নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।
১৯৭৩ সালের ৬ অক্টোবর আরব-ইসরাইল যুদ্ধ শুরু হয়। মিশর ও সিরিয়া যৌথভাবে ইসরাইলের উপর আক্রমণের সূচনা করে। ৬ অক্টোবর ছিল ইসরাইলীদের ইয়ম কিপ্পুর ধর্মীয় উৎসব। সেদিন ইসারাইলী সেনারা সবাই রোজা ছিল। মিশর ও সিরিয়ার সেনাবাহিনী জানতো যে, ইসরাইলী সেনারা এদিন ইয়ম কিপ্পুর ধর্মীয় উৎসবে ব্যস্ত থাকবে। এদিন তারা অনেকটা অস্ত্রহীন কাটাবে। হঠাৎ করে মিশর ও সিরিয়া একসঙ্গে ইসরাইলের উপর হামলা করায় ইসরাইল অনেকটা অপ্রস্তুত ওই যুদ্ধে দিশেহারা হয়ে যায়। গোলান মালভূমিতে ১৪০০ সিরিয়ান ট্যাংক ১৫০টি ইসরাইলী ট্যাংকে আক্রমণ করল। অন্যদিকে সুয়েজ খাল দিয়ে ৮০ হাজার মিশরীয় সেনা ৫০০ ইসরাইলী সেনাকে আক্রমণ করল। অন্যান্য আরব দেশগুলোর মধ্যে ইরাক যুদ্ধ শুরুর কয়েক মাস আগেই মিশরকে এক স্কোয়াড্রন জেট ফাইটার সহযোগিতা পাঠাল। ইরাকি সহযোগিতায় রাশিয়ার তৈরি মিগ ফাইটারগুলো গোলান মালভূমিতে আক্রমণ চালাল। যেখানে প্রায় ১৮ হাজার ইরাকি সেনা অংশগ্রহন করল। সৌদি আরব ও কুয়েত এই যুদ্ধে মিশর ও সিরিয়াকে প্রায় এক বিলিয়ন ডলার অর্থসাহায্য দিল। এছাড়া প্রায় ৩০০ সৌদি সেনা এই যুদ্ধে মিশর ও সিরিয়ার পক্ষে সরাসরি অংশ নিল। তিউনিশিয়া, সুদান ও মরক্কো এই যুদ্ধে আরবদের জন্য অর্থসাহায্য দিল। জর্ডান এই যুদ্ধে আরবদের পক্ষে সিরিয়ায় তিনটি আর্টিলারি ডিভিশান পাঠাল। ফ্রান্সের তৈরি মিরাজ ফাইটার দিয়ে লিবিয়া মিশরকে সহযোগিতা করল। ১৯৭৩ সালের আরব-ইসরাইল যুদ্ধটি ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ ট্যাংক যুদ্ধ। যেখানে প্রায় পাঁচ হাজারেরও বেশি ট্যাংক সরাসরি সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নেয়। এই যুদ্ধে আরবদের পক্ষ সমর্থন করে সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত স্বাধীন বাংলাদেশ। আর এই সমর্থনের নিদর্শন স্বরূপ বাংলাদেশ থেকে শেখ মুজিব আরব সেনাদের জন্য বিমান ভর্তি উৎকৃষ্ট মানের বাংলাদেশী চা পাঠালেন।
ইসরাইলের সঙ্গে যুদ্ধের সময় শেখ মুজিবের আন্তরিক উপহারে মুগ্ধ মিশরের প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাত যুদ্ধ শেষে ১৯৭৪ সালের জুলাই মাসে ফিরতি উপহার পাঠালেন বাংলাদেশে। মিশরের প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাতের সেই উপহারগুলো ছিল ৩২টি টি-৫৪ ট্যাংক ও ৪০০ রাউন্ড ট্যাংকের গোলা। ফার্স্ট বেঙ্গল লান্সার তখন বাংলাদেশের একমাত্র সাঁজোয়া রেজিমেন্ট গ্রহন করে সেই ট্যাংকগুলো। ওই রেজিমেন্টের সেকেন্ড ইন কমান্ড তখন মেজর ফারুক রহমান। সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মেজর ফারুক স্বীকার করেন যে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের ঘটনার পেছনে ছিল আমেরিকার একটি মাফিয়া ক্রিমিনাল অর্গানাইজেশান। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের মধ্যরাতের প্রথম প্রহরে বেঙ্গল ল্যান্সারের সেই ট্যাংকগুলো রাজকীয় ভঙ্গীতে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থেকে বেরিয়ে পড়ল। নতুন বিমানবন্দর এলাকায় রাখা দুই কিলোমিটার সীমানার কামানগুলোর পাশে গিয়ে ট্যাংকগুলো জড়ো হল।
