নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

রেজা ঘটক

ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।

রেজা ঘটক › বিস্তারিত পোস্টঃ

কুতুবদের বেহায়াপনায় যানজটে অচল রাজধানী ঢাকা !!!

০৬ ই আগস্ট, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৩৩

রাজধানী ঢাকায় যানজট নিরসনে সরকার বাহাদুরের আদৌ কোনো সদিচ্ছা আমার চোখে পড়ে না। ঢাকা শহরে এখন অন্তত দুই কোটি মানুষের বসবাস। এছাড়া প্রতিদিন কাজকর্ম, চিকিৎসা, শিক্ষা, আইন-আদালত, বেড়ানো, কাজের সন্ধানে আসার মত অসংখ্য নিয়ামকের কারণে অন্তত আরো ৫০ লাখ মানুষ ঢাকায় যাতায়াত করে। অর্থ্যাৎ এই মুহূর্তে রাজধানী ঢাকাকে অন্তত আড়াই শো কোটি মানুষের চাপ সহ্য করতে হয়। চাপ না বলে ঢাকাকে ধর্ষন করা বলাই শ্রেয়। তো আড়াই শো কোটি মানুষের জন্য রাজধানী ঢাকায় পাবলিক ট্রান্সপোর্ট কী যথেষ্ঠ পরিমাণে আছে? এক কথায় এর জবাব হল নেই। আসুন ঢাকার যানজটের কারণগুলো একটু সরেজমিনে দেখে আসি।

১. ঢাকায় যানজটের প্রধান কারণ অতিরিক্ত পরিমাণে প্রাইভেট কারের উপস্থিতি। একটি সাম্প্রতিক জরিপ বলছে, ঢাকার রাস্তাঘাটের অন্তত শতকরা ৮০ ভাগ প্রাইভেট কারের দখলে থাকে। ঢাকায় এমন অনেক পরিবার আছে যাদের পাঁচ ছয় সদস্যের পরিবারের জন্য ৬/৭টি প্রাইভেট কার। তো এসব অবৈধ টাকার মালিকদের গাড়ির লাইসেন্স দেবার সময় কর্তৃপক্ষ এসব বিবেচনায় নেয় না। বিআরটিসি এই অবৈধ কাজটাও করে টাকাপয়সার বিনিময়ে। একটি পরিবার একটির বেশি প্রাইভেট কারের লাইসেন্স পাবে না, এমন আইন না হলে এবং তা কঠোর ভাবে পালন করা না হলে, অবৈধ টাকার মালিকদের এই দৌরাত্মও বন্ধ করা যাবে না। সরকার বাহাদুরের সদিচ্ছা থাকলে অবৈধ টাকার এসব মালিকদের রাতারাতি ধরা সম্ভব। কিন্তু সরকার এখানে শতভাগ ব্যর্থ। উল্টো বরং রাতারাতি অবৈধ টাকার মালিকদের সংখ্যা বাড়ানোতে সরকারের সুদৃষ্টি প্রতিফলিত হচ্ছে। সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, রাজধানীতে ২ লাখ ১৩ হাজার ৪৮৯টি কার চলাচল করে। অথচ গণপরিবহন হিসেবে বিবেচিত বাসের সংখ্যা ২২ হাজার ৮১৪ এবং মিনিবাসের সংখ্যা ৯ হাজার ৯৯৫।

