নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

রেজা ঘটক

ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।

রেজা ঘটক › বিস্তারিত পোস্টঃ

এভিডেন্স বেইজড অর্থনীতির জন্য নোবেল পেলেন প্রফেসর অ্যানগাস ডেটন !!!

১৫ ই অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ১০:৫৮

মানুষ কীভাবে অর্থ খরচ করে? আর কীভাবে সেই অর্থ খরচ করা থেকে মানুষের লিভিং কন্ডিশন ও দারিদ্র্য পরিমাপযোগ্য? এই জটিল বিষয়ের একটি গ্রহণযোগ্য পরিমাপ বের করার জন্য এ বছর অর্থনীতি বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পেলেন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সির প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির প্রফেসর অ্যানগাস ডেটন (৭০)।

রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি জানায়, মূলত তিনটি প্রশ্নের উপর প্রফেসর ডেটন গবেষণা করেছেন। ১. ভোক্তা কীভাবে বিভিন্ন পণ্যের মধ্যে তার খরচ বণ্টন করে? ২. সমাজের সম্পদের কত ভাগ খরচ করা হয় আর কত ভাগ সঞ্চয় করা হয়? এবং ৩. আমরা কীভাবে স্বাচ্ছন্দ্য ও দারিদ্র্যের মধ্যে সবচেয়ে ভালো পরিমাপ বের করব?

প্রফেসর ডেটন ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের ধনী ও গরিব মানুষের উপর গবেষণা করে যে বিশ্লেষণ দাঁড় করান, সেটি হলো- একটি পরিবারের আয় ও তাদের চাতুর্য্যপূর্ণ ব্যয় থেকে সেই পরিবারের আয় ও ক্যালরি ভোগের একটি সুনির্দিষ্ট সম্পর্ক পাওয়া যায়। আর সেই চিত্র দেখেই ওই পরিবারের জেন্ডার ডিসক্রিমিনেশান সম্পর্কেও ধারণা করা সম্ভব।

প্রফেসর ডেটনকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, আপনি কেন পারিবারিক তথ্যের উপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্বারোপ করেন? জবাবে প্রফেসর ডেটন বলেছেন, আমার মূল গবেষণা আসলে মানুষ ও তাদের আচরণ নিয়ে। যদি আপনি কাউকে ব্যক্তিগত ভাবে চেনেন, তাহলে তার আচরণ বুঝতে পারবেন। কিন্তু আমরা যখন সকল মানুষের বা একগুচ্ছ মানুষের বা একটি শ্রেণীবদ্ধ মানুষের আচরণ বিশ্লেষণ করব, তখন তাদের পারিবারিক তথ্যগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তখন আপনি অনায়াসে বলে দিতে পারবেন, কোন জিনিসগুলো কোন শ্রেণীর মানুষের জন্য প্রযোজ্য। কোন শ্রেণীর মানুষ কোন কোন জিনিসের আসল ভোক্তা। যে কারণে আমি মানুষের পারিবারিক তথ্যের উপর গুরুত্ব দেই, যাতে তাদের আচরণটা তখন বুঝতে সুবিধা হয়।

রয়্যাল সুইডিশ নোবেল কমিটি বলছে, 'প্রফেসর ডেটনের গবেষণা খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ, তিনি গবেষণায় মানুষের আচরণের সত্যিকারের তথ্য নিয়ে বিচার-বিশ্লেষণ করেছেন। আর যা থেকে আমরা মানুষের সুখে থাকা, স্বাচ্ছন্দ্যে থাকা ও বয়স বাড়ার লক্ষণগুলো স্পষ্ট করেই বুঝতে পারি। চলতি বছর প্রফেসর ডেটনের গবেষণা ''analysis of consumption, poverty, and welfare''-এর জন্য তাঁকে অর্থনীতি বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়।

চলতি বছর অর্থনীতি বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কারের ঘোষণা শোনার পর প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটিতে এক প্রেস কনফারেন্সে প্রফেসর ডেটন বলেন, 'আমি বিশ্বাস করি বিশ্ব থেকে দারিদ্র্যের চাপ এখন ক্রমাবনত। গত ২০ বা ৩০ বছরে বিশ্বের দারিদ্র্যের হার নজরকাড়ার মত অনেক কমেছে। আর দারিদ্র্য কমার এই প্রবণতা অব্যাহত থাকবে বলে আমি মনে করি।'

