নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

রেজা ঘটক

ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।

রেজা ঘটক › বিস্তারিত পোস্টঃ

\'শেকড়ের খোঁজে\' বইতে মেঘনার গজারিয়া চরের সমকালীন ক্ষমতাবানদের অনুসন্ধান করেছেন ক্যামেরাশিল্পী সাহাদাত পারভেজ !!!

৩১ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ১২:০৮

সাহাদাত পারভেজকে আমরা অনেকেই অঞ্চল নামেই বেশি চিনি। আমরা সবাই যাকে এখন একনামে ফটোগ্রাফার হিসেবে চিনি, আশ্চার্য হলেও সত্যি হল, সেই অঞ্চলের কিন্তু ছবি তোলার আগে কবিতা লেখায় হাতেখড়ি। অঞ্চল তখন ঢাকা কলেজের ছাত্র। টুক টাক কবিতা লিখত। শুধু কবিতা লিখলে কী আর শিল্পে নেশা ধরা ছেলের মন ভরে! বড় হতে হতে ক্যামেরা নিয়ে ছুটতে ছুটতে সেই অঞ্চল হয়ে উঠল আজকের সাহাদাত পারভেজ। ক্যামেরা এখন যার নিত্য সঙ্গী। সেটা ১৯৯৫ সালের কথা। অঞ্চল নিজের অন্তরের শখ মেটাতে বাবার টাকায় তখন প্রথম প্রকাশ করলেন কবিতার বই 'যে ছবি হৃদয়ে আঁকা'। তারপর ধীরে ধীরে ক্যামেরাই হয়ে গেল অঞ্চলের হৃদয়ের ধ্যানজ্ঞান। অঞ্চলের সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় সম্ভবত ২০০২ বা ২০০৩ সালের দিকে। বন্ধু রাজীব নূরের মাধ্যমে। রাজীবদা আর অঞ্চল তখন প্রথম আলোতে একসঙ্গে কাজ করেন। সেই থেকে অঞ্চলের সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব। অঞ্চলের ক্যামেরায় ধরা পড়েনি আমাদের বন্ধুদের তালিকায় এমন কাউকে আবিস্কার করা হয়তো এই মুহূর্তে হয়তো খুব কঠিন হবে। তো ক্যামেরাই আসলে অঞ্চলের আসল জায়গা।

অঞ্চলের আক্ষরিক অর্থে যেটি দ্বিতীয় বই কিন্তু ক্যামেরার কাজ নিয়ে প্রথম, সেটি আমাদের চারুকলার বিখ্যাত মডেল শিল্পী মোমিন আলী মৃধাকে নিয়ে। যাকে আমরা সবাই দাদু ডাকতাম, যিনি শতবর্ষ আয়ু পেয়েছেন, অঞ্চল শিল্পী মোমিন আলী মৃধা দাদু'র উপর দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। অঞ্চলের মানে ফটোগ্রাফার সাহাদাত পারভেজের 'মডেল শিল্পী মোমিন আলী মৃধা'র উপর যত ছবি তুলেছেন, তা নিয়ে একটি সংকলন বের হয় ২০১২ সালে। বইটির নাম 'শতবর্ষের পথিক'। বইটি প্রকাশ করেছিল প্রকাশনা সংস্থা ঐতিহ্য। দাদু'র ছবি নিয়ে সেই বইটির প্রচ্ছদের নাম লিখেছিলেন কবি ও নির্মাতা টোকন ঠাকুর। দাদু মডেল শিল্পী মোমিন আলী মৃধা, টোকন ঠাকুরের প্রথম সিনেমা 'ব্ল্যাকআউট'-এর একজন অন্যতম ডকু আর্টিস্ট।

'ব্ল্যাকআউট'-এ দাদু ঠিক দাদুর সভূমিকায় দুর্দান্ত অভিনয় করেছেন। ব্ল্যাকআউটের শিল্পী চরিত্র রাফি চারুকলার স্টুডেন্ট। সেই সূত্রে দাদুর সঙ্গে খুব ভাব তার। মডেল মিটিকে রাফি ভালোবাসে। দাদু'র কাছে রাফি স্বীকার করে যে, শীঘ্রই সে বিয়ে করবে। সে উপলক্ষ্যে দাদুর কাছ থেকে রাফি অলংকার কিনতে যায়। দাদুর কাছ থেকে হবু বিয়ের আগাম আর্শিবাদও নেয় রাফি। তো যা বলছিলাম, দাদুকে যারা ক্যামেরায় ধরে রেখেছেন, তাদের মধ্যে আমাদের সাহাদাত পারভেজ অন্যতম। বিভিন্ন সময়ে সাহাদাত পারভেজ দাদু'র যত ছবি তুলেছেন, তার একটা বাছাই সংকলন আসলে 'শতবর্ষের পথিক'। বইটি হাতে নিলে এখনো দাদু'র সঙ্গে আমাদের চিরচেনা হারিয়ে যাওয়া অনেক মুহূর্তের কথা ঝাঁকে ঝাঁকে একসঙ্গে মনে পড়ে।

