নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

রেজা ঘটক

ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।

রেজা ঘটক › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির উপর ভ্যাট সরকারি সিদ্ধান্তে এখনো গোজামিল !!!

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ ভোর ৪:২২

প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির উপর সরকার চলতি অর্থবছরে শতকরা ৭.৫ ভাগ হারে ভ্যাট আরোপ করেছে। ভ্যাট বাতিলের দাবিতে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির ছাত্রছাত্রীরা এখন রাজপথে আন্দোলনরত। সরকারি তরফ থেকে বলা হচ্ছে এবছর ভ্যাট দেবে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির মালিকরা কিন্তু আগামী বছর থেকে ছাত্রছাত্রীদেরকে দিতে হবে। আর জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা এনবিআর-এর এসংক্রান্ত ব্যাখ্যাটি এখনো ভ্যাটের চরিত্রের সঙ্গে ত্রুটিপূর্ণ।
প্রথমে নৈতিক যে প্রশ্নটি আসে সেটি হলো, বাংলাদেশে আমরা শিক্ষার উপর থেকে ভ্যাট নেব কেন? আমাদের রাজন্ব ব্যয় ও নানান কিসিমের অপখাতে অনাকাঙ্ক্ষিত সরকারি ব্যয়ের জন্য সরকার যে অদূরদর্শী ব্যয় ক্রমাগত বাড়িয়ে যাচ্ছে, সেই সরকারি ব্যয় মেটানোর জন্য কি অন্যকোনো খাত থেকে রাজস্ব আদায় করা যায় না? দেশে এত হাজার হাজার কোটিপতি আর কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান থাকতে আয়কর প্রদানে কেন একজন জর্দাব্যবসায়ী শীর্ষ হবে? কালো টাকা সাদা করার ক্ষেত্রে সরকার যেখানে কালোবাজারিদের প্রতি দয়াশীল, সেখানে শিক্ষার মত একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত, যেখান থেকে দেশে মানবসম্পদ উৎপন্ন হবে, সেখান থেকে কর আদায়ের ক্ষেত্রে সরকার কেন এত দৃঢ় প্রতিজ্ঞ? তাহলে সরকার আসলে কাদের দিকটা বেশি বিবেচনা করছে জনগণের দিকটা নাকি কালোবাজারি, ব্যাংক থেকে টাকা নেওয়া ঋণখেলাপী, অবৈধ আয়ের মালিকদের দিকটা? সরকার তাহলে কাদের পারপাস সার্ভ করছে? জনগণের নাকি এসব দাগি বদমায়েসদের?
পরের প্রশ্ন হতে পারে বাংলাদেশে কী শিক্ষার হার শতভাগে পৌঁছেছে? পাবলিক ইউনিভার্সিটিতে যেখানে এখনো সরকারি ভাবে ভর্তুকি দেওয়া হয়, সেখানে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে কী আমরা ভ্যাট আরোপ করার মত অবস্থায় পৌঁছেছি? প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার মান নিয়ে কী আমরা সন্তুষ্ট? প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির টিউশান ফি'র উপর সরকারের কেন কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই? প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি গুলো নিজেদের পছন্দমত কোর্স ফি চালু করতে পারে কিনা? পারলে সেটার কোনো সুনির্দিষ্ট নীতিমাল বা সরকারি তরফে কোনো নির্দেশনা রয়েছে কিনা? প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি গুলোর সুনির্দিষ্ট মানদণ্ড নাই কেন? প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির মানদণ্ড দেখার ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের বা সরকারের দায়কে কেন বিবেচনায় নেয়া হবে না?