বিমানবন্দরের পাশে হেড কোয়ার্টার স্কোয়াটন অফিসে একত্রিত হলেন কয়েকজন সেনা অফিসার। মেজর ফারুক রহমান চূড়ান্ত পরিকল্পনা বুঝিয়ে দিলেন সহযোগীদের। অবশ্য এরও মাস খানেক আগে থেকেই মেজার ফারুকের ট্যাংক রেজিমেন্ট নাইট এক্সারসাইজ শুরু করে। এর আগে ষড়যন্ত্রের অংশ হিসাবে রক্ষীবাহিনীর ডিজি নুরুজ্জামানকে লন্ডনে একটি মিলিটারি কোর্সে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
ফারুকের ট্যাংক গুলো বিমানবন্দর এলাকা থেকে সরাসরি গিয়ে ধানমন্ডি ২৭ নাম্বার, সোবাহানবাগ মিরপুর রোড ও ধানমন্ডি ৩২ নাম্বার কে ঘিরে একটি রোড ব্লক তৈরি করে। ধানমন্ডি ৩২ নাম্বার ছাড়াও ধানমন্ডিতে শেখ মনি'র বাসায় এবং মিন্টো রোডে শেরনিয়াবতের বাসায় আলাদাভাবে আক্রমন করার জন্য উপস্থিত সেনাদের তিনটি দলে ভাগ করা হয়। শাহবাগের রেডিও স্টেশন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও নিউ মার্কেট এলাকা দিয়ে পিলখানা থেকে যাতে কোনো প্রতিরোধ না আসে সেজন্য এই এলাকায় বিশেষ নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়। তবুও প্রধান প্রতিরোধের আশংকা থেকে যায় রক্ষিবাহিনীর কাছ থেকে। ধানমন্ডি ৩২ নাম্বারের অদূরে শেরে বাংলা নগরে রক্ষীবাহিনীর হেড কোয়ার্টার। রক্ষিবাহিনীকে নিরস্ত্র করতে মেজর ফারুক নিজেই অপারেশনের দায়িত্ব নেন। আর সঙ্গে নেন ২৮ টি টি-৫৪ ট্যাংক। মেজর ফারুক ট্যাংক বহর নিয়ে রক্ষিবাহিনীর হেড কোয়ার্টার ঘিরে রেখে নিজেই ট্যাংক চালিয়ে সাভারে রক্ষিবাহিনীর মূল ক্যাম্পের দিকে। কোনো প্রতিরোধ না আসায় ফারুক আবার শেরে বাংলা নগরে রক্ষিবাহিনীর হেড কোয়ার্টারে ফিরে আসেন। কমান্ডবিহীন রক্ষিবাহিনীর সদস্যরা ফারুকের ট্যাংক বাহিনীর বিরুদ্ধে কোনো ধরনের প্রতিরোধ গড়েনি। যদিও ফারুকের কোনো ট্যাংকেই তখন কোনো গোলাবারুদ ছিল না।
ততক্ষণে তিনটি টার্গেট পয়েন্টেই একসঙ্গে প্রচণ্ড গোলাগুলি শুরু হয়। তৎকালীন ঢাকা স্টেশন কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কর্নেল এমএ হামিদ তার 'তিনটি সেনা অভ্যুত্থান ও কিছু না বলা কথা' বইয়ে লেখেন যে, '... ১৯৭২ সাল। বিজয় ছিনিয়ে এনেছে বাঙালি। সবাই বিজয়ের অংশীদার। ভারতীয় বাহিনী বলে বিজয় আমাদের। মুক্তিবাহিনী বলে আমাদের। মুজিববাহিনী ভাবে আমাদের। দেশের আনাচে কানাচে ছিটিয়ে পড়া নাম না জানা গেরিলারা বলে আমাদের।'' তিনি তাঁর বইয়ে আরো লেখেন, '... শুরু হয়ে গেল চাওয়া পাওয়ার ইঁদুর দৌড়। চাই, চাই, চাই। গাড়ি চাই, বাড়ি চাই, টাকা চাই, চাকুরি চাই। চাকুরিওয়ালাদের প্রমোশন চাই। নবগঠিত সেনাবাহিনীতেও একই আওয়াজ। অনেক ত্যাগ হয়েছে এবার চাই প্রমোশন। ... জাতীয় জীবনে সর্বত্র নেমে আসে হাতাশা, নৈরাজ্য। চারদিকে রাজনৈতিক অস্থিরতা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে হিমশিম রাষ্ট্রপতি।'' এ বিষয়ে প্রফেসর মুনতাশির মামুন বলেন, তৎকালীন নেতৃবৃন্দ হয়তো একটি ভুল করেছিলেন। সেটি হল প্রতিক্রিয়ার উপাদানগুলো তারা বিনাশ করেননি। সাবেক ডিজিএফআই কর্মকর্তা মেজর (অবসরপ্রাপ্ত) জিয়াউদ্দিন বলেন, 'মুক্তিযুদ্ধের পরে যে একটা অভাব অনটন, কিছুটা ভোগান্তি, এটা মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষ শক্তিগুলো খুব সফলভাবেই এটাকে লুফে নিয়েছিল। এই বিরোধীশক্তি আত্মগোপনে থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে কিছু প্রপাগাণ্ডা চালালো যে, ভারত সবকিছু লুটপাট করে নিয়ে যাচ্ছে। পাকিস্তান ফেরত সেনা অফিসাররাও এই একই মোটিভেশান দ্বারা প্ররোচিত হল, যে যুদ্ধের বিনিময়ে ভারত এখন সবকিছু লুটপাট করে নিয়ে যাচ্ছে।'
