নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

রেজা ঘটক

ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।

রেজা ঘটক › বিস্তারিত পোস্টঃ

বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনিরা এখনো কে কোথায়?!!

১৫ ই আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ২:২১

২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত পাঁচ খুনিকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর করা হয়। এরা হলেন কর্নেল (অব.) সৈয়দ ফারুক রহমান, কর্নেল (অব.) সুলতান শাহরিয়ার রশীদ খান, লে. কর্নেল (অব.) মহিউদ্দিন আহমদ (ল্যান্সার), মেজর (অব.) এ কে বজলুল হুদা এবং মেজর (অব.) এ কে এম মহিউদ্দিনকে (আর্টিলারি)। এছাড়া পলাতক অবস্থায় খুনিদের একজন আবদুল আজিজ পাশা ২০০১ সালের ২ জুন জিম্বাবুয়েতে মারা গেছেন।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১২ আসামির মধ্যে অপর ছয় খুনি এখনো বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এরা হলেন লে. কর্নেল (বরখাস্ত) খন্দকার আবদুর রশিদ, মেজর (বরখাস্ত) শরিফুল হক ডালিম, লে. কর্নেল (অব.) এ এম রাশেদ চৌধুরী, মেজর (অব.) এসএইচএমবি নূর চৌধুরী, ক্যাপ্টেন (অব.) আবদুল মাজেদ ও রিসালদার মোসলেম উদ্দিন খান।

এসব খুনি যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, পাকিস্তান, লিবিয়া, কেনিয়া, জার্মানি, থাইল্যান্ড, ভারত, ব্রিটেন, বেলজিয়াম, ফ্রান্স, ইতালি, লেবানন, পোল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড, চীন, হংকংসহ ১৭টি দেশে বিভিন্ন সময়ে থাকছেন। নিজেদের রক্ষা করতে বারবার এরা দেশ বদল করছেন।
মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত পলাতক এই ছয় খুনিকে আদৌ দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব কিনা তা নিয়ে এখনো সংশয় রয়েছে। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের দেশে ফিরিয়ে এনে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার ব্যাপারে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কোনো অগ্রগতি দেখা যায় না।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, লে. কর্নেল খন্দকার আবদুর রশিদ অবস্থান করেন লিবিয়ার বেনগাজি শহর ও পাকিস্তানে। মেজর শরিফুল হক ডালিমের ব্যবসাসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ড কেনিয়াকে কেন্দ্র করে পরিচালিত হলেও মাঝে মধ্যে লিবিয়া ও পাকিস্তানে আসা-যাওয়া করেন। ক্যাপ্টেন আবদুল মাজেদ ও রিসালদার মোসলেম উদ্দিনও বর্তমানে পাকিস্তান ও লিবিয়ায় লুকিয়ে রয়েছেন বলে জানা গেছে। লে. কর্নেল রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে আছেন। আর মেজর নূর চৌধুরী পালিয়ে আছেন কানাডায়।

তবে এখন পর্যন্ত দুই খুনির অবস্থান নিশ্চিত হলেও বাকি চারজনের অবস্থান সম্পর্কে সরকারের কাছে নিশ্চিত তথ্য নেই বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র। লে. কর্নেল এ এম রাশেদ চৌধুরী এখন যুক্তরাষ্ট্রের লস এঞ্জেলসে অবস্থান করলেও কানাডায় রাজনৈতিক আশ্রয় নেয়ার চেষ্টা করছেন। কিছুদিন জার্মানিতে লুকিয়ে থাকার পর লে. কর্নেল এসএইচএমবি নূর চৌধুরী এখন রয়েছেন কানাডায়।

