নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।
হু ইজ জাস্টিন ট্রুডো?
সদ্য নির্বাচিত কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো হলেন কানাডার ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্ব কনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী। যিনি লিবারেল পার্টির নেতা। কানাডার সাবেক প্রধানমন্ত্রী পিয়েরে ইলিয়ট ট্রুডো'র সন্তান যিনি দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী'র পদ অলংকার করলেন। এর আগে কোনো প্রধানমন্ত্রীর সন্তানের কানাডার প্রধানমন্ত্রী হবার রেকর্ড নেই। এ বছর ক্রিস্টমাস ডে-তে জাস্টিন ট্রুডো ৪৪ বছরে পা দেবেন। জাস্টিন ট্রুডো হলেন কানাডার দ্বিতীয় কনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী এবং কানাডার ২৩তম প্রধানমন্ত্রী।
জন্ম ও বেড়ে ওঠা রাজনৈতিক পরিবারে:
১৯৭১ সালের খ্রিস্টমাস দিবসে ২৫ ডিসেম্বর কানাডার অটোয়ায় জাস্টিন ট্রুডো জন্মগ্রহণ করেন। বাবা কানাডার সাবেক প্রধানমন্ত্রী পিয়েরে ইলিয়ট ট্রুডো, যিনি ঠিক আজ থেকে ৪৫ বছর এক সপ্তাহ আগে কানাডার ১৫তম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। যাঁকে বলা হয় আধুনিক কানাডার জনক। ১৯৬৮ সালের ২০ এপ্রিল থেকে ১৯৭৯ সালের ৪ জুন এবং ১৯৮০ সালের ৩ মার্চ থেকে ১৯৮৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বাবা পিয়েরে ট্রুডো কানাডার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। আর মা মার্গারেট সিনক্লিয়ার একজন অভিনেত্রী, লেখিকা ও সমাজসেবক।
জাস্টিন ট্রুডো'র ছোটবেলা কেটেছে প্রধানমন্ত্রী'র সরকারি বাসভবনে। রোজ সকালে জাস্টিন স্কুল বাসে করে অটোয়ার পাবলিক ইলিমেন্টারি স্কুলে যেতেন। দুপুরে লাঞ্চের জন্য আবার স্কুল বাসে বাসায় ফিরতেন। ২০০৩ সালে এক সাক্ষাৎকারে জাস্টিন বলেছিলেন যে, আমার ছোটবেলা আসলে আনন্দ ও বিষাদের এক মিশ্রতায় কেটেছে। কোনো কোনো দিন দুপুর বেলা হয়তো আমি স্বয়ং রানীর সঙ্গে বসে একই টেবিলে লাঞ্চ করেছি। সেদিক দিয়ে আমি ছিলাম সৌভাগ্যবানদের একজন। আবার কঠোর পারিবারিক নিয়মকানুনের ভেতরে আমি বড় হয়েছি। যা তখন অনেক সময় আমার আনন্দ মাটি করে দিত। তবে কানাডার অন্য যে কোনো শিশু'র চেয়ে আমার ছোটবেলা অনেক ঘটনাবহুল ছিল। কারণ আমার বাবা ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। আর মা ছিলেন টেলিভিশনের অভিনেত্রী ও জনপ্রিয় টকশো'র অ্যাংকর।
১৯৬৬ সালে মাত্র ১৮ বছর বয়সে মার্গারেট ছুটি কাটাতে যান তাহিতি দ্বীপে। তখন তিনি একজন অভিনেত্রী ও টেলিভিশনের টকশো প্রোগ্রামের অ্যাংকর। তিহিতি দ্বীপে তখন মার্গারেটের সঙ্গে পরিচয় হয় ৫২ বছর বয়সী পিয়েরে ইলিয়ট ট্রুডো'র। যনি তখন কানাডার একজন প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ ও আইন ও বিচারমন্ত্রী। কিন্তু পিয়েরে ট্রুডো তখন নিজের আসল পরিচয় লুকিয়ে একেবারে প্রেমিক তরুণের মত প্রায় ৩০ বছর ছোটো সুন্দরী মার্গারেটের কাছে প্রেম নিবেদন করেন। তারপর থেকে তাঁরা খুব গোপনে ডেটিং করতে থাকেন। ১৯৬৮ সালের ২০ এপ্রিল পিয়েরে ট্রুডো যখন কানাডার ১৫তম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন, তখনো তাঁদের