২. ঢাকায় যানজটের দ্বিতীয় প্রধান কারণ হল ট্রাফিক অব্যবস্থাপনা। একদিকে সিগন্যাল লাইট অন্যদিকে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে ট্রাফিক পুলিশের ইসারা। এই দুই কাজেই ঢাকার ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় মারাত্মক ত্রুটি রয়েছে। এর সাথে বাড়তি মওকা হিসেবে যুক্ত আছে ট্রাফিক পুলিশের চাঁদাবাজি। সাম্প্রতিক সময়ে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সামনের সিগন্যালে কিভাবে ট্রাফিক পুলিশ চাঁদাবাজি ও কালেকশানের কারণে দীর্ঘ সময় যানজট তৈরি হয়, সে বিষয়ে দীর্ঘ নিবন্ধ দেখলাম। এয়ারপোর্ট সিগন্যালে দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তা সেখান থেকে মাসে কয়েক লাখ টাকা কিভাবে তুলতেন, সেই ঘটনা সবাই এখন জানে। শুধুমাত্র এয়ারপোর্ট সিগন্যালই নয়, ঢাকার প্রতিটি বড় বড় সিগন্যাল পয়েন্টে পুলিশ টাকা তোলে। চাঁদাবাজি করে। যে অপরাধে একটা গাড়িকে জরিমানা করা হয়, অধিকাংশ ক্ষেত্রে সেই অপরাধের কোনো সমাধান নাই। পুলিশ টাকা পেলেই মামলা খালাস। প্রতিদিন রাজধানী ঢাকায় প্রায় ৬০০ সিগন্যাল পয়েন্টে পুলিশ এভাবে চাঁদাবাজি করছে। সরকার বাহাদুর এসব জেনেও না জানার ভান করছে। সিগন্যাল পয়েন্টে দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ যে অপকর্মটি করছে, সে কারণে যে যানজট লেগে যাচ্ছে, পরবর্তী ঘণ্টায় সেই রেশ আর কমে না বরং ক্রমবর্ধমান হারে বাড়ে। মজার ব্যাপার হল, প্রতিদিন অলৌকিক কারণে সকাল নয়টা থেকে রাত এগারো-সাড়ে এগারোটা পর্যন্ত যানজট থাকে ঢাকায়। আর রাত বারোটার পর ঢাকার রাস্তা ফাঁকা হয়ে যায়। মানে যতক্ষণ ট্রাফিক পুলিশ অপকর্মে ব্যস্ত ততক্ষণ যানজট থাকে। ট্রাফিক পুলিশের অপকর্ম নাই তো যানজটও নাই।

৩. ভিভিআইপি ও ভিআইপিদের চলাচলের কারণে ঢাকায় যানজট সৃষ্টি হবার আরেকটি প্রধান কারণ। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী যখন একস্থান থেকে অন্যস্থানে যাতায়াত করেন, তখন প্রধানমন্ত্রীর স্টার্টিং পয়েন্ট ও এন্ডিং পয়েন্ট পর্যন্ত এক আজগুবি ট্রাফিক ব্যবস্থা বাংলাদেশে বিদ্যমান। পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে কোনো প্রধানমন্ত্রীর চলাচলের সময় রাস্তায় অন্য গাড়িকে এভাবে স্থির দাঁড়িয়ে থাকতে দেখার প্রশ্নই আসে না। বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী যখন যে রাস্তা দিয়ে চলাচল করেন, তখন সেই পথটি পুলিশ ওয়ানওয়ে করে দেয়। পুরো পথের অন্য সকল গাড়ি ও মানুষের তখন প্রধানমন্ত্রীর চলে যাবার পর নড়নচড়ন করার সময়। এক্ষেত্রে নিরাপত্তা একটা প্রধান ইস্যু। কিন্তু এভাবে রাস্তা বন্ধ করে দিনে একবার চলাচল করলেই সেদিনের সারাদিনের যানজটের জন্য এটিই প্রধান কারণ হয়ে যায়। যা ট্রাফিক পুলিশ বিকল্প কোনো ব্যবস্থার কথা না ভেবে এভাবেই অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চালিয়ে যাচ্ছে। এটা ঢাকার যানজটের একটি সুপ্রিম কারণ।
ছোটবেলায় আমরা বইয়ে পড়তাম ট্রাফিক সিগন্যালে একজন ট্রাফিক পুলিশ কোন গাড়িটাকে আগে পার করে দেবে এমন সব গল্প। সেখানে বলা থাকতো একদিক দিয়ে আসছে সেনাবাহিনী প্রধান এক জেনারেল ও তার বাহিনীর গাড়ি। একদিক দিয়ে আসছে প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতির গাড়ি। একদিক দিয়ে আসছে অ্যাম্বুলেন্স। একদিক দিয়ে আসছে বিচারপতির গাড়ি। এবার ট্রাফিক পুলিশ কোনটার পর কোন গাড়িটা ছাড়বে? তো আমরা জবাব লিখতাম, নিরাপত্তাজনিত কারণে সেনাবাহিনীর জেনারেলের গাড়িটা প্রথম ছাড়া হবে। যেহেতু তিনি বাহিনী নিয়ে কোথাও যাচ্ছেন। গুরুতর কিছু হয়তো। তারপর ছাড়া হবে অ্যাম্বুলেন্স। কারণ রোগীকে বাঁচানোর প্রশ্ন। তারপর ছাড়া হবে প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতির গাড়ি। আর সবশেষে ছাড়া হবে বিচারপতির গাড়ি।
কিন্তু বড় হয়ে বাস্তবে এসে যা দেখছি, সেটা এরকম, প্রথম ছাড়া হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্টপতির গাড়ি। তারপর সেনাপ্রধানের গাড়ি। তারপর বিচারপতির গাড়ি আর সবশেষে অ্যাম্বুলেন্স। তো যে দেশে মুমূর্ষু রোগীর বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স সিগন্যালে গুরুত্ব পায় না, গুরুক্ব পায় প্রধানমন্ত্রীর গাড়ি, সেদেশে তো ট্রাফিক ব্যবস্থা বলে কিছু আসলে নেই!!

