নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।
ক্রিকেটপ্রেমীরা এ সপ্তাহে দুইজন গ্রেট ক্রিকেটারকে বিদায় জানাচ্ছে। একজন অস্ট্রেলিয়ার ক্যাপ্টেন মাইকেল ক্লার্ক। অন্যজন শ্রীলংকার ব্যাটিং বরপুত্র কুমার সাঙ্গাকারা। লন্ডনের কেনিংটন ওভালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অ্যাসেজ সিরিজের পঞ্চম ও শেষ টেস্ট খেলে বিদায় নিচ্ছেন মাইকেল ক্লার্ক। অন্যদিকে কলোম্বোতে ভারতের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্ট খেলে টেস্ট ক্রিকেট থেকে বিদায় নিচ্ছেন কুমার সাঙ্গাকারা। গতকাল ইংল্যান্ডের খেলয়াড়রা মাইকেল ক্লার্ক ব্যাট হাতে মাঠে নামার পর দুই সারিতে দাঁড়িয়ে ক্লার্ককে গার্ড অব অনার স্যালুট প্রদান করেছেন। যদিও ক্লার্ক মাত্র ১৫ রান করেই আউট হয়ে যান। অন্যদিকে আজ কলোম্বোতে লাঞ্চের পর ভারতীয় ইনিংস ৩৯৩ রানে গুটিয়ে গেলে শ্রীলংকা ব্যাট করতে নেমে করুণারত্নের উইকেট হারালে কুমার সাঙ্গাকারা ব্যাট হাতে মাঠে নামেন। তখন ভারতীয় খেলোয়াড়রা দুই সারিতে দাঁড়িয়ে কুমার সাঙ্গাকারাকে গার্ড অব অনার স্যালুট প্রদান করেন। ক্রিকেট থেকে দুই গ্রেট ব্যাটসম্যানের একই সাথে বিদায়ে ক্রিকেটপ্রেমীদের মন এখন কিছুটা ভারাক্রান্ত। মাইকেল ক্লার্ক ও কুমার সাঙ্গাকারা এই দুই গ্রেট ব্যাটসম্যানকে আর টেস্ট ক্রিকেটে দেখা যাবে না।
গতকাল লন্ডনের কেনিংটন ওভালে শুরু হয়েছে অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের মধ্যে চলতি অ্যাসেজ সিরিজের পঞ্চম ও শেষ টেস্ট। ইংল্যান্ড টস জিতে অস্ট্রেলিয়াকে ব্যাট করতে আমন্ত্রণ জানায়। অস্ট্রেলিয়া প্রথম দিনে ৭৯.৪ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে ২৮৭ রান তুলেছে। এর আগে চতুর্থ টেস্ট জিতে ইংল্যান্ড ৩-১ এ অ্যাসেজ জয় নিশ্চিত করেছে। যে কারণে পঞ্চম টেস্ট আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। তবুও এই টেস্ট কেন এত আলোচিত? কারণ অস্ট্রেলিয়ার ক্যাপ্টেন মাইকেল ক্লার্ক এই টেস্ট খেলেই টেস্ট ক্রিকেট থেকে বিদায় নিচ্ছেন। মাত্র ১১৪ টেস্ট খেলেই টেস্ট ক্রিকেট থেকে কেন ক্লার্ক বিদায় নিচ্ছেন? আত্মসম্মানবোধ। কারণ নটিংহ্যামের ট্রেন্টব্রিজের চতুর্থ টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ইনিংস ১৮.৩ ওভারে মাত্র ৬০ রানে গুটিয়ে যাবার পর ইংল্যান্ড ৯ উইকেটে ৩৯১ রানে ডিকলার করে। জবাবে অস্ট্রেলিয়া দ্বিতীয় ইনিংসে ২৫৩ রানে অলআউট হয়ে গেলে ইংল্যান্ড এক ইনিংস ও ৭৮ রানের বিশাল ব্যবধানে জয়লাভ করে ৩-১ এ অ্যাসেজ জয় নিশ্চিত করে। তার চেয়েও বড় কথা শক্তিশালী অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ইংল্যান্ড এই টেস্ট ম্যাচ মাত্র তৃতীয় দিনেই জয় তুলে নেয়। তারপর শুরু হয় অস্ট্রেলিয়ার মিডিয়ায় মাইকেল ক্লার্কের তুমুল সমালোচনা। যে কারণে ওভাল টেস্টেই ক্লার্ক জীবনের শেষ টেস্ট খেলার ঘোষণা দেন।