১৫ আগস্টের রহস্যময় ভূমিকার জন্য প্রশ্নবিদ্ধ ব্রিগেট কমান্ডার কর্নেল (অবসরপ্রাপ্ত) সাফায়াত জামিল তাঁর লেখা 'একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, রক্তাক্ত মধ্য-আগস্ট ও ষড়যন্ত্রময় নভেম্বর' বইটিতে তখনকার সেনাবাহিনীর কিছু প্রেক্ষাপট তুলে ধরেছেন। তিনি এই বইতে লিখেছেন, '... আমি পেছন ফিরে দেখি, সেনাবাহিনীতে মুক্তিযোদ্ধা ও অমুক্তিযোদ্ধ অফিসারদের মধ্যে একটা রেষারেষি ছিল। কিছুসংখ্যক অমুক্তিযোদ্ধা অফিসার যারা মূলত যুদ্ধ শেষে পাকিস্তান প্রত্যাগত, তারা মুক্তিযোদ্ধা অফিসারদের সহ্যই করতে পারতেন না।' কয়েকটি ঘটনার বরাত দিয়ে তিনি ওই বইতে লেখেন, '... অমুক্তিযোদ্ধা সিনিয়র কিছু অফিসার সরকার ও সেনাবাহিনী দু'জায়গাতেই একটা পরিবর্তন চাচ্ছিলেন। বিভিন্ন সময়ে তাদের বিভিন্ন উস্কানিমূলক কথাবার্তা ও কর্মকাণ্ড অসন্তুষ্ট ও বিভ্রান্ত মুক্তিযোদ্ধা অফিসারদের প্ররোচিত করত। সরকারের বিভিন্ন ব্যর্থতা আর দুর্নীতির অভিযোগে সাধারণ মানুষের মত সেনাবাহিনীতেও ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছিল। তবে সেনাবাহিনীর নিয়ম-শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে জঘন্য একটি হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের জন্য এগুলো কোনো অজুহাত হতে পারে না।'
আবার ক্ষুব্ধ কিছু সামরিক অফিসারদের সঙ্গে তখনকার আওয়ামী লীগের কিছু রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে রেষারেষির কিছু খবরও তখনকার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে উঠে আসে। বিশেষ করে মেজর ডালিমের সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতা গাজী গোলাম মোস্তফার দ্বন্দ্বের বিষয়টি। এ বিষয়ে কর্নেল হামিদ 'তিনটি সেনা অভ্যুত্থান ও কিছু না বলা কথা' বইয়ে লেখেন যে, '... বিয়ের পার্টিতে নব-বিবাহিত ডালিম ও তার স্ত্রী। গাজীর ছেলে ডালিমকে অপমান করে। এ নিয়ে কথা কাটাকাটি। ডালিম কর্তৃক গাজীর ছেলেকে চপেটাঘাত। কিছুক্ষণের মধ্যে গাজীর ছেলে দলবল নিয়ে হাজির। ডালিম ও তার স্ত্রীকে একটি গাড়িতে উঠিয়ে অজ্ঞাত স্থানে যাত্রা। ক্যান্টনমেন্টে খবর শুনে ডালিমের বন্ধু মেজর নুর এক গাড়ি সৈন্য নিয়ে গাজী গোলাম মোস্তফার বাড়ি ঘেরাও করে এবং ডালিমকে ফেরত দেবার দাবি জানায়। তাকে বঙ্গবন্ধুর সামনে হাজির করা হল। মেজর ডালিমও তার বইয়ে এমনটা দাবি করেন। ...ডালিমের ফরিয়াদ, বঙ্গবন্ধু, আমরা আপনার ডাকে লড়াই করেছি। আর এই ছেলেরা ফুর্তি করেছে। আজ তারা আমাকে অপমান করেছে। আপনি বিচার করুন। শার্ট খুলে সে দেখায় পিঠের আঘাত। বঙ্গবন্ধু বিচার করলেন! তিনি সেনা শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে মেজর ডালিম ও মেজর নুরকে চাকুরি থেকে বরখাস্ত করলেন। ঘটনাটি ক্ষুদ্র হলেও এর প্রতিক্রিয়া ছিল সুদূরপ্রসারী।'