৪. ঢাকার রাজপথ ও ফুটপথের অবৈধ দখল নতুন করে যানজট সৃষ্টি করছে। এই অবৈধ দখলদারদের মদদদাতা ও সহযোগি আবার পুলিশ। পুলিশকে টাকা দিয়ে ম্যানেজ করেই এরা দীর্ঘ সময় রাজপথ ও ফুটপথ অবৈধভাবে দখলে রাখছে। অথচ মজার ব্যাপার হল এসব অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদের দায়িত্ব আবার ট্রাফিক পুলিশ কর্তৃপক্ষের। মানে রাজপথ ও ফুটপথ অবৈধ দখলদারদের কাছে ঘণ্টা ওয়াইজ পুলিশ কিন্তু ভাড়া নিচ্ছে। পুলিশ চাইলে ওরা গাড়ি রাখতে পারে। ফুটপথ আটকাতে পারে। পুলিশ না চাইলে পারে না। গিভ অ্যান্ড টেক ফর্মুলা। যা ঢাকার যানজটের অন্যতম প্রধান কারণ।

৫. ঢাকা শহরের ভেতর থেকে ট্রেন চলাচল যানজটের আরেকটি প্রধান কারণ। ঢাকায় প্রতিদিন অন্তত ৭২টি ট্রেন চলাচল করে। ২০টি রেলক্রসিং পয়েন্ট ট্রেন চলার মুহূর্তে বন্ধ করে দিতে হয়। কমলাপুর থেকে এয়ারপোর্ট এবং কমলাপুর থেকে নারায়নগঞ্জ পর্যন্ত অন্তত ২০টি রেলক্রিসংয়ে ট্রেন চলাচলের কারণে যানজটের সৃষ্টি হয়। গড়ে প্রতি ঘণ্টায় তিনটি ট্রেন গেলেও ট্রেন চলাচলের কারণে ঢাকায় প্রায় ৬ ঘণ্টা যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। ফলে যানজটের সৃষ্টি হয়।

৬. অবৈধ পার্কিং ঢাকার যানজটের আরেকটি প্রধান কারণ। ঢাকায় যত্রতত্র মার্কেট গড়ে ওঠায় এবং এসব মার্কেটে যথেষ্ঠ পার্কিং ব্যবস্থা না থাকায়, রাস্তার মধ্যে যেখানে সেখানেই গাড়ি পার্কি হচ্ছে। এসব গাড়ি ঢাকার রাস্তার একটা বড় অংশ দখর করে রাখছে। যা যানজটের একটি অন্যতম কারণ। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি শহরের রাস্তার পরিমাণ হওয়া উচিত মোট আয়তনের ২৫ শতাংশ। অথচ ঢাকায় এই পরিমাণ মাত্র ৭-৮ শতাংশ। যার আবার একটা অংশ অবৈধ পার্কিং দখল করে রাখছে। ফলে যানজট বাড়ছে।