গতকাল কেনিংটন ওভালে জীবনের শেষ টেস্ট খেলতে নেমে মাইকেল ক্লার্ক মাত্র ২৯ বল খেলতে সক্ষম হন। যার মধ্যে তিনি একটি চার মারেন। রান তোলেন ১৫। এর আগে ১১৫ টি টেস্ট খেলে ক্লার্কের সংগ্রহ ৮,৬২৮ রান। যার সঙ্গে গতকাল যোগ হল আরো ১৫ রান। ক্লার্ক আর মাত্র একটি ইনিংস খেলার সুযোগ পাবেন অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং করার সময়। ১১৪ টেস্টে ক্লার্ক ইনিংস খেলেছেন ১৯৭ টি। যার মধ্যে ২৮টি টেস্ট সেঞ্চুরি ও ২৭টি হাফ-সেঞ্চুরি নিয়ে ক্লার্কের টেস্ট গড় ৪৯.৩০। টেস্টে ক্লার্কের সর্বোচ্চ ইনিংস অপরাজিত ৩২৯ রান। ২০১২ সালের ৫ জানুয়ারি অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে ভারতের বিপক্ষে বর্ডার-গাভাস্কার ট্রফির চতুর্থ টেস্টে ক্লার্ক অপরাজিত ৩২৯ রানের সেই ইনিংসটি খেলেছিলেন।
২০০৪ সালে ভারতের বিপক্ষে মাইকেল ক্লার্কের টেস্ট ক্রিকেটে ডেব্যু হয় ব্যাঙ্গলোরে অনুষ্ঠিত বর্ডার-গাভাস্কার ট্রফির ৪ টেস্টের প্রথম টেস্টে। ক্লার্ক সেই টেস্ট প্রথম ইনিংসে করেছিলেন ১৫১ রান এবং দ্বিতীয় ইনিংসে করেছিলেন ১৭ রান। অস্ট্রেলিয়ার ক্যাপ্টেন অ্যাডাম গিলক্রিস্ট টস জিতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন। অস্ট্রেলিয়া প্রথম ইনিংসে ক্লার্ক ও গিলক্রিস্টের সেঞ্চুরির উপর ভর করে ৪৭৪ রান তোলে। জবাবে ভারত সৌরভ গাঙ্গুলীর নেতৃত্বে প্রথম ইনিংনে তোলে ২৪৬ রান। ভারত ফলো-অনে পড়েছিল। কিন্তু অস্ট্রেলিয়া প্রথম টেস্ট জয় নিশ্চিত করতে ভারতকে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটের সুযোগ না দিয়ে নিজেরাই দ্বিতীয় ইনিংস খেলতে নামে। দ্বিতীয় ইনিংসে অস্ট্রেলিয়া তুলেছিল ২২৮ রান। ভারতের জন্য দ্বিতীয় ইনিংসে জয়ের লক্ষ্য ঠিক হয় ৪৫৫ রান। কিন্তু ভারত দ্বিতীয় ইনিংসে ২৩৯ রানে গুটিয়ে গেলে অস্ট্রেলিয়া ব্যাঙ্গালোর টেস্টে ২১৭ রানের বড় জয় পায়। জীবনের প্রথম টেস্টেই প্লেয়ার অব দ্য ম্যাচ হয়েছিলেন মাইকেল ক্লার্ক।
একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ক্লার্ক মোট ২৪৫টি ম্যাচ খেলেছেন। ২২৩ ইনিংসে মোট রান করেছেন ৭,৯৮১। যার মধ্যে ৮টি সেঞ্চুরি ও ৫৮টি হাফ সেঞ্চুরি, গড় রান ৪৪.৫৮। একদিনে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ক্লার্কের সর্বোচ্চ রান ১৩০। একদিনের ক্রিকেট মাইকেল ক্লার্ক অস্ট্রেলিয়ার চতুর্থ ক্যাপ্টেন, যার নেতৃত্বে অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপ জয় করে। এর আগে অ্যালান বর্ডার, স্টিভ ওয়াহ, রিকি পন্টিংয়ের নেতৃত্বে অস্ট্রেলিয়া চারবার বিশ্বকাপ জয় করে। যার মধ্যে রিকি পন্টিংয়ের নেতৃত্বে দুইবার অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপ জয় করে। ক্লার্কের নেতৃত্বে সর্বশেষ এবারের বিশ্বকাপ জয় নিয়ে অস্ট্রেলিয়া একমাত্র দেশ যারা ক্রিকেটে পাঁচবার বিশ্বকাপ জয় করার রেকর্ড করে। বিশ্বকাপ জয়ের পর একদিনের ক্রিকেট থেকেও মাইকেল ক্লার্ক অবসর নেন।
