নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।
আগে জাল পাসপোর্ট বা গলাকাটা পাসপোর্টের অনেক খবর শুনতাম। সাম্প্রতিককালে আমাদের পাসপোর্ট অধিদপ্তর মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) চালু করায় গলাকাটা পাসপোর্টের ব্যাপারটি অনেকটা বন্ধ হয়েছে। কিন্তু বসে নাই মানব পাচারের সঙ্গে জড়িত সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্র। পাসপোর্ট অধিদপ্তরের বিভিন্ন শ্রেণীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশে এক নতুন টাইপের জাল পাসপোর্ট তৈরি করে এসব অপরাধীরা তাদের অপকর্ম ঠিকই করে যাচ্ছে। নতুন এই জালিয়াতি পদ্ধতির ক্ষেত্রে অপরাধীরা একজন সাধারণ নাগরিকের একটি মেশিন রিডেবল পাসপোর্টকে জালিয়াতির মাধ্যমে সাধারণ নাগরিকদের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী বানিয়ে বিদেশে পাচার করছেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র থেকে জানা যায়, ২৭টি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের একটি বিশেষ সমঝোতা স্মারক রয়েছে। যার আওতায় যে কোনো সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারীরা ওই ২৭টি দেশে যাওয়ার পর বিমানবন্দরেই (অনঅ্যারাইভাল ভিসা) ভিসা পেয়ে থাকেন। সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর বাংলাদেশে অবস্থিত দূতাবাস থেকে ভিসা না নিয়ে কেবল সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারী হওয়ার কারণে ওই দেশগুলোতে অনঅ্যারাইভাল ভিসা নেওয়া সম্ভব। এই সুযোগটিকেই কাজে লাগাচ্ছে মানব পাচারের সঙ্গে জড়িত একটি সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্র। আর এই কাজে তাদের সহায়তা করছে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী।
সম্প্রতি তুরস্ক থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এই জালিয়াতির ঘটনা প্রথম ফাঁস হয়। সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারি পাসপোর্ট জালিয়াতির বিষয়টি তুরস্ক থেকে জানতে পারাটাই বরং লজ্জার। আর এতে দেশের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুন্ন হয়েছে। বিদেশে এমনিতে সাধারণ পাসপোর্ট নিয়ে বাংলাদেশীদের হয়রানির যেখানে শেষ নেই। সেখানে এখন অফিশিয়াল পাসপোর্টে এ ধরনের জালিয়াতি ধরা পড়ায় ভবিষ্যতে বিদেশে বাংলাদেশীদের হয়রানির আশঙ্কা আরও বাড়বে।
এ বছরের প্রথম ছয় মাসে দেওয়া তিন হাজার অফিশিয়াল পাসপোর্ট পরীক্ষা করে দেখা গেছে, এর মধ্যে অন্তত ১৫০টিই (৫ শতাংশ) জাল পোসপোর্ট। এ বছর দেওয়া সব পাসপোর্ট পরীক্ষা করলে এ সংখ্যা ৫০০ ছাড়িয়ে যাবে বলে আশংকা করছেন পাসপোর্ট ও বহির্গমন অধিদপ্তর। পাসপোর্ট ও বহির্গমন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এন এম জিয়াউল আলম ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে গণমাধ্যমকে বলেছেন, জাল কাগজপত্র দিয়ে তৈরি ১০৮টি পাসপোর্টের বিরুদ্ধে মামলা করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। যারা পাসপোর্ট নিয়েছেন, তারাই আসামি হবেন। যারা এই জালিয়াতির সঙ্গে যুক্ত তারা আসামি হবেন কি না গণমাধ্যমের এমন প্রশ্নের জবাবে জিয়াউল আলম বলেছেন, তদন্তে যাঁদের নাম আসবে, তাঁরা অবশ্যই আসামি হবেন।
