নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

রেজা ঘটক

ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।

রেজা ঘটক › বিস্তারিত পোস্টঃ

নতুন বেতন কাঠামোতে অখুশি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা এবং সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়া !!!

০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ২:৪২

টঙ্কাই কিবলম। পৃথিবীতে টাকাই সব। সোমবার সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে অষ্টম বেতন কাঠামো অনুমোদন করা হয়। এর সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সশস্ত্র বাহিনীর জন্যও নতুন বেতন কাঠামো অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভুইঞা সংবাদমাধ্যমকে জানান। মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর তিনি বলেন, নতুন নিয়মে শ্রেণি প্রথা, সিলেকশন গ্রেড ও টাইমস্কেল থাকবে না। বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি বা ইনক্রিমেন্ট হবে মূল বেতনের শতকতা হারে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দুটি উৎসব ভাতার পাশাপাশি প্রতি বছর বাংলা নববর্ষে মূল বেতনের ২০ শতাংশ হারে বাড়তি একটি ভাতা পাবেন।

অষ্টম বেতন কাঠামো অনুযায়ী, সর্বোচ্চ ৭৮ হাজার এবং সর্বনিম্ন ৮ হাজার ২৫০ টাকা মূল ধরে সরকারি কর্মচারীদের জন্য নতুন বেতন কাঠামো অনুমোদন করেছে সরকার, যাতে বেতন বেড়েছে গ্রেড ভেদে ৯১ থেকে ১০১ শতাংশ। নতুন বেতন কাঠামোতে বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা পদে যোগ দেওয়া একজন চাকরিজীবীর মূল বেতন হবে মাসে ২২ হাজার টাকা, যা আগের কাঠামোতে ছিল ১১ হাজার টাকা। এর সঙ্গে যুক্ত হবে এলাকা অনুযায়ী বাড়িভাড়া এবং গ্রেড অনুযায়ী চিকিৎসা ও অন্যান্য ভাতা। আর সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এই মূল বেতন ২০১৫ সালের ১ জুলাই থেকে কার্যকর ধরা হবে। আর ভাতা কার্যকর হবে আগামী ২০১৬ সালের ১ জুলাই থেকে।

নতুন বেতন কাঠামোতে সর্বোচ্চ স্কেলের মূল বেতন ৭৮ হাজার টাকা প্রস্তাব করা হলেও মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের মূল বেতন ৮৬ হাজার টাকা এবং জ্যেষ্ঠ সচিবদের ক্ষেত্রে ৮২ হাজার টাকা হবে। সপ্তম বেতন কাঠামোতে তাদের মূল বেতন ছিল যথাক্রমে ৪৫ হাজার ও ৪২ হাজার টাকা। নতুন স্কেলে শুধু বেতন দিতেই চলতি অর্থ বছরে সরকারের ১৫ হাজার ৯০৪ কোটি ২৪ লাখ টাকা অতিরিক্ত খরচ হবে। আগামী বছর বেতন-ভাতা খাতে অতিরিক্ত লাগবে ২৩ হাজার ৮২৮ কোটি ৫৭ লাখ টাকা।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, তিন বাহিনীর প্রধানদের জন্য একই বেতন ও র‌্যাংক নির্ধারণ করে সশস্ত্র বাহিনীর নতুন বেতন কাঠামো অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা। এতোদিন সেনা প্রধানের বেতন নির্ধারিত থাকলেও নৌ ও বিমান বাহিনীর প্রধান বেতন পেয়ে আসছিলেন লেফটেনেন্ট জেনারেলের র‌্যাংকে। কেবিনেট সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তিন বাহিনীর প্রধানের বেতন সমান হওয়া সমীচীন। প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন, নৌ বাহিনী এবং বিমান বাহিনী প্রধানের র‌্যাংক আপডেট করা হবে। কাজেই তিন বাহিনীর প্রধানের নির্ধারিত বেতন হবে ৮৬ হাজার টাকা। অর্থাৎ, তিন বাহিনীর প্রধানরা এখন থেকে মন্ত্রিপরিষদ সচিব এবং প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের সমান বেতন পাবেন। একইভাবে সামরিক বাহিনীর লেফটেনেন্ট জেনালের পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের মূল বেতন হবে জ্যেষ্ঠ সচিবদের সমান, ৮২ হাজার টাকা। আর সশস্ত্র বাহিনীর সর্বোচ্চ গ্রেডে সচিব পদমর্যাদায় মেজর জেনারেল ও সমান র‌্যাংকের কর্মকর্তাদের মাসিক মূল বেতন ৪০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৭৮ হাজার টাকা করা হয়েছে।