গতকাল ওভালে ওয়ার্নার আউট হবার পর মাইকেল ক্লার্ক যখন ব্যাট হাতে মাঠে নামেন তখন ইংল্যান্ডের খেলোয়াড়রা দুই সারিতে দাঁড়িয়ে এই ক্রিকেট বরপুত্রকে গার্ড অব অনার স্যালুট দেয়। অস্ট্রেলিয়া পঞ্চম ও শেষ টেস্টে প্রথম ইনিংসে যেভাবে খেলছে, তা দেখে মনে হচ্ছে, এই টেস্ট জিতে তারা দলীয় ক্যাপ্টেনের বিদায়ী টেস্টকে স্মরণীয় করে রাখতে চায়। যা অ্যাসেজ পরাজয় এড়ানোর সুযোগ না থাকলেও ৩-২ এ সিরিজ শেষ করার একটা লক্ষ্য নিয়েই তারা এখন ব্যাট করছে। এই মুহূর্তে স্মিথ ৭৮ রানে ও ভোগেস ৪৭ রানে ব্যাট করছেন। আজ ওভাল টেস্টের দ্বিতীয় দিন।
ওদিকে শ্রীলংকার কলোম্বোতে কুমার সাঙ্গাকারা জীবনের শেষ টেস্ট খেলতে মাঠে নেমেছেন। গতকাল শুরু হওয়া শ্রীলংকা ও ভারতের মধ্যকার দ্বিতীয় টেস্টে ভারত টস জিতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয়। ভারতীয় ক্রিটেকের নতুন সেনসেশান ওপেনার লোকেশ রাহুলের সেঞ্চুরি এবং কোহলি, রোহিত ও সাহার হাফ-সেঞ্চুরির উপর ভর করে আজ লাঞ্চের পর ভারতের প্রথম ইনিংস গুটিয়ে যায় ৩৯৩ রানে। এখন শ্রীলংকা তাদের প্রথম ইনিংস খেলছে। ওপেনার করুণারত্নের আউটের পর কুমার সাঙ্গাকারা যখন মাঠে নামেন তখন ভারতীয় খেলোয়াড়রা শ্রীলংকার এই ক্রিকেট বরপুত্রকে দুই সারিতে দাঁড়িয়ে গার্ড অব অনার স্যালুট দেন। এই মুহূর্তে সাঙ্গাকারা ২৮ ও সিলভা ২৮ রানে ব্যাট করছেন। শ্রীলংকার রান ১ উইকেটে ৫৩।
কুমার সাঙ্গাকারা এর আগে ১৩৩টি টেস্ট ম্যাচ খেলে সংগ্রহ করেছেন ১২,৩৫০ রান। যার মধ্যে ৩৮ টি টেস্ট সেঞ্চুরি ও ৫২ টি হাফ-সেঞ্চুরি। টেস্ট গড় ৫৪.২২। টেস্টের সর্বোচ্চ ইনিংস ৩১৯। ২০০০ সালের ২০ জুলাই দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তিন টেস্ট সিরিজের প্রথম টেস্টে গলে ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে কুমার সাঙ্গাকারার টেস্ট অভিষেক। সেই টেস্টে সনৎ জয়সুরিয়ার ১৪৮ ও মহেলা জয়বর্ধণার ১৬৭ রানের উপর ভর করে শ্রীলংকা প্রথম ইনিংসে ৫২২ রান তোলে। যদিও অভিষেক টেস্টে সাঙ্গাকারা মাত্র ২৩ রান করেছিলেন ৬৫ বল মোকাবেলা করে। ক্রিজে ছিলেন ৮৫ মিনিট। ২৩ রান তুলতে ৩ টি চার মেরেছিলেন। জবাবে দক্ষিণ আফ্রিকা প্রথম ইনিংসে মত্তিয়া মুরলিধরনের ঘূর্ণিবলের তোপে কালিনানের সেঞ্চুরি সত্ত্বেও মাত্র ২৩৮ রানে অলআউট হয়ে যায়। কালিনান ১১৪ রানে অপরাজিত ছিলেন। মুরলিধরন ৪১ ওভার বল করে ৮৭ রানে নেন ৬ উইকেট।
ফলো-অনে পড়ে দক্ষিণ অফিকা তাদের দ্বিতীয় ইনিংসে আবার ব্যাট করতে নামে। আবারো মুরলিধরনের ঘূর্ণিবলের তোপে ২৬৯ রানে অলআউট হয় দক্ষিণ আফ্রিকা। শ্রীলংকা এক ইনিংস ও ১৫ রানের বিশাল জয় পায়। কুমার সাঙ্গাকারার আর দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে হয়নি। মুরলিধরন দক্ষিণ আফ্রিকার দ্বিতীয় ইনিংসে ছিলেন আরো বিধ্বংসী। ৩৫ ওভার বল করে ৮৪ রানে তুলে নেন ৭ টি উইকেট। সঙ্গতকারণেই ম্যাচ সেরা মুত্তিয়া মুরলিধরন। ৭৬ ওভার বল করে ১৭১ রানে ১৩ উইকেট মুরলিধরনের।
কুমার সাঙ্গাকারা এর আগে বিশ্বকাপ শেষে একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেন। একদিনের ক্রিকেটে সাঙ্গাকারা মোট ৪০৪ টি ম্যাচ খেলেছেন। ৩৮০ ইনিংসে রান তুলেছেন ১৪,২৩৪। যার মধ্যে ২৫ টি সেঞ্চুরি ও ৯৩ টি হাফ-সেঞ্চুরি, গড় ৭৮.৮৬। ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ইনিংস ১৬৯ রানের।
©somewhere in net ltd.