তো এতক্ষণ সাহাদাত পারভেজ অঞ্চলের যে পরিচয়ের কথা বলছিলাম, এবার তার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে নতুন আরেকটি পরিচয়। পরিচয় না বলে বলা উচিত নতুন আরেকটি পালক যুক্ত হতে যাচ্ছে আমাদের অঞ্চলের নামের সঙ্গে; গবেষক সাহাদাত পারভেজ। অনেক হয়তো শুনে অবাক হবেন, এই ছেলে সারাক্ষণ ক্যামেরা নিয়ে ছুটাছুটি করেন, গবেষণার সময় পায় কোথায়? সেই সময়টা আসলে কাউকে বলে দিতে হয় না। সময় নিজেই যোগ্য মানুষের হাতে ধরা দেয়। ক্যামেরায় সাহাদাত পারভেজ যেমন সময়কে ফ্রেমে ফ্রেমে বন্দি করেন, এবার সময়কে তিনি গবেষণায়ও মুঠো করতে চাইলেন। সে কারণেই এবার সাহাদাত পারভেজের নতুন কর্মের ফসল গবেষণা গ্রন্থ 'শেকড়ের খোঁজে'। আগামী অক্টোবর ২০১৫-তে বইটি প্রকাশ পাচ্ছে সংবেদ থেকে। প্রকাশক কথাসাহিত্যিক পারভেজ হোসেন। বইটির প্রচ্ছদ করেছেন শিল্পী সব্যসাচী হাজরা।

স্বভাবতই এখন অনেকের মনে প্রশ্ন জাগবে, সাহাদাত পারভেজ ক্যামেরার বাইরে কী নিয়ে এমন গবেষণা করলেন? আছে, গবেষণার অনেক বিষয়ই সাহাদাত পারভেজের হৃদয়ের গভীরে লুকিয়ে আছে। তারই একটা ঝলকানি হয়তো 'শেকড়ের খোঁজে'। আমাদের প্রাচীন সাহিত্যে এমন কি পৌরাণিক কাহিনীতে মেঘনা মোটেও নদী নয়। প্রাচীনকালে মেঘনার ভীষণ প্রমত্তাকে সাগরের সঙ্গে তুলনা করা হতো। ধীরে ধীরে সেই প্রমত্তা মেঘনা সাগর নাম হারিয়ে নদী নাম ধারণ করলো। আজ থেকে প্রায় চারশো বছর আগে মেঘনার বুকে জেগে উঠেছিল এক বিশাল ভূখণ্ড। সেই ভূখণ্ডের নাম রাখা হয়েছিল গজারিয়া। ধারণা করা হয়, মোগল আমলের মাঝামাঝি সময় থেকেই সেই গজারিয়া চর-ভূখণ্ডে জনবসতি গড়ে উঠতে থাকে। ভূতাত্ত্বিক কারণেই সম্ভবত এর আগে এখানে জনবসতি স্থাপন সম্ভব হয়ে ওঠেনি। পরবর্তী সময়ে উর্বরা ভূমিই চারপাশের মানুষদের এখানে টেনে আনে। সেই সব প্রান্তিক মানুষের পাশাপাশি গজারিয়ার চরে জনবসতি গাড়েন কয়েকজন ক্ষমতাবান ব্যক্তিও। নদীঘেরা সেই গহিন অঞ্চলে তারা আসেন মূলত পত্তনি লাভের কারণে। সমকালীন সমাজের ক্ষমতাবান সেই মানুষগুলো কোথা থেকে কিভাবে এলেন, কিংবা কেমন করে এই গজারিয়া চরের ভূসম্পত্তির মালিক হলেন, তারই বিস্তৃত এবং নির্ভেজাল বর্ণনা আছে এই 'শেকড়ের খোঁজে' বইয়ে।

সাহাদাত পারভেজ পরিশ্রম করতে জানেন। অত্যন্ত পরিশ্রম করেই দীর্ঘদিন ধরে তিনি সেই সব অচেনা-অজানা ক্ষমতাবান মানুষগুলোর চরিত্রের এক নির্ভেজাল অনুসন্ধান করেছেন। বইটি সম্পর্কে আপাতত এটুকু বলা যায় যে, যারা শেকড়ের সন্ধান খুঁজতে ভালোবাসেন, যারা নদী প্রেমিক, যারা হারিয়ে যাওয়া সেই সব ক্ষমতাবানদের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে মোটামুটি একটা ধারণা নিতে চান, ক্ষমতাবানদের চরিত্র সমকালীন সমাজে কতোটা পরিবর্তিত হয়েছে বা আদৌ হয়েছে কিনা, এসব প্রশ্নের যারা উত্তর খুঁজতে চান, মূলত তাদের জন্য সাহাদাত পারভেজ কঠিন পরিশ্রম করেই আবিস্কার করেছেন 'শেকড়ের খোঁজে'-এর সেই দুর্লভ ঘটনার এপিটাফ। আগামী অক্টোবর মাসেই 'শেকড়ের খোঁজে' বই আকারে সংবেদ থেকে প্রকাশ পাচ্ছে। তার আগে সাহাদাত পারভেজের জন্য রইল অন্তরের শুভেচ্ছা। পাশাপাশি প্রকাশক কথাসাহিত্যিক পারভেজ হোসেনকে আগাম ধন্যবাদ এজন্য যে, এমন একটি মূল্যবান বই আমাদের উপহার দিতে যাচ্ছেন। আর শিল্পী সব্যসাচী হাজরাকেও ধন্যবাদ নজর কাড়া একটি সুন্দর প্রচ্ছদ উপহার দেবার জন্য। সাহাদাত পারভেজের 'শেকড়ের খোঁজে' বইটির জন্য রইল আমার অন্তরের শুভেচ্ছা ও শুভকামনা।
..................................
৩০ আগস্ট ২০১৫
ঢাকা

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.