নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।
পুলিশ প্রবীর সিকদারের জিডি না নিয়ে উপরের নির্দেশে তাকে গ্রেফতারের নাটক করে বাংলাদেশের সচেতন মহলকে যে বার্তাটি দিতে চায় সেটি হল, প্রধানমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর আত্মীয়স্বজন তথা নিকটজনদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের লেখা বাংলাদেশে এই সময়ে প্রকাশ করার কেউ যেন দুঃসাহস না দেখায়। যারা দেখাবে তাদের জন্য আইসিটি আইন আছে সরকারের হাতে।
প্রবীর সিকদার একাত্তরে স্বজন হারানো একজন সাংবাদিক। রাজাকারের বিরুদ্ধে লিখে নিজের জীবন বিপন্ন না হলেও একটি পা হারিয়েছেন। সুস্পষ্ট করেই তিনি ফেইসবুকে জানিয়েছেন যে, কে বা কারা তার জীবন শংকার জন্য দায়ী থাকবে।
সবচেয়ে আশ্চার্যের বিষয় হল, ভেতরে ভেতরে সংবাদপত্রের উপর যে এক ধরনের সত্য প্রকাশের উপর নিষেধাজ্ঞা চালু আছে, সেটি কেউ মুখে স্বীকার না করলেও সংবাদ মিডিয়ার আচার-আচরণে সেটি স্পষ্ট। বড় বড় পত্রিকায় আজ প্রবীর শিকদারকে গ্রেফতারের খবরটি আসেনি। অথচ ফেইসবুকে এটা নিয়ে গতকাল রাত থেকে ঝড় বয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের চেতনায় সুড়সুড়ি দেবার জন্য আমাদের শাসকরা সফলভাবে কিছু মূলা আবিস্কার করতে সক্ষম হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, যুদ্ধাপরাধীর বিচার, রাজারকার, ইত্যাদি ইত্যাদি। এই মূলা সামনে ঝুলিয়ে দেশের মানুষকে একটা ঘোরের মধ্যে রাখার এই কৌশলটি বাঙালি খুব খেয়েছে। পাছে যারা এটি ঝুলিয়েছে তারা কিন্তু রাজাকারের সঙ্গে আত্মীয়তা করছে, ঘর-সংসার করছে, একই সাথে খাচ্ছে-ঘুরে বেড়াচ্ছে। সেখানে কোথাও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কোনো ব্যাপার যেমন নাই, যুদ্ধাপরাধীর ব্যাপারও নাই, একাত্তরে কে কে রাজাকার ছিল, সেই বিষয়ও নাই। সেখানে বড় বিবেচনার বিষয় আত্মীয়তা। আর আত্মীয়'র সকল অন্যায় কাজকেও ভেতরে ভেতরে সমর্থন যোগানোটা তো আত্মীয়তা রক্ষার প্রধান শর্ত।
আমরা আত্মীয় আর বন্ধুত্ব কিভাবে রক্ষা করার শর্ত সেই কথা ভুলে গিয়ে মাঝে মাঝে খেই হারিয়ে চেতনা নিয়ে হাজির হই। আমাদের হাতে চেতনা নামক বটিকা মূলা ধরিয়ে দিয়ে তলে তলে এদের সবার পেঁয়াজ-রসুনের গোয়া একসূত্রে গাঁথা। আসল ব্যাপার হল, ক্ষমতা, টাকা-পয়সা, ধন-সম্পদ, লুটপাট, রাষ্ট্রীয় অর্থ আত্মসাৎ, এসব কাজে এরা একজন আরেকজনের দোসর।
কেবল লোক দেখানো সস্তা বিভক্তি দেখিয়ে এরা যে বস্তাপচা রাজনীতি করছে, সেটা বুঝতে না পারলে চেতনা ধুইয়ে আমজনতা লক্ষবার পানি খেলেও রাম-শ্যাম-যদু-মধুদের কিচ্ছু যায় আসে না। হিন্দুদের বাড়ি-ঘর দখল করায় এরা সবাই সমান এক্সাইটেড হয়। এদের নিয়ে কথা বলে কেন বোকার মত আপনি এদের শত্রু হতে যাবেন!!!