নূর চৌধুরীর বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি রয়েছে। পলাতক খুনিদের মধ্যে চারজন লে. কর্নেল শরিফুল হক ডালিম, লে. কর্নেল আবদুর রশীদ, ক্যাপ্টেন আবদুল মাজেদ ও রিসালদার মোসলেহ উদ্দিনের বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে সরকারের কাছে নিশ্চিত কোনো তথ্য নেই বলে সূত্র জানায়। তাদের চারজনের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি আছে। পলাতক খুনি শরিফুল হক ডালিমও কানাডায় অবস্থান করছেন বলে একটি অসমর্থিত সূত্রে জানা গেছে। অপর খুনি এম এম রাশেদ চৌধুরী আগে লন্ডনে অবস্থান করলেও বর্তমানে তিনি দক্ষিণ আফ্রিকায়, খন্দকার আবদুর রশীদ গাদ্দাফি সরকার থাকা পর্যন্ত লিবিয়ায় অবস্থান করলেও বর্তমানে পাকিস্তানে, রিসালদার মোসলেহ উদ্দিন থাইল্যান্ডে এবং আবদুল মাজেদ কেনিয়ায় অবস্থান করছেন বলে অসমর্থিত সূত্রে জানা গেছে।

কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্দি বিনিময় চুক্তি না থাকায় আইনি প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে এদের দেশে ফিরিয়ে আনা এখনো সম্ভব হচ্ছে না। ১৯৯৭ সালের সেপ্টেম্বরে পলাতক খুনিদের ধরতে ইন্টারপোলের মাধ্যমে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। ইন্টারপোলের নিয়ম অনুযায়ী, কোনো গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির ১০ বছর অতিক্রান্ত হলে তা নতুন করে নবায়ন না করা হলে অকার্যকর হয়ে যায়। ২০০১ সালে আবার বিএনপি ক্ষমতায় এসে ইন্টারপোলের সঙ্গে এই নবায়ন প্রক্রিয়া আপডেট করেনি। এমন কি ওয়ান ইলেভেনে ক্ষমতায় আসা ফখরুদ্দিন-মঈদউদ্দীন তত্বাবধায়ক সরকারও ইন্টারপোলের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা নবায়ন করেনি। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসলে ইন্টারপোলের সাথে নতুন আওয়ামী সরকার ২০১০ সালে এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আবার নবায়ন করে।

এর আগে বজলুল হুদাকে থাইল্যান্ডের সঙ্গে বন্দি বিনিময় চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে ব্যাংকক থেকে এবং সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় যুক্তরাষ্ট্র থেকে সাবেক লে. কর্নেল একেএম মহিউদ্দিন আহমেদকে (ল্যান্সার) দেশে ফেরত আনা হয়। প্রশ্ন হল তাহলে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান নিশ্চিত হবার পরেও লে. কর্নেল এ এম রাশেদ চৌধুরীকে কেন ফেরত আনতে পারছে না পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়? যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বন্দি বিনিময় চুক্তি কী তাহলে প্রত্যেক খুনির জন্য আবার নতুন করে করতে হবে? কানাডার সঙ্গে বন্দি বিনিময় চুক্তি কেন হচ্ছে না? পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ২০০৯ থেকে ২০১৫ এই ছয় বছর তাহলে কী করল?

বঙ্গবন্ধুর এসব খুনিদের তৎকালীন মেজর জিয়ার সরকার বিদেশে বিভিন্ন দেশের বাংলাদেশ দূতাবাসে চাকরি দিয়েছিল। বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশের সেসব দূতাবাসে যে এখনো বঙ্গবন্ধুর খুনিদের দোসররা রয়েছে, এটা হলপ করেই বলা যায়। এমন কি এসব দোসরদের সহায়তা নিয়েই বঙ্গবন্ধুর খুনিদের অনেকে বাংলাদেশ থেকেও ঘুরে যায়।

ওদিকে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার ১৫ আসামির মধ্যে খালাস পাওয়া অপর তিনজনও এখন লাপাত্তা। তাদের মধ্যে ক্যাপ্টেন (অব.) কিসমত আলী ও ক্যাপ্টেন (অব.) নাজমুল হোসেন আনসার কানাডায় অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে। তারা দুজন জেলখানায় চার নেতা হত্যা মামলার অভিযুক্ত আসামি। খালাসপ্রাপ্ত অপর আসামি মেজর (অব.) আবদুল মজিদের অবস্থান সম্পর্কে কোনো তথ্য জানা যায়নি।

