নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।
নীলাদ্রী চট্টোপাধ্যায় (নিলয় নীল) হত্যা বিষয়ে কিছু সোজা কথা কঠিন করেই বলতে চাই। কথাগুলো সবচেয়ে অস্বস্তিকর হবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জন্য। সরকারি দলের জন্য। বাংলাদেশের চলমান সমাজ বাস্তবতার ভোক্তভোগীদের জন্য। তবুও কথাগুলো বলতে হবে। বলতে হবে সোজা কথা কিন্তু কঠিন করে।
১. মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত নিলয় খুব নিরাপত্তাহীনতায় ভুগেছেন। অনেকটা বেসরকারি মৃত্যু পরোয়ানা মাথায় নিয়ে ঘোরার মত। নিলয়কে প্রথমে ফোন করে মৃত্যু হুমকি দেওয়া হয়েছে। তারপর তাকে অনুসরন করা হয়েছে। তারপর সুযোগ মত তাকে খুন করেছে খুনিরা। তারপর বীরদর্পে খুনিরা আরামসে পালিয়েছে। এমন কি পালানোর আগে ওই বাড়িতে বসে খুনিরা বালতি দিয়ে পানি নিয়ে রক্তমাখা ছোড়া-চাপাতি পরিস্কার করেছে। তারপর সেগুলো নিজেদের সঙ্গে থাকা ব্যাগে নিয়েছে। তারপর জিকির করতে করতে পালিয়েছে। গণমাধ্যমে পাঠানো ই–মেইল বার্তায় হত্যার দায় স্বীকার করেছে আনসার আল ইসলাম নামের একটি সংগঠন। তারা গণমাধ্যমে বাংলা ও ইংরেজি দুই ধরনের মেইল করেছে। ইংরেজি মেইলে ঘটনা কিন্তু বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার উল্লেখ আছে। তার মানে নিলয়কে খুনের আগেই এই প্রেস রিলিজ তৈরি করা ছিল। বৃহস্পতিবার হয়তো কোনো কারণে খুনিরা সুযোগটি পায়নি। শুক্রবারে তারা সেটি সফল ভাবে সম্পন্ন করেছে।
২. পুলিশ নিলয়ের জিডি কেন নেয়নি? নিলয় ফেইসবুকে ১৫ মে তারিখে এক স্টাটাসে সেই কথা লিখেছেন। পরসু বলতে জিডি করার ঘটনা তাহলে ১৩ মে ২০১৫ তারিখের। ১৩ মে খিলগাঁও থানায় কোন পুলিশ কর্মকর্তা দায়িত্বরত ছিলেন, তা বের করা মোটেও কঠিন কাজ নয়। পুলিশের রোস্টারেই তা পাওয়া যাবে। তাহলে কোন পুলিশ অফিসার নিলয়কে দেশ ছেড়ে চলে যাবার পরামর্শ দিয়েছেন, তাকে বের করাও খুব কঠিন কাজ না।
কোনো থানায় দায়িত্বরত অবস্থায় পুলিশ রাষ্ট্রের কোনো সাধারণ নাগরিককে দেশ ছেড়ে চলে যাবার পরামর্শ দিতে পারেন না। তাহলে এই পুলিশ আমরা জনগণের ট্যাক্সের পয়সায় কেন পালন করব? নিলয় যতোই ব্লগার হোক, হিন্দু বা মালাউন বা কাফের হোক, মুসলিমদের সবচেয়ে বড় শত্রু হোক, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় নাস্তিক হোক, ইসলামের সবচেয়ে বড় শত্রু হোক না কেন, যদি নিলয় এসব হয়েও থাকেন, তাহলেও বাংলাদেশের একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে পুলিশের কাছে নিরাপত্তা চাইবার অধিকার নিলয়ের ছিল। নিলয় পুলিশের কাছে সেই অধিকার চেয়ে ব্যর্থ হয়েছে।
