নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।
আজ রাজধানী ঢাকার উত্তর গোড়ান এলাকায় দুর্বৃত্তের হাতে খুন হওয়া ব্লগার (নিলয় নীল) নীলান্দ্রী চট্টোপাধ্যায় নিলয়ের গ্রামের বাড়ি পিরোজপুর সদর উপজেলার টোনা ইউনিয়নের পান্তাডুবি গ্রামে। নীলাদ্রীর বাবার নাম তারাপদ চট্টোপাধ্যায়, মায়ের নাম অপর্ণা চট্টোপাধ্যায়। দুই ছেলেমেয়ের মধ্যে নিলয় বড়। তাদের একমাত্র মেয়ের নাম জয়শ্রী চট্টোপাধ্যায় গোপা।
স্থানীয় চলিশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিলয়ের পড়াশুনায় হাতেখড়ি। পিরোজপুরের তেজদাসকাঠী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০০৫ সালে নিলয় বিজ্ঞান বিভাগে গোল্ডেন এ নিয়ে এসএসসি পাস করেন। পিরোজপুর সরকারি সোহরাওয়ার্দী কলেজ থেকে ২০০৭ সালে বিজ্ঞান বিভাগে গোল্ডেন এ নিয়ে এইচএসসি পাস করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফিলোসপিতে অনার্স ও মাস্টার্স করেন। তারপর ঢাকার শাহবাগের পরিবাগে রিসার্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট কালেকটিভ (আরডিসি) নামে একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করতেন নিলয়।
নিহত নীলাদ্রি ব্লগ ও ফেসবুকে ‘নিলয় নীল’ ছদ্মনামে লেখালেখি করতেন। পরিবারের অমতে দুই বছর আগে নেত্রকোনার আশা মনি'র সাথে নিলয় কোর্ট ম্যারেজ করেন। বিয়ের পর থেকে নিলয়-আশা দম্পতি গোড়ানের ৮ নম্বর রোডের পানির পাম্পের গলিতে ১৬৭ নম্বর বাড়ির ৫ তলায় বসবাস করতেন।
মাসখানেক আগে মোবাইলে কল করে নিলয় নীলকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছিল বলে জানিয়েছেন তার স্ত্রী আশা মনি। নিলয়ের স্ত্রী আশা মনি শুক্রবার রাতে সাংবাদিকদের বলেন, হত্যাকাণ্ডের সময় তিনিও বাসায় ছিলেন। আশা মনি বলেন, আনুমানিক ২৫ বছর বয়সী এক যুবক এসে বলেন- বাড়ির মালিকের সঙ্গে কথা হয়েছে, তিনি বাসা দেখাতে বলেছেন। এরপর বাসা দেখার নাম করে লোকটি বাসার ভেতরে প্রবেশ করে। বাসা দেখার সময় হাতে থাকা মোবাইলে সে কাউকে এসএমএস করে। এসময় বাসা দেখা শেষ হলেও ওই যুবক বের না হওয়ায় বেডরুমে ল্যাপটপে কাজ করতে থাকা স্বামী নিলয়কে বিষয়টি জানান আশা।
আশা বলেন, নিলয় ওই যুবককে চলে যেতে বলার সঙ্গে সঙ্গেই আরও তিনজন লোক বাসায় প্রবেশ করে। এদের মধ্যে ৩০ থেকে ৩৫ বছর বয়সী একজনের মুখে দাড়ি ছিল। বাসায় ঢুকেই নারায়ে তাকবির, আল্লাহু আকবর বলেই চাপাতি দিয়ে নিলয়ের হাতে কোপ দেয় দাড়িওয়ালা লোকটি। নিলয়কে কোপ দেওয়ার পর চিৎকার করে স্বামীকে না মারতে তিনি ওই লোকের পা জড়িয়ে ধরেন। এরপর তাকে চুল ধরে টেনে নিয়ে একটি বারান্দায় আটকে রাখা হয়।
রাজধানীর গোড়ানের পাঁচ তলার ওই বাড়িতে পঞ্চম তলায় স্ত্রীকে নিয়ে সাবলেট থাকতেন নিলয়। ওই ফ্ল্যাটে দুইটি বেডরুম, দুটি বারান্দা, রান্না ঘর ছাড়াও ছোট্ট আরেকটি কক্ষ আছে। একটি বেডরুম, বারান্দা ও ছোট্ট কক্ষটি ব্যবহার করত নিলয় দম্পতি।
ছোট বোন ইশরাত তন্নী বৃহস্পতিবার নেত্রকোনা থেকে ঢাকায় বেড়াতে এসেছে জানিয়ে আশা মনি বলেন, ওই সময় আমার বোন রান্না করছিল। সেও চিৎকার শুরু করলে তারা ওকে অন্য একটি বারান্দায় আটকে রাখে। দুই বোনকে আলাদা আলাদা বারান্দায় আটকে রেখে নিলয়কে মাথা ও ঘাড়ে কুপিয়ে যুবকরা চলে যায়। নিলয়কে কোপানোর সময় তারা 'আল্লাহু আকবর' বলে চিৎকার করেছিল। চারজন যুবকের মধ্যে একজনের হাতে কালো রঙের একটি পিস্তল ছিল। যুবকরা চলে যাওয়ার পর থেকে নিলয়ের ব্যক্তিগত ল্যাপটপটা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
