নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

রেজা ঘটক

ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।

রেজা ঘটক › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ভ্যাট নিয়ে আন্দোলন কতোটা যৌক্তিক !!!

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৪৬

বাংলাদেশে বর্তমানে ৩৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় (প্রকৌশল, কৃষি ও মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় সহ), ৮৩টি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, ৬৪টি মেডিকেল কলেজ ও ১৭টি প্রকৌশল কলেজ রয়েছে। উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পর ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে যারা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবার সুযোগ না পায়, মূলত তারাই এসব প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ ও প্রকৌশল কলেজে ভর্তি হয়। 'প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি অ্যাক্ট ১৯৯২' পাস হবার পর ১৯৯২ সালে নর্থ-সাউথ ইউনিভার্সিটি দিয়ে বাংলাদেশে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে ছাত্রছাত্রীদের সংখ্যা কত? পাঁচ লাখ? সাত লাখ? দশ লাখ? নাকি আরো বেশি? এই সংখ্যাটি জানার চেষ্টা হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের ওয়েবসাইট ভিজিট করে সেখানে কিছু পাওয়া গেল না। বরং খুব কষ্ট লাগল এই ভেবে যে, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর যেটি পরিচালক প্রতিষ্ঠান, তাদের ওয়েবসাইটের এই দুর্দশা দেখে। আমার ধারণা পৃথিবীর সবচেয়ে গরীব ওয়েবসাইট হলো আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের ওয়েবসাইট। যে কারণে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের মোট সংখ্যাটি চট করেই বলতে পারছি না। যাহোক এবার আলোচনার বিষয়ে আসি।

গতকাল থেকে বাংলাদেশের শিক্ষাঙ্গনে উত্তাপ। দেশে বর্তমানে রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল। কিন্তু হঠাৎ করে কী এমন ঘটল যে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো উত্তপ্ত হয়ে উঠল? দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা অষ্টম বেতন কাঠামোর বেতন ও গ্রেড নিয়ে সন্তুষ্ট না হয়ে গতকাল কর্মবিরতি পালন করেছেন। আর ইস্ট-ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির ছাত্রছাত্রীরা টিউশন ফি'র উপর বর্ধিত ৭.৫% ভ্যাট (ভ্যালু অ্যাডেড ট্যাক্স বা মূল্য সংযোজন কর) প্রত্যাহারের দাবিতে আন্দোলন করছেন। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন কাঠামো নিয়ে হয়তো সরকারের সঙ্গে একটা বোঝাপড়া হয়ে যাবে। তখন তাদের আন্দোলনের অটোমেটিক সমাপ্তি ঘটবে। কিন্তু গতকাল ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির ছাত্রছাত্রীদের অহিংস আন্দোলনে পুলিশের হামলা-নির্যাতনে বেশ কয়েকজন ছাত্রছাত্রী আহত হবার পর, আজ সারা দেশে অন্তত ১০০টি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ ও প্রকৌশল কলেজের ছাত্রছাত্রীরা শিক্ষার উপর ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবি'র প্রতি সংহতি প্রকাশ করে আন্দোলন শুরু করেছে। আজ ঢাকার বিভিন্ন রাস্তায় প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা রাজপথে অবস্থান নিয়ে গোটা রাজধানী ঢাকা প্রায় যান চলাচলের জন্য অচল করে দিয়েছেন। সাধারণ মানুষের চলাচল এখন চরম দুর্ভোগে রূপ নিয়েছে।

ন্যাশনাল বোর্ড অব রেভিনিউ বা এনবিআর বলছে, ৭.৫% ভ্যাট বসানো হয়েছে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর, যেখানে টিউশনি ফি'র উপর কোনো ভ্যাট ধরা হয়নি। এনবিআর-এর এই ব্যাখ্যাটি ছলছাতুরিপূর্ণ। কারণ, অর্থনীতির একজন ছাত্র হিসেবে আমি ভ্যাট সম্পর্কে যা বুঝি, তা হলো চূড়ান্ত ভোক্তাই আসলে এই মূল্য সংযোজন করের বোঝা বহন করেন। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর আরোপিত ৭.৫% ভ্যাট শেষ পর্যন্ত মালিকপক্ষ যে ছাত্রছাত্রীদের উপর নানান কিসিমের বায়না ধরে আরো উচ্চ হারে আদায় করবেন, আর যে কারণে টিউশন ফি বেড়ে যাবে, আর যার মাসুল দিতে হবে ছাত্রছাত্রীদের। এটা বোঝার জন্য কারো পণ্ডিত বা গবেষক হবার দরকার হয় না। অর্থ্যাৎ প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর আরোপিত ৭.৫% ভ্যাট কার্যত ছাত্রছাত্রীদের মরার উপর খরার ঘা।