নিলয়ের কথা বাদ দিলাম, রাষ্ট্রের একজন সাধারণ নাগরিককে পুলিশ দায়িত্বরত অবস্থায় নিরাপত্তা দিতে পারবে না, এই কথা বলার কোনো সুযোগ নাই। যতক্ষণ পুলিশের শরীরে ইউনিফরম আছে, ততক্ষণ পুলিশ রাষ্ট্রের জনগণের সেবার জন্য প্রস্তুত। আমরা খিলগাঁও থানার সেই পুলিশ কর্মকর্তার নাম জানতে চাই। নিলয়কে দেশ ছেড়ে যাবার পরামর্শ তিনি কেন দিয়েছেন, তার ব্যাখ্যাও জানতে চাই। এই ব্যাখ্যা না দিয়ে তিনি কী মানসিকভাবে স্বস্থিতে থাকতে পারবেন? তিনি কী বাংলাদেশ পুলিশে থাকতে পারবেন? কারণ এমন লোক দিয়ে তো পুলিশ বিভাগের দুর্নাম ছাড়া আর কোনো লাভ হবে না। কে সেই পুলিশ কর্মকর্তা? স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তার নাম বলুক! জনগণের ট্যাক্সের পয়সায় তো আমরা এমন চতুর পুলিশ কর্মকর্তা পালন করতে চাই না।
৩. বাসার দরজা খুলে দিয়ে নিলয়ের স্ত্রী আশা মনি খুনিদের এক ধরনের সহযোগিতা করেছেন। আশা মনি খুব ভালো করেই জানতেন, তার স্বামীকে মৃত্যু হুমকি দেওয়া হয়েছে। থানায় পর্যন্ত নিলয়ের জিডি নেয়নি। পুলিশ নিলয়কে দেশ ছেড়ে চলে যেতে বলেছে। তাহলে বাসায় অপরিচিত কাউকে হুট করেই দরজা খুলে ঢুকতে দেওয়ার মত বোকামি কেন করলেন আশা মনি? আশা মনি বাকি জীবন তার এই বোকামির জন্য ভারী আফসোস করবেন। কিন্তু নিলয়কে আর ফিরে পাওয়া যাবে না। এটাই এখনকার বাস্তবতা।
যার স্বামীর বিরুদ্ধে এমন একটি ভয়ংকর মৃত্যু হুমকি বর্তমান। তার স্ত্রী হিসেবে আশা মনি হুট করেই অপরিচিত কাউকে কোনো যুক্তিতেই বাসায় এলাউ করতে পারেন না। তাও বাড়িভাড়ার নোটিশ না থাকা স্বত্তেও বাড়ি দেখতে দেওয়ার মত একটি তুচ্ছ ঘটনায়। যদি ওই বাড়িতে বাড়ি ভাড়ার কোনো নোটিশ সত্যি সত্যিও থেকে থাকে, নিলয়দের ঘর তো ভাড়া হবে না। সুতরাং কোন যুক্তিতে আশা মনি খুনিদের দরজা খুলে ঘরে ঢোকার সুযোগ করে দিলেন? পরিচয় নিশ্চিত না হয়ে আপনি কিভাবে অপরিচিত কাউকে বাসায় ঢুকতে দিলেন আশা মনি? আপনার এই ভুলের জন্য নিলয় যে নিজের ঘরেই দিনদুপুরে খুন হলেন, এটা কী আপনার বিবেককে সারা জীবন এখন শান্তনা দিতে পারবেন? আপনার এই কাণ্ডজ্ঞানহীন বোকামির জন্য নিলয় বাসার ভেতরেই খুন হয়েছে। আপনি দরজা না খুললে হয়তো খুনিদের আরো সময় নষ্ট হতো।
আশা মনিকে দায়ী করার জন্য এই যুক্তি দেওয়া হচ্ছে না। ঘটনার প্রেক্ষিতে কথাগুলো বলা। আপনার স্বামীর বিরুদ্ধে মৃত্যু হুমকি অথচ আপনি তার নিরাপত্তার কথা না ভেবে এমন একটি বোকার মত কাজ করবেন, এটা মানা খুব কঠিন। আপনার এই সামান্য বোকামির সমান নিলয়ের পুরো জীবনের দাম! এবার বাকি জীবন আফসোস না করে কী আপনি স্বস্থি পাবেন!
