নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

রেজা ঘটক

ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।

রেজা ঘটক › বিস্তারিত পোস্টঃ

সেলফি একটি মানসিক সংক্রামক ব্যাধী !!!

১০ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ২:১৩

স্বার্থপরের মত কেবল নিজের ছবি তোলার আধুনিক নাম সেলফি। যারা বেশি বেশি সেলফি তোলে, তাদের মধ্যে স্বার্থপরতার লক্ষণ কতোটা সে বিষয়ে অবশ্য সাইকোলজিস্টদের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো যুক্তিসম্পন্ন মতামত পাওয়া যায় না। তবে সেলফি আর সাাজিক যোগাযোগ মাধ্যম দুটি বিপরীতমুখী বিষয় হলেও এই দুটোর মধ্যে সখ্যতা একটু ইদানিং কালে বেশি। বিশেষ করে ফেইসবুকে। মানুষ নানান ভঙ্গির সেলফি তুলে ফেইসবুকে দিচ্ছে। স্বার্থপরের মত কাজ করে সেটাকে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার এই প্রবনতাটি অনেকটাই মানসিক।

যারা যত বেশি সেলফি তোলে এদের মধ্যে এক ধরনের মানসিক সমস্যা বর্তমান। যা সে অন্য কোনো উপায়ে ব্যক্ত করতে পারে না। তাই ঘনঘন সেলফি তুলে মনকে সেদিকে ব্যস্ত রাখে। তবে দুর্গম ও ভয়ংকর বিপদজ্জনক অবস্থায় সেলফি তুলতে গিয়ে অনেক সময় দুর্ঘটনাও ঘটছে। সেলফিস এর সংক্ষিপ্ত রূপ সেলফিকে যদি আমরা আত্মকেন্দ্রিক ধরি, তাহলে পারিপার্শ্বিক জগত থেকে এই মানুষগুলো কিছুটা আত্মকেন্দ্রিক।

এদের এক ধরনের বিকারগ্রস্থতার কার্যকরী ফলাফল হল সেলফি। সমাজে সংঘটিত সংবেদনশীল ঘটনা থেকে এসব সেলফিওয়ালারা নিজেদের গুটিয়ে রাখায় অভ্যস্থ। যে কারণে দেখা যায় যখন রোম পোড়ে তখনো একদল লোক সেলফি নিয়ে ব্যস্ত। গ্রিক পুরানের নদীদেবতা সেগিসাস ও জলদেবী লেরিওপের সুদর্শন পুত্রসন্তান নার্সিসাস। অপরূপ তার সৌন্দর্য। নার্সিসাস অবজ্ঞাভরে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন দেবী ইকোর ভালোবাসা। ইকো প্রতিশোধের দেবী নেমেসিসের কাছে এই প্রত্যাখ্যানের প্রতিকারের জন্য নালিশ জানান। নেমেসিস নার্সিসাসের ওপর জাদু প্রয়োগ করলে, নার্সিসাস পানিতে নিজের প্রতিবিম্ব দেখে এতটাই মুগ্ধ হয়েছিলেন যে, চোখ অন্যদিকে ফেরানোর সামর্থ্য হারিয়ে ফেলেছিলেন। নিজের প্রেম পড়ে যান তিনি এবং এভাবেই মারা যান।

যেখানে নার্সিসাসের মৃত্যু ঘটে, সেখানে খুব সুন্দর একটি ফুল জন্ম নেয়। ওই ফুল পরিচিত হয় তারই নামে, ‘নার্সিসাস’। নার্সিসাস থেকে নার্সিসিজমের ধারণাটি এসেছে। যা মানুষের ভেতরকার আত্মপ্রেম, আত্মগর্ব ও আত্মশ্লাঘার বৈশিষ্ট্য ইঙ্গিত করে। এই মিথ থেকে ইংরেজি শব্দ ‘নার্সিসিজম’এরও জন্ম। এর মানে, নিজের মধ্যে একান্ত অভিনিবিষ্টতা; নিজের সৌন্দর্য ও সক্ষমতার অতিশায়িত অনুভূতি। যা নিজের প্রতি নিমগ্নতা তৈরি করে। অনেকটা আত্মমগ্নতা আর আত্মপ্রচারণার নার্সিসিজমের নূতন সংস্করণ হল সাম্প্রতিক কালের সেলফি।