পুলিশ অহিংস ছাত্রছাত্রীদের শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচিতে হামলা করে সেটিকে রাতারাতি দেশব্যাপী একটি পূর্ণাঙ্গ আন্দোলনে পরিনত করায় মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে। নইলে আজ হয়তো দেশের অন্যান্য প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতেও একই রকম শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি হতো। সরকার শিক্ষার উপর এই বর্ধিত ভ্যাট প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত এখন এই আন্দোলনকে শক্তি প্রয়োগ করে দমানো কঠিন হবে। শুধু কঠিন নয় মারাত্মক ভুল হবে। কারণ স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশে ছাত্রছাত্রীদের শান্তিপূর্ণ অবস্থান যখন পুলিশের হামলায় আন্দোলনে রূপ নিয়েছে, এখন সেটাকে যতই দমন করার কৌশল নেওয়া হবে, ততোই এর ঝুঁকি বাড়বে। প্রথম ঝুঁকি হলো ছাত্রছাত্রীদের আন্দোলনকে খুব সহজে দমানো সম্ভব নয়। এছাড়া এখান থেকে অন্য নানান কিসিমের আন্দোলনের সুযোগ বের করবে সরকার বিরোধী পক্ষ। বিষয়টি বুঝতে সরকার বাহাদুর যত দেরি করবেন তত জল ঘোলা হবে। দুর্ভোগ বাড়বে সাধারণ জনগণের। সেই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্থ হবে দেশের লাখ লাখ ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষার পরিবেশ।

স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে আমাদের শিক্ষাজীবন থেকে মূল্যবান ছয়টি বছর ঝড়ে গেছে। তখন আমাদের সঙ্গে স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের সরাসরি সংঘর্ষ ছিল নিত্যদিনের ঘটনা। স্বৈরাচার সরকারের পতনের মাধ্যমে আমাদের সেই আন্দোলন সফল হলেও সেখান থেকে বাংলাদেশে যে গণতন্ত্রের উত্তরণ ঘটেছে, সেই গণতন্ত্রের চেহারা আমরা দীর্ঘ ২৫ বছর দেখলাম। যে লাউ সেই কদু। মানে খুব সোজা। গণতন্ত্র হোক, রাজতন্ত্র হোক আর স্বৈরাচার হোক, শাসক মানেই শাসক। জনগণের জন্য তাদের কোনো দয়ামায়া নেই। বরং জনগণের ট্যাক্সের টাকায় শাসক খুব মৌজস্ফূর্তিতে জীবন কাটায়।

আমাদের মাস্টার্সের রেজাল্ট হয়েছিল ১৯৯৬ সালে। আর আমাদের সার্টিফিকেটে পাসের সাল উল্লেখ করা হয় ১৯৯২। আমাদের জীবন থেকে যে মূল্যবান বছরগুলো নানান কিসিমের আন্দোলনের মাধ্যমে কেড়ে নেওয়া হলো, তা কিন্তু কেউ ফিরিয়ে দিতে পারেনি। ফলে ২০০০ সালেই সরকারি চাকরিতে আবেদন করার নির্ধারিত ৩০ বছর বয়স ফুরিয়ে গেল। আমরা হয়ে গেলাম এই রাষ্ট্রের বেকার নামক এক বোঝা। যে বোঝা এখনও বয়ে বেড়াচ্ছি। কারণ, ওই সার্টিফিকেট গুলো আমি নিজে পুড়িয়ে সেই ছাই উড়িয়ে দিয়েছি। আমি বুঝতে পেরেছি, এদেশে সার্টিফিকেট দিয়ে আমার অন্তত কিছু হবে না। কারণ আমি বড় কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নই। বড় কোনো রাজনৈতিক দলের কোনো নেতার পেছনে হাঁটারও আমার স্বভাব নেই। আমার কোনো মামা-খালুও নাই, যাকে আমি অনুরোধ করব যে একটা চাকরি দেন। সুতরাং সার্টিফিকেট ছাড়াই আমি এই ১৫ বছর বেঁচে আছি কেবল ক্রিয়েটিভ কাজকর্ম করে। কিন্তু শুধু লেখালেখি করে জীবন চালানো যে কত কঠিন, তা আমার চেয়ে ভালো অভিজ্ঞতা হয়তো অনেকের নেই। নিজেকে অনেক সমৃদ্ধ করেছি কেবল পড়াশুনা করে। আমার যেহেতু সার্টিফিকেট নাই, তাই কোথাও চাকরির আবেদনও করতে পারি না। কিন্তু রাষ্ট্রের কোনো অনিয়ম দেখলে চুপ করে থাকার অভ্যাসও আমার মধ্যে নাই।