৭. রাস্তার যেখানে সেখানে গাড়ি ঘোরানো বা ইউ টার্ন করা ঢাকার রাস্তায় যানজটের আরেকটি বড় কারণ। যেখানে সেখানে সুযোগ পেলেই গাড়ি ঘোরানো পার্কিং করা ঢাকার যানজটের একটি প্রধান কারণ। কেবলমাত্র ট্রাফিক পুলিশ কঠোর থাকলে এটা রোধ করা সম্ভব। পাশাপাশি ট্রাফিক আইনের প্রতি গাড়িচালকদের একেবারে তোয়াক্কা না করাও এর একটা বড় কারণ। কারণ গাড়িচালকরা মনে করে, ওদের তো টাকা দিয়েই শান্ত করা যায়, তাই সুযোগটি তারা সব সময় ব্যবহার না করতে একদম ভোলে না।

৮. ট্রাফিক আইনের প্রতি কারো শ্রদ্ধা না থাকাও ঢাকার যানজটের একটি প্রধান কারণ। আমাদের মন্ত্রী ও সাংসদরা যানজট এড়াতে সুযোগ বুঝে রাস্তার উল্টোদিক দিয়ে গাড়ি চালান। বাংলাদেশে কুতুবরা সবারই রাস্তায় ট্রাফিক আইনের প্রতি এক ধরনের তোয়াক্কা না করার হিম্মত দেখান। পাশাপাশি কুতুবদের পথ অনুসরণ করে সাধারণ চালকরাও ট্রাফিক আইনকে ততোটা গুরুত্ব দেয় না। যা যানজট সৃষ্টি করতে বিশাল ভূমিকা রাখে। সিগন্যাল পড়ার পরেও এখানে গাড়ি চলাচল করার ব্যাপারটা একেবারে মামুলি হয়ে গেছে। এটা কঠোর ভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে যানজট কোনোদিন কমবে না বরং যত দিন যাবে তত বাড়বে।

৯. শহরের ভেতরে থাকা বাস টার্মিনাল ঢাকায় যানজটের অন্যতম প্রধান কারণ। মহাখালী ও সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল শহরের ভেতরে হওয়ায় যানজট সৃষ্টি করার জন্য এটা অনেকটা দায়ী। এই দুটি টার্মিনাল থেকে প্রতিদিন অসংখ্য গাড়ি ঢাকার বাইরে থেকে আসছে বা ঢাকা থেকে বাইরে যাচ্ছে। যা ঢাকার রেগুলার গাড়ির উপর নতুন চাপ তৈরি করছে। যা যানজটের একটা প্রধান কারণ। বাস টার্মিনাল শহরের বাইরে সরানো না গেলে এর থেকে পরিত্রাণ মিলবে না। তেজগাঁও থেকে ট্রাক টার্মিনাল সরিয়ে নেওয়া, কারওয়ান বাজার থেকে কাঁচাবাজার সরানো, আমিন বাজারে ট্রাক দাঁড়িয়ে থাকা বন্ধ করা, মোহাম্মদপুরের বাস টার্মিনাল সরিয়ে নেওয়ার মত বিষয়গুলোর সমাধান না হলে ঢাকার যানজট কমানো যাবে না।

১০. ঢাকার রাস্তায় প্রচুর পরিমাণে অযান্ত্রিক যানবাহনের অবাধ বিচরণ যানজট সৃষ্টির একটি অন্যতম কারণ। ৭৯ হাজার লাইসেন্সধারী রিকশার বিপরীতে ঢাকায় প্রায় ১০ লাখ রিকশা চলাচল করে। যান্ত্রিক ও অযান্ত্রিক যান একই সড়কে চলাচল করলে যান্ত্রিক যানের গতি শ্লথ হয়। যা যানজট সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে। ঢাকায় ভুয়া লাইসেন্স নিয়ে রিকশা চলাচল করে প্রায় ৯ লাখ একুশ হাজার। আর ১৮ লাখ ৭৭ হাজার লাইসেন্স বিহীন চালক ঢাকার রাস্তায় গাড়ি চালায়। সম্প্রতি হাইকোট সড়কে ফিটনেসবিহীন মোটরযান চলাচল বন্ধের পাশাপাশি ১৮ লাখ ৭৭ হাজার চালকের হাতে থাকা ‘ভুয়া ড্রাইভিং লাইসেন্স’ জব্দের নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু কানারে হাইকোর্ট দেখানোর মত বাংলাদেশে হাইকোর্টের এই নির্দেশ যে পালিত হবে না, তা এখনই হলপ করে বলে দেওয়া যায়।