সরকার যদি প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির উপর থেকে নীতিগত ভাবে স্থির থাকে যে, ভ্যাট তাদের দিতেই হবে, সেক্ষেত্রেও সকল প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির জন্য তা কী কোনো সুনির্দিষ্ট কাঠামো অনুসরন করবে? নাকি সকল প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিকে একই কাঠামোতে ফেলা হবে? সরকার কেন প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির জন্য সুনির্দিষ্ট কোর্স ফি ঠিক করে দিচ্ছে না? সরকার যদি ভ্যাট আদায় করার ক্ষেত্রে সত্যিই কঠোর থাকে, তাহলে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির জন্য আয়করের বিভিন্ন স্ল্যাবের মত কোর্স ফি'র ভিত্তিতে সুনির্দিষ্ট স্ল্যাব থাকবে না কেন? সরকার একটি নির্দিষ্ট কোর্সের জন্য টিউশন ফির একটি সুনির্দিষ্ট সীমা নির্ধারণ করে দিয়ে বলতে পারে যে, এর চেয়ে যারা ছাত্রছাত্রীদের থেকে বেশি কোর্স ফি নেবে, তাদের ক্ষেত্রে আয়করের বিভিন্ন স্ল্যাবের মত সুনির্দিষ্ট হারে ভ্যাট দিতে হবে। কেবল গণহারে সবগুলো প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির জন্য একই হারে ভ্যাট নেওয়াটা বা কতটা যৌক্তিক? নৈতিকতার কথা না হয় বাদ দিলাম।
এক্ষেত্রে, সরকার বিভিন্ন কোর্স ফির জন্য একটি সুস্পষ্ট তালিকা করতে পারে। যেমন বিবিএ, এমবিএ, কম্পিউটার সায়েন্স ইত্যাটি বিভিন্ন কোর্সের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট তালিকা প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি গুলোতে সরবরাহ করতে পারে। যে এই এই বিষয়ের জন্য দুই লাখ টাকার উপরে যারা যত বেশি ফি নেবে, তাদের উপর সেভাবে ক্রমবৃদ্ধি হারে ভ্যাট নেওয়া হবে। কেউ যদি দুই লাখ থেকে আড়াই লাখ টাকা কোর্স ফি নেয়, তাদের জন্য ন্যূনতম ভ্যাট এত পার্সেন্ট, কেউ যদি আড়াই লাখ থেকে তিন লাখ টাকা নেয় তাদের জন্য এত পার্সেন্ট ভ্যাট, কেউ যদি তিন লাখ থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা নেয় তাদের জন্য এত পার্সেন্ট ভ্যাট। আর কোনো প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি ছাত্রছাত্রীদের থেকে কোনো কোর্স ফি বাবদ এত লাখ টাকার বেশি কোর্স ফি কখনোই নিতে পারবে না। এভাবে একটা সুনির্দিষ্ট তালিকা সরকার এখন প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে সরবরাহ করতে পারে। নতুবা গণহারে ভ্যাট আদায় করাটা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক হবে।
আয়করের উপর যদি বিভিন্ন ট্যাক্স/ভ্যাট স্ল্যাব থাকতে পারে, কর্পোরেট ট্যাক্সের উপর যদি বিভিন্ন ট্যাক্স/ভ্যাট স্ল্যাব থাকতে পারে, তাহলে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির জন্য কেন সেটি বিবেচনা করা হবে না? সরকারের গোয়ার্তুমিকে বিবেচনায় নিয়েও যদি বলি, প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির শিক্ষাকে যদি সরকার পণ্য মনে করে ভ্যাট প্রয়োগ করে, তাহলে সকল আমদানি পণ্যের যেমন আলাদা আলাদা ট্যাক্স/ভ্যাট কাঠামো রয়েছে, সেটি কেন প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না? গাড়ির উপর যদি করের বিভিন্ন গ্রেড থাকে, প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির জন্য কেন তেমনি গ্রেড থাকবে না?