পাবিলক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বেতন কাঠামো নিয়ে অখুশি। যা নিয়ে আমি আগে বলেছি, শিক্ষকরা কনসালটেন্সি করেন, ক্লাসে সময় দেন না। তাই তাদের বেতন বাড়ানোর দাবিতে আমার কোনো সায় নাই। কারণ এরা ছাত্রছাত্রীদের যে সময় দেবার কথা সেটি না দিয়ে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেকে ভাড়ায় ক্লাস নিতে যান। যেটা তাদের বাড়তি আয়ের একটা খাত হলেও এটা অনৈতিক। কারণ আমাদের ট্যাক্সের টাকায় তাদের বেতন দেওয়া হয়। তাদের নিজস্ব বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের বেশি সময় দেবার কথা। তাদের বেতন বাড়লেও কনসালটেন্সি বা অন্যত্র ভাড়া খাটার অভ্যাস হুট করেই যে সবাই ছেড়ে দেবেন, এমন কোনো গ্যারান্টি নাই।

কিন্তু প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা পড়াশুনা করে তাদের শিক্ষার মান নিয়ে যত কথাই থাকুক, আগে উচ্চবিত্তের ছেলেমেয়েরা কেবল প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ত। এখন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে না পেড়ে মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্তের ছেলেমেয়েরাও বাড়ি, চাষের জমি বিক্রি করে, মায়ের গহনা বিক্রি করে, এনজিও থেকে সুদের টাকার ধার নিয়ে, তারপর প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ছেলেমেয়েদের ভর্তি করাচ্ছেন। এখন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের মোটেও কেবল উচ্চবিত্তের ছেলেমেয়ে বলার সুযোগ নাই। এখন সব শ্রেণীর উচ্চ-মধ্য-নিম্নবিত্তের ছেলেমেয়েরাও সেখানে পড়ছে। সেখানে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকপক্ষ কিন্তু উচ্চবিত্ত। সরকারের আরোপিত ভ্যাট বা ট্যাক্স তাদের দেওয়ার কথা থাকলেও আসলে চালাক চতুর সেই মালিকরা সেটি ছাত্রছাত্রীদের ঘাড়ে নানান কিসিমের দোহাই দিয়ে চাপিয়েছে। ফলে ছাত্রছাত্রীদের ভ্যাট প্রত্যাহারের আন্দোলনের যথেষ্ঠ যুক্তি আছে।

সরকার বাহাদুরেরা মালিকদের প্রতি সব সময় বড় প্রাণের টান অনুভব করেন। আর সাধারণ জনতাকে ভোদাই মনে করেন। আর ভোটের সময় আসলে সেই ভোদাই আমজনতার কাছেই নানান কিসিমের প্রতিশ্রুতি নিয়ে খাতির পাতানোর চেষ্টা করেন। ভোট শেষ তো জনতা আবার সেই আমজনতাই থেকে যায়। মাঝখান থেকে স্বৈরাচার এরশাদের পর খালেদা-হাসিনারা ক্ষমতায় আসে। মাগার রাষ্ট্রের চেহারা সুরতের কোনো বদল হয় না। সিস্টেম আর পাল্টায় না। এ কোন বিচিত্র দেশ রে ভাই !!!