১১. ঢাকায় যানজট সৃষ্টির নতুন কারণ হচ্ছে এখন অপরিকল্পিত ফ্লাইওভার। ফ্লাইওভার যেখানে গিয়ে নামছে সেখানে পৌঁছে গাড়ি থমকে যাচ্ছে। মহাখালী ফ্লাইওভারের কারণে এখন প্রধানমন্ত্রীর অফিসের সামনের যানজট একটা স্থায়ী আকার পেয়েছে। আবার নির্মাণাধীন মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারের কাজ শেষ হলে বাংলামটর প্রান্তে আরেকটি স্থায়ী যানজট সৃষ্টি হবে। ইস্কাটনের বাংলা মটর মুখী ফ্লাইওভার যেখানে এসে নামল, সেখান থেকে গাড়ি গুলো কোথায় কিভাবে যাবে, পরিকল্পনায় সেটি একবারও ভাবা হয়নি। অথচ এখন এই রাস্তায় মগবাজারের দিক থেকে আসা গাড়িগুলো স্বাভাবিক সিগন্যালের চেয়ে অন্তত তিনগুণ সময় বাংলামটর ক্রোসিংয়ে আটকে থাকে। মগবাজার ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ শেষ হলে বাংলামটর সিগন্যাল পয়েন্টে ভয়াবহ যানজট লাগবে।

১২. ঢাকার রাস্তা খোড়াখুড়ি যানজটের অন্যতম প্রধান কারণ। ওয়াসা, ডেসা, টিএন্ডটি, সিটি কর্পোরেশান এই চারটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের কাজে কোনো সমন্বয় নেই। ওয়াসা রাস্তা খুড়ে কাজ শেষে রাস্তা বন্ধ করার পর, ডেসা এসে আবার রাস্তা খুড়ছে। ডেসার কাজ শেষ হলে টিএন্ডটি আসছে। টিএন্ডটির কাজ শেষ হলে সিটি কর্পোরেশান আবার রাস্তা খুড়ছে। ঢাকায় একই রাস্তা বছরে চারটি প্রতিষ্ঠান চারবার করে খুড়ছে। রাস্তা খোড়াখুড়ির কারণে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। অথচ এই কাজটিতে সরকারের সদিচ্ছা থাকলে এক বছরেই সমন্বয় করা সম্ভব। চোরায় না শোনে ধর্মের কাহিনী। রাস্তা খুড়লেই কনটাকটরদের পোয়া বারো। বলতে পারো বাংলাদেশে এসব কাজের কনটাকটর কারা? আমাদের মন্ত্রী, সাংসদ, মেয়র, কমিশনার এরাই এসব কাজের ঠিকাদার। আর এসব কাজে এরা দায়সারা ভাবে অর্ধেক কাজ করে অর্ধসমাপ্ত কাজ রেখেই বাজেট নিয়ে কেটে পড়ে। ফিবছর আবার নতুন বাজেটে নতুন করে খোড়াখুড়ি চলে। আমাদের মন্ত্রী-সাংসদদের এটা একটা রুটি-রোজগারের ব্যাপার স্যাপার আরকি।
এরসঙ্গে যুক্ত হয় রাস্তার আইল্যান্ড বাঁকাকরণ-সোজাকরণ প্রকল্প। রাম যদি বাঁকা করে শ্যাম এসে সোজা করে। যারে কয় মগের মুল্লুক। করিম যদি সৌন্দর্য বর্ধন করে, রহিম এসে সৌন্দর্যে ব্যবচ্ছেদ টানে। পরে আবার ফাহিম এসে চুনকালি করে। এই রাস্তা খোড়াখুড়ি ও বন্ধ করার কাজে স্বয়ং রাষ্ট্রের বড় বড় মন্ত্রী-সাংসদ ও তাদের পালিত কনটাকটর কুতুবরা বছরের পর বছর অবৈধ পথে টাকা কামাচ্ছে। রাষ্ট্র এটা পুরো জানলেও আমলে নেয় না। বরং পোলাপাইনদের কিছু করে খাবার রাস্তা করে দিচ্ছে ঢাকার রাস্তা এভাবে এদেরকে দলীয় ও রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে ইজারা দিয়ে। যা যানজটের অন্যতম প্রধান কারণ। এ বিষয়ে রাষ্ট্র যতক্ষণ প্রশ্রয় দেবে ততক্ষণ তা কোনো ফল বয়ে আনবে না।