তবে তখনকার ডিজিএফআই কর্মকর্তা মেজর জিয়াউদ্দিন এই ঘটনার বিবরণ দিলেন ভিন্নভাবে। ডালিম ও তার স্ত্রীকে ধরে নিয়ে গেছিল, এই কথাগুলো সম্পূর্ণ ভুল। ঐতিহাসিক ভুল। কারণ বিয়ের পার্টি থেকে ডালিম ও তার স্ত্রী সরাসরি গেছিলেন বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে। নালিশ করার জন্য। আর এই ঘটনাটি অতিরঞ্জিত হওয়ার কারণে পরবর্তী সময়ে যারা ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যায় অংশ নিলেন, তারা কিন্তু ওই রাতেই একটা সামরিক অভ্যুত্থান করার চেষ্টা করেছিলেন। এ বিষয়ে কর্নেল (অবসরপ্রাপ্ত) সাফায়াত জামিল তাঁর লেখা 'একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, রক্তাক্ত মধ্য-আগস্ট ও ষড়যন্ত্রময় নভেম্বর' বইটিতে লেখেন, '...ঢাকায় আসার কিছুদিন পরই অন্য অফিসারদের মুখে শুনি, মেজর ফারুক এর আগে অর্থ্যাৎ ১৯৭৩ সালের শেষ দিকে একটি অভ্যুত্থানের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। তার সমর্থনে কুমিল্লা থেকে সৈন্যদল ঢাকায় আসার কথা ছিল। কিন্তু সেই সেনাদল শেষ পর্যন্ত ঢাকায় না আসায় ফারুকের অভ্যুত্থান বানচাল হয়ে যায়। উল্লেখ্য, তখন সেনাবিহনীতে ট্যাংক ছিল মাত্র তিনটি। সেই তিনটি ট্যাংকই কব্জা করে অভ্যুত্থানের ফন্দি এঁটেছিল ফারুক। ... উর্ধতন অফিসারদের সবাই ফারুকের অভ্যুত্থান সংগঠনের ফন্দির কথা জানতেন। কিন্তু বিষ্ময়ের ব্যাপার এজন্য তার বিরুদ্ধে কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আরো আশ্চার্যের ব্যাপার ১৯৭৪ সালে মিশরের কাছ থেকে শুভেচ্ছার নিদর্শন হিসেবে ৩২টি ট্যাংক পাওয়ার পর গঠিত ট্যাংক রেজিমেন্টটি সেই ফারুকের দায়িত্বেই ঢাকায় মোতায়েন করা হয়।'
একদিকে সেনাবাহিনীর ভেতরে তখন এমন অনেক ঘটনা ঘটতে শুরু করল। অন্যদিকে যুদ্ধবিধ্বস্ত সদ্যস্বাধীন বাংলাদেশে তখন দুর্ভিক্ষ মহামারী আকার ধারণ করল। খাবার নাই। যোগাযোগ ব্যবস্থা একেবারে বিধ্বস্ত। আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে কুটনৈতিক চালে পশ্চিমা বিশ্ব খাদ্য সাহায্য পাঠাতে গড়িমসি করল। কিউবার সঙ্গে বাংলাদেশের পাট রপ্তানি বন্ধ না করলে যুক্তরাষ্ট্র খাদ্যসাহায্য দেবে না বলে জানিয়ে দিল। দুর্ভিক্ষ মোকাবেলায় বাংলাদেশ ৩০ লক্ষ টন খাদ্যসাহায্য চেয়েছিল। কিন্তু অনেক দেরিতে যুক্তরাষ্ট্র মাত্র ১৫ লক্ষ টন খাদ্যসাহায্য পাঠিয়েছিল। ততদিনে বোড়ো মৌসুমী ফসল ওঠায় দুর্ভিক্ষ কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে। অভ্যন্তরীণ এসব সমস্যার ভেতরে দেশি ও বিদেশি চক্র যে বহুদিন ধরেই মুজিবকে উৎখাত করার চেষ্টা করেছিল, তা এসব ঘটনায় প্রমাণ মেলে।