আত্মমগ্নতায় আচ্ছন্ন নার্সিসাসের প্রতীকী মৃত্যুর মতো এই সেলফি সংস্কৃতি দিন দিন মানবতার ও সভ্যতার ধ্বংসের সময়েও এই ধরনের মানুষদের নির্বিকার করে তোলে। যা জগতের চলমান ঘটনার বিষয়ে সেই ব্যক্তির সংস্পর্শ না থাকারই এক ধরনের প্রমাণ। আপনি যদি খেয়াল করে দেখেন, একশ্রেণীর মানুষ বর্তমানে বাংলাদেশে সংঘটিত অনেক সংবেদনশীল ঘটনাকেও দিব্য চোখে এড়িয়ে এই সেলফি প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত। অনেকটা নিজে বাঁচলে বাপের নাম টাইপের আত্মগড়িমায় ভোগেন এরা।

অনেক নিশংস ঘটনায়ও এদের মধ্যে কোনো বিকার হয় না। এরা এদের মত নিজের প্রচার ও প্রসারে আত্মমগ্ন থাকে। সমাজের চোখে এরা কিন্তু স্বার্থপর। ভোগ আর তৃপ্তির ঢেকুর তোলায় এদের সৃজনশীলতা ধীরে ধীরে আক্রান্ত হয়। সমাজের কোনো উপকারে এই শ্রেণীটাকে একদম কাজে লাগে না। কারণ এরা আত্মতুষ্টিতো ভোগা এক ধরনের মানসিক রোগী। অন্যের বিষয়ে এদের কোনো আগ্রহ থাকে না।

সাধারণত আয়নায় যাদের নিজেদের চেহারা বেশি বেশি দেখার অভ্যাস তাদের মধ্যেই এই সেলফি প্রবনতা বেশি ঢুকে পড়েছে। এটা যে এক ধরনের মানসিক অতৃপ্তিজনিত ব্যাধী এটা এরা বুঝতে পারে না। জগত ও জীবনের বদলে এরা নিজের আত্মখুশিতে মগ্ন থাকে। স্বার্থপরের চেয়েও যদি কোনো চরম শব্দ থাকে সেটাকে হয়তো আগামীতে সেলফি'র বিকল্প শব্দ হিসেবে ব্যবহার করা হবে।

তবে একথা স্বীকার করতে হবে, সেলফি এক ধরনের ব্যক্তি বাতিক হলেও এর সাংঘাতিক র্যাচেট ইফেক্ট আছে। প্রদর্শন প্রভাবের কারণে এটি নিত্য নতুন মোড় নিচ্ছে। একজন আরেকজন কর্তৃক আকৃষ্ট হচ্ছে। একটি দেশের জনসাধারণের মধ্যে এই বিপজ্জনক সেলফি তোলার প্রবনতা যত বাড়বে, বুঝতে হবে সেই সমাজে বিকারগ্রস্থ লোকের সংখ্যা বাড়ছে। সবচেয়ে বড় আশংকা হল এটা যত বাড়বে ততই এর প্রভাবে সামাজিক বন্ধন দুর্বল হবে। যদিও সেলফি তুলে সেটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেই ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু এ থেকে সেই ব্যক্তির এক ধরনের একাকীত্বের চিত্রও বহিপ্রকাশ হচ্ছে।

২০১০ সালের দিকেও বাংলাদেশে ফেইসবুকের কথা বললে মানুষ হা করে তাকিয়ে থাকতো। সেই একই মানুষের দল এখন ফেইসবুকে দিনের বেশিরভাগ সময় ব্যয় করে। সংগে যুক্ত হয়েছে সেলফি তুলে তা ফেইসবুকে আপলোড করার এক নতুন সংস্কৃতি। তবে মজার ব্যাপার হল, এই সেলফি স্টাইল ধীরে ধীরে ঢঙ, ভঙ, সঙ ইত্যাদির দিকে চলে যাচ্ছে। মানুষ নিজেকে নানান কিসিমের অঙ্গভঙ্গিতে তুলে ধরছে। এতে আসল মানুষটার ভেতরের অসারতাই কেবল প্রকাশ পাচ্ছে। যা অনেকটা ব্যক্তিত্বহীনতারও এক ধরনের বহিপ্রকাশ।

