নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

রেজা ঘটক

ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।

রেজা ঘটক › বিস্তারিত পোস্টঃ

সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ ও আন্তর্জাতিক অংশগ্রহন এখন কোনদিকে !!!

০৩ রা অক্টোবর, ২০১৫ ভোর ৫:৩২

সিরিয়া যুদ্ধ বোঝার আগে চলুন জেনে নেই কোন দেশের সিরিয়ায় কি ধরনের স্বার্থ জড়িত। আর সেই স্বার্থ রক্ষায় তারা বিগত প্রায় চার-পাঁচ বছর কে কী করেছে?

তার আগে চলুন জেনে নেয়া যাক সিরিয়ার সামান্য পরিচয়। সিরিয়া পশ্চিম এশিয়ার একটি দেশ। সিরিয়ার পশ্চিমে ভূমধ্যসাগর ও লেবানন, উত্তরে তুরস্ক, পূর্বে ইরাক, দক্ষিণে জর্ডান আর দক্ষিণ-পশ্চিমে ইসরাইল। যার আয়তন ১ লক্ষ ৮৫ হাজার ১৮০ বর্গ কিলোমিটার। জনসংখ্যা প্রায় ১ কোটি ৮০ লাখ (২০১৪)। অটোমান তুর্কি সাম্রাজ্যের পতনের পর থেকে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর এটি ফ্রান্সের একটি কলোনিতে পরিণত হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৪৫ সালের ২৪ অক্টোবর স্বাধীন আরব রাষ্ট্র আধুনিক সিরিয়ার যাত্রা শুরু হয়। তখন সিরিয়ায় মন্ত্রী পরিষদ শাসিত সরকার ব্যবস্থা চালু হয়। ১৯৪৬ সালের এপ্রিল মাসে ফ্রান্সের সৈন্যরা সিরিয়া ত্যাগ করে। ১৯৪৯ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত দেশটিতে বারবার সামরিক ক্যু'র মাধ্যমে ক্ষমতার পালাবদল ঘটে।

১৯৬৩ সালে সিরিয়ান রিজিওনাল ব্রাঞ্চের (সেনাবাহিনী) সহায়তায় স্যোসালিস্ট বাথ পার্টি সিরিয়ায় ক্ষমতা দখল করে। তখন হাফিজ আল আসাদ ছিলেন দেশটির বিমানবাহিনীর প্রধান কমান্ডার। সেনাবাহিনীর মধ্যে মত পার্থক্য থাকায় তিন বছর পর ১৯৬৬ সালে সেনাবাহিনীর একটি অংশের প্রধান সালাহ জাদিদ ক্যু'র মাধ্যমে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট হন। তিনি হাফিজ আল আসাদকে তার প্রতিরক্ষা মন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেন। ১৯৭০ সালে হাফিজ আল আসাদ ক্যুর মাধ্যমে জাদিদের কাছ থেকে ক্ষমতা কেড়ে নেন। ১৯৭০ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত হাফিজ ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রী। এরপর এক গণভোটের মাধ্যমে হাফিজ আল আসাদ সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট হিসেবে অভিষিক্ত হন ১৯৭১ সালে। তারপর টানা পাঁচবার গণভোটের মাধ্যমে তিনি সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। আসলে হাফিজ আল আসাদ সিরিয়ায় তখন এক পার্টির দেশ হিসেবে ক্ষমতায় টিকে থাকেন। ওই সময় তিনি পররাষ্ট্র নীতিতে আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোর সঙ্গে নানান মাত্রার আতাঁত করেন। ১৯৮৩-৮৪ সালের দিকে হাফিজের শরীর ভেঙ্গে পড়লে তিনি তার যোগ্য উত্তরসুরী খুঁজতে থাকেন।

হাফিজের প্রথম পছন্দ ছিল তার ভাই রিফাত আল আসাদ। যিনি ছিলেন দেশের দুর্নীতিতে সেরা একজন ব্যক্তি। ১৯৮৩-৮৪ সালে রিফাত একবার অসুস্থ হাফিজের থেকে ক্ষমতা নেবার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। পরে রিফাতকে সিরিয়া থেকে বহিস্কার করে নির্বাসনে পাঠানো হয়। এই সময়ে রিফাত ফ্রান্স ও স্পেনে নির্বাসিত জীবন অতিবাহিত করেন। হাফিজের রোগমুক্তির পর তিনি সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতায় টিকে থাকেন।

