নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

রেজা ঘটক

ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।

রেজা ঘটক › বিস্তারিত পোস্টঃ

রেজা ঘটকের ছোটগল্প: সিদ্ধান্তহীন অবুঝ সময় !!!

২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ ভোর ৫:৩৮

এবার তোমাগো একটা গল্প শোনাই। আমাগো ধোনাই কয়েকদিন হলো ভারী এক মুশকিলে পড়েছে। যে মেয়েটিকে এতোদিন সে বিয়ে করবে বলে ভেবেছিল, এক তুচ্ছ ঘটনায় সেই বিয়ের ইচ্ছে তো গেছেই, এর সাথে আরো যোগ হয়েছে চরম এক বিড়াম্বনা। ধোনাই কিছুতেই ঘুমাতে পারছে না। সারাক্ষণ ধোনাইর মাথার মধ্যে সেই ঘটনাই কেবল ঘুরপাক খাচ্ছে। কাছের বন্ধুদের দু'একজনকে ঘটনার কিছু কিছু বলেছে বটে। কিন্তু বন্ধুদের যুক্তিও ধোনাই একদম নিতে পারছে না। ধোনাই একটা যুক্তি-ই কেবল বারবার দিচ্ছে, আমি তো ওর অতীত শুনতে চাইনি। ও কেন ওর অতীত শুনিয়ে আমাকে এমন বিড়ম্বনায় ফেলল? এখানে 'ও' মানে ধোনাই'র সেই গার্ল ফ্রেন্ড। যাকে ধোনাই বিয়ে করতে চেয়েছিল।

আসলে আমরা বন্ধুরাই কেবল ওকে আদর করে ডাকি ধোনাই। ওর নাম আসলে ধনঞ্জয়। পুরো নাম ধনঞ্জয় ঋষব আচার্য। কেবল মা-বাবা ডাকেন ঋষব নামে। অন্যরা সবাই ডাকে ধনঞ্জয়। বন্ধুরা ইয়ার্কি করে বলে, ধন জয় করেছে যে ধনঞ্জয়। কেউ কেউ অবশ্য একেবারে আরো র' ভাষায় বলে, লিঙ্গ জয় করেছেন যিনি, তিনিই ধনঞ্জয়। কারণ আমাদের বন্ধুদের মধ্যে এখন ধনঞ্জয়ই একমাত্র কোটিপতি। তবে প্রকাশ্যে ধনঞ্জয় অবশ্য বন্ধুদের কাছ থেকে ধনঞ্জয়ের বদলে ধোনাই শুনতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। কারণ তখন লিঙ্গের ব্যাপারটা কিছুটা হলেও চাপা থাকে। এছাড়া বন্ধুরা তো প্রায় সবসময়ই বলে থাকে- ধানাই-পানাই চলতো না ধোনাই। যা শুনে ধনঞ্জয় নিজেও অনেক সময় এনজয় করে।

কিন্তু গোসাই, সবসময় সবকিছুতে কী আর ইয়ার্কি-ফাজলামো চলে?