কিন্তু মন্ত্রিসভায় অনুমোদন পাওয়া নতুন বেতন কাঠামো নিয়ে খুশি নন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। এ জন্য পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী সবগুলো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আগামীকাল মঙ্গলবার পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করবেন শিক্ষকরা। তবে মন্ত্রিসভা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রস্তাব পর্যালোচনার জন্য বেতন বৈষম্য নিরসন সম্পর্কিত মন্ত্রিসভা কমিটিকে দায়িত্ব দিয়েছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মূল দাবি ছিল- সিলেকশন গ্রেড বহাল ও ‘সুপারগ্রেড’ না রাখা। তাঁরা মনে করছেন, এর মাধ্যমে তাদের দাবি পূরণ হয়নি। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক এ এস এম মাকসুদ কামাল সংবাদমাধ্যমকে বলেন, মন্ত্রিসভায় যেভাবে ‘সুপারগ্রেড’ সৃষ্টি করে বেতন কাঠামো অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, তাতে বৈষম্যের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। শিক্ষকদের প্রত্যাশিত দাবি পূরণ হয়নি। এ জন্য কাল মঙ্গলবার সবগুলো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পূর্ণদিবস কর্মবিরতির কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।

সরকারি সিদ্ধান্তে অষ্টম বেতন কাঠামো মন্ত্রিসভায় অনুমোদন হবার পর বাংলাদেশে আগামীতে এর কী ধরনের প্রতিক্রিয়া পড়তে পারে বা পড়বে তার একটি আগাম পূর্বাভাস এবার আলোচনা করা যাক।

১. সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন প্রায় দ্বিগুণ বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে স্বাভাবিক কারণে তাঁরা সবাই সরকারের উপর এখন ভীষণ খুশি। বর্তমান সরকারের নবগঠিত সংসদে বিনা ভোটে ১৫৪ জন সাংসদ বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়েছিলেন। যা নিয়ে মনে মনে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের (প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে) মধ্যে বর্তমান সরকারের প্রতি এঁদের এক ধরনের অদৃশ্য অসন্তোষ ছিল। আজকের বেতন বাড়ার পর সেই অসন্তোষ এখন কার্যত সন্তুষ্টিতে পরিনত হতে যাচ্ছে। যা সরকারের কৌশলের একটি বিজয়, পাশাপাশি বেতন বৃদ্ধির দাবি জানানো প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের দাবির প্রতি সরকারের সুনজরের সামিল।

২. পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা মিনমিনে গলায় নতুন বেতন কাঠামোকে যেভাবে বৈষম্য বলছেন, তা শেষ পর্যন্ত হয়তো এক ধরনের আপোষে রূপ নেবে। কারণ আমরা সবাই জানি, নাই মামার চেয়ে কানা মামা ভালো। মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব এবং তিন বাহিনীর প্রধানরা এখন থেকে মন্ত্রিপরিষদ সচিব এবং প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের সমান বেতন পাবেন। এখানেই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মুল আপত্তি। কেন শিক্ষকদের মধ্যেও সুপার বেতন স্কেল ধরা হলো না! কিন্তু শেষ পর্যন্ত শিক্ষকরা আন্দোলন থেকে বাড়তি বেতন নিয়ে একটা সন্তোষজনক দর বাড়ানো/ দরকষাকষি শেষে ঘোষিত বেতন কাঠামোই মেনে নেবেন বলেই মনে হচ্ছে। কিন্তু আগামীকাল দেশের সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মবিরতি পালন করার ঘোষণা দিয়ে শিক্ষকরা যে প্রতীকি আন্দোলন মিনমিনে গলায় পালন করতে যাচ্ছেন, সেটা সময়ই বলে দেবে কখন এই বিষয়ে সরকারের সঙ্গে আপোষ হবে।