৪. শাহবাগের পরীবাগে রিসার্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট কালেকটিভ (আরডিসি) নামে একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করতেন নিলয়। সংস্থাটির চেয়ারপারসন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মেজবাহ কামাল নিলয়ের এই নিরাপত্তাহীন অবস্থার কথা ভালো করেই জানতেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রফেসর নিলয়কে তার নিরাপত্তা ইস্যুতে একটা ভালো পরামর্শ দিতে পারলেন না, নিলয়কে বুঝিয়ে একটা নিরাপদ জায়গায় তাকে রাখার ব্যবস্থাও করতে পারলেন না, এটাই বাস্তবতা।
প্রফেসর মেজবাহ কামাল নিলয়ের নিরাপত্তা বা কেন নেবেন? খোদ রাষ্ট্র যেখানে নিলয়ের নিরাপত্তা নিতে অপারগতা প্রকাশ করেছে। সেখানে প্রফেসর মেজবাহ কামাল তবু কিছুটা চেষ্টা করেছেন। নিলয়কে ঢাকার বাইরে বদলি করে চেষ্টা করেছেন। কিন্তু নিলয়ই ঢাকায় থাকতে হবে এমন একটি ইগোর কারণে ঘটনা যা ঘটার ঘটে গেল। বাংলাদেশে উচ্চ শিক্ষিত অধিকাংশ মানুষের মধ্যে এই ইগো সমস্যাটি আছে। কোনো ডাক্তারকে গ্রামের হাসপাতালে পোস্ট দিলে যেতে চায় না। কোনো প্রফেসরকে ছোট শহরের কম পরিচিত কলেজে বদলি করলে যেতে চায় না। সেই ইগো হয়তো নিলয়ের মধ্যেও ছিল।
কিন্তু প্রসঙ্গটি যে কারণে তোলা, এক্ষেত্রে প্রফেসর মেজবাহ কামাল কী একজন সত্যিকারের শিক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে পারতেন না? নিলয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের ছাত্র ছিলেন। প্রফেসর মেজবাহ কামাল ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক। অফিসের বাইরে তাদের সম্পর্ক কিন্তু ছাত্র-শিক্ষক। প্রফেসর মেজবাহ কামাল যদি আরেকটু শিক্ষক সুলভ মমতা দিয়ে সরাসরি ছাত্র না হলেও একই বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রের নিরাপত্তাকে আরো গুরুত্ব সহকারে নিয়ে, ছাত্র নিলয়কে তা পালন করতে বাধ্য করতেন, তাহলে হয়তো নিলয়কে এভাবে নিজের ঘরেই খুন হতে হতো না।
প্রফেসর মেজবাহ কামালদের বাংলাদেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে এখানেই কিছুটা ঘাটতি রয়েছে। ছাত্রছাত্রীদের ক্লাশ ফাঁকি দিয়ে আমাদের শিক্ষকরা কনসালটেন্সি ব্যবসায় জড়িত। অনেকের এনজিও ব্যবসাও আছে। শিক্ষকতা তাদের আসলে এক ধরনের লেবাস। মুখোশ পড়ে এরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আছেন। ছাত্রছাত্রীদের মূল্যবান সময় না দিয়ে এরা এনজিও-কনসালটেন্সি এসব মারিয়ে বেড়ান। তো তাদের মাথায় একজন ছাত্রের নিরাপত্তা ইস্যুটা অতোটা গুরুত্ব পাবার কথা নয়। তবুও প্রফেসর মেজবাহ কামাল নিলয়ের ব্যাপারে কিছুটা হলেও চেষ্টা করেছিলেন। এজন্য নিলয়ের এলাকাবাসী পিরোজপুরের সন্তান হিসেবে প্রফেসর মেজবাহ কামালকে আমি ধন্যবাদ জানাই।