১৯৯২ সালে হাফিজের মায়ের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে রিফাত আবার সিরিয়ায় ফেরত আসেন। হাফিজের সঙ্গে তখন মিটমাট হয়ে যায় এবং তাকে দেশের ভাইস প্রেসিডেন্ট বানানো হয়। কিন্তু হাফিজ তার যোগ্য উত্তরসুরী হিসেবে দ্বিতীয়বার বাছাই করেন ছেলে বাসেল আল আসাদকে। কিন্তু ১৯৯৪ সালে এত গাড়ি দুর্ঘটনায় বাসেল আল আসাদ মৃত্যুবরণ করেন। হাফিজের উত্তরসুরী হিসেবে তৃতীয় পছন্দ ছিল ছোট ছেলে বাশার আল আসাদ। যার তখন পর্যন্ত কোনো রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা ছিল না। ২০০০ সালের ১০ জুন হাফিজ আল আসাদ মারা গেলে তার স্থলাভিষিক্ত হন ছোট ছেলে বাশার আল আসাদ। ১৯৮৮ সাল থেকে যিনি সেনাবাহিনীতে ছিলেন। আর বাবা হাফিজের মৃত্যুর সময় বাশার ছিলেন রিপাবলিকান গার্ডের প্রধান কমান্ডার। ২০০০ সাল থেকে তিনি সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট ও সেনাবাহিনীর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বাশার আল আসাদও বাবার মত গণভোট দেখিয়ে এখন পর্যন্ত সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতায় আছেন।

সিরিয়ায় আন্তর্জাতিক স্বার্থ কার কতোটা?
১. রাশিয়া:
রাশিয়া হলো সিরিয়ার এখন পর্যন্ত একমাত্র আন্তর্জাতিক পরীক্ষিত বন্ধু, যারা সিরিয়ায় প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে সমর্থন করে যাচ্ছে। প্রেসিডেন্ট আসাদ সিরিয়ায় রাশিয়ার স্বার্থ রক্ষার জন্য এখন পর্যন্ত রাশিয়ার দৃষ্টিতে পরীক্ষিত নেতা। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে সিরিয়ার বিরুদ্ধে উত্থাপিত রিসল্যুশান-এ ভেটো দিয়ে রাশিয়া তা পাশ করতে দেয় নাই। পাশাপাশি রাশিয়া এখনো আসাদ সরকারকে সব ধরনের অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহ করে যাচ্ছে। এবং মধ্যপ্রাচ্যে রাশিয়ার স্বার্থ সংরক্ষণে সিরিয়া রাশিয়ার অন্যতম মিত্র।

মূলত সিরিয়ার তারতাউস বন্দর হলো ভূমধ্যসাগরে রাশিয়ার প্রধান ঘাঁটি। ভূমধ্যসাগরে রাশিয়ার স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য তারতাউস বন্দর থেকেই রাশিয়া মধ্যপ্রাচ্যে সকল স্বার্থ নিয়ন্ত্রণ করে। ব্ল্যাক সিতে রাশিয়ান স্বার্থ দেখাশোনাও করা হয় এই সিরিয়ার তারতাউস বন্দরে স্থাপিত রাশিয়ান নৌবাহিনীর ফ্রিগেট থেকেই। ৩০ সেপ্টেম্বর রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সিরিয়ায় প্রসিডেন্ট বাশার আল আসাদের সকল বিরোধী পক্ষের বিরুদ্ধে আকাশ পথে হামলা করার ঘোষণা দেয়। রাশিয়ার প্রধান লক্ষ্য সিরিয়া ও ইরাকের অনেক অঞ্চল দখলে নেওয়া ইসলামিক স্টেট (আইএস) হলেও আসাদের রিবেল গ্রুপ যেমন মার্কিন ও তাদের মিত্রদের সমর্থিত সিরিয়ার প্রধান বিরোধী দলও এখন রাশিয়ার আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে।

২. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র:
২০১০ সালে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে আরব বসন্তের নামে একে একে সরকার পতন শুরু হলে সেই ধাক্কা সিরিয়ায়ও লাগে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লীগের অধিকাংশ দেশ সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের পদত্যাগ দাবি করে। আর তখন থেকেই আসাদকে ক্ষমতা থেকে হটানোকে কেন্দ্র করে শুরু হয় সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ। চার বছরে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধে প্রায় দুই লাখ বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীকে প্রেসিডেন্ট আসাদ জেলখানায় বন্দি করেছেন, এমনটা যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের মিত্রদের দাবি। কিন্তু ২০১৪ সালের এপ্রিলের গণভোটে আসাদ পুনরায় নিজেকে জয়ী প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঘোষণা করেন এবং ১৬ জুলাই প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ তৃতীয়বারের মত দেশটির প্রেসিডেন্ট হিসেবে ৭ বছরের মেয়াদকাল শুরু করেন।

যুক্তরাষ্ট্র তার মিত্রদের নিয়ে জাতিসংঘে বাশার আল আসাদের বিরুদ্ধে সিরিয়ায় সংগঠিত গৃহযুদ্ধে আসাদকে একজন মানবতাবাদী অপরাধী ও যুদ্ধাপরাধী হিসেবে দায়ী করে আসছে। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা এখন পর্যন্ত আসাদের প্রধান বিরোধী হিসেবে খ্যাত ন্যাশনাল কোয়ালিশন বা রিবেল গ্রুপকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ দিয়ে সহায়তা করছে।

২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়া ও ইরাকের দখলকৃত ইসলামিক স্টেট বা আইএস এবং অন্যান্য জিহাদীদের বিরুদ্ধে স্থল ও বিমান হামলা করে আসছে। কিন্তু মার্কিন সহায়তা পুষ্ট এই রিবেল গ্রুপ আসাদের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত সরাসরি কোনো হামলায় তেমন ভাবে জড়ায়নি। তারা কেবল ইসলামিক স্টেট ও জিহাদী গ্রুপদের বিরুদ্ধেই মূলত যুদ্ধ করছে। পাশাপাশি মার্কিন মিত্ররা এই যুদ্ধে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ নিয়ন্ত্রণের যুক্তিতে সিরিয়ার এই রিবেল গ্রুপকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ দিয়ে সহায়তা করছে। যুক্তরাষ্ট্র প্রায় পাঁচ হাজার সিরিয়ান রিবেলকে সরাসরি প্রশিক্ষণ দিয়ে এই যুদ্ধ শুরু করে।

৩. সৌদি আরব:
সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরু হবার পর থেকে সৌদি আরব সিরিয়ার প্রসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে ক্ষমতা থেকে অপসারণের সকল প্রচেষ্টায় শুরু থেকে অর্থ সহায়তা দিয়ে আসছে। আসাদের রিবেল গ্রুপের প্রধান অর্থদাতা হলো সৌদি আরব। ২০১৩ সালে আসাদ তার বিরোধীদের উপর রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করেছে এই যুক্তিতে সৌদি আরব সেখানে আসাদের রিবেলদের সঙ্গে সেনা মোতায়েন করে।
পরে মার্কিন সমর্থনকে সহায়তা করতে ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে লোক দেখানো যুদ্ধে জড়ায় সৌদি আরব। ধারণা করা হয় আসাদ রিবেলদের একটি ক্ষুদ্র অংশ সৌদি সেনা। এছাড়া জর্ডান, কুয়েত, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও তুরস্ক এই রিবেলগ্রুপকে অর্থ ও অস্ত্র সহায়তা করে থাকে।

৪. তুরস্ক:
সিরিয়ার ক্ষমতা থেকে আসাদকে অপসারণের জন্য তুরস্ক শুরু থেকেই বিরোধীপক্ষকে সমর্থন দিয়ে আসছিল। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেফ তাঈফ এর্দোগান ঘোষণা দিয়েছেন সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে অন্তত সাড়ে তিন লাখ মানুষ মারা গেছে। যার জন্য দায়ী সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ। তাই তাকে ক্ষমতা থেকে অপসারণে তুরস্ক বিরোধীপক্ষকে সব ধরনের সহায়তা দিচ্ছে।
সিরিয়ার আসাদ বিরোধীদের অন্তত দুই লাখ রিফিউজিকে তুরস্ক আশ্রয় দিয়েছে। তুরস্কের দক্ষিণ পাশের সীমান্ত সিরিয়ান উদ্বাস্তুদের জন্য অনেকটাই ওপেন।