পাসপোর্ট অধিদপ্তরের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেছেন, ধরা পড়া এসব পাসপোর্ট প্রথমে সাধারণ এমআরপি হিসেবে দেওয়া হয়েছিল। পরে জাল কাগজপত্র দিয়ে সংশোধনের নামে সাধারণ পাসপোর্ট থেকে ‘অফিশিয়াল পাসপোর্ট’-এ রূপান্তর করা হয়। মানব পাচারের সঙ্গে জড়িত একটি অপরাধী চক্র পাসপোর্ট অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশ করে এ ধরনের পাসপোর্ট তৈরি করেন। প্রতিটি পাসপোর্টের জন্য নেওয়া হয় চার লাখ টাকা। পাসপোর্ট অধিদপ্তরের একজন পরিচালক ও কয়েকজন কর্মকর্তা এই জালিয়াতির সঙ্গে সরাসরি জড়িত। ওই কর্মকর্তা বলেছেন, প্রতিটি জাল পাসপোর্ট ফরম পরীক্ষা করে দেখা গেছে, সব ফরম একই হাতে লেখা।
জালিয়াতির এই সুযোগ নিয়ে অনেকেই ভুয়া সরকারি কর্মকর্তা সেজে প্রথমে তুরস্ক, পরে সেখান থেকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে চলে যান। বিশেষ করে তুরস্ক, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপসহ কয়েকটি দেশে অনেক লোককে অফিশিয়াল পাসপোর্টের মাধ্যমে এভাবে পাচার করা হচ্ছে। এভাবে তিন বেকার যুবক সরকারি কর্মকর্তা সেজে তুরস্কে গিয়ে বিপদে পড়েন। পরে তারা সেখানকার পুলিশকে ঘটনা জানালে সবকিছু ফাঁস হয়ে যায়। তুরস্ক সরকার বিষয়টি বাংলাদেশকে জানায়। এরপর জাল পাসপোর্ট তৈরির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ঢাকা বিভাগীয় পাসপোর্ট পরিচালক মুনশি মুয়ীদ ইকরাম, সহকারী পরিচালক এস এম শাহজামান, উচ্চমান সহকারী সাইফুল ইসলাম-১ এবং মো. শাহজাহান মিয়া ও আবুল হোসেন সরকারকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়।
যদিও তুরস্কের ঘটনার পর সরকারি পাসপোর্ট ব্যবহার করে ব্যক্তিগত কাজে বিদেশ ভ্রমণে বর্তমানে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। এখন সরকারি কাজে যেসব সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী বিদেশে যাবেন, শুধু তাঁদেরই অফিশিয়াল পাসপোর্ট দেওয়া হচ্ছে। এই পাসপোর্ট নিতে হচ্ছে বিদেশ ভ্রমণের জন্য দেওয়া সরকারি আদেশ বা গভর্মেন্ট অর্ডার (জিও) দেখিয়ে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, বর্তমানে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী হিসেবে পিয়ন থেকে শুরু করে অতিরিক্ত সচিব পর্যন্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অফিশিয়াল পাসপোর্ট পেয়ে থাকেন। আর সচিবরা পান লাল কূটনৈতিক পাসপোর্ট। বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর গড়ে প্রায় দেড় লাখ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী বিদেশে যান। বিদেশে যাওয়া এসব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একটি বড় অংশ আর দেশে ফেরেন না।
বিষয়টি জানাজানির পর একটি গোয়েন্দা সংস্থা তদন্তে নামে। তাদের প্রতিবেদনে পরিচালকসহ আটজনের জড়িত থাকার তথ্যপ্রমাণ মিলেছে। এরপর পাসপোর্ট অধিদপ্তর এ ঘটনা তদন্তে গত ১৭ মে ২০১৫ তারিখে পরিচালক সেলিনা বানুকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। কিন্তু কমিটির তদন্ত কাজ শেষ হওয়ার আগেই অজ্ঞাত কারণে সেলিনা বানুকে সরিয়ে দেওয়া হয়। পরে যুগ্ম সচিব ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের প্রকল্প (ভবন নির্মাণ) পরিচালক আতিকুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের নতুন কমিটি করা হয়।
তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘অফিশিয়াল পাসপোর্ট’ নিয়ে অনেকেই বিদেশে চলে গেছেন। কেউ কেউ ফিরে এসেছেন দুঃসহ স্মৃতি নিয়ে, কেউবা ঘটনা জানাজানির পর গা ঢাকা দিয়েছেন।
