিনি খবর পান পেট্রোল বোমায় আক্রান্ত সেই বাসেই তার স্ত্রী ও মেয়ে যাত্রী ছিল। পেট্রোল বোমায় আহত হয়ে তারা এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। বোটের ওই যাত্রীর মত দর্শক হিসেবে তখন আমরাও কিংকর্তব্যবিমুঢ়।

এই সময় সেই যাত্রী বোটচালককে যে করেই হোক বোট ছাড়ার অনুরোধ করেন। পদ্মার ওপারে তাকে নামিয়ে দিলেই তিনি ঢাকায় আহত স্ত্রী-কন্যার কাছে ছুটে যাবেন। কিন্তু বোটে মাত্র কয়েকজন যাত্রী থাকলেও তাদের মধ্যেই এই কুয়াশা দুর্যোগে ঝুঁকি নিয়ে বোট ছাড়াকে কেন্দ্র করে দুটি পক্ষের সৃষ্টি হয়। শেষ পর্যন্ত বোটচালক বোট ছাড়ার সাহস পায় না। বোটের সবাইকে অনেকক্ষণ নিঃশ্চল, চুপচাপ নিরব দেখে একসময় অসহায় সেই যাত্রী সবার অজান্তেই হঠাৎ নদীতে ঝাঁপ দেয়। নদী সাঁতার কেটে হলেও তাকে যে তীরে পৌঁছাতে হবে। যেতে হবে ঢাকা মেডিকেলে আহত স্ত্রী-কন্যার কাছে। এরপর কিছুক্ষণ লোকটিকে বরফ-শীতল পদ্মায় সাঁতার কাটতে দেখা যায়। তারপর আর কুয়াশার ঘোরে কিছুই দেখা যায় না। এখানেই ছবিটি শেষ হয়। আর আমাদের হৃদপিণ্ডের ঢিবঢিবানি যেন সেখানে এসে একটা বিশাল ধাক্কা খায়!

পদ্মায় আটকা পরা এই বোটটি যেন তখন এক টুকরো বাংলাদেশ। ঘটনাচক্রে বোটের মানুষগুলোই যেন রাজনৈতিক পক্ষ-বিপক্ষ। বোটের অল্প কয়জন মানুষই যেন গোটা বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের প্রতিনিধি। কুয়াশায় অবরুদ্ধ বোটটি যেন রাজনৈতিক অবরোধেরই এক জ্বলন্ত উদাহরণ। প্রাকৃতিক অবরোধ আর মানুষ সৃষ্ট রাজনৈতিক অবরোধ এখানে একই সমান্তরাল রেখায় গিয়ে মিশেছে। মাত্র ২৪ মিনিট ৫০ সেকেন্ডে যে গল্পটি ছবির ফ্রেমে ফ্রেমে নির্মাতা আমাদের দেখান, তা যেন চিরায়ত কালের মানুষের দ্বন্দ্ব সংগ্রামের, ক্ষমতার লড়াইয়ের, স্বার্থ ও ভোগের সামগ্রিক চিত্রকেই তুলে ধরে।

নির্মাতা মুকুল এই ছবির মাধ্যমে আমাদের যে মেসেজটি দেন, সেটি হল- প্রাকৃতিক দুর্যোগ হোক কিংম্বা মানুষ সৃষ্ট স্বার্থদ্বন্দ্ব বা ক্ষমতার লড়াইকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অবরোধ হোক না কেন, মানুষ জীবন বাজি রেখেই সেই অবরোধ বা শৃংখল থেকে মুক্তি নেবার চেষ্টা করে। মানুষ জীবন বাজি রেখেই নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখে। সমাজ বা রাষ্ট্রে বসবাস করলেও মানুষ আসলে একটি মুক্ত প্রাণী। শৃংখল বা অবরোধ থেকে মুক্তিই তার জীবন। তাই মুকুলের নির্মিত স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবিটি ২৫ মিনিটের ফ্রেমেই কেবল বন্দি থাকে না। এটি হাজার বছরের সভ্যতায় চিরায়ত রাষ্ট্র-সমাজ-শাসক-শোষণ-শ্রেণীসংগ্রাম-যুদ্ধ-লড়াই-ক্ষমতার দ্বন্দ্বসহ গোটা পৃথিবীর রাজনৈতিক দ্বন্দ্বকেই মহাকাশের মত বিশাল ক্যানভাসে কালের টাইম-মেশিনকেই প্রতিস্থাপন করে। স্থান-কাল-পাত্র ছাড়িয়ে এটি মহাকালের মহাদেশ ছাড়িয়ে পৃথিবীর বাস্তবতারই প্রতিনিধিত্ব করে।