১৩. রাজনৈতিক সমাবেশ ও মিছিল ঢাকার যানজটের অন্যতম প্রধান কারণ। ঢাকায় বড় বড় রাজনৈতিক দলগুলো যেদিন যেখানে কোনো কর্মসূচি দেয়, সেদিন স্মরণকালের ভয়াবহ যানজট লাগে। একটি মরার দেশে রাজপথে সমাবেশ-মিছিল হয়, যা আবার হাজার শ্রমঘণ্টা নষ্ট করে। সাম্প্রতিক এক রিপোর্ট অনুযায়ী, ঢাকায় যানজটের ফলে বছরে প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে। আর ৩২ লাখ কর্ম ঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত রাজধানীতে চলাচলাকারী যানবাহনগুলো গড়ে ৭ ঘণ্টা আটকে থাকে। ফলে যানবাহন আটকে থাকা যাত্রীরা শারীরিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে। যানজটের কারণে রফতানি বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে যার ফলে দেশের অর্থনীতির উপরে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। অথচ আমাদের দেশপ্রেমী রাজনৈতিক দলগুলো কথায় কথায় রাজপথে মিছিল বা সমাবেশের ঘোষণা দিচ্ছে। একদিকে এরা কথায় কথায় দেশপ্রেম দেখিয়ে লুটিয়ে পড়ছে, অন্যদিকে দেশের কোটি কোটি টাকা নানাভাবে নষ্ট করছে। আর একবার এরা ক্ষমতায় গেলে ওই বাঁকাকরণ-সোজাকরণ প্রকল্প দিয়ে আবার অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকার পাহাড় গড়ছে। আমি এই কথার এটা সংক্ষিপ্ত ট্যাগ দিতে চাই এভাবে যে, বাংলাদেশের রাজনীতিবিদরাই ঢাকার যানজটের জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী।

১৪. ঢাকার রাস্তার চেয়ে যানবাহনের সংখ্যা বেশি। যা যানজটের একটি অন্যতম প্রধান কারণ। ট্রাফিক বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, রাজধানীতে যে পরিমাণ রাস্তা আছে তাতে তিন লাখের মতো গাড়ি চলতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) তথ্যমতে, চলতি বছরের জুন পর্যন্ত রাজধানীতে নিবন্ধিত গাড়ির সংখ্যা প্রায় নয় লাখ। প্রকৃত সংখ্যা এর চেয়েও বেশি বলে সংশ্লিষ্টদের ধারণা। যার প্রমাণ ১৮ লাখ ৭৭ হাজার ‘ভুয়া ড্রাইভিং লাইসেন্স’। এতো গাড়ি আছে বলেই এতো ‘ভুয়া ড্রাইভিং লাইসেন্স’। আর ৭৯ হাজার লাইসেন্সধারী রিকশার বিপরীতে ঢাকায় চলাচল করে ১০ লাখ রিকশা। প্রকৃতপক্ষে ঢাকার রাস্তায় প্রতিদিন গড়ে ৭০ থেকে ৮০ লাখ গাড়ি চলাচল করে। আর এই গাড়িগুলো ভীনদেশ থেকে আসে না। আমাদের চোখের দেখা এই ঢাকা মহানগরীর রাম-শ্যাম-যদু-মধু-রহিম-করিম-আবদুল-কুদ্দুচরাই এসব গাড়ি নিয়ে রাস্তায় রোজ বের হয়।