অস্ট্রেলিয়ায় পড়তে যাবার পর ধনঞ্জয়ের সঙ্গে এই মেয়ের পরিচয়। তাও দুই বছর হয়ে গেল। মেয়েটি খুব সুন্দরী। ধনঞ্জয়-ই সেকথা আমাদের বলেছিল। মেয়েটির বাড়ি প্রাক্তন সোভিয়েত রাশিয়ায়। এখন অবশ্য ওটা আর রাশিয়ার মধ্যে নেই। এখন ওটা তৈমুর লং-এর দেশ, কাজাখস্তান। স্বাধীন কাজাখস্তান। আয়তনে পৃথিবীর নবম বৃহত্তম দেশ হলেও জনসংখ্যা খুব কম। মাত্র দেড় কোটি'র কিছু বেশি। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত রাশিয়া ভেঙে যাবার পর থেকে কাজাখস্তান স্বাধীন দেশ। স্বাধীনতা পাবার পর কাজাখস্তানের রাজধানী করা হয়েছিল আলাআতা। কিন্তু দুই বছর পর ১৯৯৩ সালে রাজধানী আলাআতা'র নাম বদল করে রাখা হয় আলমাতি। আর ঠিক চার বছর পর ১৯৯৭ সালে রাজধানী আলমাতি থেকে স্থানান্তর করা হয় আকমোলাতে। কিন্তু তার ঠিক একবছর পরে আবার নতুন রাজধানী আকমোলাতের নাম বদল করে রাখা হয় আস্তানা। বারবার রাজধানীর নাম আর শহর বদল করার সঙ্গে যিনি জড়িত, তিনি কাজাখস্তানের প্রেসিডেন্ট নূরসুলতান নাজারবায়েভ। যাকে বলে এক পাগলা টাইটের প্রেসিডেন্ট। কয়েক দিন আগেও যিনি খোদ দেশটির নামই পরিবর্তন করার ইচ্ছে পোষণ করেছেন। প্রতিবেশী দেশ মঙ্গোলিয়ার জনসংখ্যা মাত্র ৩০ লাখ হলেও সেদেশে প্রচুর পর্যটক ভিড় করেন। অথচ পর্যটকদের জন্য প্রচুর আকর্ষণীয় জায়গা থাকা স্বত্ত্বেও কেউ খুব একটা কাজাখস্তানে মাড়ায় না। কাজাখ প্রেসিডেন্ট নূরসুলতান নাজারবায়েভ মনে করেন, দেশটির নামের সাথে 'স্তান' যুক্ত থাকায় নাকি পর্যটকরা সেখানে যেতে চান না। তাই তিনি এবার দেশের নামের 'স্তান'-এর বদলে 'এলি' বা 'ন্যাশন' যুক্ত করে 'কাজাখ এলি' বা 'কাজাখ ন্যাশান' রাখার আহবান জানিয়েছেন। কাজাখ প্রেসিডেন্ট নূরসুলতান নাজারবায়েভ অবশ্য গণমাধ্যমকে বলেছেন, দেশের নাম আনুষ্ঠানিকভাবে বদল করার আগে জনগণের সাথে আলোচনা করে নেওয়া হবে।

আমাদের ধনঞ্জয়ের কাজাখ সেই গার্ল ফ্রেইন্ডের নাম নাদিয়া বুলখায়েব। নাদিয়া অবশ্য অস্ট্রেলিয়ায় এসেছে প্রায় চার বছর আগে। সিডনি ইউনিভার্সিটিতে নাদিয়া পড়ে হোটেল ম্যানেজমেন্টে আর আমাদের ধনঞ্জয় সেখানে ম্যানেজমেন্টে এমবিএ করার জন্য গেছিল। একবার ধনঞ্জয়ের কোনো একটি কোর্স ছিল হোটেল ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে যৌথভাবে। সেই কোর্সের ক্লাস করতে গিয়েই বছর দুই আগে নাদিয়ার সঙ্গে ধনঞ্জয়ের পরিচয়। সেখান থেকে গভীর ভালোবাসা। যা এখন প্রায় বিয়ের পর্যায়ে গড়িয়েছে। আর তারপরেই কিনা হঠাৎ এই বিপত্তি।

চলতি বছর জুন মাসে নাদিয়ার পরামর্শ অনুযায়ী ধনঞ্জয় রাশিয়া বেড়াতে গিয়েছিল। তার আগে মে মাসে নাদিয়া রাশিয়া যায়। রাশিয়া গিয়ে নাদিয়া সাধারণত মস্কোতে বাবা আর স্টেপ মায়ের সঙ্গে থাকে। নাদিয়ার বাবা রাশিয়ান। কিন্তু মা কাজাখ। ১৯৫৩ সালের আগ পর্যন্ত কাজাখস্তান ছিল সম্পূর্ণ ভার্জিন ল্যান্ড। তখনকার সোভিয়েত নেতা নিকিতা ক্রুশ্চেভ কাজাখস্তানের ভার্জিন ল্যান্ডে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগাতে সেখানে কাজাখদের সঙ্গে রাশিয়ানদের গণ বিয়ে দেবার একটা প্রচলন করেছিলেন। তখন মস্কো থেকে অনেকেই কাজাখস্তানে গিয়ে কাজাখ মেয়ে বিয়ে করেছিল। নাদিয়ার দাদু ভাই ইলাক বুলখায়েব তখন কাজাখ মেয়ে হেলেন দুবরিককে বিয়ে করেছিলেন। পরে সেই বিয়েটা ভেঙ্গে গেলে নাদিয়ার দাদু ভাই আবার মস্কো ফেরত যান। নাদিয়ার বাবা মাজিদ বুলখায়েব মস্কোতে পড়াশুনা করলেও তিনিও প্রথম বিয়েটা করেছিলেন বাবার মতই কাজাখস্তানে। মা হেলেন দুবরিকের সঙ্গে প্রায়ই দেখা করার জন্য মাজিদ তখন মস্কো টু কাজাখস্তান যাওয়া আসা করতেন। সেই সূত্রেই কাজাখ মেয়ে মেলিনাকে বিয়ে করেছিলেন মাজিদ। দাদাদাদি ইলাক-হেলেনের মত নাদিয়ার বাবামা মাজিদ-মেলিনার বিয়েটাও শেষপর্যন্ত টেকেনি। নাদিয়ার বাবা পরে আবার মস্কোতে এক রাশিয়ান মেয়েকে বিয়ে করে এখন মস্কোতেই বসবাস করছেন।