৫. নাস্তিক আস্তিক ব্যাপারটি যখন ভোটের হিসাব নিকাশের সঙ্গে জড়িত, তখন সরকার বাহাদুর বোকার মত কেন নিলয়দের মত কথিত ব্লগারদের পক্ষে যাবে? যেখানে ব্লগারদের একটি গোষ্ঠি নাস্তিক আখ্যা দিয়েছে? অভিজিৎ, বিজয়, নিলয় এরা কারা? প্রথমত তারা হিন্দু। দ্বিতীয়ত তারা ব্লগার। তৃতীয়ত তাদের নামে নাস্তিক ব্যাপারটি জড়িত। চতুর্থত এরা সুযোগ পেলে আওয়ামী লীগেরও সমালোচনা করতে ছাড়ে না। কারণ এরা যুক্তিবাদী। পঞ্চমত এরা বয়সে তরুণ ও মেধাবী। তারুণ্য ও মেধাবীদের শুধু আওয়ামী লীগ না বাংলাদেশের যে কোনো রাজনৈতিক দলই কিছুটা ভয় পায়। কারণ বাংলাদেশের রাজনীতিতে মেধাবী লোকজন নেই। ক্লাসে যারা বখাটে নামে পরিচিত ছিল তারাইে এখন বড় বড় দলের বড় বড় নেতা। তাদের এখন গাড়ি বাড়ি টাকা বিদেশে সেকেন্ড হোম আরো কত কিছু।
ধর্মের ব্যাপারে বাংলাদেশের সবগুলো রাজনৈতিক দলই ভারী কৌশলী। নির্বাচনের প্রচারাভিযান শুরু করে এরা ওমরা হজ আর মাজার জিয়ারত করার মাধ্যমে। তো এসব রাজনৈতিক দলের কাছে একজন যুক্তিবাদী নিজ দলের বড় নেতা লতিফ সিদ্দিকীও যা, একজন অভিজিৎ রায়, একজন অনন্ত দাস বিজয়, একজন নীলাদ্রী চক্রবর্তী নিলয়ও তাই। ভোটারদের যত বোকা রাখা যাবে ততই আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর সুবিধা বেশি। অভিজিৎ-বিজয়-নিলয়-লতিফ সিদ্দিকীদের মত যুক্তিবাদী লোক ভোটের হিসাব নিকাশে কোনো কাজে লাগে না। ভোটের হিসাব নিকাশে বরং বোকা ভোটারদের যতটা বোকা রেখে কৌশলে কাজ সারা যায় ততই সুবিধা।
তো এবার আপনিই চিন্তা করে দেখুন, আওয়ামী লীগ একজন ব্লগারের খুন হওয়াকে কেন্দ্র করে কী ভোটে ফেল মারার ঝুঁকি নেবে? মোটেই না। বরং ব্লগারদের নাস্তিক বলা এবং ব্লগারদের একে একে খুন করা গেলে এসব রাজনৈতিক দলগুলোর বিপক্ষে কথা বলার মত যুক্তিবাদী লোকসংকট তৈরি হবে। যা ভবিষ্যতে রাজনৈতিক দলগুলোর বোকা আমজনতাকে আরো বোকা বানাতে সুবিধা হবে। তো জেনে বুঝে ভবিষ্যতের কথা ভেবেই আওয়ামী লীগ একের পর এক ব্লগার খুনের ব্যাপারে নিরব থাকার কৌশল নিয়েছে। এজন্য আপনি কী এখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগ চাইবেন?
বরং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এখন খিলগাঁও থানার সেই পুলিশ কর্মকর্তাকে ডেকে হয়তো প্রোমোশন দিতে পারেন। কারণ সেই পুলিশ কর্মকর্তা নিলয়কে বরং বেঁচে থাকার একটা উপায় বাতলে দিয়েছিলেন। যেটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রফেসর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন। আর রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী হয়তো একের পর এক ব্লগার হত্যার রহস্যের সঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নিরঙ্কুশ নিরবতার ধৈর্য্যের উপঢৌকন হিসেবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে আরো একটি বাড়তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিতে পারেন। নিদেন পক্ষে অন্তত দলীয় আরো বড় কোনো দায়িত্ব দিতে পারেন। কারণ আমরা কেউ জানি না, কে কিসে পুরস্কার পাবে আর কিসে সাজা পাবে!