বাংলাদেশে এখন শর্টকাট টাকা পয়সার মালিক বনে যাওয়াকেই সফল জীবন ধরা হয়। যারা পরীক্ষায় পাস করতো না, তারা এখন সংসদে বসে আমাদের জন্য আইন বানায়। বাংলাদেশের রজনীতি একটা দুষ্টচক্রের হাতে বন্দি। এরা যেখানে যেটি করতে হবে তা না করে আমজনতাকে দুর্ভোগ দেবার ফন্দি বের করেন।

মাননীয় অর্থমন্ত্রী, অর্থনীতির একজন ছাত্র হিসেবে আপনাকে ছোট্ট একটা অনুরোধ করি, শুধু প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় নয়, শিক্ষাখাতে আরোপিত সব ধরনের কর প্রত্যাহার করুন। গাড়ির উপর উচ্চহারে ট্যাক্স বসান। এই গাড়ির সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় রাজধানী ঢাকা বারো ঘণ্টা ট্রাফিক জ্যামে অচল থাকে। মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্ত কেউ গাড়িতে চলে না। আমাদের গাড়িতে চলার প্রয়োজনও নাই। মাগার ভালো পাবলিক ট্রান্সপোর্ট চালু করুন। গাড়ির উপর উচ্চহারে ট্যাক্স বসান। দেখবেন ঢাকার রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা কমে যাবে। আমাদের মূল্যবান কয়েক কোটি শ্রমঘণ্টা বাঁচবে। যাতে আমজনতা দুর্ভোগের হাত থেকেও বাঁচবে। আর আপনার বাজেটের ঘাতটির টাকাও গাড়ির উপরে উচ্চহারে ট্যাক্স বসালে সেখান থেকে তা ব্যালেন্স হবে।

রাজধানী ঢাকায় দেখা গেছে, একজন বা কোনো কোনো ক্ষেত্রে কেবল ড্রাইভার একটা প্রাইভেট গাড়ি নিয়ে রাস্তায় নানান কিসিমের ট্রাফিক জ্যাম সৃষ্টি করার জন্য দায়ী। হিসাব খুব সোজা। উচ্চহারে ট্যাক্স বসানোর পর যারা গাড়ি চালানোর সামর্থ রাখবে, তারা চালাক। কিন্তু বেশি মানুষকে গাড়িতে চলার সুযোগ দিয়ে ঢাকার রাস্তা আপনি অচল করে দিয়েছেন। যোগাযোগ মন্ত্রীর চেয়ে ঢাকার রাস্তায় যানজটের জন্য আপনি বেশি দায়ী বলে আমি মনে করি।

ঢাকায় যানজটের জন্য প্রাইভেট কার এক নম্বর সমস্যা। উচ্চহারে ট্যাক্স বসান, দেখবেন সবাই পাবলিক ট্রান্সপোর্টে চলার অভ্যাস করবেন। ফুটপথ আরো বড় করেন। দেখবেন সবাই হাঁটবে। এই জাতি দিন দিন যানজটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকবে তবু মাগার হাঁটবে না। হাঁটার অভ্যাস করার জন্য প্রাইভেট কার কমানো প্রয়োজন। আর উচ্চহারে কর বসালে দেখবেন রাস্তায় অটোমেটিক প্রাইভেট কারের সংখ্যা কমে গেছে। দেশের পাবলিক ট্রান্সপোর্টের বেহাল দশা। সেখানে আবার ফিটনেস নাই। পুলিশের নানান কিসিমের ধান্দাও ঢাকার যানজট সৃষ্টির অন্যতম কারণ। এই আসল কারণগুলো জেনে বুঝে সেভাবে ব্যবস্থা নিন। না বুঝেই শিক্ষাখাতে ট্যাক্স বসালেন, এইটা কি মামু বাড়ির আবদার। কইলাম আর দিয়ে দেবেন।

হিসাব খুব সোজা। ছাত্রদের ক্ষেপিয়ে পৃথিবীর কোনো সরকার স্বস্থিতে থাকতে পারেনি। ১৫৪ জন সাংসদ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে ক্ষমতায় বসা এই দুর্বল সরকারও যে স্বস্থিতে থাকবে, তার গ্যারান্টি কিন্তু আপনার কাছে নাই মাননীয় অর্থমন্ত্রী। অতএব জল বেশি ঘোলা হবার আগেই শিক্ষাখাতের ভ্যাট প্রত্যাহার করুন। আগে কেবল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা মাথায় রাখলেই সরকারের চলত। এখন দিন বদলে গেছে। এখন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও সরকার পতনের আন্দোলন শুরু হতে কতক্ষণ!!

দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে যে ভাবে ধ্বংস করা হচ্ছে, এটা শাসকদের একটা নীলনকশার অংশ। আমাদের রাজনীতিবিদরা নিজেদের ছেলেমেয়েদের বিদেশে ভালো স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করান। আর দেশের পাবলিকের ছেলেমেয়েদের জন্য নিজেদের কৌশলের ঘুটি বানান। নিজেদের ফাই ফরমাস খাটানোর জন্য অনুগত ভৃত্য বানানোর জন্য এই যে শিক্ষা পদ্ধতি রয়েছে, এখানে নানান কিসিমের যে গলদ আছে, তা নিয়ে কারো মাথাব্যথা নাই। সরকারের নানান কিসিমের ব্যয় সামাল দেবার জন্য গ্যাসের দাম বাড়ানো, বিদ্যুতের দাম বাড়ানো, শিক্ষাখাতে ভ্যাট বাড়ানো, এগুলো কোন সুশাসন হতে পারে না।

মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পুলিশ বাহিনী গতকাল একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের উপর হামলা করেছে। আজ কিন্তু রাস্তায় সারা দেশেই ১০০ টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রী নেমেছে। আগামীতে এটি যে বাড়বে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কথায় বলে না, বুদ্ধিমানরা দেখে শেখে, আর বোকারা ঠেকায় পড়ে শেখে। জনদুর্ভোগ না বাড়িয়ে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সুষ্ঠু পড়াশুনার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে ছাত্রছাত্রীদের ন্যায্য দাবিকে মেনে নেবার মধ্যে কোনো আহম্মকি নেই। যত দ্রুত তা মেনে নেবেন, ততোই জনদুর্ভোগ কমাতে তা কার্যকর হবে। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরাও এর থেকে দ্রুত ফিরে আবার ক্লাসে মনযোগী হবেন, পড়াশুনায় মনযোগী হবেন। আমরা এটাই প্রত্যাশা করি। ছাত্র আন্দোলন আপনারা নিজেদের সুবিধায় বহুবার ব্যবহার করেছেন। কিন্তু এবারের ছাত্র আন্দোলনে শাসকদের কোনো সুবিধা নেই। রাজনীতির মাঠে কিন্তু এখান থেকে সুবিধা আদায় করার অনেক লোক আছে, অনেক খেলাও এখনো বাকি। কারণ শ্লোগান যখন 'নো ভ্যাট, কর গুলি'। শিক্ষাকে আপনারা পণ্য বানাতে পারেন না। শিক্ষা স্বাস্থ্য মোটেও পণ্য নয়। এটা জনগণের অধিকার। শিক্ষাকে পণ্য হিসেবে ভ্যাটের আওতায় আনার অর্থমন্ত্রীর এই অযৌক্তিক যুক্তিকে মোটেও সমর্থন করা যায় না। অতএব সাধু সাবধান।

..................................
১০ সেপ্টেম্বর ২০১৫
ঢাকা

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:০২

ফাহাদ মুরতাযা বলেছেন:



বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ভ্যাট দিতেই হবে বলে জানিয়েছেন সজিব ওয়াজেদ জয়। উনি বলেছেন, "দেশের ৮৩টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬৩ শতাংশ শিক্ষার্থী পড়া লেখা করে সরকার তাদের জন্য কোন ধরেন ভর্তুকি দিবে না। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য ভর্তুকি দিলে এটা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শেয়ার হোল্ডারদের পকেটে চলে যাবে। শিক্ষার্থীদের কোনো লাভ হবে না।"

উনি তো দেখি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে কোন ধারণাই রাখেন না, অথবা না জেনে-শুনে সবাইকে বিভ্রান্ত করতে ভুল তথ্য দিয়েছেন। সঠিক তথ্য হচ্ছে, বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকার কোন ভর্তুকি দেয় না। বরং শিক্ষার্থীদের বেতনের ওপর যে ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে- তার পূর্ন নাম 'Value-Added Tax' বা 'মূল্য সংযোজন কর'। ২০টাকা কেজি আলু কিনে তা ১১০টাকা কেজি সয়াবিন তেলে ভেজে ফার্স্টফুডের দোকানে যখন সেই পটেটো চিপস ১২০০টাকা কেজি দরে বিক্রী করা হয় তখন এই সযোজিত মূল্যের ওপর ভ্যাট ধার্য করা হয়। শিক্ষা কী পটেটো চিপসের মত পন্য? বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কী ফার্স্টফুডের দোকান? এখানে মিথ্যা ভর্তুকির দোহাই দিয়ে উনি কেমন করে ভ্যাট বসানোকে বাধ্যতামূলক করে দিচ্ছেন?