বিদেশে চলে যাওয়া ব্যক্তিদের একজন মো. শামসুদ্দিন। নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি থানার নদনা এলাকার এই বাসিন্দা গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর তার সাধারণ পাসপোর্টটি সরকারি পাসপোর্ট হিসেবে রূপান্তর করেন। পাসপোর্ট অধিদপ্তর জানতে পারে, তিনি ব্রাজিলে চলে গেছেন। আরেকজন সিলেটের গোলাপগঞ্জের মান্নান মিয়া। কোনো কাগজপত্র জমা না দিয়েও তিনি সাধারণ পাসপোর্ট সরকারি পাসপোর্ট হিসেবে বদল করেছেন। মুন্সিগঞ্জ সদরের বাসিন্দা মিলন ব্যাপারী নিজেকে কর কমিশনারের অফিস সহকারী পরিচয় দিয়ে জাল অফিশিয়াল পাসপোর্ট করেন। চলতি বছর ১২ এপ্রিল তার বই ইস্যু হয়।
পাসপোর্টের নথিতে থাকা মোবাইল ফোন নম্বর ধরে যোগাযোগ করা হলে মিলন ব্যাপারী প্রথম আলোকে বলেন, কয়েক মাসে আগে মিরপুর ১২ নম্বরের জাহাঙ্গীর নামের এক যুবকের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। তিনি কোরিয়ায় পাঠানোর লোভ দেখান। এ জন্য উভয়ের মধ্যে সাত লাখ টাকার একটি চুক্তি হয়। মিলন ব্যাপারী তিন লাখ টাকা জাহাঙ্গীরকে অগ্রিম দেন। কিন্তু তার আগেই ঘটনা জানাজানি হলে জাহাঙ্গীর তার পাসপোর্ট পানিতে ফেলে নষ্ট করেছেন।
জাল অফিশিয়াল পাসপোর্ট নিয়ে তুরস্ক থেকে ফিরে এসেছেন দিনাজপুরের ফুলবাড়ি থানার বাসিন্দা মায়ানুর রশিদ। প্রথম আলোকে তিনি বলেছেন, মতিঝিলের মানব পাচারকারী চক্রের নেতা মাহবুবুল আলম তাদের তুরস্কে যাওয়ার কথা বলে সাত লাখ টাকার চুক্তি করেন। সেই মতো চার লাখ টাকা তার হাতে তুলে দেন। মাহবুবই তাকে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের কর্মচারী দেখিয়ে সাধারণ পাসপোর্ট বদলে অফিশিয়াল পাসপোর্ট করিয়ে নেন। তার সঙ্গে তারিকুল ইসলাম, জাহিদুল ইসলাম নামের আরও দুই যুবক ছিলেন। চুক্তিমতো প্রথমে তাদের ভারতে নিয়ে যান। এরপর মুম্বাই থেকে বিমানে করে নিয়ে যান তুরস্কে। সেখানে যাওয়ার পর পাচারকারীরা তাকে জিম্মি করে বাড়ি থেকে টাকা আদায়ের চেষ্টা করেন। একদিন তিনি কৌশলে পালিয়ে বাংলাদেশ দূতাবাসে গিয়ে আশ্রয় নেন।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও অভিবাসন গবেষণা সংস্থা ‘রামরু’র চেয়ারম্যান তাসনীম সিদ্দিকী প্রথম আলোকে বলেন, বিষয়টি খুবই উদ্বেগের। যেখানে সাধারণ মানুষকে পাসপোর্ট পেতে পদে পদে হয়রানির শিকার হতে হয়, সেখানে সরকারি কর্মকর্তাদের নামে কী করে জাল পাসপোর্ট বের হলো, সেটা তদন্ত করা উচিত। এর সঙ্গে দেশের ভাবমূর্তিও জড়িত। (দৈনিক প্রথম আলো, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৫)।
সাধারণ পাসপোর্টকে জালিয়াতির মাধ্যমে সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারী সাজিয়ে বিদেশে মানব পাচার করার এই কৌশলটি সম্প্রতি তুরস্কে ধরা পড়লেও বাংলাদেশে এটি দীর্ঘদিন অনেকটা ওপেন সিক্রেট হিসেবে প্রচলিত আছে। আমরা সবাই জানি, নতুন কেউ পাসপোর্ট করতে চাইলে পুলিশ সেই ব্যক্তির বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানায় পাসপোর্ট ফরমে দেওয়া ওই ব্যক্তির সকল তথ্য যাচাই বাছাই শেষে ছাড়পত্র দেবার পরেই কেবল সেই ব্যক্তি পাসপোর্ট হাতে পান। তার মানে মানব পাচারের সঙ্গে জড়িত সংঘবদ্ধ অপরাধীরা এক্ষেত্রে পাসপোর্ট অধিদপ্তেরর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারী ও তদন্তে জড়িত পুলিশ কর্মকর্তাকে টাকা দিয়ে ম্যানেজ করছে। এমন কী মানব পাচারের সঙ্গে জড়িত এই সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রের সঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সহায়তাও জড়িত। নইলে একটি সাধারণ পাসপোর্টকে সরকারি পাসপোর্টে রূপান্তর প্রক্রিয়ায় সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারী হিসাবে দেখানোর সময় সংশ্লিষ্ট দুই মন্ত্রণালয়ের সরাসরি ভূমিকা লাগবে। একশ্রেণীর অসাধু সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা মানব পাচারের সঙ্গে জড়িত চক্রের যোগসাজশে সেই কাজটি টাকার বিনিময়ে করে দিচ্ছে।