অথচ ডালিমের ঘটনা এবং টঙ্গীতে কথিত গুজবের ঘটনা ঘটার আগেই ১৯৭২ সাল থেকে ফারুক ও ডালিম এই দুই ভায়রাকে মার্কিন দূতাবাসে বিভিন্ন সময়ে যাতায়াতের অনেক তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়। অনেকে মুজিবকে উৎখাতের সঙ্গে বাকশাল গঠনকে একত্রিত করেন। অথচ বাকশাল গঠিত হয় ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি। আর ষড়যন্ত্রকারীরা অভ্যুত্থানের প্রস্তুতি নিতে থাকে অনেক আগে থেকেই। ১৯৭৫ সালের মে মাসে গোপনে তারা মুজিবকে পাকাপাকিভাবে উৎখাত করার ঘোষণা দেয়। এ বিষয়ে তৎকালীন ডিজিএফআই কর্মকর্তা মেজর জিয়াউদ্দিন বলেন, 'ডিজিএফআই'র কাউন্টার ইনটেলিজেন্স ক্যান্টনমেন্টে এক ভদ্রলোককে ট্রেকিং করে গ্রেফতার করেছিল। তার কাছ থেকেই পুরো ঘটনাটা পাওয়া গিয়েছিল যে, তারা এভাবে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করবে। রেডিও টেলিভশন দখল করবে। ইত্যাদি ইত্যাদি। তখনকার ডিজিএফআই ডিজি ছিলেন ব্রিগেডিয়ার আবদুর রউফ। তিনি এই রিপোর্টটি বঙ্গবন্ধুর কাছে দিয়েছিলেন। কিন্তু তখনকার প্রেসিডেন্টসিয়াল সেক্রেটারিয়েটের কেউ না কেউ এই টপ-সিক্রেট চিঠির সারাংশ ডালিমের বাসায় ফোন করে জানিয়েছিল।
তারপর ধানমন্ডি ৩২ নাম্বারে ১৫ আগস্টের সেই নারকীয় হত্যাকাণ্ড। ফারুক-রশীদ-ডালিম গংরা অভ্যুত্থান ঘটিয়ে শাহবাগের রেডিও সেন্টার ও রামপুরা টেলিভিশন সেন্টারের দখল নেয়। শাহবাগ রেডিও সেন্টার থেকে মেজর ডালিম ঘোষণা করেন- ''মেজর ডালিম বলছি, অদ্য সকাল হতে খন্দকার মোশতাক আহমদের বলিষ্ঠ নেতৃত্বে সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখল করিয়াছে। শেখ মুজিব ও তার খুনি দুর্নীতিবাজ সরকারকে উৎখাত করা হইয়াছে। এখন থেকে সারা দেশে সামরিক আইন জারী করা হল। আপনারা সবাই আমাদের সাথে সহযোগিতা করুন। আপনারা নিশ্চিন্ত থাকুন, কোনো অসুবিধা আপনাদের হইবে না। বাংলাদেশ জিন্দাবাদ।''
খন্দকার মোশতাক আহমেদ ধানমন্ডির ৩২ নাম্বার ঘুরে নিজ চোখে সিড়িতে বঙ্গবন্ধুর লাশ দেখার পর নতুন রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন। তখনকার সেনাবাহিনীর প্রধান মেজর জেনারেল কেএম শফিউল্লাহ শাহবাগ রেডিও থেকে ডালিমের ঘোষণার পরপর একটি ঘোষণা দেন- '' দেশের নূতন সরকারের প্রতি আমরা আমাদের অবিচল আস্থা ও আনুগত্য জ্ঞাপন করছি।'' এরপর নৌবাহিনীর প্রধান রিয়ার এডমিরাল মোশাররফ হোসেন খান একটি ঘোষণা দেন। সেটি ছিল এরকম- ''দেশের নূতন সরকারের প্রতি আমরা আমাদের অবিচল আস্থা ও অানুগত্য জ্ঞাপন করছি।'' এরপর বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল একে খন্দকার রেডিওতে তখন একটি ঘোষণা দেন। সেটি ছিল এরকম- '' দেশের নূতন সরকারের প্রতি আমরা আমাদের অবিচল আস্থা ও আনুগত্য জ্ঞাপন করছি।''
তিনবাহিনীর তিন প্রধানের এই ঘোষণার পর বিদ্রোহ দমনের যত ক্ষুদ্র সম্ভাবনাই থাকুক না কেন তা সঙ্গে সঙ্গে নিভে যায়। সবচেয়ে আশ্চার্যের বিষয় হল, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় তিনবাহিনীর তিন প্রধানকে রাষ্ট্রপতির নিরাপত্তা দানে ব্যর্থতার জন্য আসামী করা হয়নি। বা তাদের কোনো বিচারের মুখোমুখি হতে হয়নি। ফলে সবার কাছে ১৫ আগস্টের এই অভ্যুত্থান সার্বিকভাবেই সেনা অভ্যুত্থান হিসেবে পরিচিতি পায়। অথচ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের অভ্যুত্থান ছিল দেশি ও বিদেশি চক্রের একটি সুপরিকল্পিত সফল অভ্যুত্থান। যার নেপথ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, পাকিস্তান, সৌদি আরব, পশ্চিমা দেশগুলোর সুস্পষ্ট ইন্ধন ও সহযোগিতা ছিল। যুক্তরাষ্ট্র তখন কোল্ডওয়ার সময়কার প্রবল শক্তিধর রাশিয়ার মোকাবেলা করছিল। কুটনৈতিক ভাবে মুজিব ভারত ও রাশিয়ার সঙ্গে খুব খাতির রেখেছিলেন। যা মার্কিন মদদপুষ্ট এন্টি রাশিয়া ব্লগ খুব ভালোভাবেই কাজে লাগিয়েছিল।