শিক্ষকরা একদিনের কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়ে বরং নৈতিকভাবে ছাত্রছাত্রীদের জন্য একদিনের শিক্ষাসেবা বঞ্চিত করার যে ইতিহাস রচনা করল, সেটি শেষপর্যন্ত ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষাজীবনের উপর নেগেটিভ ইমপ‌্যাক্ট তৈরি করবে। আমাদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে বরং এর চেয়েও জোরালো অভিযোগ তোলা যায়। মাস শেষে বেতন নিয়ে এঁরা ক্লাসে ঠিকমত যান না। ঠিক সময় পরীক্ষা নেন না। পরীক্ষা নিতে দেরি করেন। পরীক্ষার ফলাফল দিতে দেরি করেন। পছন্দের ছেলেমেয়েদের প্রতি পরীক্ষার রেজাল্টে বড় ধরনের অনৈতিকতার আশ্রয় নেন। আর সারা বছর এনজিও ও বিভিন্ন রিসার্স প্রতিষ্ঠানে কনসালটেন্সি করে বেড়ান। অথচ জনগণের ট্যাক্সের টাকায় বেতন নিয়ে ছাত্রছাত্রীদের নিয়েই এসব শিক্ষকদের ব্যস্ত থাকার কথা ছিল। এঁদের অনেকেই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেতন নেন আর রিসার্সের নামে বছরের পর পর বিদেশে প্রমোদ ভ্রমণে কাটান। তাঁদের রিসার্সের ফলাফলে সন্তোষজনক কোনো ফলাফল আমরা বাস্তবে একদম দেখি না। কিন্তু পাবলিকের ট্যাক্সের পয়সায় এঁরা নির্বিচারে প্রায় সারা বছরই এই অপকর্মটি নির্বিঘ্নে করেন। একবারও তাঁদের মনে ছাত্রছাত্রীদের বিষয়টি আসে না। নিজেদের আখের গোছাতেই এঁরা ব্যস্ত থাকেন।

এখন শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধির প্রশ্নে দেশের সাধারণ মানুষের সরকারের কাছে একটি পরম চাওয়া আছে। আপনারা ছাত্রছাত্রীদের প্রতি মনযোগ দেন। আমরা আপনাদের বেতন বাড়াতে সরকারকে অনুরোধ করব। কিন্তু আন্দোলন করে বেতন বাড়িয়ে ক্লাসরুম বাদ দিয়ে আবার এসব বাণিজ্য শুরু করবেন, এটা আমরা সত্যি সত্যিই মন থেকে চাই না। আপনাদের বেতন বাড়লে ছাত্রছাত্রীদের কী লাভ হচ্ছে, সেটাই আমাদের আম-পাবলিকের কাছে বিচার্য বিষয়। কারণ, আমাদের ট্যাক্সের পয়সায় আপনাদের মাস শেষে বেতন দেওয়া হয়।