তুরস্ক যেসব সিরিয়ানদের আশ্রয় দিয়েছে তাদের ভেতর থেকে আবার বড় একটি অংশ ইসলামিক স্টেটে যোগ দিয়ে সিরিয়া ও ইরাকের দখলকৃত ইসলামিক স্টেটে চলে গেছে। যে কারণে ধারণা করা হয়, ইসলামিক স্টেটের সঙ্গে তুরস্কের একটা অলিখিত বোঝাপড়া রয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে যেসব জিহাদী ইসলামিক স্টেট বা আইএস-এ যোগ দিয়েছে, তাদের প্রায় সকলের ট্রানজিট হিসেবে কাজ করেছে তুরস্ক।

২০১৫ সালের জুলাই মাসে আইএস-এর বোমা হামলার পর তুরস্ক মার্কিন সমর্থিত আইএস বিরোধী বিমান হামলায় আনুষ্ঠানিকভাবে যোগদান করে। যুক্তরাষ্ট্র ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে যেসব বিমান হামলা করেছে তার অধিকাংশের ঘাঁটি হলো সৌদি আরব ও তুরস্ক।
তুরস্কে নিষিদ্ধ ঘোষিত তার্কিশ কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টি, সিরিয়ায় যাদের সমর্থিত সিরিয়ান কুর্দিশ পপুলার প্রোটেকশান ইউনিট বা ওয়াইপিজি, যাদেরকে আবার তুরস্ক, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন একটি সন্ত্রাসী জঙ্গী গোষ্ঠী হিসেবে বিবেচনা করে। আর সিরিয়ায় অবস্থিত এই সিরিয়ান কুর্দিশদের বিরুদ্ধে তুরস্ক সুযোগ পেলেই হামলা চালায়। যার সমর্থন দেয় তার মার্কিন ও অন্যান্য মিত্ররা।

৫. ইরান:
মধ্যপ্রাচ্যে সিরিয়ার অন্যতম বন্ধু হলো শিয়া নেতৃত্বাধীন ইরান। ইরান সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আসাদকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ সহায়তার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারে তেল বিক্রি করার অন্যতম ঘাঁটি হেসেবে সুবিধা প্রদান করে। এছাড়া আসাদের যুদ্ধনীতির অন্যতম উপদেষ্টা হলো ইরান।

লেবাননের হিযবুল্লাহদের জন্য অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহের অন্যতম ঘাঁটি হিসেবে ইরান সিরিয়াকে ব্যবহার করে। লেবাননের হিযবুল্লাহ গ্রুপ পশ্চিম সিরিয়ায় আসাদের অবস্থানকে আরো শক্তিশালী করতে এখন আসাদ রিবেল গ্রুপদের সঙ্গে যুদ্ধরত। আর এই লেবানিজ হিযবুল্লাহকে পুরো সমর্থন যোগায় ইরান।

ইরাক ও ইরানের শিয়া সেনারা আবার সিরিয়ায় ইসলামিক স্টেট বা আইএস দখলকৃত অংশে যৌথভাবে আইএস-এর সঙ্গে যুদ্ধরত।
জাতিসংঘ সিরিয়ায় যে সকল দলের অংশগ্রহণে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে আসাদকে ক্ষমতা থেকে অপসারণের প্রস্তাব করেছে, সেই প্রশ্নে ইরান শুরুতে রাজি থাকলেও (সিরিয়ায় সকল দলের অংশগ্রহনে নির্বাচনের পক্ষে ইরান) জাতিসংঘের সেই প্রস্তাব অকার্যকর হওয়ায়, এখন সেই প্রস্তাব থেকে পিছু হটেছে ইরান। ইরান আবার মধ্যপ্রাচ্যে রাশিয়ার অন্যতম মিত্র।

সিরিয়ায় রাশিয়ার বিমান হামলা শুরু:
২০১৫ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের অনুরোধে আসাদ বিরোধী ইসলামিক স্টেট ও আসাদ রিবেলদের বিরুদ্ধে একযোগে বিমান হামলা শুরু করেছে। গত তিন দিনের রাশিয়ান বিমান হামলায় ইসলামিক স্টেটের বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে রাশিয়া দাবি করেছে।

ওদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা বলছে, রাশিয়া ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে বিমান হামলা চালানোর কথা থাকলেও আসাদ বিরোধী রিবেলগ্রুপদের বিপক্ষেও বিমান হামলা করেছে। যাতে অনেক বেসামরিক লোক নিহত হয়েছে। মূলত আসাদ বিরোধী রিবেলগ্রুপটি মার্কিন ও তাদের মিত্রদের সমর্থনপুষ্ট। কিন্তু রাশিয়া মার্কিন ও তার মিত্রদের সেই দাবি উড়িয়ে দিয়ে সিরিয়ায় আসাদ বিরোধীদের উপর বিমান হামলা অব্যাহত রেখেছে।

এর আগে নিউইয়র্কের জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ভাষণ দেবার পরপরই সিরিয়ায় আসাদ বিরোধীদের উপর সরাসরি বিমান হামলার অনুমোদন লাভ করেন সরাসরি রাশিয়ার পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ দুমা থেকে। আর এর পরেই পুতিনের নির্দেশে সিরিয়ায় রাশিয়ান বিমান হামলা শুরু হয়।

আজ নিউইয়র্ক থেকে ফেরার পথে পুতিন ফ্রান্সের রাজধানী প‌্যারিসে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রান্কোইশ হোলান্দের সঙ্গে এক জরুরি বৈঠকে মিলিত হয়েছেন। ফ্রান্স আবার সিরিয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম মিত্র। ওদিকে ইরান স্থলপথে আসাদ সেনাবাহিনী ও হিযবুল্লাহদের সঙ্গে মিলে যৌথভাবে ইসলামিক স্টেট ও আসাদ বিরোধী রিবেল গ্রুপের বিরুদ্ধে সরাসরি সম্মুখ যুদ্ধের ঘোষণা দিয়েছে।

সিরিয়ায় কে কার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে?
১. ইসলামিক স্টেট বা আইএস, যারা ইরাকের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের অনুগত বাহিনী ও ইরাকের বাথ পার্টির সদস্যদের নিয়ে গঠিত একটি বিদ্রোহী গ্রুপ। যাদের সাদ্দামের সেনাবাহিনী থেকে পালিয়ে আসা সদস্যরা প্রশিক্ষণ দিয়েছে। যারা ইরাক ও সিরিয়ার একটি বিশাল অংশ এখন নিজেদের দখলে রেখেছে। আইএস সরাসরি সিরিয়ায় আসাদের অনুগত বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধরত। পাশাপাশি তারা ইরাকের মার্কিন সমর্থনপুষ্ট সরকারি বাহিনীর সঙ্গেও যুদ্ধরত। ইরাকের বর্তমান সরকার আবার শিয়াপন্থী ইরানের সমর্থন পাচ্ছে। যে কারণে ইরানের শিয়া সেনারা আবার আইএস-এর সঙ্গে যুদ্ধরত।

কথিত আছে যে, সিরিয়া ও ইরাকে আইএস কে অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহ করে মার্কিন সিআইএ-এর একটি গ্রুপ ও তাদের মিত্ররা। আর সৌদি আরব, জর্ডান, কুয়েত, ইয়েমেন ও সংযুক্ত আরব আমিরাত হলো আইএস-এর অন্যতম অর্থ সহায়তাকারী। এরা তেলের বিনিময়ে আইএস-এর কাছে গোপনে অস্ত্র ও গোলাবারুদ বিক্রি করে। যা আবার মার্কিন অস্ত্র ব্যবসার একটি বড় খাত।

২. আসাদ বিরোধী ন্যাশনাল কোয়ালিশন বা প্রধান রিবেল গ্রুপ, যারা সিরিয়ায় আসাদ বিরেধী গ্রুপ এবং মার্কিন ও তাদের মিত্রদের সমর্থনপুষ্ট। আসাদ বিরোধী এই রিবেলগ্রুপ একদিকে আসাদের অনুগত বাহিনীর সঙ্গে গৃহযুদ্ধে লিপ্ত। অন্যদিকে এরা মার্কিন সমর্থনপুষ্ট আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ দমনে আইএস-এর সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত। যাদের অস্ত্র ও গোলাবারুদ সমর্থন দেয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের মিত্ররা। আর অর্থ সহায়তা দেয় সৌদি আরব, জর্ডান ও কুয়েত।