এছাড়া অর্থবছর শুরুর আগে এবিষয়ে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি গুলোকে চিঠি দিয়ে কোর্স ফি, ভ্যাটের হার ইত্যাটি কেন আগেই অবহিত করবে না সরকার? যা থেকে একজন ছাত্র বা ছাত্রী তার পছন্দের প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হবার আগেই সুস্পষ্টভাবে জানতে পারবে, তার কোন কোর্সের ফি কত, ভ্যাট বা কত? কোন প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে কোন কোর্সে কত খরচ পড়বে? এসব যদি ছাত্রছাত্রীরা ভর্তি হবার আগেই বিভিন্ন প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির কোর্স ফির টোটাল খরচ, টোটাল ভ্যাট এসব হিসাব জানতে পারে, তাহলেই কেবল বিষয়টি অনেক স্বচ্ছ হয়। এখন সরকার গণহারে ভ্যাট আদায় করতে গিয়ে এনবিআর-এর মত গুবলেট পাকিয়ে ফেলেছে। সেই সুযোগে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির মালিকরা ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে নিজেদের ইচ্ছামত কোর্স ফি আদায় করবে, যা সম্পূর্ণ একটি নৈরাজ্যকর শিক্ষাব্যবস্থার চিত্রই কেবল তুলে ধরে।
একদিকে সরকার একশ্রেণীর বেনিয়াদের হাতে ইচ্ছেমত প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি খোলার পারমিট দিচ্ছেন, তারা তাদের ইচ্ছেমত কোর্স ফি ধার্য করছেন। আবার সরকারের আরোপিত ভ্যাটের দোহাই দিয়ে এসব প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির মালিকরা নিজেদের পছন্দমত নানান কিসিমের অর্থ ছাত্রছাত্রীদের পকেট থেকে আদায় করছেন, এটা কোনো যুক্তিতেই গ্রহনযোগ্য নয়। এখন এসব প্রশ্ন তোলার আগে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে প্রশ্নটি তোলা যায় সেটি হলো, সবসময় সব শ্রেণীর মালিকদের প্রতি সরকারের এত আলগা দরদ কেন? আর যে জনসাধারণের সেবা দেবার নামে সরকার দেশ শাসন করে, তাদের প্রতিই সব সময় সরকারের এত ক্ষোভ বা কেন? তাহলে এসব মালিকরাই কি আসলে বাংলাদেশেরও মালিক? আর তাদের খুশি করার জন্যই কি বাকি গোটা রাষ্ট্রের আমজনতা তথা সরকার বাহাদুর নানান রকমের দুর্ভোগ সবসময় সহ্য করবে?
বিষয়টি সুরাহা করার জন্য সরকারকেই আন্তরিক উদ্যোগ নিতে হবে। সেই উদ্যোগটি নিতে হবে দ্রুততম সময়ের মধ্যে। নইলে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির ছাত্রছাত্রীরা এখন যে দাবিতে রাজপথে আন্দোলনে রয়েছে, তার সঙ্গে আরো অনেক দাবি দিনেদিনে যুক্ত হয়ে ভ্যাট বাতিলের এই আন্দোলন অন্যদিকে টার্ন করতে পারে। ভ্যাট বাতিলের দাবিতে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির ছাত্রদের এই আন্দোলন থেকে নানান মহল তখন সেই সুযোগ লুফে নেবার চেষ্টা করবে। এখন দেখার বিষয় সরকার সেই সুযোগটি এভাবে হালছেড়ে দিয়ে বসে থাকবে নাকি দ্রুততম সময়ের মধ্যে সরকারের সুমতি হবে এটির একটি গঠনমূলক সমাধান বের করার। নইলে বর্তমানে স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির ছাত্রদের এই আন্দোলন থেকে বিষয়টি অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতির দিকে টার্ন করতে পারে। কারণ ঝড়ে বড় মারার মানুষের এদেশে অভাব নাই। তখন জন দুর্ভোগ তো বাড়বেই বরং সরকারের জনপ্রিয়তা তখন আরো প্রশ্নের মুখে পড়বে। অতএব সাধু সাবধান।

................................
১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫
ঢাকা

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ ভোর ৫:৪৮

চাঁদগাজী বলেছেন:

মনে হয়, প্রাইভেটরা ছেলেমেয়েদের উস্কানী দিচ্ছে; মুগীগুলোর তো মাথা নেই, দৌড়াচ্ছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.