১৫. ঢাকার ট্রাফিক বিভাগের সূত্রমতে, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় জনবল সংকটও যানজটের একটি প্রধান কারণ। ঢাকা শহরের প্রায় ৬০০ ট্রাফিক সিগন্যাল পয়েন্টে সোয়া তিন হাজার ট্রাফিক সদস্যের মধ্যে ২ হাজার ৮০০ কনস্টেবল তিন পালায় দিনরাত কাজ করেন। প্রথম পালায় প্রতিদিন ভোর ছয়টা থেকে বেলা দুইটা পর্যন্ত কাজ করেন ১ হাজার ৩৫০ জন কনস্টেবল। বিকেলের পালার কাজ বেলা দুইটা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত; দায়িত্বে থাকেন ১ হাজার ৪০০ কনস্টেবল। এ ছাড়া ৪০টি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে রাত ১১টা থেকে তিনটা পর্যন্ত ১৫০ জন ট্রাফিক কনস্টেবল দায়িত্ব পালন করেন।
ছুটির কারণে মোট জনবলের মাত্র ৮০ ভাগ সদস্যকে প্রতিদিন কাজে পাওয়া যায়। সেই হিসাবে প্রতিদিন একেক পালায় ৯৫০ জন ট্রাফিক কনস্টেবল ঢাকার ৬০০ পয়েন্টে কাজ করেন। অর্থাৎ প্রতিটি পয়েন্ট দুজনেরও কম ট্রাফিক কনস্টেবল ঢাকার রাজপথ সামাল দেবার দায়িত্বে থাকেন। এ ছাড়া ট্রাফিক সার্জেন্টের ৩৫০টি পদ শূন্য রয়েছে। যদিও ট্রাফিক বিভাগে জনবল সংকট কমাতে পারলে বিভিন্ন সিগন্যাল পয়েন্টে হয়তো বেশি ট্রাফিক কনস্টেবল পাওয়া যাবে। শুধু ট্রাফিক পুলিশের সংখ্যা বাড়ালে যানজটের সমস্যা সমাধান হবে না। এতে হয়তো ট্রাফিক সদস্যদের ওপর চাপ কমবে। কিন্তু ট্রাফিক পুলিশের খাসিলত ঠিক না হলে ঢাকার যানজট কোনোদিন কমবে না। বরং ধীরে ধীরে বেড়ে এটা এক সময় পরিত্যক্ত নগরে পরিণত হবে।

এতোক্ষণ আমি ঢাকায় যানজটের প্রধান প্রধান কারণগুলো বলার চেষ্টা করলাম। বন্ধুরা এর সঙ্গে আপনার দেখা যৌক্তিক কারণগুলো যোগ করতে পারেন। আর যানজট থেকে মুক্তির উপায় কী তা মনে হয় লেখা একটা বাতুলতা হবে। কারণ, সরকার বাহাদুর ভালো করেই জানে যানজট না থাকলে অনেকেরই আয় রোজগার বন্ধ হয়ে যাবে। সাধারণ মানুষ কর্মমুখর হলেও কুতুবদের চালাকি করে টাকা বানানোর মেশিনগুলো অকেজো হয়ে যাবে। মোদ্দাকথা, ঢাকার যানজট মানুষসৃষ্ট। এই মানুষগুলো রাষ্ট্রের বড় বড় কুতুব। এরা কৌশলে লাখ লাখ মানুষের নানান কিসিমের ভোগান্তির বিনিময়ে দুই পয়সার ধান্দা করতেই ঢাকার রাস্তায় নানান ক্যারিক্যাচা করে যানজট লাগিয়ে রাখছে। সরকার বাহাদুরে সদিচ্ছা থাকলে ঢাকার যানজট দূর করা মাত্র সাত দিনের ব্যাপার। আমি গ্রান্টি দিয়ে বলতে পারি। কিন্তু সেই সদিচ্ছার পেছনে বাম হাত ঢুকিয়ে দেবার জন্য অনেক খান সাহেব, সৈয়দ সাহেব, চৌধুরী সাহেবরা আছেন। যারা সেটা সরকারকে করতে দেয় না।

...............................
৬ আগস্ট ২০১৫
ঢাকা

সূত্র: বিভিন্ন পত্রিকা ও সমীক্ষা

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই আগস্ট, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৪০

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: দারুন কাজ করেছেন। ধন্যবাদ।

এইসবের কারণের সাথে আরও একটা কারণের কথা শোনা যায়- অথেনটিসিটি শতভাগ না হরেও ধারনায় মনে হয় হতে পারে!
তেল কোম্পানী এই কৃত্রিম যানজট তৈরিতে বিনিয়োগ করে!!!!!!