উনি না আমাদের তরুন প্রজন্মকে নিয়ে 'ইয়ং বাংলা' গড়েছেন? এই তার আসল চেহারা? যেহেতু বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন সরকারী ভর্তুকী দেয়া হয় না, তাই তার লাভের ভাগ তো কখনোই শিক্ষার্থীদের পকেটে আসার সম্ভাবনা ছিল না। কিন্তু উনার আরোপ করা এই ভ্যাটের টাকা তো আমাদের মত বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পকেট থেকেই দিতে হবে। উনি আমাদের লাভ না দেখলেও লোকসানটা ঠিকই বাধ্যতামূলক করে দিয়েছেন। ৮৩টি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৭৫টিই মধ্যবিত্ত আর নিম্ন মধ্যবিত্তদের উচ্চ শিক্ষার বিকল্প প্রতিষ্ঠান। এখানকার প্রায় ৭৫% শিক্ষার্থী প্রাইভেট ট্যুশনি করে বা খণ্ডকালীন চাকরী করে বিশ্ববিদ্যালয়ের খরচ জোগাড় করে। তাদের ওপর বছরে আরো ৩০/৪০ হাজার টাকার বোঝা চাপিয়ে দিয়ে উনি কেমন কাজ করলেন?

উনি কী তাহলে আমাদের পকেট কাটা জবরদস্তি ভ্যাটের টাকা দিয়ে উনার 'ইয়ং বাংলা' চালাবেন? সেইক্ষেত্রে উনার ইয়ং বাংলায় বাংলাদেশের ৯৫% তরুণের কোন অংশদারিত্ব থাকবে না।

-ড. সাকিল আল মামুন।
১. সরকার কোনদিনই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা এর শিক্ষার্থীদের জন্য ভর্তুকি দেবে না জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়।-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

আর এটা ভোরের কাগজের লিঙ্ক।


শাহবাগে চিল্লাচিল্লি আর বিরিয়ানি খাওয়া টেলিকাস্ট করতে লাইন লেগে যায় চেতনা মাখা সকল মিডিয়ার! আর আজকে ভ্যাট বিরোধী আন্দোলনরে " জন-দূর্ভোগ" হিসেবে দেখাচ্ছে। মনে হয় যেন জীবনে , রাস্তা অবরোধ করে আন্দোলন করে দাবী আদায় এই প্রথম দেখছে।
আজ দেশের ছাত্র সমাজের এই ভ্যাট বাতিলের জোয়ার কে কেন তারা টেলিকাস্ট করছে না?
দেখাচ্ছে " সড়ক অবরোধের কারনে যানজটে নগরবাসীর অবস্থা নাকাল " জাতীয় রিপোর্ট ।

কোথায় আজ মুন্নি সাহা
কোথায় আজ রুপার সরাসরি সম্প্রচার
কোথায় আজ নবনিতার টকশো
কোথায় ?
জাফর নামক ষাঁড় টা কই? তাঁর বিবেক কি বলে???
এই দেশের রন্ধে রন্ধে দালালে দালালে ভরে গেছে আর সব দালালের বড় দালাল হচ্ছে এই সাংবাদিক আর মিডিয়া ।
যাদের কাছে বিরিয়ানি খাওয়া মানেই আন্দোলন
আর লক্ষ লক্ষ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর ভ্যাট বিরোধী আন্দোলনে পুলিশের লাঠি পেটা খাওয়ার নাম হচ্ছে সন্ত্রাসী দমন।



২| ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:১৫

গোধুলী রঙ বলেছেন: আমার মাথায় ঢুকেনা, কেন মন্ত্রী এমপি ২-৩ টা গাড়ি পুরা ট্যাক্স ফ্রি আনতে পারবে আর কেনই বা শিক্ষা নিতে ভ্যাট দিতে হবে? কেনই বা ব্যাংকের হাজার কোটি টাকা মিসিংকে সাধারণ ঘটনা বলে এড়িয়ে যাওয়া হবে। রাবিশ, যিনি এইটা সবসময় বলেন উনি।

৩| ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:০১

জেকলেট বলেছেন: ছোটবেলা থেকে একটা কথা শুনেছি যে নামে নাকি একটা প্রভাব আছে অর্থমন্ত্রীকে দেখে তার সত্যতা জানলাম।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.