এই অভিসার গোপন ছিল। একজন ব্যাচেলর প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেবার পরেও তাঁদের এই অসম বয়সী প্রেম চলতে থাকে। শেষ পর্যন্ত ১৯৭১ সালের ৪ মার্চ মার্গারেট আর পিয়েরে ট্রুডো ওয়েস্ট ভ্যাংকুভারে এক ক্যাথলিক চার্চে প্রাইভেটলি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। পিয়েরে ট্রুডো তখন কানাডার প্রধানমন্ত্রী। পিয়েরে ট্রুডো ক্যাথলিক হওয়ায় বিয়ের সময় মার্গারেট রোমান ক্যাথলিজমে কনভার্ট হন। ওই বছর খ্রিস্টমাস দিবসে তাঁদের প্রথম সন্তান আজকের কানাডার ২৩তম প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো জন্মগ্রহণ করে। পিয়েরে ট্রুডো ও মার্গারেট সিনক্লিয়ারের তিন সন্তান। জাস্টিন ট্রুডো, আলেক্সজান্দ্রে ট্রুডো সাচা ও মাইকেল ট্রুডো।
জাস্টিনের জন্মের ঠিক দুই বছর পর ১৯৭৩ সালের ২৫ ডিসেম্বর, খ্রিস্টমাস ও জাস্টিনের জন্মদিনেই ছোটভাই আলেক্সজান্দ্রে ট্রুডো'র জন্ম হয়। ওই সময় কানাডায় রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত ছিলেন আলেক্সজান্ডার ইয়াকভলেভ। বাবা প্রধানমন্ত্রী পিয়ের ট্রুডো ছিলেন রাশিয়ার সাহিত্য ও সংস্কৃতির একজন একনিষ্ঠ ভক্ত। পাশাপাশি রাষ্ট্রদূত আলেক্সজান্ডার ইয়াকভলেভ ছিলেন বাবার বন্ধু। তাই রাশিয়ার প্রতি দুর্বলতা ও বন্ধু আলেক্সজান্ডাররের নামের সঙ্গে মিল রেখে এই ছেলের নাম রাখেন আলেক্সজান্দ্রে ট্রুডো। যার ডাক নাম সাচা। যিনি কানাডার একজন আলোচিত সাংবাদিক ও ফিল্মমেকার। ২০০৩ সালে আমেরিকার ইরাক দখলের সময় মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক খবরের জন্য খুব আলোচিত হন সাচা। যদিও ২০০৬ সালে তিনি ফিডেল ক্যাস্ট্রোর কিউবার উপর বিতর্কিত সংবাদ ছেপে কিছুটা দুর্নাম কুড়িয়েছিলেন। তবে পরবর্তী সময়ে কানাডায় সিরিয় নাগরিক হাসান আলমরেইকে জেল থেকে মুক্ত করায় বূমিকা পালনের জন্য আবারো আলোচিত হন। কোনো ধরনের অভিযোগ ছাড়া প্রায় ৪ বছর কানাডার জেলে ছিলেন সিরিয় নাগরিক হাসান আলমরেই। হাসানকে মুক্ত করার কাজে সাচা কলম ধরেন এবং এমন কি আদালতে সাক্ষ্য দিয়ে হাসানকে মুক্ত করতে ব্যাপক ভূমিকা পালন করেন। তখন সাচা আবারো আলোচনায় ফিরে আসেন।
পিয়েরে ও মার্গারেটের ছোট ছেলে মাইকেল ট্রুডো'র জন্ম হয় ২ অক্টোবর ১৯৭৫ সালে। ১৯৯৮ সালের ১৩ নভেম্বর ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার কোকানে গ্লাসিয়ার প্রাদেশিক পার্কে বন্ধুর সঙ্গে স্কি করার সময় দুর্ঘটনায় আক্রান্ত হয়ে মাইকেল কোকানে লেকে হারিয়ে যান। পরবর্তী সময়ে আর তার লাশ উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। মাত্র ২৩ বছর বয়সে মাইকেল দুর্ঘটনায় অকালে মারা যান। কোকানে লেকের পাড়ে তার স্মৃতিতে পরিবারের পক্ষ থেকে সেখানে একটি স্মৃতিফলক স্থাপন করা হয়েছে।