৩. কুর্দিশ ফাইটার হলো সিরিয়ায় কুর্দিশ পপুলার প্রোটেকশান ইউনিট বা ওয়াইপিজি, যাদেরকে আবার তুরস্ক, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন একটি সন্ত্রাসী জঙ্গী গোষ্ঠী হিসেবে বিবেচনা করে। যারা তুরস্কে নিষিদ্ধ ঘোষিত তার্কিশ কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টির অনুগত বাহিনী। সিরিয়ায় যাদের সমর্থিত সিরিয়ান কুর্দিশদের বিরুদ্ধে তুরস্ক সুযোগ পেলেই হামলা চালায়। যার সমর্থন দেয় তার মার্কিন ও অন্যান্য মিত্ররা। সিরিয়ায় এই কুর্দিশ ফাইটাররা আইএস-এর সঙ্গে মিলে সিরিয়ার একটি বড় অংশ এখন নিয়ন্ত্রণ করছে। যাদের সঙ্গে আবার আসাদের সরকারি বাহিনীও যুদ্ধরত।

সিরিয়ার রাজধানী দামেস্ক ও পশ্চিম সিরিয়ার অধিকাংশ এলাকা এখনো প্রেসিডেন্ট আসাদের অনুগত বাহিনীর দখলে। আসাদের বাহিনী একদিকে মার্কিন সমর্থনপুষ্ট প্রধান রিবেলগ্রুপের সঙ্গে যুদ্ধরত। অন্যদিকে সিরিয়ায় দখলকৃত ইসলামিক স্টেট ও কুর্দিশ ফাইটারদের সঙ্গে যুদ্ধরত। এছাড়া আসাদ বাহিনী যাবাত আল নুসরা ও মডারেট রিবেল গ্রুপের সঙ্গেও উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে যুদ্ধরত। মজার ব্যাপার হলো, সিরিয়ার উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে যাবাত আল নুসরা আর মডারেট রিবেলগ্রুপ আবার নিজেদের মধ্যে যুদ্ধরত। যাদের অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহ করে বৃটেন ও ফ্রান্স। আর অর্থ সহায়তা দেয় সৌদি আরব ও জর্ডান। আর তেল বিক্রিতে সহায়তা করে তুরস্ক।

সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে এখন পর্যন্ত কত লোক মারা গেছে?
দীর্ঘ প্রায় পাঁচ বছরের গৃহযুদ্ধে সিরিয়ায় এ পর্যন্ত প্রায় আড়াই লাখ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। অন্তত প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ এই গৃহযুদ্ধে আহত হয়েছে। আর গৃহযুদ্ধের ফলে দেশটির প্রায় ১১ মিলিয়ন মানুষ প্রতিবেশী তুরস্ক, লেবানন, মিশরে আশ্রয় নিয়েছে। এছাড়া ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে নৌপথে সিরিয়ার কয়েক লাখ মানুষ ইতোমধ্যে ইতালি, গ্রিস, লিবিয়া, জার্মানী, অস্ট্রিয়া, হাঙ্গেরি, রুমানিয়া, পোল্যান্ড, ইউক্রেন ও বেলারুশে আশ্রয় নিয়েছে। সবচেয়ে বেশি সিরিয়ান উদ্বাস্তু আশ্রয় নিয়েছে জার্মানীতে। এই সংখ্যা প্রায় পাঁচ লাখ। প্রায় সাড়ে তিন লাখ মানুষ আশ্রয় নিয়েছে তুরস্কে। প্রায় দুই লাখ আশ্রয় নিয়েছে ইতালিতে। প্রায় দেড় লাখ আশ্রয় নিয়েছে গ্রিসে। এছাড়া অন্য দেশগুলোতে (প্রায় ২০টির বেশি দেশে সিরিয়ান উদ্বাস্তুরা আশ্রয় নিয়েছে) সিরিয়ানদের আশ্রয় নেবার সংখ্যা দশ হাজার থেকে সত্তর হাজারের মত।