অধিকাংশ ক্ষেত্রে এ ধরনের অপরাধের তদন্ত কাজ আবার একই মন্ত্রণালয়ের বা একই অধিদপ্তরের কোনো সরকারি কর্মকর্তাকে দিয়ে দায়সারা ভাবে করানো হচ্ছে। আবার সেই অপরাধী চক্র এতটাই শক্তিশালী যে সেই তদন্ত কমিশনকেও তারা নানা ভাবে ম্যানেজ করতে সক্ষম হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত অপরাধীদের এই প্রক্রিয়াটি আর শেকড় সহ উপরে ফেলা সম্ভব হচ্ছে না। এজন্য সবচেয়ে যেটা জরুরি সেটা হলো সরকারের সদিচ্ছা। পাসপোর্ট জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত এসব অপরাধীদের নামমাত্র সাময়িক বরখাস্ত মোটেও কোনো স্থায়ী সমাধান নয়। বরং সমস্যাকে পুরোপুরি আমলে না নেওয়া বা এ ধরনের অপরাধের অবাধ সুযোগ রাখার সামিল।
সাম্প্রতিক সময়ে মায়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের অনেকেই পাসপোর্ট অধিদপ্তরের এসব অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সহয়তায় বাংলাদেশী পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছেন, এমন অনেক খবর আমরা বিভিন্ন সময়ে পত্রিকায় দেখেছি। বিষয়টি সরলিকরণ করলে দাঁড়ায়, অন্যদেশের একজন অপরাধীও এই প্রক্রিয়ার সুযোগ নিয়ে বাংলাদেশী পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে পারছেন। যা বাংলাদেশের জন্য একটি বড় ইস্যু। এভাবে অনেক ভীনদেশী অপরাধীও বাংলাদেশী পাসপোর্ট সংগ্রহ করে বিদেশে বাংলাদেশী সাজার সুযোগ পাচ্ছে। যা বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমুর্তি ভিষণভাবে নষ্ট করছে। আবার একজন সাধারণ নাগরিক জালিয়াতির সুযোগ নিয়ে এসব অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সহয়াতায় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী সেজে স্বয়ং সরকারি আদেশ নিয়ে বিদেশ ভ্রমণে যাচ্ছেন, অথচ সংশ্লিষ্ট সরকারি অফিস এই বিষয়ে একদম জানতে পারছে না। যা অবশ্যই ভীষণ উদ্বেগের বিষয়।
সাম্প্রতিক সময়ে গণহারে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিদেশ সফরের যে হিরিক লেগেছে বা বিদেশ সফর যেভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, এসব অপরাধী চক্র সেই হিরিকের ভেতরেই এই সুযোগটি ব্যবহার করছে। যা সরকার বাহাদুরের জন্য চরম বিব্রতকর একটি বিষয়। বিদেশে যখন এসব পাসপোর্টধারীরা ঘটনাচক্রে কখনো ধরা পড়ছে, তখন বাংলাদেশের ভাবমুর্তি ভীষণভাবে নষ্ট হচ্ছে। কিন্তু আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এসব সমস্যাকে অনেকটা সহনীয় ব্যাপার হিসেবেই চালিয়ে দেবার চেষ্টা করছে। যা এই সমস্যাকে জিয়িয়ে রাখা বা টিকিয়ে রাখার আরেকটি অপকৌশলের সামিল।
আমাদের স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এসব বিষয়ে কঠোর না হলে বা জিরো টলারেন্স অবস্থায় না পৌঁছানো পর্যন্ত মানব পাচারের সঙ্গে জড়িত অপরাধ চক্রের এসব অপকর্ম কোনো দিন বন্ধ হবে না। অনেক সময় এসংক্রান্ত সংবাদ গণমাধ্যমে প্রকাশের ক্ষেত্রে একধরনের চাপ প্রয়োগ করা হয়। বা এ ধরনের সংবাদের উপর সেন্সর জারি করা হয়, যা এই সমস্যাকে নানান কৌশলে বাঁচিয়ে রাখার আরেকটি কৌশল।