পিয়েরে ট্রুডো কানাডার ১৫ বছরের প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন পরিবারকে সবসময় পাবলিক চোখের অন্তরালে রেখেছেন। যে কারণে জাস্টিন, সাচা ও মাইকেলকে নিয়ে স্ত্রী মার্গারেট ছিলেন লোকচক্ষুর অন্তরালের বাসিন্দা। এমনিতে বয়সের বিরাট ব্যবধান, স্বামীর বিশাল রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব আর স্ত্রীকে সময় না দিতে পারার কারণ থেকেই ধীরে ধীরে মার্গারেট এক কঠিন মানসিক রোগের ব্যারামে ভুগতে শুরু করেন। স্বামী পিয়েরে ট্রুডো দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ব্যস্ত থাকায় পরিবারকে যেমন খুব কম সময় দিতে পারতেন। আবার মার্গারেটের অভিনয়ের প্রতি ঝোঁক ও মিডিয়া স্কান্ডালে জড়ানো নিয়ে সৃষ্ট বিরোধে এই দপ্ততির শেষ দিকের সম্পর্ক খুব একটা ভালো যায়নি। ফলে ১৯৮৪ সালে তাঁদের মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবেই বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে। তখন সন্তানদের দায়িত্ব নেন বাবা পিয়েরে ট্রুডো। আর তখন তিনি রাজনীতি থেকেও অবসরগ্রহণ করেন।
এসময় মার্গারেট নিজের মিডিয়া ফার্ম স্টুডিও ৫৪-এ সময় কাটাতেন। তখন মিডিয়ায় জনশ্রুতি ছিল এরকম যে, মার্গারেট তখন মার্কিন সিনেটর টেড কেনেডি'র সঙ্গে গোপন অভিসার করতেন। এছাড়া মিডিয়ায় বহুল আলোচিত রোলিং স্টোনস ও রোনি উড-এর সাথেও মার্গারেটের গোপন সম্পর্কের নানান গুজব তখন বাজারে চাউর ছিল। ফলে ১৯৮৪ সালে পিয়েরে ট্রুডো'র সঙ্গে মার্গারেটের বিবাহবিচ্ছেদ ঘটার কয়েক মাসের মধ্যেই অটোয়ার রিয়েল স্টেট বিসনেসম্যান ফ্রয়েড কেম্পারকে বিবাহ করেন মার্গারেট। কিন্তু ১৯৮৮ সালে মার্গারেটের মানসিক ব্যারাম আবারো জটিল আকার ধারণ করলে তাঁদের সেই বিয়েও শেষ পর্যন্ত ভেঙ্গে যায়। ফ্রয়েড কেম্পারের সঙ্গে মার্গারেটের দুটি সন্তান রয়েছে। পুত্র কাইল (জন্ম ১৯৮৪) ও কন্যা আলিসিয়া (জন্ম ১৯৮৮)।
রাজনৈতিক পরিবারে জন্ম হলেও পারিবারিক জটিলতার মধ্যেই বড় হয়েছেন জাস্টিন ট্রুডো। বাবা পিয়েরে ট্রুডো'র কঠিন অনুশাসনের কারণে জাস্টিনের ছোটবেলা কেটেছে অটোয়া ও মন্ট্রিলে একান্ত সাদামাটা পারিবারিক কঠোর নিয়মতান্ত্রিক পরিবেশে। জাস্টিন হলেন কানাডার ইতিহাসে দ্বিতীয় ব্যক্তি, যার জন্মের সময় বাবা ছিলেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী। বাবা কানাডার প্রধানমন্ত্রী থাকার সময়ে প্রথম জন্ম নেওয়া অপর কানাডিয়ান হলেন সাবেক কানাডিয়ান প্রধানমন্ত্রী জন এ ম্যাকডোনাল্ডের মেয়ে মার্গারেট মেরি ম্যাকডোনাল্ড। দ্বিতীয় হলেন জাস্টিন ট্রুডো, তৃতীয় হলেন আলেক্সজান্দ্রে ট্রুডো ও চতুর্থ হলেন মাইকেল ট্রুডো, যাদের জন্মের সময় বাবা ছিলেন দেশের প্রধানমন্ত্রী।
জাস্টিনের দাদুভাই চার্লস ট্রুডো ছিলেন একজন ব্যবসায়ী। আর নানাভাই জেমস সিনক্লিয়ার ছিলেন কানাডার সাবেক প্রধানমন্ত্রী লুইস সেন্ট লরেন্ট-এর ক্যাবিনেটের মৎস্য ও পশুসম্পদ মন্ত্রী। জেমস সিনক্লিয়ার ছিলেন একজন ফ্রেঞ্জ-স্কটিশ কানাডিয়ান। যাঁর পূর্ব পুরুষরা সবাই ছিলেন স্কটিশ। যে কারণে জাস্টিনের মা মার্গারেটের পরিবারের অনেক আত্মীয়স্বজন ফ্রেঞ্জ কলোনিয়াল যুগ থেকে এখনো সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়াতে বসবাস করছেন। বিশেষ করে উইলিয়াম ফারকুহার, যিনি সিঙ্গাপুরের একজন বিশিষ্ট কলোনিয়াল নেতা। আবার ট্রুডো'র ষষ্ট পূর্বপুরুষ অর্থ্যাৎ মায়ের দিকের গ্রেড-নানী একজন এথনিক মালয়েশিয়ান।
