নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।
আপনার যদি কর্নেল শাফায়াত জামিল (বীরবিক্রম)-এর লেখা “একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, রক্তাক্ত মধ্য আগষ্ট ও ষড়যন্ত্রময় নভেম্বর” বইটি পড়া থাকে, তাহলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের মালিক সদ্য প্রয়াত আমজাদ খান চৌধুরী সাহেবের আগের ইতিহাস কিছুটা জানতে পারবেন। ১৯৭১ সালে আমজাদ খান চৌধুরী ছিলেন পাকিস্তানের একজন মেজর। রংপুর ২৩ ব্রিগেটের একজন ব্রিগেট মেজর। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় এই মেজর আমজাদ খান চৌধুরী সরাসরি বাঙালি মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের পক্ষে সম্মুখ যুদ্ধ করেছেন। বাঙালি হত্যা করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় রংপুরে বিভিন্ন হত্যা-ধর্ষণসহ হিন্দুদের ঘরবাড়ি লুটপাটে নেতৃত্ব দেন এই মেজর আমজাদ চৌধুরী। ১৯৭১ সালে একজন বাঙালি সেনা অফিসার হিসেবে পাকিস্তানের পক্ষে তিনি যে অপকর্ম করেছেন, তার যেসব বিবরণ পাওয়া যায়, তাতে তিনি একজন যুদ্ধাপরাধী ছিলেন।
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৯৩ হাজার পাকিস্তানি সেনাদের আত্মসমর্পন অনুষ্ঠানের সময় এই আমজাদ খান চৌধুরীও আত্মসমর্পন করেন। একজন যুদ্ধবন্দি হিসেবে অন্যান্য পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে তাকেও ভারতে আটক রাখা হয়। ১৯৭২ সালের ২ জুলাই ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ঐতিহাসিক ‘সিমলা চুক্তি’ স্বাক্ষরিত হয়। ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী ও পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জুলফিকার আলী ভুট্টো ঐতিহাসিক সিমলা চুক্তি সাক্ষর করেন। সিমলা চুক্তিটি ১৯৭২ সালের ৪ আগস্ট থেকে কার্যকর ধরা হলে চুক্তির শর্তাধীনে ভারত সকল যুদ্ধবন্দিকে বিনাবিচারে পাকিস্তানে ফেরত পাঠায়। তখন এই মেজর আমজদা খান চৌধুরীসহ অন্যান্য পাকিস্তানি যুদ্ধবন্দিরা পাকিস্তানে চলে যান।
পাকিস্তানে আটকে পরা চার লাখ বাঙালি যখন স্বাধীন বাংলাদেশে ফেরত আসে, তখন এই মেজর আমজাদ খান চৌধুরীও স্বাধীন বাংলাদেশে ফেরত আসেন। বাংলাদেশে ফিরে এসে তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে মিথ্যা তথ্য দেন। তিনি পরিচয় দেন পাকিস্তানে আটকে পরা একজন বাঙালি অফিসার। মিথ্যা তথ্য দিয়ে তিনি তখন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। কিন্তু পাকিস্তানপ্রেমী এই আমজাদ খান চৌধুরী তার অপকর্ম ভুলতে পারেন নি।
১৯৭৫ সালে এই আমজাদ খান চৌধুরী কুমিল্লার ব্রিগেড কমান্ডার ছিলেন। এই আমজাদ খান চৌধুরীর নিয়োজিত সেনাদলই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের পাহারার দায়িত্বে ছিল। ডালিম-ফারুকদের আক্রমণ যারা প্রতিহত করতে ব্যর্থ ছিল নাকি সাজানো ছিল, তা নিয়ে এখনো গবেষণা করার যথেষ্ট দাবি রাখে।
বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হবার পর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে এই মেজর আমজাদ খান চৌধুরী চারবার প্রোমোশান লাভ করেন। মেজর থেকে লেফটেন্যান্ট কর্নেল, লেফটেন্যান্ট কর্নেল থেকে কর্নেল, কর্নেল থেকে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল থেকে মেজর জেনারেল। প্রেসিডেন্ট জিয়ার আমলে এই আমজাদ খান চৌধুরী রংপুর সেনানিবাসে জিওসি হিসেবে বদলি হন। পরে বগুড়ায় মাজিরা ও জাহাঙ্গীরাবাদ সেনানিবাস তৈরি করার জন্য জমি অধিগ্রহন সংক্রান্ত দুর্নীতি ও লুটপাটের জন্য তাঁকে সেনাবাহিনী থেকে বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া হয়।
সেনাবাহিনীতে থাকাকালিন দুর্নীতি ও লুটপাটের টাকা দিয়েই একই বছর ১৯৮১ সালে তিনি রংপুরে টিউবওয়েল তৈরির কারখানা হিসেবে রংপুর ফাউন্ড্রি লিমিটেড (আরএফএল) প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তী সময়ে ১৯৮৫ সালে গড়ে তোলেন এগ্রিকালচারাল মার্কেটিং কোম্পানি, যা প্রাণ গ্রুপ নামে পরিচিত। একথা সত্য যে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ বাংলাদেশে অনেক কর্মসংস্থান তৈরি করতে ভূমিকা রাখছে।