দেশের প্রচলিত আইনের ফাঁকফোকর গলিয়ে অপরাধী চক্র এসব অপকর্ম করার সুযোগ পাচ্ছে মূলত সরকারি অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সহায়তায়। পাসপোর্ট জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত কোনো অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক কোনো সাজার খবর কোনোদিন পত্রিকায় আসেনি। তার মানে এ ধরনের অপরাধীরা দেশের ভাবমুর্তি নষ্ট করলেও ধরা পড়লে তাদের দেওয়া হচ্ছে লঘু দণ্ড। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এসব অপরাধীরা সাজা না খেটেই ম্যানেজ করতে সক্ষম হচ্ছে। যা এই অপরাধকে আরো উৎসাহিত করছে। মানব পাচারের সঙ্গে জড়িত সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্র স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিদ্যমান নিয়ম-কানুনকে তোয়াক্কা না করেই নানান কৌশলে এসব অপরাধ করার সুযোগ পাচ্ছে। আবার সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা লঘু দণ্ডে দণ্ডিত হয়ে আবার কিছুদিন পর সেই অপরাধে যোগ দিচ্ছেন। কিন্তু সমস্যার শেকড় উপরে ফেলার জন্য যা যা করণীয়, সেদিকে সরকারের সদিচ্ছা ও তার বাস্তবায়নে এক ধরনের গড়িমসি রয়েছে। যা কোনোভাবেই গ্রহনযোগ্য নয়।
বর্তমান সময়ে এমনিতে সন্ত্রাসের নানান কিসিমের বিস্তারের কারণে বিদেশে বাংলাদেশী পাসপোর্টধারীদের নানান কিসিমের হয়রানির শিকার হতে হয়। সেখানে এভাবে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী সেজে অবৈধ পাসপোর্ট নিয়ে বিদেশে গিয়ে এসব ব্যক্তি বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমুর্তি চরমভাবে নষ্ট করছে। এ বিষয়ে সরকারের সদিচ্ছা এবং যথাযথ বাস্তব উদ্যোগ যতক্ষণ নেওয়া না হবে, ততক্ষণ অপরাধী চক্রের এই অপকর্ম বন্ধ হবে না। এ ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক সাজার ব্যবস্থা করতে হবে। সাময়িক বরখাস্ত কোনো সমাধান হতে পারে না। বিষয়টিকে সরকারের আরো আন্তরিক দৃষ্টিতে যথাযথ বিবেচনায় নিতে হবে। নইলে বাংলাদেশ নিয়ে আমরা যতই গর্ব করি না কেন এসব অপরাধ টিকিয়ে রাখা মানে বাংলাদেশের মানসম্মানকে খাটো হবার সুযোগকেই কেবল প্রশ্রয় দেওয়া। যা মোটেই কাম্য হতে পারে না।
....................................
২০ সেপ্টেম্বর ২০১৫
ঢাকা
২| ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১:৩৪
নতুন বলেছেন: এদের জন্যই বিদেশী বিমান বন্দরে বাংলাদেশী পাসপোট` দেখলেই ইমিগ্রেশনের লোকেরা নড়েচড়ে বসে এবং ভাল করে পাসপোটা পরিক্ষা করে।
আস্তে আস্তে বিশ্বের অনেক দেশেই বাংলাদেশীদের কাজের ভিসা দেওয়া বন্ধ করছে।
৩| ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:৩৩
সুমন কর বলেছেন: সবার সামনে বিষয়টি তুলে ধরার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
৪| ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:৪৯
কাবিল বলেছেন: সচেতনতামূলক পোস্ট। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
৫| ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:০৭
রেজা ঘটক বলেছেন: সবাইকে ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১| ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:৪৭
বালক বন্ধু বলেছেন: সচেতনতামূলক একটি পোস্ট! তবে পুরোটা না দিয়ে মূল কথাটা দিলেই ভাল হত। পুরোটা পড়ার জন্য অনেকটা সময় ব্যয় করতে হল।