একথা নিশ্চিত যে, বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থা, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সহ খোদ সরকারের ভেতরেও এখনো এসব খুনিদের সহায়তাকারীরা ঘাপটি মেরে আছে। ফলে কাউকে ধরার ব্যাপারে কোনো তৎপরতা শুরু হলে সেই খবর এসব খুনিরা খুব সহজেই পেয়ে যায়। ১৯৭৫ সালে ডিজিএফআই'র ডিজি ব্রিগেিয়ার রউফ বঙ্গবন্ধুকে খুন করা হবে এমন যে টপ-সিক্রেট তথ্য দিয়েছিলেন, সেই তথ্য যেমন প্রেসিডেন্টিয়াল সেক্রেটারিয়েটের কেউ ডালিমদের সরবরাহ করেছিল। এখনো হাসিনা সরকারের বিভিন্ন স্তরে এসব খুনিদের সহায়তাকারীদের সুস্পষ্ট অবস্থান রয়েছে। নইলে অপর ছয় খুনিকে দেশে ফিরিয়ে আনতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এত যুগ লাগার কথা নয়।

বঙ্গবন্ধু হত্যার নেপথ্যের দুই প্রধান খলনায়ক খন্দকার মোশতাক আহমদ ও মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান। এই দুইজন আর বেঁচে নাই। কিন্তু বঙ্গবন্ধু হত্যার নেপথ্যে অন্য দুই খলনায়ক এখনো জীবিত আছেন। এরা হলেন তৎকালীন সেনাপ্রধান কেএম শফিউল্লাহ ও বিমানবাহিনীপ্রধান একে খন্দকার। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা তদন্তের সময় শুধু হত্যাকারীদের খুঁজে বের করা হয়েছে। এই হত্যার নেপথ্যে কারা মদদ দিয়েছে, পেছন থেকে কারা কলকাঠি নেড়েছে, দেশি ও বিদেশি সহ আন্তর্জাতিক মহলের কতোটা সংশ্লিষ্টতা রয়েছে, এসব বিষয়ে কোনো তদন্ত হয়নি।

বঙ্গবন্ধু হত্যার তদন্তে হত্যার মোটিভ খোঁজা হয়নি। কেবলমাত্র হত্যায় জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত ও বিচার করা হয়েছে। যে কারণে বঙ্গবন্ধু হত্যার নেপথ্যের মূল নায়কদের আজ পর্যন্ত চিহ্নিত করা হয়নি বা করা যায়নি। এমন কি বঙ্গবন্ধু হত্যায় জড়িত ও খুনিদের পুনর্বাসনকারীদের চিহ্নিত করা গেলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। যে কারণে বঙ্গবন্ধু হত্যার নেপথ্যের অনেক অজানা ঘটনাই বিগত ৪০ বছর ধরে বাংলাদেশ বা গোটা বিশ্ব এখনো পুরোটা জানতে পারেনি।

বাংলাদেশের কোনো সরকারও বঙ্গবন্ধু হত্যার নেপথ্যের মূল নায়কদের চিন্থিত করার বা আইনের আওতায় আনার প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করেনি। যে কারণে এখনো বঙ্গবন্ধু হত্যার সঙ্গে জড়িত পলাতক ছয় খুনি এসব নেপথ্যের নায়কদের ও তাদের সহযোগীদের সার্বিক সহযোগিতায় দিব্যি সারা বিশ্বময় ঘুরে বেড়িয়ে আরামে জীবন কাটিয়ে দিচ্ছে। এ থেকে বোঝা যায় বঙ্গবন্ধু হত্যার পেছনে আমেরিকার মত অনেক বড় শক্তির বিনিয়োগ ছিল। যাদের শুভ ছায়ায় এখনো এসব খুনিরা বেঁচে আছে।

............................
১৫ আগস্ট ২০১৫
ঢাকা

মন্তব্য ০ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.