৬. ডিজিটাল বাংলাদেশের নামে এত উন্নয়নে যেখানে দেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিনত হয়েছে, সেখানে বাংলাদেশে নিরাপত্তা প্রশ্নে একটি সাধারণ ডায়েরি (জেনারেল ডায়েরি) করতে কেন এখনো আমাকে থানায় যেতে হবে? বাংলাদেশে যদি প্রথম কিছু ডিজিটাল করতে হয়, সেটা তো হওয়া উচিত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যাবতীয় কিছু। ন্যাশনাল আইডি, পাসপোর্ট, থানায় জিডি এগুলো করার জন্য কেন আমাকে দৌড়াতে হবে? তাহলে ডিজিটাল বলতে আমরা আসলে কী বুঝি?
বাংলাদেশ পুলিশ কেন এখনো এমন একটি সেবা চালু করেনি যে ঘরে বসেই আপনি পুলিশের সাহায্য নিতে পারবেন অনলাইন ব্যবহার করে? বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ যেখানে পুলিশকে পারতপক্ষে এড়িয়ে চলে পুলিশের খাসিলতের জন্য। সেখানে সবচেয়ে আগেই তো এই সেবাটি চালু হওয়ার কথা। পুলিশের সঙ্গে দেখা না করেও আপনি প্রয়োজনীয় তথ্যটি পুলিশকে অবহিত করতে পারবেন, আপনার নিরাপত্তার বিষয়টি পুলিশকে জানাতে পারবেন, আপনার আতংকের বিষয়টি আপনি পুলিশকে জানাতে পারবেন। নইলে এই ডিজিটাল উন্নয়ন দিয়ে আমরা কোন পূজা করব? স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কেন এখনো সবকিছু ডিজিটাল পদ্ধতির দিকে যাচ্ছে না? ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে আর কতোকাল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আদাজল খাবে?
আসলে সরকার কিছু কিছু সুবিধা কোনো কোনো বাহিনীকে ইচ্ছে করেই দিয়ে রেখেছে। বাংলাদেশ পুলিশ খুব ভালো করেই চেনে কে কে সন্ত্রাসী আর কে কে ভালো মানুষ। নইলে আজ যদি ময়মনসিংহে একটি ব্যাংক ডাকাতি হয় কালই কিভাবে ব্যাংক ডাকাতির সঙ্গে জড়িত সেই অপরাধী ঢাকায় বা পটুয়াখালীতে পুলিশের কাছে ধরা পড়ে? আর খুনিরা কেন ধরা পড়ে না? কারণ খুনিদের ধরার জন্য সরকারের তরফ থেকে সুস্পষ্ট নির্দেশ নেই। নির্দেশ থাকলে কালই খুনি দেশ থেকে পালালেও পয়দা হবে। নইলে আসল খুনির বদলে পুলিশ জজমিঞা নাটক করে হলেও খুনি হাজির করবে।
বরং অনেক ক্ষেত্রে খোদ পুলিশই খুনির কাছ থেকে টাকা খেয়ে খুনিকে দেশের বাইরে যেতে সহযোগিতা করছে। যার হাতে নাতে প্রমাণ আমরা শিশু রাজন হত্যাকাণ্ডের পর সিলেট পুলিশের কর্মকাণ্ডে দেখেছি। তাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থানায় জিডি করার বা পুলিশি সহায়তা চাওয়ার জন্য একটা ডিজিটাল ব্যবস্থা ইচ্ছে করেই চালু করছে না, এটাই হল বর্তমান বাস্তবতা।
আসল কথা সরকার দেশের আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় যথেষ্ঠ মনযোগী নয়। সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কাছেই নালিশ করা যাবে, এমন একটি সুবিধা কেন বাংলাদেশে চালু হবে না? খোদ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তো প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি এখতিয়ার। একজন মন্ত্রী বরং দাপ্তরিক দায়িত্ব পালন করেন। তাহলে এই ডিজিটাল উন্নয়ন দিয়ে বাংলাদেশের কি লাভ হবে?