সিরিয়া যুদ্ধের বর্তমান রূপ কোন দিকে?
রাশিয়া, ইরান ও লেবাননের হিযবুল্লাহ গ্রুপ সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আসাদের পক্ষে এখন যুদ্ধে যোগ দিয়েছে। এর মধ্যে রাশিয়া চালাচ্ছে বিমান হামলা আর ইরান ও হিযবুল্লাহ আসাদের সেনাবাহিনীর সঙ্গে যৌথভাবে স্থল হামলা চালাচ্ছে।

তুরস্ক, সৌদি আরব ও কুয়েতের সমর্থনপুষ্ট সুন্নী জিহাদীরা আসাদ বিরোধী প্রধান ন্যাশনাল কোয়ালিশান বা প্রধান রিবেল গ্রুপকে সঙ্গ দিচ্ছে। যাদের অস্ত্র ও গোলাবারুদ দিয়ে সমর্থন দিচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ও বৃটেন।

ইসলামিক স্টেট বা আইএস-এর এখন দ্বিমুখী আক্রমণ সামাল দিতে হচ্ছে। একটা হচ্ছে ধারাবাহিক মার্কিন ও তাদের মিত্রদের সমর্থনপুষ্ট রিবেলগ্রুপের হামলা। বা আন্তর্জাতিক সন্ত্রাস মোকাবেলায় মার্কিন নেতৃত্বাধীন হামলা। অন্যদিকে ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে সরাসরি রাশিয়ার বিমান হামলা। আবার ইরান ও হিযবুল্লাহ আজ থেকে যৌথভাবে স্থল হামলা শুরু করেছে আইএস-এর বিরুদ্ধে। যেটাকে এখন আইএস-এর বিপক্ষে ত্রিমুখী হামলা বলা যায়।

...................................
৩ অক্টোবর ২০১৫
ঢাকা


মন্তব্য ৮ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা অক্টোবর, ২০১৫ ভোর ৬:১২

চাঁদগাজী বলেছেন:

বাংলাদেশও সিরিয়ার মত হতে পারে।

২| ০৩ রা অক্টোবর, ২০১৫ ভোর ৬:১৩

চাঁদগাজী বলেছেন:


সিরিয়ায় কারো স্বার্থ নেই, এটা সুন্নী,শিয়া, কাদিয়ানী ও ওয়াহবীদের টিকে থাকার ও ক্ষমতার লড়াই

৩| ০৩ রা অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ৯:৪৬

আহলান বলেছেন: হ ব্যপারটা বেশ গোলমেলে .... তবে রাশিয়ার এভাবে আক্রমনে চলে আসাটা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নতুন। ১৯৭৯ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন হিসাবে তারা সর্বশেষ আফগান যুদ্ধে অংশ নেয়। এরপর পুরা ওয়ার্লডই মার্কিন মুলুকের খেলার পুতুলে পরিণত হয় .... বর্তমানে রাশিয়ার এই ভুমিকা আন্তর্জাতিক অংগনে ক্ষমতার ভারসাম্য আনবে বলে মনে হয় .. যদিও তা সময় সাপেক্ষ ...

৪| ০৩ রা অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ১২:০৮

অগ্নি সারথি বলেছেন: ছ্যাড়াবেড়া অবস্থা। কে কার সাথে যুদ্ধে রত এইডা তারা শেষ পর্যন্ত ঠিক রাখতে পারবে কিনা কে জানে?

৫| ০৩ রা অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ১২:২৬

সাইবার অভিযত্রী বলেছেন: আরব বসন্তের ফুল ফুটেছে লিবিয়ায়, মিশরে এবার ফুটছে সিরিয়ায় । সৌদীতেও গণতন্ত্রের শ্লোগাণ নিয়ে আসটে পারে বসন্ত , সেই অপেক্ষায় আছে অনেকে ।

৬| ০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ৭:১৮

কাউন্টার নিশাচর বলেছেন: সৌদিদের সম্ভবত আইএসের প্রতি একটা গোপন ভালবাসা আছে, যার ফলেই আইএস টিকে আছে।

৭| ০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ২:০৯

রেজওয়ানা আলী তনিমা বলেছেন: তথ্যবহুল পোষ্টের জন্য ধন্যবাদ।

৮| ২২ শে অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ২:৩৭

নগর পথিক বলেছেন: অনেক কিছু জানা গেল।।তথ্যবহুল পোষ্টের জন্য ধন্যবাদ। :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.