তবে উড়োজাহাজ দিয়ে লাফ দিয়ে কারো সেলফি তোলার ছবি এখনো দেখা যায় নি। কিছুদিন আগে উচ্চ পবর্তের সেতু বিপজ্জনক সেতু থেকে লাফিয়ে তুলে সেলফি তোলার সময় একজন মারা যায়। একজন সাপের সঙ্গে সেলফি তুলতে গিয়ে সাপের কামড় খেয়ে হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে এখন পাঞ্জা লড়ছেন। কুমিরের সঙ্গে বা বাঘের সঙ্গে কেউ সেলফি তোলার এখনো সাহস দেখায় নি। তবে বিকারগ্রস্থ এসব লোকদের সেদিকে ধাবিত হবার আশংকার কথা কিন্তু উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

বর্তমান সামাজিক বাস্তবতায় মানুষ এমনিতে এক ধরনের গৃহবন্দি। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে ফেইসবুক, সেলফি, ট্যাব, ল্যাপটপ, কম্পিউটার। এসব ছোট্ট স্ক্রিন থেকে মানুষের চোখ খোলা আকাশের দিকে বড় স্ক্রিনে যাচ্ছে না। ফলে মানুষ দিন দিন আরো একাকীত্ব সমস্যায় ভুগছে। এই প্রবনতা যত বাড়বে ততই তা সামাজিক অবক্ষয় বাড়াতে আরো বড় আশংকা জাগিয়ে তুলবে। এটা সামাজিক যোগাযোগকে আরো সংকীর্ণ করে তুলবে। ব্যক্তিগত সুযোগ সুবিধায় মানুষকে আরো ব্যস্ত করে তুলবে। যে কারণে সেলফি ধীলে ধীলে সমাজে এক ধরনের নতুন সংক্রামক মানসিক রোগের লক্ষণ হিসেবে ফুটে উঠছে। এই সংক্রামক যত বাড়বে এই সমাজের তত বেশি পচন ধরবে।

তাই আপনি যতই হাসিখুশি সেলফি তুলে তা ফেইসবুকে ছড়িয়ে দেন না কেন, এটা যে একটা সংক্রামক ব্যাধী, আর আপনি সেই ব্যাধীতে আক্রান্ত একজন বিকারগ্রস্থ উন্মাদ, এটাই দিনশেষে বলঅ যায়। অতএব বেশি বেশি সেলফি তুলে নিজেকে আর বারবার পাগল প্রমাণ করার দরকার নাই। সেলফি বিষয়টা ধীরে ধীরে পাগলামির পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। এই মানুষগুলো সেলফি রোগে আক্রান্ত নতুন এক মানসিক রোগের রোগী। এদের কিন্তু কারো উপকারে কাজে লাগে না। অতএব সাধু সাবধান। আপনার সেলফি কিন্তু আমাদের বলে দিচ্ছে আপনার প্রতি আমরা কতোটা আশাবাদী থাকব বা কাজের সময় আপনাকে কতোটা কাছে পাব।

বি. দ্র. কলামিস্ট চিররঞ্জন সরকারের সেলফি চিন্তা থেকে ধার করা ভাবনার ট্যারাকোটা

১০ আগস্ট ২০১৫
ঢাকা

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই আগস্ট, ২০১৫ সকাল ৯:২৯

মাঘের নীল আকাশ বলেছেন: দাদা বহুপূর্বে লিখিত আমার একখান পোস্ট শেয়ার দিলাম...

http://www.somewhereinblog.net/blog/nmrusho/30033700

গতকাল বিডিনিউজ ২৪ এও দাদাকে দিয়াছিলাম... ;) ভাবনায় অনেক মিল পাই কী না... ;)

২| ১০ ই আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৫:০৯

সুমন কর বলেছেন: প্রচন্ড রকমের মানসিক সংক্রামক ব্যাধী !!!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.