কর্নেল (অবসরপ্রাপ্ত) সাফায়াত জামিল তাঁর লেখা 'একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, রক্তাক্ত মধ্য-আগস্ট ও ষড়যন্ত্রময় নভেম্বর' বইটিতে লেখেন, ''... কুমিল্লা ব্রিগেট থেকে আসা ১২০ জন সেনাসদস্যের একটি দল বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের প্রতিরক্ষার দায়িত্বে ছিল। বিধি অনুযায়ী সেনাদলটির প্রশাসিনক দায়িত্বে থাকার কথা ঢাকার স্টেশন কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অবসরপ্রাপ্ত) এমএ হামিদের ওপর। বঙ্গবন্ধুর বাসভবন আক্রান্ত হওয়ার সময় এই সেনাদলটিকে সম্পূর্ণ নিস্ক্রিয় করে রাখা হয়েছিল।'' অন্যদিকে সেনাপ্রধান কেএম শফিউল্লাহ দাবি করেন, ঢাকার ব্রিগেট কমান্ডার সাফায়ত জামিলকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়ার পরও তিনি তা নেননি। উল্টোদিকে সাফায়াত জামিল তা অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর বাড়ি আক্রান্তের খবর পাওয়ার পরও সেনাপ্রধান কালক্ষেপণ করেন। তবে অনেক প্রাক্তন সেনাকর্মকর্তাই সেদিন সাফায়াত জামিলের রহস্যময় নিস্ক্রিয়তার কথা স্বীকার করেন। তারা বলেন, ওই দিন সকাল সাতটা সাড়ে সাতটার দিকে বেঙ্গল রেজিমেন্ট ও ফারুকের ট্যাংক রেজিমেন্ট অনেকটা মুখোমুখি অবস্থান নেয়। কিন্তু সেনাপ্রধান কেএম শফিউল্লাহ ও ডেপুটি সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান তখন ফারুক-রশীদ-ডালিমদের কথায় ওঠাবসা করায় কোনো সংঘর্ষ শেষ পর্যন্ত হয়নি। যার কিছুটা প্রমাণ পাওয়া যায় কর্নেল (অবসরপ্রাপ্ত) সাফায়াত জামিল তাঁর লেখা 'একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, রক্তাক্ত মধ্য-আগস্ট ও ষড়যন্ত্রময় নভেম্বর' বইটিতে। তিনি লেখেন, ''... আশ্চার্য হয়ে দেখলাম, ব্যাটালিয়ন দুটোর মাঝখানে তিনটি ট্যাংক অবস্থান নিয়ে আছে। ব্রিগেট সদর দপ্তরের সামনেও ফারুকের দুটো ট্যাংক দেখেছিলাম। আমার মনে হয়েছে, ব্যাটালিয়ন দুটোকে ঘিরে রাখা হয়েছে। ট্যাংকগুলোতে যে কামানের গোলা ছিল না, আমরা তখন তা জানতাম না। জানতে পারি আরো পরে, দুপুরে।''
এ প্রসঙ্গে তিনি একই বইতে আরো লেখেন, ''... ট্যাংক রেজিমেন্টটির মোতায়েত সেনাপ্রধানের ভুল সিদ্ধান্তেরই পরিচায়ক। ঢাকা ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকা ট্যাংক যুদ্ধের জন্য মোটেই উপযোগী নয়। ১৯৭১ সালের ইতিহাসও সে কথাই বলে। মুক্তিযুদ্ধে উল্লেখযোগ্য ট্যাংকযুদ্ধ গুলো হয়েছে যশোর, হিলি, কুমিল্লা এসব এলাকায়। সেনাপ্রধানের এই ভুল সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে ক্ষমতালিপ্সু ষড়যন্ত্রকারী অফিসাররা পরবর্তীকালে বিদ্রোহ ও হত্যাযজ্ঞের মাধ্যমে রাষ্ট্রক্ষমতা পরিবর্তন করতে সক্ষম হয়।''