নিহত নিলয়ের গ্রামের বাড়ি পিরোজপুরে চলছে এখন শোকের মাতম। এক সপ্তাহ আগে নিলয় বাড়িতে গিয়েছিলেন। নিলয়ের মা অপর্ণা চট্টোপাধ্যায় ছেলেকে ঢাকায় ফিরে যেতে নিষেধ করে বাড়িতে বসে বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে বলেছিলেন। একমাত্র বোন জয়শ্রী চট্টোপাধ্যায় গোপা একমাত্র ভাইয়ের শত্রুহীনতার কথা বলে হত্যাকারীদের বিচার দাবি করেন।
স্থানীয় এলাকাবাসীসহ অনেকে বলেন, নিলয়-গোপা পিঠাপিঠি ভাই-বোন। বাবা তারাপদ চট্টোপাধ্যায় সাধারণ গৃহস্থ হলেও বাড়ির অনেকের কেউ শিক্ষক, কেউ আইনজীবী। দুর্বৃত্তদের হাতে দিন-দুপুরে নিলয়কে এভাবে বাসায় ঢুকে হত্যার তীব্র প্রতিবাদ করেছেন নিলয়ের পিরোজপুরের স্থানীয় এলাকাবাসী।
সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার এই ব্লগার ইস্টিশন ব্লগে লিখতেন 'নিলয় নীল' ছদ্মনামে। গত কিছুদিন ধরে হুমকি পেয়ে আসছিলেন বলে ফেইসবুক থেকে নিজের সব ছবি সরিয়ে ফেলার পাশাপাশি ঠিকানার জায়গায় বাংলাদেশের বদলে লিখেছিলেন ভারতের কলকাতার নাম।
যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ সাজার দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে আসা গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, নিলয় মঞ্চের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। ব্লগে নিয়মিত লিখতেন। গত ১৫ মে নিলয় ফেইসবুকে এক পোস্টে লিখেছিলেন, “আমাকে দুজন মানুষ অনুসরণ করেছে গত পরশু। ‘অনন্ত বিজয় দাশ হত্যার’ প্রতিবাদে আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে যোগদান শেষে আমার গন্তব্যে আসার পথে এই অনুসরণটা করা হয়।” ওই ঘটনায় জিডি করতে গেলেও থানা তা নেয়নি বলে ওই পোস্টে লিখেছিলেন নিলয়।
নিলয় ফেইসবুকে লিখেছিলেন, “অনেকগুলো থানা অতিক্রম করার জন্য গতকাল ঘটনাস্থলের আওতায় থাকা একটি থানায় গেলে তারা জিডি নিল না, তারা বললো আমাদের থানার অধীনে না, এটা অমুক থানার অধীনে পড়েছে ওখানে যেয়ে যোগাযোগ করুন, আর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দেশ ছেড়ে চলে যান।”
গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় ঘটনাস্থলে গিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, “নিলয়ের গলা ও ঘাড়ে এলোপাতাড়ি কোপের চিহ্ন রয়েছে। এর আগে অন্য ব্লগারদের যেভাবে হত্যা করা হয়েছে, এক্ষেত্রেও হত্যাকাণ্ডের ধরণ একই রকম। এ ঘটনাকে একটি ‘পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড’ হিসেবে চিহ্নিত করে কৃষ্ণপদ বলেন, “জুমার নামাজের সময় যখন আশেপাশের বাসার পুরুষরা নামাজে গেছেন, সেই সময়টিকেই তারা বেছে নিয়েছে।”
চলতি বছর ২৬ ফেব্রুয়ারি অমর একুশে বই মেলা থেকে ফেরার পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের টিএসসি মোড়ে জঙ্গি কায়দায় হামলায় খুন হন মুক্তমনা লেখক অভিজিৎ রায়। এরপর ৩০ মার্চ সকালে ঢাকার তেজগাঁও এলাকায় নিজের বাসা থেকে বেরিয়ে রাস্তায় খুন হন অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট ওয়াশিকুর রহমান বাবু। তার এক মাসের ১২ মে মাথায় সিলেটে বাসা থেকে বেরিয়ে অফিসে যাওয়ার পথে একই ধরনের হামলায় খুন হন আরেক মুক্তমনা ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশ। তিনিও গণজাগরণ মঞ্চের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এর আগে ২০১৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার হত্যাকাণ্ডের ক্ষেত্রেও গলার ওপরের অংশ, মুখ ও মাথা ছিল হামলাকারীদের লক্ষ্যবস্তু।
...............................
৭ আগস্ট ২০১৫
ঢাকা
২| ০৮ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ১২:২৮
মহান অতন্দ্র বলেছেন: নিজের উপর নিজেরই রাগ হচ্ছে কিছুই করতে পারছিনা বলে।
©somewhere in net ltd.
১| ০৮ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ১২:২১
প্রামানিক বলেছেন: দুঃখজনক ঘটনা।