কারণ-
৭০ থেকে ৮০ লাখ গাড়ি যদি গড়ে দুই ঘন্টাও বাড়তি তেল পোড়ানো যায় ৭০* ২ = ১৪০ লাখ লিটার বাড়তি তেল বিক্রি!
গড় মূল্য ৫০ টাকা করে ধরলেও অর্থমূল্যে তা দাড়ায় দৈনিক ৭০ কোটি টাকা! মাসে দুইহাজার একশত কোটি টাকা!!!!

পালাবি কোথায়???????
আমজনতা এখন এই হালে!!!!!

২| ০৬ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ৮:৩৫

সাদা মনের মানুষ বলেছেন: আমরা পাবলিক বাসের যাত্রী, প্রাইভেট ওয়ালাদের পিছু লাগার সাহস কোথায়?

৩| ০৬ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ৮:৩৬

সাদা মনের মানুষ বলেছেন:
বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: দারুন কাজ করেছেন। ধন্যবাদ।

এইসবের কারণের সাথে আরও একটা কারণের কথা শোনা যায়- অথেনটিসিটি শতভাগ না হরেও ধারনায় মনে হয় হতে পারে!
তেল কোম্পানী এই কৃত্রিম যানজট তৈরিতে বিনিয়োগ করে!!!!!!

কারণ-
৭০ থেকে ৮০ লাখ গাড়ি যদি গড়ে দুই ঘন্টাও বাড়তি তেল পোড়ানো যায় ৭০* ২ = ১৪০ লাখ লিটার বাড়তি তেল বিক্রি!
গড় মূল্য ৫০ টাকা করে ধরলেও অর্থমূল্যে তা দাড়ায় দৈনিক ৭০ কোটি টাকা! মাসে দুইহাজার একশত কোটি টাকা!!!!

পালাবি কোথায়???????
আমজনতা এখন এই হালে!!!!!

..................হায় হায় কন কি!!!!!!!!!!!!!!!!!!

৪| ০৬ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ৮:৪৪

মোহাম্মদ জামিল বলেছেন: এক্ষেত্রে আমরা মানে ঢাকাবাসীর সাধারন জনগন নিম্নোক্ত ২ টা কাজ করতে পারি।

১ নং কাজ-
সরকার বাহাদুর কে জন সাধারনের তরফ থেকে এটা অফার দেওয়া দরকার... খোলাখুলি ভাবে...

সরকার বাহাদুর এর মধ্যে যারা যানজট থেকে টাকা কামাই করেন, তাদের সবাইকে চিহ্নিত করে, একটা সংবর্ধনার মাধ্যেম তাদের পুরুস্কৃত করা হোক..আর মাথা নিচু করে তাদের করজোড়ে অফার টা দেওয়া উচিত- যে পরিমান টাকা তারা যানজট সৃস্টি করে কামান তা সাধারন জনগন পকেট থেকে চান্দা হিসাবে দিবে।


২ নং কাজ
সরকার বাহাদুর এর লোকজন কে যেখানে ২ নং কাজ করতে দেখিবেন সেখানে জনতার গনধোলাই দিতে হবে [ সরকার বনাম সাধারন জনতা ]... জনতা কর্তৃক সরকার ধোলাই...

৫| ০৬ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ১০:০৯

তুষার কাব্য বলেছেন: আমরা যানজটের কারন টা যেমন জানি তেমনি প্রতিকার টাও জানি ! কিন্তু বিড়ালের গলায় ঘণ্টা টা বাঁধবে কে এটাই হচ্ছে কথা :)

৬| ০৭ ই আগস্ট, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৩৫

আবু শাকিল বলেছেন: মুক্তি কোথায় :) :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.