১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট ছিল শুক্রবার। সকালে রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার কথা ছিল। পরদিন ১৬ আগস্ট দৈনিক বাংলার শীর্ষ খবর ছিল ‘খন্দকার মোশতাক নয়া রাষ্ট্রপতি’। ওই খবরের উপশিরোনামে ছোট্ট করে বলা হয়, ‘শেখ মুজিব নিহত: সামরিক আইন ও সান্ধ্য আইন জারি: সশস্ত্র বাহিনীসমূহের আনুগত্য প্রকাশ’। খবরের প্রথম অনুচ্ছেদ ছিল—‘শুক্রবার সকালে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থে সাবেক রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের পতন ঘটিয়ে প্রেসিডেন্ট খন্দকার মোশতাক আহমদের নেতৃত্বে ক্ষমতা গ্রহণ করে। সশস্ত্র বাহিনীর এই ক্ষমতা গ্রহণের সময় সাবেক রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর বাসভবনে নিহত হন বলে বলে ঘোষণা করা হয়।’
সরকারি বার্তা সংস্থা বাসস-এর বরাত দিয়ে একই খবরে বলা হয়, সারা দেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য সামরিক আইন ঘোষণা ও সান্ধ্য আইন জারি করা হয়। দুপুরের পর অবশ্য মুসল্লিদের জুমার নামাজ আদায়ের সুবিধার্থে দেড় ঘণ্টার জন্য সান্ধ্য আইন তুলে নেওয়া হয়।
ওই খবরে অস্থায়ী প্রধান বিচারপতি সৈয়দ এ বি মাহমুদ হোসেনের কাছ থেকে খন্দকার মোশতাকের শপথ নেওয়ার তথ্য, মোহাম্মদ উল্লাহকে ভাইস প্রেসিডেন্ট নিয়োগ, ১০ মন্ত্রী ও ছয় প্রতিমন্ত্রী নিয়োগের প্রসঙ্গ উল্লেখ করা হয়। আরও উল্লেখ করা হয়, সেনাবাহিনী প্রধান মেজর জেনারেল কে এম শফিউল্লাহ, নৌবাহিনী প্রধান কমোডর মোশাররফ হোসেন খান এবং বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল এ কে খন্দকার পৃথক পৃথক বেতার ভাষণে মোশতাক আহমদের নেতৃত্বাধীন নয়া সরকারের প্রতি আনুগত্য ও দৃঢ় আস্থা প্রকাশ করেছেন। এ ছাড়া বিডিআরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল খলিলুর রহমান, রক্ষীবাহিনীর ভারপ্রাপ্ত পরিচালক সাবিউদ্দিন আহমেদ এবং আইজিপি এ এইচ নুরুল ইসলাম বেতার মারফত মোশতাক সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেছেন মর্মে খবর প্রকাশ করা হয়।
ওই সংখ্যায় শীর্ষ খবরের বাঁ পাশে ছিল অস্থায়ী প্রধান বিচারপতির কাছে মোশতাকের শপথ নেওয়ার ছবি। এর নিচে ছিল ‘দুর্নীতির সঙ্গে আপস নেই’ মর্মে মোশতাকের বেতার ভাষণ। ওই ভাষণের প্রথম অনুচ্ছেদে বলা হয়, ‘প্রিয় দেশবাসী ভাই ও বোনেরা। এক ঐতিহাসিক প্রয়োজনে এবং বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের সঠিক ও সত্যিকারের আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবে রূপদানের পূত-পবিত্র দায়িত্ব সামগ্রিক ও সমষ্টিগতভাবে সম্পাদনের জন্য পরম করুণমায় আল্লাহ তায়ালা ও বাংলাদেশের গণমানুষের দোয়ার ওপর ভরসা করে রাষ্ট্রপতি হিসেবে সরকারের দায়িত্ব আমার ওপর অর্পিত হয়েছে। বাংলার মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের বজ্রকঠিন দায়িত্ব সম্পাদনের পথ সুগম করার জন্য বাংলাদেশের সেনাবাহিনী সত্যিকারের বীরের মতো অকুতোভয়চিত্তে এগিয়ে এসেছেন।’
১৬ আগস্ট দৈনিক ইত্তেফাকে মূল শিরোনাম ছিল ‘খন্দকার মোশতাকের নেতৃত্বে সশস্ত্র বাহিনীর শাসনক্ষমতা গ্রহণ’। খবরের কোথাও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার কথা উল্লেখ করা হয়নি। শীর্ষ খবরের প্রথম অনুচ্ছেদে বলা হয়, ‘রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাক আহমদের নেতৃত্বে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী জাতির বৃহত্তর স্বার্থে গতকাল প্রত্যুষে সাবেক রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে ক্ষমতাচ্যুত করিয়া দেশের শাসনভার গ্রহণ করিয়াছেন। শাসনভার গ্রহণকালে সাবেক রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান স্বীয় বাসভবনে নিহত হইয়াছেন।’