৩. সরকার বাহাদুরকে এখন যে বিষয়টি কঠোরভাবে নিশ্চিত করতে হবে সেটা হলো, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধিতে তাঁদের দাবি যেহেতু পূরণ হয়েছে, এবার টেবিলে আর কোনো ফাইল আটকে রাখা চলবে না। কর্মদিবসে আটঘণ্টা কাজের নিশ্চয়তা আদায় করতে হবে। কর্মদিবসে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের আমরা আটঘণ্টাই কর্মে ব্যস্ত দেখতে চাই। ফাইল আটকে রেখে দুর্নীতি করার যে চিরাচরিত অভ্যাস, সেটা এবার সরকার বাহাদুরকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। নইলে ফাইল আটকে রেখে বেতন বাড়ার মত ঘুষের পরিমাণ বেড়ে গেলে সেটা সরকারের জন্য বুমেরাং হবে। অর্থ্যাৎ আমরা বলতে চাই, আপনাদের বেতন যেহেতু বাড়ানো হয়েছে, এবার আপনাদের দুর্নীতিকে আমরা জিরো টলারেন্স দেখতে চাই। যদি সরকার এটা কঠোরভাবে প্রতিরোধ করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে বছর শেষে এঁরাই আবার নতুন করে বেতন বাড়ানোর পায়তারা করবে। মানে খুব সোজা, এভাবে রাজকর্মকর্তা-কর্মচারিদের বেতন বাড়িয়ে বেশিদিন মুখবন্ধ করা একটা সহজ কাজ। সরকার বরং এখন সেই ঝুঁকির মধ্যে থাকবে।

৪. নতুন বেতন কাঠঅমোতে যেহেতু এমপিওভুক্ত সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের বেতনও বৃদ্ধি পাচ্ছে, সুতরাং সরকারের প্রতি নতুন করে নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে একটা চাপ তৈরি হবে। নন-এসপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরাও এখন বেতন বৃদ্ধির দাবি তুলে আন্দোলনে যেতে পারেন। শহীদ মিনার ও প্রেসক্লাবমুখী এ ধরনের অনেক আন্দোলন যেহেতু আমরা আগেও দেখেছি। তাই নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এক ধরনের নেগেটিভ ইমপ‌্যাক্ট আসতে পারে। সরকার বাহাদুরকে সে জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।

৫. যেহেতু সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বেড়েছে, যা বাজারের উপর প্রভাব ফেলবে। সেই সুযোগে সারা দেশের বাড়িওয়ালারা বাড়িভাড়া বাড়ানোর পায়তারা করবে। সরকার বাহাদুরের এদিকটা কঠোরভাবে চেক দিতে হবে। নইলে বেতন বৃদ্ধির নামে শেষ পর্যন্ত সব দোষ গিয়ে জনগণ নামক নন্দঘোষের ঘাড়ে গিয়ে পড়বে। এমনিতে বাড়িওয়ালাদের ব্যাংকের মাধ্যমে বাড়িভাড়া নেবার কথা সর্বশেষ বাজেটের সময় আলোচিত হলেও বাস্তবে তা কার্যকর হয়নি। মানে খুব সোজা, বাড়িওয়ালারা তাদের নিজস্ব আইন ও নীতি অনুসারে চলেন। বেতন বৃদ্ধির বিপরীতে এরা বাড়িভাড়া বাড়ালে তা জনগণের মরার উপর খরার ঘায়ের মত বিধবে।

৬. বিভিন্ন ট্রান্সপোর্ট মালিক সমিতি তেলে ও গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির অযুহাতে একদফা ট্রান্সপোর্টের ভাড়া বৃদ্ধি করেছেন। পিছিয়ে নেই আবাসিক হোটেল বা খাবার হোটেল মালিকরা। এরাও পাল্লা দিয়ে পরোটার দাম পর্যন্ত বৃদ্ধি করেছেন। এখন নতুন বেতন কাঠামোর ফলে এই গ্রুপ যে আবারো একদফা সবকিছুর দাম বাড়াবে না, তার গ্র্যান্টি কী? সরকার বাহাদুরের এই দিকটায় এক ধরনের অবহেলা বা জেনেও না জানার ভান করার মত ব্যাপার রয়েছে। এখানে সরকারের আরো সুদৃষ্টি প্রত্যাশা করি। নইলে সকল বোঝা গিয়ে শেষ পর্যন্ত আম-পাবলিকের ঘাড়ে চাপবে। এছাড়া বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে শ্রমিক অসন্তোষ ঘটিয়ে কোনো শ্রেণী বা মহল নতুন করে রাজনৈতিক পরিবেশ অস্থিতিশীল করার পায়তারা চালাবে। সরকারের সেদিকে সুনজর রাখতে হবে।