অস্ট্রেলিয়ায় পড়তে যাবার এক বছর পর নাদিয়ার মা মেলিনা হঠাৎ ক্লোন ক্যান্সারে মারা যায়। তারপর থেকে নাদিয়া দেশে ফিরলে আর কাজাখস্তান তেমন যাওয়া হয় না। বাবার কাছে মস্কোতেই যায়। সেই সূত্রে বয় ফ্রেন্ড ধনঞ্জয়কেও মস্কোতে যেতে বলেছিল নাদিয়া। ধনঞ্জয় মস্কোতে গিয়ে নাদিয়ার বাবার সঙ্গে পরিচিত হবার পরদিন থেকেই আসলে এই বিড়ম্বনার সূত্রপাত। নাদিয়ার জীবনের অতীতকে ঘিরেই সেই বিড়ম্বনা। ষোল বছর বয়স পর্যন্ত নাদিয়া বেড়ে উঠেছিল ছেলে হিসেবে। পরে সেক্স ট্রান্সপ্লান্ট করে মেয়ে হয়েছে নাদিয়া। এখন নাদিয়া পুরোপুরি একজন মেয়ে। ধোনাইয়ের কথামত, অন্য সব মেয়েদের মত নাদিয়ারও চমৎকার আকর্ষণীয় ব্রেস্ট। অন্য মেয়েদের মতই এখন নাদিয়ারও মেয়েলি শরীর। কিছুতেই বোঝার উপায় নেই এই নাদিয়া ষোল বছর বয়স পর্যন্ত ছেলে ছিল। তখন নাদিয়ার নাম ছিল বালাক বুলখায়েব। সেক্সুয়াল ট্রান্সফারেন্সের পর থেকেই বালাক হয়ে যায় নাদিয়া। অনেকটা যেন নিজের দেশের রাজধানীর মত বদলে যাওয়া নাম আর শরীর এখন নাদিয়ার।

নাদিয়ার বাবা মাজিদ মনে করেছিলেন, ধনঞ্জয় হয়তো নাদিয়ার এই অতীত ইতিহাসটা পুরোপুরিই জানে। ধনঞ্জয় মস্কো যাবার পরদিন নাদিয়ার বাবা মাজিদের সঙ্গে খোশগপ্পের এক পর্যায়ে নাদিয়ার জীবনের আগের ইতিহাস নিয়ে ধনঞ্জয়ের মতামত জানতে চেয়েছিলেন বাবা মাজিদ। একজন বাবা হিসেবে মাজিদের সেই চাওয়ার ভেতর কোনো কুটিলতা ছিল না। যাতে এ নিয়ে বিয়ের পরে আর কোনো ঝামেলা না হয়। এসব বিবেচনায় হয়তো মাজিদ সেই প্রসঙ্গ এমনিতেও টানতেন। কিন্তু নাদিয়া যে ধনঞ্জয়কে সেই গল্পটি এই দুই বছরে একবারও খুলে বলেনি, সেটা তিনি জানতেন না। নাদিয়ার বাবা মাজিদ মনে করেছিলেন, নাদিয়ার বয় ফ্রেন্ড নিশ্চয়ই ব্যাপারটি জানে। দেয়ালে টানানো ফ্রেমবন্দি এক গাঁদা ছবি দেখতে দেখতেই সেই প্রসঙ্গটা উঠেছিল সকাল বেলায় মাজিদের ড্রয়িংরুমে কফি পানের সময়।