ওই দিন ইত্তেফাকের বিশেষ সম্পাদকীয় ছিল ‘ঐতিহাসিক নবযাত্রা’। এর শুরুতে বলা হয়, দেশ ও জাতির এক ঐতিহাসিক প্রয়োজন পূরণে গতকাল প্রত্যুষে প্রবীণ জননায়ক খন্দকার মোশতাক আহমদের নেতৃত্বে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী সরকারের সর্বময় ক্ষমতা গ্রহণ করিয়াছেন। পূর্ববর্তী সরকার ক্ষমতাচ্যুত হইয়াছেন।
সম্পাদকীয়তে বলা হয়, ‘বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় জীবনে এই পরিবর্তনের এক বিষাদময় গুরুত্ব রহিয়াছে। ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্ত ও অসংখ্য মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে আমরা একদিন যে স্বাধীনতা অর্জন করিয়াছিলাম সেখানে আমাদের আশা ও স্বপ্ন ছিল অপরিমেয়। কিন্তু গত সাড়ে তিন বছরেরও ঊর্ধ্বকালে দেশবাসী বাস্তবক্ষেত্রে যাহা লাভ করিয়াছে তাহাকে এক কথায় গভীর হতাশা ও বঞ্চনা ছাড়া আর কিছুই বলা যায় না। ...গণমানুষের ভাগ্য উন্নয়নের পরিবর্তে দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির আশ্রয় গ্রহণ করিয়া এবং একটি বিশেষ গোষ্ঠীকে স্থায়ীভাবে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত রাখিবার দুর্নিবার আকাঙ্ক্ষায় মাতিয়া উঠিয়া স্বাধীনতার সুফল হইতে জনগণকে নির্মমভাবে বঞ্চিত করা হইয়াছে।’ সম্পাদকীয়তে এসব প্রেক্ষাপট তুলে ধরে সামরিক হস্তক্ষেপ অনিবার্য হয়ে ওঠার কথা উল্লেখ করা হয়।
১৬ আগস্টের ইত্তেফাকের প্রথম পৃষ্ঠায় বঙ্গবন্ধুসহ তাঁর পরিবার ও নিরাপত্তাকর্মীদের হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে কোনো তথ্য ছিল না। অন্যান্য খবরের মধ্যে ছিল মোশতাক সরকারের প্রতি পাকিস্তানের স্বীকৃতি, নয়া সরকারের জন্য জুমার নামাজ শেষে বিশেষ মোনাজাত, যুক্তরাষ্ট্রের স্বাভাবিক কূটনৈতিক কাজকর্ম চালিয়ে যাওয়ার প্রসঙ্গ, বিদেশি দূতাবাসের মর্যাদা অক্ষুণ্ন রাখার আশ্বাস, গাজী গোলাম মোস্তফাকে অপসারণ করে বি এ সিদ্দিকীকে রেডক্রসের চেয়ারম্যান নিয়োগ, লন্ডন হাইকমিশন ভবনে বিক্ষোভ ও সেখানে শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি নামিয়ে ফেলাসহ কয়েকটি খবর।
........................................
১৫ আগস্ট ২০১৫
ঢাকা
২| ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:৫৫
শতদ্রু একটি নদী... বলেছেন: পড়লাম। রহস্যময় অধ্যায়, কি মন্তব্য করবো বুঝতে পারছিনা। এই ব্যাপারে বিস্তারিত তদন্ত হওয়া উচিত।
©somewhere in net ltd.
১| ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:১৯
কুষ্টিয়ারশুভ বলেছেন: "আর এই সমর্থনের নিদর্শন স্বরূপ বাংলাদেশ থেকে শেখ মুজিব আরব সেনাদের জন্য বিমান ভর্তি উৎকৃষ্ট মানের বাংলাদেশী চা পাঠালেন।"
চা না পাওয়ার ক্ষোভে ইসরাইলিরা আম্রিকার মাধ্যমে ষড়যন্ত্র করিয়া... (বাংলার ভবিষ্যত রূপকথা)