নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।
টানা ১৩ ম্যাচ জয়হীন থাকার পর গত বছর অক্টোবরে মাশরাফি বিন মুর্তজার কাঁধে তুলে দেওয়া হয় বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়কের দায়িত্ব। এরপরই আমূল বদলে যায় বাংলাদেশ। গত আট মাসে মাশরাফির অধিনায়কত্বে খেলা ২০ ম্যাচের ১৫টিই জিতেছে বাংলাদেশ। মাশরাফি মাঠে এমন এক জাদুমন্ত্রে দলকে নেতৃত্ব দেন যে বিপক্ষ যে কোনো দলই এখন মাশরাফিকে সমীহ করা শুরু করেছেন। একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশ দলের ক্যাপ্টেন মাশরাফি এখন বিশ্বের যে কোনো ক্রিকেট দলের ক্যাপ্টেনের চেয়ে কোনো অংশেই কম যোগ্যতা সম্পন্ন নন। বরং বিশ্বের সেরা ক্যাপ্টেনদের তালিকা করা হলে মাশরাফি এখন সেই দলে পরবে।
চোয়ালবদ্ধ লড়াই, সতীর্থদের প্রতি আস্থা ও সাফল্যের জন্য তীব্র ক্ষুধা—মাশরাফির এসব গুণে মাঠে বাংলাদেশ পাচ্ছে একের পর এক সাফল্য। বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো কোয়ার্টার ফাইনালে পা দেওয়া, ঘরের মাঠে পাকিস্তানকে বাংলাওয়াশ, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজ জয়—মাশরাফির নেতৃত্বে বাংলাদেশ ছুটছে এক্সপ্রেস গতিতে। মাশরাফি'র একটাই কথা। চোখের দিকে তাকিয়ে খেলো। সবাইকে জানিয়ে দাও আমি বা আমরা তোমার চেয়ে মোটেও কম নই। বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে আমরাই সেরা। আর সেটা প্রমাণ করার জায়গা মাঠে। মাশরাফি'র এই মন্ত্রই বাংলাদেশ দলকে একের পর এগিয়ে নিচ্ছে।
১৯ মার্চ ২০১৫ মেলবোর্নে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে বিতর্কিত ম্যাচে ভারতের কাছে বাংলাদেশের দুঃখজনক পরাজয়ের পর থেকেই এই টিম টাইগার্স এক নতুন মন্ত্রে উজ্জীবীত দল। বিশ্বকাপ থেকে ফেরার পর পাকিস্তানের সাথে হোম সিরিজে পাকিস্তানকে হোয়াইট ওয়াশ করে টাইগার্স বাহিনী। বিশ্ব ক্রিকেটে কোনো দলকে বাংলাদেশ হোয়াইট ওয়াশ করলে সেটিকে এখন বলা হচ্ছে বাংলাওয়াশ। বাংলাওয়াশের আতংকেই এখন বিশ্বের বড় বড় ক্রিকেট দল হিমশিম খাচ্ছে।
পাকিস্তান একদিনের ক্রিকেটে ও টেস্টে বাংলাওয়াশ হবার পর ভারত বাংলাদেশ সফর করে। ভারত একদিনের ক্রিকেটে বাংলাওয়াশ না হলেও টাইগার্সদের কাছে লজ্বজনক সিরিজ হারায় ধনির বাহিনী। বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালের সেই বিতর্কিত হারের জবাব কড়ায় গণ্ডায় বুঝিয়ে দেওয়া হয় ভারতীয় ক্রিকেটকে। টাইগার্সদের কাছে ভারতের পরাজয়ের পর ভারতীয় মিডিয়ায় ক্যাপ্টেন এমএস ধনি নানান সমালোচনার মুখে পড়েন। ধনি'র ক্রিকেট জীবনে এমন সমালোচনার মুখে আর কখনোই পড়েননি।
ভারত বধের পর এবার বাকি ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। একদিনের ক্রিকেটের প্রথম ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকা সহজ জয় তুলে নেবার পর ঘুরে দাঁড়ায় টাইগার্স বাহিনী। দ্বিতীয় ম্যাচে পাল্টা আঘাত হেনে জয় ছিনিয়ে নিয়ে ১-১ সমতায় আনে মাশরাফি বাহিনী। তৃতীয় ও শেষ ম্যাচটি ছিল সিরিজ জয় নির্ধারনী ম্যাচ। সেই ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকাকে সুস্পষ্ট ব্যবধানে ৯ উইকেটে হারিয়ে বাংলাদেশ জানান দেয় বিশ্ব ক্রিকেটে টাইগার্স বাহিনী এক নতুন এক সম্রাট।
বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে বাংলাদেশ জানান দিয়েছিল আমরা খালি হাতে বাড়ি যাবার জন্য আসিনি। ১৮ ফেব্রুয়ারি আফগানিস্তানকে ১০৫ রানে হারিয়ে পুল এ থেকে শুভ সূচনা করে টাইগার্স বাহিনী। ২১ ফেব্রুয়ারি অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচটি বৃষ্টির কারণে পরিত্যক্ত হয়। ২৬ ফেব্রুয়ারি তৃতীয় ম্যাচে শ্রীলংকার কাছে ৯২ রানে হেরে যায় বাংলাদেশ। কিন্তু মাশরাফি'র দল সেই হার থেকে আরো মুখিয়ে ওঠে জেতার জন্য।
৫ মার্চ স্কটল্যান্ডের করা ৩১৮ রান চেইজ করে ৩২২ রান তুলে ৬ উইকেটে জয় তুলে নেয় টাইগার্সরা। ৯ মার্চ বাংলাদেশের কাছে ১৫ রানে হেরে ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপ মিশন শেষ হয়ে যায়। ১৩ মার্চ গ্রুপ পর্বের শেষ খেলায় নিউজিল্যান্ডের কাছে মাত্র ৩ উইকেটে হারলেও পুল এ থেকে চতুর্থ দল হিসেবে কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছায় বাংলাদেশ। তারপর ১৯ মার্চ ভারতের বিপক্ষে সেই বিতর্কিত কোয়ার্টার ফাইনাল। সেই বিতর্কের জের ধরেই আইসিসি'র প্রেসিডেন্ট পদ থেকে পদত্যাগ করেন বাংলাদেশের আহম মোস্তফা কামাল। আইসিসি'র চেয়ারম্যান ভারতীয় শ্রীনিবাসন বনাম বাংলাদেশের মোস্তফা কামাল এক নতুন যুদ্ধের সূত্রপাত এই বিতর্কিত ম্যাচ থেকে।
তারপর ভারত বাংলাদেশ সফরে এসে টাইগার্সদের কাছে একদিনের ক্রিকেটে ২-১ সিরিজ হেরে প্রমাণ করেছে, বিশ্বকাপে টাইগার্স বাহিনীকে আসলে বিতর্কিতভাবেই হারানো হয়েছিল। পরে সেমি-ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরেই ভারতের বিশ্বকাপ মিশন শেষ হয়। বাংলাদেশের কাছে একদিনের ক্রিকেটে সিরিজ হারার পর ভারতীয় মিডিয়া নতুন বিতর্কের জন্ম দেয় টাইগার্স বাহিনী নিয়ে।
চ্যাম্পিয়ন ট্রফি যাতে বাংলাদেশ খেলতে না পারে সেজন্য শুরু হয় নানান কিসিমের ষড়যন্ত্র। আইসিসি র্যাংকিংয়ের প্রথম আটটি দলই চ্যাম্পিয়ন ট্রফি খেলার সুযোগ পাবে। বাংলাদেশ পাকিস্তানকে ৩-০তে সিরিজ হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন ট্রফি খেলার যোগ্যতা অর্জন করে। র্যাংকিয়ে পাকিস্তানকে হটিয়ে আট নম্বর জায়গাটি দখল করে বাংলাদেশ। তারপর ভারত বধের পর ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হটিয়ে বাংলাদেশ পৌঁছে যায় সপ্তম স্থানে।
১৫ জুলাই দক্ষিণ আফ্রিকাকে ২-১ এ একদিনের সিরিজ হারানোর পর ১৬ জুলাই আইসিসি'র নতুন র্যাংকিং অনুসারে বাংলাদেশ এখন ৯৬ রেটিং নিয়ে বাংলাদেশ এখন সপ্তম পজিশনে। ৮৮ রেটিং নিয়ে অষ্টম ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং সমান রেটিং নিয়ে পাকিস্তান এখন নবম। ৯৮ রেটিং নিয়ে ইংল্যান্ড আছে তালিকায় ষষ্ঠ পজিশনে। ১০৫ রেটিং নিয়ে শ্রীলংকা আছে পঞ্চম অবস্থানে। ১০৯ রেটিং নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা আছে চতুর্থ অবস্থানে। ১১২ রেটিং নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে আছে বিশ্বকাপের রানারআপ নিউজিল্যান্ড। ১১৫ রেটিং নিয়ে ভারত আছে দ্বিতীয় অবস্থানে। আর ১২৯ রেটিং নিয়ে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া আছে আইসিসি র্যাকিংয়ের শীর্ষে।
আগামী অক্টোবর মাসে অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশ সফরে আসবে। বিশ্ব ক্রিকেট এখন মুখিয়ে আছে মাশরাফি বাহিনী বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের বধ করার সেই মাহেন্দ্রক্ষণটি দেখার জন্য। আমরা টাইগার্স ভক্তরাও সেই মাহেন্দ্রক্ষণের জন্য এখন থেকেই অপেক্ষা করছি।
©somewhere in net ltd.
১| ১৮ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ২:৫৮
বাংলার জামিনদার বলেছেন: কোনো ওয়ানডে হবেনা, খালি টেষ্ট।