'অবরোধ' ছবিটির বিভিন্ন চরিত্রে অত্যন্ত প্রাণবন্ত ও মেদহীন অভিনয় করেছেন কাজী ফয়সল, মুনিরা রহমান অবনী, নূরী শাহ, লিয়াকত লিকু, মেহেদি জুয়েল, ইউসুফ শুভ, রনি খান, প্রণব দাস প্রমুখ। ছবিটির চিত্রগ্রহন করেছেন তাইজুল ইসলাম রোমান, গ্রাফিক্স ও সম্পাদনা করেছেন মনিরুজ্জামান শাহিন, শব্দগ্রহন করেছেন আতিক এবং আবহসঙ্গীত করেছেন সুমন কল্যান। এই ছবির দুই-তিনটি কম্পোজিশান খুবই শক্তিশালী, বিশেষ করে স্পিটবোটটি যখন কুয়াশা মাড়িয়ে ঘোরের মধ্যে এগিয়ে যাচ্ছিল, তখন এক ঝাঁক গাঙচিলের উড়ে যাওয়া, বাঁশ ও জালের ঘের দেওয়া মাছ ধরার ফ্রেমের কাছে গিয়ে বোটটির আটকে পড়া, কুয়াশার মধ্যে দূরে কয়েকটি বোট ও ইঞ্জিননৌকার অদৃশ্য হয়ে যাওয়া, সকালে পদ্মায় সূর্য ওঠার দৃশ্য ইত্যাদি। এরমধ্যে বাঁশ ও জালের ফ্রেমের কাছে বোটটির অবরুদ্ধ হয়ে পড়ার দূরবর্তী কুয়াশামাখা ঘোরলাগা ফ্রেমটি খুবই ক্লাসিক্যাল। বিশ্ব চরাচরে একমাত্র কুয়াশা আর ফ্রেমেবন্দি ওই দৃশ্য ছাড়া আর কিছুরই যেন কোনো অস্তিত্ব নেই।

'অবরোধ' আমিনুর রহমান মুকুলের প্রথম স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র। সেই হিসেবে নির্মাণ কৌশলে ছোটখাটো কিছু ত্রুটি রয়েছে। বিশেষ করে ফ্রেম-টু-ফ্রেম চিত্রায়ন ও সম্পাদনায়। গল্পে কুয়াশা যতোটা শক্তিশালী চরিত্র, গোটা ছবিতে তেমন শক্তিশালী কুয়াশার উপস্থিতি নেই। এমন কি ক্লোজশর্টেও কুয়াশার বিভিন্ন সময়ের আকার ও অবয়ব ছবির প্রয়োজনীয় চাহিদা মেটাতে পারেনি। পাশাপাশি আবহসঙ্গীত ও শব্দ সংযোজনে মুকুল আরো যত্নবান হয়ে মুন্সিয়ানার পরিচয় দিতে পারতেন। তবে ছবির ছোট্ট গল্পের বিপরীতে যে বিশাল শক্তিশালী ক্যানভাস, এসব ছোটখাটো ত্রুটিকে কাটিয়ে শেষ পর্যন্ত তা মানুষের সংগ্রামী প্রত্যয়কেই প্রতিষ্ঠিত করে। মানুষের স্বপ্নকে নতুন করে বাঁচিয়ে রাখার জন্য অহর্নিশ আশা জাগায়। শেষপর্যন্ত এখানেই মুকুলের নির্মাণ স্বার্থক হয়ে ওঠে। 'অবরোধ' স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র হলেও এর মেসেজটি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের মতই দীগন্তবিস্তারি। বাংলা সিনেমায় স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র 'অবরোধ' একটি নতুন সংযোজন হিসেবে জায়গা করে নেবে বলেই আমি বিশ্বাস করি। বাংলা সিনেমায় এমন একটি নতুন দিক উন্মোচনের জন্য মুকুলকে অভিনন্দন ও প্রাণঢালা শুভেচ্ছা।

২৮ জুন ২০১৫
ঢাকা

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.