৭. বাংলাদেশে কোনো নিষিদ্ধ জঙ্গী গোষ্ঠী নেই, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই দাবি মোটেও সত্য নয়। বরং বাংলাদেশের ঘরে ঘরে এখন জঙ্গী তৈরি হচ্ছে। আর সেসব জঙ্গীদের সঙ্গে খোদ আইএসআইস বা আল কায়েদার মত ভয়ংকর জঙ্গীদের সরাসরি যোগাযোগ আছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ হওয়ায় এই সুবিধাটি বরং জঙ্গীরা শতভাগ ব্যবহার করছে। গতকাল নিলয়কে হত্যা করে যারা এর দায় স্বীকার করেছে, তারা পরিচয় দিয়েছে আনসার আল ইসলাম (আল কায়েদা ভারতীয় উপমহাদেশ, বাংলাদেশ শাখা) হিসাবে। আর তারা বলেছে তাদের মুজাহিদিনরা এই হামলা চালিয়ে সফল হয়েছে। তার মানে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী আছে। তাদের অনুসারীরা আছে।
বরং নতুন প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক যে খোদ সরকারের কোন বাহিনীতে কতজন জঙ্গী মুখোশ পড়ে আছে, সেই খতিয়ান কী খোদ সরকার বাহাদুর জানে? বাংলাদেশ পুলিশে যে এসব জঙ্গীদের সহযোগী নেই, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বা বিজিবিতে যে নেই, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, আনসার, র্যাব সহ বিভিন্ন বাহিনীতে যে এসব জঙ্গীদের কোনো সহযোগী নেই, তার নিশ্চয়তা কী? শুধু বিভিন্ন আইন শৃঙ্খলা বাহিনীই নয়, বাংলাদেশের পাসপোর্ট অফিসে, বিমানবন্দরে, কাস্টমসে যে এসব জঙ্গীদের কোনো সহযোগী নেই, তার নিশ্চয়তা কোথায়? এমন কী বাংলাদেশের বিদেশে অবস্থিত বিভিন্ন দূতাবাসগুলোতে যে এ ধরনের জঙ্গীদের কোনো সহযোগী নেই তার নিশ্চয়তা কী?
তার মানে খোদ জঙ্গী ইস্যুতে সরকার বাহাদুর একটা ফাঁপা অবাস্তব কল্পজগতে বাস করছেন। বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে কত জন জঙ্গী? সেই হিসাব সরকারের কাছে নাই। কে কে জঙ্গী সেই কথাও সরকারের ইনটেলিজেন্স এজেন্সির কাছে নাই। এই সত্য মানতে হবে। যা হয়তো বাংলাদেশের জন্য ভয়ংকর দুঃসংবাদের কারণ।
বাংলাদেশে এখন শিশুদের বিকৃত ভাবে হত্যা করা হচ্ছে। নারীদের প্রকাশ্যে শ্লীলতাহানী করা হচ্ছে। নারীকে ধর্ষনের পর খুন করা হচ্ছে। একই কায়দায় ব্লগারদের হত্যা করা হচ্ছে। সরকার বাহাদুর সাধারণ জনগণের নিরাপত্তা দিতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হচ্ছে। সরকার কোনো কৌশলেই এসব হত্যাকান্ডের দায় এড়াতে পারে না। আর এসব হত্যাকাণ্ডের প্রধান কারণ দেশে আইন আদালত সম্পূর্ণরূপে অকার্যকরের তালিকায় চলে গেছে। কোনো খুনেরই বিচার হচ্ছে না। বিচারহীনতাই বাংলাদেশে নতুন নতুন খুনের পেছনে সবচেয়ে বড় আলামত। সরকার সেই আলামতকে ইচ্ছে করেই লালন পালন করছে। অতএব সাধু সাবধান।
.....................................
৮ আগস্ট ২০১৫
ঢাকা
©somewhere in net ltd.