প্রফেসর ডেটন বর্তমানে বৃটেন ও যুক্তরাষ্ট্রের দ্বৈত নাগরিক। ১৯৪৫ সালের ১৯ অক্টোবর তিনি স্কটল্যান্ডের এডিসবার্গে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা একজন ব্রিটিশ আর মা স্কটিশ। তিনি ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটি থেকে বিএ, এমএ ও ডি-ফিল করার পর ফেটস কলেজের একজন প্রতিষ্ঠাতা স্কলার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৭৫ সালে তিনি 'Models of consumer demand and their application to the United Kingdom' নিয়ে গবেষণা করেন। এরপর তিনি ফিথজউইলিয়াম কলেজে একজন ফেলো হিসেবে যোগ দেন। এ সময় তিনি সেখানকার অ্যাপ্লাইড ইকোনমিক্স ডিপার্টমেন্টের প্রফেসর রিচার্ড স্টোন ও প্রফেসর টেরি বার্কারের অধীনে একজন গবেষণা অফিসার হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা নেন।

১৯৭৬ সালে তিনি ব্রিস্টল ইউনিভার্সিটিতে অর্থনীতির প্রফেসর হিসাবে প্রমোশন লাভ করেন। এ সময় তিনি খুব ইনফ্লুয়েনশিয়াল গবেষণায় কৃতিত্ব দেখানোর জন্য ১৯৭৮ সালে 'ফ্রিশ মেডেল' অর্জন করেন। বৃটেনের ইকোনোমেট্রিক সোসাইটি প্রতি দুই বছর পরপর অর্থনীতিতে মৌলিক গবেষণার জন্য এই 'ফ্রিশ মেডেল' প্রদান করে থাকে। ১৯৮০ সালে প্রফেসর ডেটনের গবেষণা রিপোর্ট 'how demand for various consumption goods depends on prices and income' আমেরিকান ইকোনোমিক রিভিউতে প্রকাশ পায়। এটি ১৯৭০ সালের পর আমেরিকান ইকোনোমিক রিভিউতে প্রকাশিত প্রধান ২০টি গবেষণা রিপোর্টের মধ্যে অন্যতম।

এরপর যুক্তরাষ্ট্রের উড্রো উইলশন স্কুল অব পাবলিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্সের প্রফেসর জন পি. লুইস-এর পরামর্শে প্রফেসর ডেটন ১৯৮৩ সালে ব্রিস্টল ইউনিভার্সিটি ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সির প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটিতে যোগদান করেন। প্রফেসর ডেটন বর্তমানে উড্রো উইলশন স্কুল অব পাবলিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্সের সম্মানজনক ডিউইট ডি. আইসেনহাওয়ার অধ্যাপক ( Dwight D. Eisenhower Professor of International Affairs and Professor of Economics), ও প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির অর্থনীতি বিভাগের প্রফেসর।

২০০৭ সালে প্রফেসর ডেটন আমেরিকান ইকোনোমিক অ্যাসোসিয়েশানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। এছাড়া তিনি ব্রিটিশ একাডেমির একজন করেসপন্ডিং ফেলো এবং আমেরিকান অ্যাকাডেমি অব আর্টস অ্যান্ড সায়েন্স-এর একজন সম্মানিত ফেলো। অর্থনীতি বিজ্ঞানে স্থায়ী আয় ও সামঞ্জস্যপূর্ণ ভোগের সূত্রে 'ডেটন প‌্যারাডক্স' খুবই আলোচিত একটি থিউরি। দারিদ্র্য পরিমাপের জন্য প্রফেসর ডেটনের বিশ্লেষণকে অর্থনীতিতে বেঞ্চমার্ক গণ্য করা হয়। এর আগে ২০১১ সালে তাঁর গবেষণা 'analysis of consumption, poverty, and welfare" এর জন্য BBVA Foundation Frontiers of Knowledge Award পান। এবার সেই একই গবেষণায় তাঁকে আলফ্রেড নোবেলের স্মরণে সুইডেনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পুরস্কার প্রদান করা হয়, যাকে অর্থনীতি বিজ্ঞানের নোবেল পুরস্কার হিসাবে গণ্য করা হয়। ১৯৬৯ সাল থেকে অর্থনীতি বিজ্ঞানে এই পুরস্কার প্রদান করা হচ্ছে। এ বছর এই পুরস্কারের মান ৯ লাখ ৭৮ হাজার মার্কিন ডলার। আগামী ১০ ডিসেস্বর সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে প্রফেসর ডেটনকে এ বছরের অন্যান্য নোবেল বিজয়ীদের সঙ্গে এই পুরস্কার প্রদান করা হবে।