দেয়ালে ফ্রেমবন্দি বালাক বুলখায়েবের ছোটবেলার অনেক ছবি। বাবার সঙ্গে। মায়ের সঙ্গে। বাবামা দু'জনের সঙ্গে। কোনোটায় কেবল বালাক একা। ধনঞ্জয় নাদিয়ার কাছে জানতে চেয়েছিল, ছবির ছেলেটি কে? নাদিয়ার কোনো ভাই কিনা? ধনঞ্জয়ের প্রশ্নের জবাবটা নাদিয়া দেবার আগেই বাবা মাজিদ সেই প্রশ্নের জবাবটা দিয়েছিলেন। বিপত্তিটার শুরু আসলে তখন থেকেই। তারপর গোটা দিন মস্কোর বিভিন্ন জায়গায় ঘোরার ফাঁকে ফাঁকে নাদিয়ার কাছ থেকে ধনঞ্জয় কেবল নাদিয়ার সেই অতীতটাই শুনেছে। আর ভেতরে ভেতরে একটা গুমোট অস্বস্থিকর অবস্থা মোকাবেলা করেছে। কিন্তু নাদিয়াকে সরাসরি কিচ্ছু বুঝতে দিতে চায়নি। কয়েকদিন মস্কো বেড়ানোর পর নাদিয়ার সঙ্গে ধনঞ্জয়ের কাজাখস্তান যাবার কথা ছিল। কিন্তু কাজাখ না গিয়ে ধনঞ্জয় সেই অস্বস্থি চেপেই কোনো মতে নাদিয়াকে একটা ধানাই-পানাই বুঝ দিয়ে লন্ডন রওনা হয়েছিল। লন্ডনে রওনা হবার আগে অবশ্য ধনঞ্জয় নাদিয়ার সঙ্গে কিছু নাটকও করেছিল। সিডনিতে যে ব্রিটিশ একটা কোম্পানিতে ধনঞ্জয় এখন চাকরি করে, সিডনির সেই অফিসে একটা ফোন করে ধনঞ্জয় সেই নাটকটা সাজিয়েছিল। নাদিয়ার সামনেই ফোনের রিসিভার রেখে ধনঞ্জয় একটা পাক্কা অভিনেতার মত অভিনয় করেছিল। নাদিয়াকে বলেছিল, অফিস ছুটি ক্যান্সেল করে লন্ডনে হেডঅফিসে জরুরি একটা সেমিনারে যোগ দেবার জন্য নির্দেশ দিয়েছে। ধনঞ্জয় যে ব্রিটিশ কোম্পানির অধীনে চাকরি করে, তাদের নিয়ম কানুনই এমন। ছুটিতে থাকলেও কখন কোথায় থাকবে তা অফিসকে টাইম টু টাইম জানানোর নিয়ম। যাতে জরুরি প্রয়োজনে এমপ্লয়িদের অফিসের কাজে পাওয়া যায়। সেই চাটুকরি কৌশলের সুযোগ নিয়েই নাদিয়াকে একটা পাক্কা ধানাই-পানাই বুঝ দিয়ে ধনঞ্জয় সেই রাতেই লন্ডনের উদ্দেশ্যে মস্কো থেকে একটা ব্রিটিশ এয়ারওয়েজে চেপেছিল।

আমাদের ধনঞ্জয় মানে আমাদের দোস্ত ধোনাই-এর এই গল্পটি এখানেই শেষ হতে পারত। কিন্তু লন্ডনে পৌঁছে নাদিয়াকে ফোন করার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, সেই ফোনটি করার পর থেকে ধোনাইয়ের বুকের ভেতরে চেপে বসে থাকা সেই অস্থিকর ভাবটায় যেন নতুন করে আরো আগুন ঢাললো নাদিয়া। ধনঞ্জয়ের ফোন রিসিপ করে নাদিয়া প্রাসঙ্গিক আলাপচারিতার পরেই জানিয়েছে যে, সে এখন তিন মাসের প্রেগন্যান্ট। আর সেই বাচ্চার বাপ স্বয়ং আমাদের ধোনাই মানে ধনঞ্জয় ঋষব আচার্য। এখন আমাদের ধোনাই এক চরম সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে। নাদিয়াকে কী বিয়ে করবে নাকি করবে না ঠিক বুঝতে পারছে না ধনঞ্জয়। কাছের কোনো বন্ধুকে পেলেই ধোনাই এখন এই বিড়ম্বনাময় রাশিয়ার স্মৃতিচারণটাই কেবল করে। আমাদের বন্ধু ধোনাইয়ের সেই হাসিখুশি ভাবটা এখন আর নেই। সারাক্ষণ এক গভীর চিন্তায় ধোনাইয়ের এখন সময় কাটে। ধোনাই এর এই গল্প শুনে আমাদের ফেনীর আরেক বন্ধু বলরাম ফেইসবুক কনফারেন্সে বলেছে, ওরে ধোনাই, কুনো ধানাই পানাই চইলতো নো... পোলার বাপ হইতাছো, কি খাওয়াইবা কও?
.................................
২১ সেপ্টেম্বর ২০১৫
ঢাকা

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.