সবাই সবকিছু দেখবেন, শুনবেন, কিন্তু মুখে কুলুপ এঁটে থাকবেন। দেখেন না, আওয়ামী-ঘরানার বুদ্ধিজীবী-লেখক-শিল্পী-সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব-সুশীলরা কেমন এসব বিষয়ে ভদ্রলোকের মত এড়িয়ে যায়। তাতে সাপও মরে লাঠিও ভাঙ্গে না।
বাংলায় একটা কথা আছে, বোবার নাকি কোনো শত্রু নাই। কথাটা আইসিটি আইনে কোনোভাবে যুক্ত করা যায় কিনা, সরকার বাহাদুরকে ভেবে দেখার জন্য বিনীত অনুরোধ করছি। বাংলাদেশ থেকে সততা ও বিবেক যে চিরতরে মরে গেছে, এটা যারা এখনো জানে না, তাদের কপালে প্রবীর সিকদারদের মত অনেক দুঃখ-নির্যাতন-নিপিড়ন এখনো অনেক অবশিষ্ট আছে। এটাই হল এই সময়ের বাস্তবতা।
প্রবীর সিকদারকে আটকের বিষয়ে আমরা সরকার বাহাদুরের কোনো ধরনের তালবাহানা শুনতে চাই না। প্রবীর সিকদারকে কী কারণে, কেন, কিসের ভিত্তিতে আটক করা হল, তা দেশের মানুষকে সুস্পষ্ট ভাবেই জানাতে হবে। বিনা বিচারে কাউকে আটক করা যাবে না। পাশাপাশি আইসিটি আইনে সরকার বিরোধী যে কোনো বিষয়ের উপর লিখলেই পুলিশি হয়রানি করার মানসিকতা থেকে সরকারকে পিছু হটতে হবে। সরকারের কোনো কুতুবের কোনো অপরাধ নিয়ে লেখা যাবে না, লিখলে তাদের বিরুদ্ধে আইসিটি আইনে পুলিশি হয়রানি করতে হবে, এমন যদি হয় সরকারের ইচ্ছা, তাহলে এই কালো আইনই সরকারের নিজের ভবিষ্যৎ রচনা করবে। মনে রাখতে হবে, দেশের মানুষ এখন আগের চেয়ে অনেক সচেতন। ডিজিটাল যুগে যতই টেকনোলজি মানুষের হাতের মুঠোয় এসেছে, খবরের অন্তরালের খবরও মানুষের দোরগোড়ায় অনেক সময় মিডিয়ায় প্রকাশ হবার আগেই পৌঁছে যাচ্ছে। মিডিয়ায় এসব ঘটনার সকল সংবাদ না আসলেও, কী কারণে কী ঘটল, এটা কেবল রাজনীতিকরা বোঝেন আর আমজনতা একদম বোঝে না, এটা ভাবলে সরকার নির্বুদ্ধিতার পরিচয় দেবে।
বাংলাদেশের কোনো আইনে কোথাও লেখা নাই অমুকের বেয়াই বা আত্মীয়ের জন্য আলাদা আইনি সুযোগ আছে। আইন যে প্রত্যেক নাগরিকের জন্য সমান, সেটা প্রমাণ করার দায়িত্ব সরকারের। আর সেটা দেখাতে গিয়ে অতি উৎসাহী সুবিধাভোগীরা সরকারকে যে ভুল পরামর্শ দিচ্ছে, এটা যদি সরকার বাহাদুর বুঝতে না পারে, তাহলে ভুল করবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রতিটি মানুষ এবং প্রতিটি মুক্তিযোদ্ধা পরিবার প্রবীর সিকদারের আটকে সরকারের উপর হতাশা প্রকাশ করেছে। সরকার যদি সাধারণ মানুষের সেই হৃদস্পন্দন টের না পায়, তাহলে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ সরকারও যে কখনো কখনো ক্ষমতার দম্ভে চূড়ান্ত স্বৈরাচারী রূপ ধারণ করতে পারে এটাই প্রমাণিত হবে। যা সাধারণ মানুষ থেকে কেবল সরকারকে কেবল বিচ্ছিন্ন করারই নামান্তর। আমরা চাই সরকার বাহাদুরের শুভ বুদ্ধির উদয় হোক এবং মুক্তিযুদ্ধে পরিবারের স্বজন হারানো সাংবাদিক প্রবীর সিকদারকে নিঃশর্ত মুক্তি দেবে। আমরা প্রবীর সিকদারের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছি পাশাপাশি তার পূর্ণাঙ্গ নিরাপত্তা দেবারও দাবি করছি।
..............................
১৭ আগস্ট ২০১৫
ঢাকা
২| ১৮ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ২:১০
নতুন বলেছেন: শেখ হাসিনার কানে সবার এই প্রতিবাদের কথা পৌছানো দরকার। তবে বুঝতে পারবে যে দিন বদলাচ্ছে।
৩| ১৮ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ৩:১৭
মুজিব আলম বলেছেন: এটাকেই বলে আওয়ামী সরকার। শেখ মুজিব পুর্বে দেখিয়েছিল এখন হাসিনা দেখাচ্ছে । আরও অনেক দেখার বাকি আছে। সবুর করুন।
©somewhere in net ltd.
১| ১৮ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ১:৩৩
মোহাম্মদ জামিল বলেছেন: ইহা হীরক রাজার দেশ এই দেশে সরকার বাহাদুর এর দিকে চোখ তুলে তাকালেই মামলা-হামলা- করা ফরজ!