কিন্তু যে ব্যক্তি স্বাধীনতা যুদ্ধে বাঙালির বিরুদ্ধে পাকিস্তানের হয়ে যুদ্ধ করেছে, বাঙালি হত্যা করেছে, সেনাবাহিনীতে মিথ্যা তথ্য দিয়ে যোগ দিয়েছে, এমন কি সেনাবাহিনীতে দুর্নীতির দায়ে বরখাস্ত হয়েছে, তিনি কতোটা ভালো লোক ছিলেন, তা সবাই নিশ্চয়ই অনুমান করতে পারবেন।
স্বাধীনতার পর এভাবেই এই আমজাদ খান চৌধুরীর মত অনেক প্রো-পাকিস্তানি বাংলাদেশে মিথ্যা তথ্য দিয়ে নানান কিসিমের ব্যবসা খুলে গোটা বাংলাদেশেই এখনো রাজত্ব করে চলছেন। বাংলাদেশে মুক্তিযোদ্ধারা এখনো অসহায় এবং না খেয়ে বিনা চিকিৎসায় মারা যায়। আর আমজাদ খান চৌধুরীর মত মুখোশ পড়া পাকপন্থী রাজাকার-আলবদর-আলশামসরা বাংলাদেশে সব ক্ষেত্রেই অর্থ-বিত্ত-ব্যবসা-বাণিজ্যে সফল। মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা পাকিস্তানের পক্ষে ছিল, তারাই বাংলাদেশে এখন প্রকৃত অর্থে ভালো আছে।
এই আমজাদ খান চৌধুরীর মৃত্যুর পর ‘দেশের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী’ আখ্যা দিয়ে তার মৃত্যুতে ‘গভীর শোক’ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী। আর ঠিক দুই দিন আগে একজন মুক্তিযোদ্ধা আত্মহত্যা করেছেন মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের সচিব এমএ হান্নানের গলাধাক্কার অপমান সইতে না পেরে। তখন রাষ্ট্রের কোনো কুতুব কিন্তু শোক বাণী দেন নি।
কি বিচিত্র এক বাংলাদেশে আমরা বসবাস করছি! একজন মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যুতে কোনো কুতুবের কোনো শোক বাণী নাই। সেই দুর্নীতিবাজ সচিব এমএ হান্নান এখনো সচিব হিসেবে বহাল রাজত্ব করছেন। এমন কি মুক্তিযোদ্ধা আইয়ুব খানকে তাঁর শেষ ইচ্ছানুযায়ী ঢাকায় দাফন করার শর্তও মানা হয়নি। অথচ একজন পাকিস্তানী হয়ে যুদ্ধ করা বিতর্কিত বাঙালি আমজাদ খান চৌধুরীর মৃত্যুতে শোক বাণীর বন্যা ছুটেছে। আর এই দুর্নীতিবাজ পাকিপ্রেমী আমজাদ খান চৌধুরীকে সামরিক গোরস্তানে দাফন করা হবে। সত্যি সেলুকাস, বড় বিচিত্র এই বাংলাদেশ ও এদেশের মানুষ।
............................................
৯ জুলাই ২০১৫
ঢাকা
২| ০৯ ই জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৫:২৭
প্রামানিক বলেছেন: আমরাই ঠিক নাই
৩| ০৯ ই জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৫:৪২
বাবু>বাবুয়া>বাবুই বলেছেন: ঘটক সাহেব এতো দিন কোথায় ছিলেন মৃত্যুর পড় ক্যান ?? মুক্তিযুদ্ধের উপর এতো সুন্দর একটি বই “একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, রক্তাক্ত মধ্য আগষ্ট ও ষড়যন্ত্রময় নভেম্বর” সার্চ কমিটি, ট্রাইবুনাল, শাহবাগ কারো মনে নেই, আশ্চর্য !!!!
৪| ০৯ ই জুলাই, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:০৪
নতুন বলেছেন: টাকার ক্ষমতায় জটিল জিনিস। জীবিত থাকা কালিন এই নিয়ে কোন কথা হয়নাই। শুনলাম প্রধানমন্ত্রীও নাকি শোক জানিয়েছে।
একদিন মুছা বিন সমসের ও মুক্তিযোদ্ধা হয়ে যাবে।
৫| ০৯ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ৮:২২
ঢাকাবাসী বলেছেন: সবাই বড় বড় কথা বলছেন আমজাদ সাহেবের বিরুদ্ধে, কিন্তু তিনি বেঁচে থাকার সময় এ বিষয়ে টু শব্দটি শোনা যায় নি!
৬| ০৯ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ৮:৫৭
আরণ্যক রাখাল বলেছেন: মরার আগে এই পোস্টটা কৈ ছিল?
©somewhere in net ltd.
১| ০৯ ই জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৫:০১
এম. মাসুদ আলম. বলেছেন: ১৯৭৫ সালে এই আমজাদ খান চৌধুরী কুমিল্লার ব্রিগেড কমান্ডার ছিলেন। এই আমজাদ খান চৌধুরীর নিয়োজিত সেনাদলই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের পাহারার দায়িত্বে ছিল। ডালিম-ফারুকদের আক্রমণ যারা প্রতিহত করতে ব্যর্থ ছিল নাকি সাজানো ছিল, তা নিয়ে এখনো গবেষণা করার যথেষ্ট দাবি রাখে।
view this link