৭. দেশে বয়স্ক ভাতা, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, নানান কিসিমের রিলিফের ব্যবস্থা রয়েছে। কেবল রাজকর্মচারীদের বেতন বাড়লে এঁদের ভাতা বা রিলিফ কেন বাড়বে না? সেই প্রশ্নটি এখন সামনে আসবে। পাশাপাশি সবচেয়ে বড় যে প্রশ্নটি আসবে, দেশে কয়েক কোটি বেকার জনগোষ্ঠী রয়েছে। যারা সরকার থেকে কোনো সুবিধা পায় না। বরং সরকারের সৃষ্ট সব ধরনের জঞ্জাল বা পাপের বোঝা তাদের ঘাড়ে অটোমেটিক চেপে বসে। এসব বেকারদের তাহলে এখন কী হবে? এরা কী সবাই একযোগে সুইসাইড করবে? নাকি বাড়িভাড়া, খাবার, পোষাক, যাতায়াত সব খরচ বাড়ায় তারা এমনিতেই নিঃশেষ হয়ে যাবে? দেশের বেকারদের জন্য নতুন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না রেখে বেতন কাঠামো পরিবর্তনের নীতি যে আভাস দেয় তা হলো, বেকারদের নিয়ে সরকারের তেমন কোনো মাথাব্যথা নাই। এরা মরলে মরুক, বাঁচলে বাঁচুক। এটা সোজা কথায় আসলে চরম বৈষম্য। একই রাষ্ট্র সীমানায় একই নাগরিক পরিচয়ে এরা কেন রাষ্ট্রের কাছে এত অপাংতেয় থাকবে? আমাদের বর্তমান মন্ত্রিসভায় অনেক তরুণ কর্মঠ মন্ত্রী আছেন। তাঁদের সবাইকে এদের দায়িত্ব নিতে হবে। তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধি হিসেবে এঁরা এখন বেকারদের পাশে না দাঁড়ালে বেকারদের জন্য বেতন কাঠামোর এই চাপ নেওয়া হবে সুইসাইডাল।

৮. নতুন বেতন কাঠামোতে শ্রেণী বিলুপ্তি ঘটিয়ে সরকার একটি নতুন দিগন্ত রচনা করেছেন। এজন্য সরকারকে সাধুবাদ জানাই। বৃটিশ আমলে প্রবর্তিত শ্রেণী বৈষম্য, কে কোন শ্রেণীর কর্মচারী এটা এতদিন ছিল বাংলাদেশে একটি দৃশ্যমান শ্রেণীবিভাজন। যা নতুন বেতন কাঠামোতে আর থাকলো না। এখন ২০টি গ্রেডের পাশাপাশি অতিরিক্ত তিন বাহিনীর প্রধানরা এবং মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবদের জন্য একটা উচ্চতর স্কেল রয়েছে। কিন্তু টোটাল অর্থে শ্রেণী বিভাজনটা আর দৃশ্যমান রইল না। গ্রেড দিয়ে পরিচয় হবে, ক্লাস দিয়ে নয়। বাস্তবে দেশের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আচরণে আমরা এখন এর যথাযথ প্রতিফলনও দেখতে চাই।

৯. নতুন বেতন কাঠামো অনুযায়ী যেহেতু একটি পরিবার বেশ ভালোভাবেই চলতে পারবে, তাই দেশ থেকে দুর্নীতি শিকড়সহ উৎপাটন করাটাই এখন আমরা দেখতে চাই। নইলে জনগণের উপর ট্যাক্স বাড়িয়ে যাঁদের বেতন বাড়ানো হলো, তারা যদি লাইনে না আসেন, তাহলে এটা সরকারের জন্য একটা সময় পরে বরং বুমেরাং হবে। সেদিকে সরকারের সুনজর রাখতে হবে।