প্রফেসর ডেটনের স্ত্রীর নাম অ্যানি কেস। তিনি ন্যাশনাল ব্যুরো অব ইকোনোমিক রিসার্সের একজন এসোসিয়েট রিসার্সার। তাঁদের দুইটি সন্তান। যুক্তরাষ্ট্রের অর্ধবার্ষিকি নিউজলেটার 'রয়্যাল ইকোনোমিক সোশ্যাইটি'-এর 'আমেরিকার চিঠি'র অর্থনীতি বিষয়ক একজন নিয়মিত লেখক হলেন প্রফেসর ডেটন। অবসর সময়ে তিনি স্ত্রীকে নিয়ে লেকসাইডে মাছ ধরেন বা অপেরা দেখতে যেতে পছন্দ করেন।

বর্তমানে প্রফেসর ডেটন ভারতের স্বাস্থ্যখাত নিয়ে গবেষণা করছেন। অর্থনীতির আগ্রহী ছাত্রছাত্রীরা ইউটিউবে প্রফেসর অ্যানগাস ডেটন ও ভারতের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ ব্যানর্জির ডিবেট দেখে অনেক কিছুই আত্মস্থ করতে পারবে।

প্রফেসর ডেটনের উল্লেখযোগ্য বইগুলো হলো:
Deaton, Angus; Muellbauer, John (1980). Economics and Consumer Behavior. New York: Cambridge University Press. ISBN 0521228506.
Deaton, Angus (1992). Understanding Consumption. Clarendon Lectures in Economics. Oxford: Clarendon Press. ISBN 0198287593.
Deaton, Angus (1997). The Analysis of Household Surveys: A Microeconometric Approach to Development Policy. Baltimore: Johns Hopkins University Press for the World Bank. ISBN 0801852544.
Deaton, Angus (2001). Health, inequality and economic development. Cambridge.
Deaton, Angus; Kozel, Valerie, eds. (2005). The Great Indian Poverty Debate. New Delhi: Macmillan India Ltd. ISBN 9781403926449.
Deaton, Angus (2013). The Great Escape: Health, Wealth, and the Origins of Inequality. Princeton: Princeton University Press. ISBN 9780691153544

প্রফেসর ডেটনের সম্পাদনা:
Assistant Editor, Review of Economic Studies, 1975-1980.
Programme Chairman, Econometric Society European Meeting, Athens, 1979
Co-editor, Econometric Society Monographs, 1980-1984.
Editor,Econometrica, July 1984-July 1988, Co-editor, 1980-84, Associate Editor, 1978-80.
Associate Editor, Pakistan Development Review, 1990-1997.
Editorial Board, World Bank Research Observer, 1991-2007

..................................
১৫ অক্টোবর ২০১৫
ঢাকা



মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ১১:২৬

ক্রিবিণ বলেছেন: ভালো লেগেছে...

২| ১৫ ই অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ১:২৪

গেম চেঞ্জার বলেছেন: আমরা যখন সকল মানুষের বা একগুচ্ছ মানুষের বা একটি শ্রেণীবদ্ধ মানুষের আচরণ বিশ্লেষণ করব, তখন তাদের পারিবারিক তথ্যগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তখন আপনি অনায়াসে বলে দিতে পারবেন, কোন জিনিসগুলো কোন শ্রেণীর মানুষের জন্য প্রযোজ্য। কোন শ্রেণীর মানুষ কোন কোন জিনিসের আসল ভোক্তা। যে কারণে আমি মানুষের পারিবারিক তথ্যের উপর গুরুত্ব দেই, যাতে তাদের আচরণটা তখন বুঝতে সুবিধা হয়।

বুঝেন মেইন টার্গেটটা কি উনার।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.