১০. নতুন বেতন কাঠামো ঘোষণা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের দীর্ঘদিনের দাবি মেটানোর অঙ্গীকার পূরণের কথা হলেও বাস্তবে সরকার সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অসন্তোষ দূর করে সরকার বিরোধী আন্দোলনকে দমিয়ে দেবার যে কৌশল নিয়েছেন, এটা খালি চোখে অনেকটা সোজা আঙুলে ঘি উঠানোর মত ব্যাপার। জনমত সরকারের পক্ষে রাখার জন্য ভালো কাজের পাশাপাশি বিরোধী মতবাদকেও মতপ্রকাশের সুস্পষ্ট স্বাধীনতা দিতে হবে। নইলে নির্বাচিত সরকারও যে স্বৈরাচারের মত আচরণ করতে পারে, সেটি কিন্তু সরকারের কিছু কিছু নেতিবাচক কর্মকাণ্ডে মাঝেমাঝে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। অনেকগুলো ভালো কাজ অল্পকিছু খারাপ কাজের কারণে জনগণের কাঠগড়ায় ওঠে। আসল জনমতটা সেই কাঠগড়ার মাপকাঠিতে ওঠানামা করে। সেই আশংকাটি দূর করার জন্য মত প্রকাশের পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতার কথা, যেটি বাংলাদেশের সংবিধানে একজন নাগরিককে সুস্পষ্টভাবে অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে, সুতরাং বিরোধীপক্ষকে কোনঠাসা করার সরকারি কৌশলকে আরো গণতান্ত্রিক আচরণসিদ্ধ হতে হবে। আইসিটি আইনের ৫৭-ধারা বাতিল করে নাগরিকদের মত প্রকাশের পূর্ণ-স্বাধীনতা দিতে হবে। নইলে এই আপদকালীন সমস্যার সমাধান যে দীর্ঘমেয়াদে কোনো সমাধান নয়, সেটি আগামীতে সময়ই বলে দেবে।

আমরা প্রত্যাশা করব, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এবার পুর্ণ উদ্দামে কাজে মনযোগী হবেন। দুর্নীতিতে সরকার জিরো টলারেন্স দেখাবেন। আর বেকার ভাতা সহ অন্যান্য ভাতার ক্ষেত্রে সরকার প্রয়োজনমত বিবেচনা করবেন এবং নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে দেশের তরুণপ্রজন্মকে কর্মক্ষম করে গড়ে তুলবেন। আমরা সেই সুদিনের প্রত্যাশাই কেবল করতে পারি এখন। সবচেয়ে বড় কথা, দেশে এখন একটি স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ বিরাজ করছে। বেতন কাঠামো ঘোষণাকে ঘুটি হিসেবে কাজে লাগিয়ে কোনো মহল যাতে অন্যায্যভাবে কোনো অন্যায় দাবি নিয়ে রাজনৈতিক মাঠ গরম করার সুযোগ না নিতে পারে, সেদিকে সরকারের সুদৃষ্টি রাখতে হবে। নইলে নতুন বেতন কাঠামোর রসালোর চেয়ে টক ছড়াতেও ভূমিকা রাখায় একটি উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে। অতএব সাধু সাবধান।

...................................
৮ সেপ্টেম্বর ২০১৫
ঢাকা

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সকাল ৯:৩৮

আমি আবুলের বাপ বলেছেন: পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কন,তিন বেলা চেতনা খাইতে।

২| ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:০৭

শতদ্রু একটি নদী... বলেছেন: ৬-৭ জুন কেন সুপারগ্রেড পাইলো এইটাই শিক্ষকদের আসল অসন্তোষের কাজ। কিন্তু সুপারগ্রেড থাকা সম্পূর্ন যৌক্তিক। আবার সিলেকশন গ্রেডের চেয়ে বার্ষিক ইঙ্ক্রিমেন্টে আর্থিক সুবিধা বেশি, তাহলে সমস্যাটা কই বুঝিনা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.