১৯৭৭ সালে জাস্টিন ট্রুডো'র বয়স যখন মাত্র ৬ বছর, তখন থেকেই বাবা ও মায়ের সম্পর্কে চরম ফাঁটল ধরে এবং তাঁদের আলাদা বসবাসের শুরু। ১৯৮৪ সালে বাবা পিয়েরে ট্রুডো রাজনীতি থেকে অবসর নেন। তখন আবার তিনি টিভি অভিনেত্রী মারগোট কিডারের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন। ১৯৯১ সালে ডেবোরা কোনি'র সঙ্গে প্রণয়কালে পিয়েরে ট্রুডো আবার নতুন করে কন্যা সন্তানের বাবা হন। পিয়েরে ট্রুডো ও ডেবোরা কোনি'র কন্যার নাম সারাহ। যে কারণে বাবা ও মায়ের দিক হিসাব করলে কানাডার ৪৪ বছর বয়সী তরুণ প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো'র তিন ভাই জাস্টিন, সাচা ও মাইকেল ছাড়াও একজন হাফ ব্রাদার ও দুইজন হাফ সিস্টার রয়েছে। মায়ের দিক থেকে হাফ ব্রাদার কাইল এন্ড হাফ সিস্টার আলিসিয়া এবং বাবার দিক দিয়ে হাফ সিস্টার সারাহ। ভাই্-বোন হিসাব করলে জাস্টিন ট্রুডো'রা চার ভাই জাস্টিন, সাচা, মাইকেল ও কাইল এবং দুই বোন আলিসিয়া ও সারাহ।
রাজনীতি থেকে অবসর নেবার পর জাস্টিনের বাবা পিয়েরে ট্রুডো সন্তানদের লোকচক্ষুর আড়ালে কঠিন নিয়মানুবর্তিতায় সন্তানদের বড় করতে থাকেন। জাস্টিন ট্রুডো'র বালকবেলার অধিকাংশ সময় কেটেছে মন্ট্রিলে। সে সময় তিনি কলেজ-জিন-ডে-ব্রিবেউফ-এর একজন ছাত্র ছিলেন। পরবর্তী সময়ে জাস্টিন ম্যাকগিল ইউনিভার্সিটি থেকে প্রথমে লিটারেচারে ব্যাচেলর ডিগ্রি নেন এবং পরে আবার ব্রিটিশ কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যাচেলর অব এডুকেশন ডিগ্রি লাভ করেন। গ্রাজুয়েশান শেষ করে জাস্টিন ওয়েস্ট পয়েন্ট গ্রে একাডেমিতে ফ্রেঞ্জ ল্যাংগুয়েজ এবং স্যার উইনস্টাইন চার্চিল সেকেন্ডারি স্কুলে গণিতের শিক্ষক হিসেবে কিছুদিন শিক্ষকতা করেন। ২০০২ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত তিনি মন্ট্রিল ইউনিভার্সিটির অধীনে মন্ট্রিলের ইকোলে পলিটেকনিক থেকে প্রকৌশল বিষয়ে পড়াশুনা করেন। এরপর তিনি ম্যাকগিল ইউনিভার্সিটিতে এনভারনমেন্টাল জিওগ্রাফিতে মাস্টার্স প্রোগ্রামে ভর্তি হন। কিন্তু সরকারি চাকুরি পাওয়ার পর সেই কোর্স তিনি আর শেষ করেননি।
২০০৭ সালে জাস্টিন ট্রুডো সিবিসি টেলিভিশনের জন্য 'দ্য গ্রেট ওয়ার' নামে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে কানাডার অংশগ্রহণের উপর দুই পর্বের মিনি সিরিজ ডকুমেন্টারি ফিল্ম নির্মাণ করেন। যেখানে তিনি টালবোট মার্কার পাপিওনুকে পোট্রেট করেছেন, যিনি প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় 'ব্যাটেল অব প্যাসেনডেলে'-তে ১৯১৭ সালের ৩০ অক্টোবর এক মর্মান্তিক হামলায় নিহত হন। কানাডার সাবেক প্রধানমন্ত্রী ব্রায়ান মুলরোনি'র ছেলে বেন মুলরোনি ও জোয়ি ক্লার্কের মেয়ে ক্যাথেরিন ক্লার্ক ও ছোটভাই আলেক্সজান্দ্রে ট্রুডো সাচা'র মত জাস্টিন ট্রুডো হলেন কানাডার সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সন্তান হিসেবে এই সময়ে একজন আলোচিত মিডিয়া ব্যক্তিত্ব হিসেবে আবির্ভূত হন। এদের মধ্যে কানাডার সাবেক প্রধানমন্ত্রী ব্রায়ান মুলরোনি'র ছেলে বেন মুলরোনি একজন গেস্ট হিসেবে জাস্টিনের বিবাহ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন।
অ্যাডভোকেসি কর্মসূচি:
ছোট ভাই মাইকেল ট্রুডো'র মৃত্যুর দুই বছর পর ২০০০ সালে জাস্টিন ট্রুডো শীতকালীন স্পোর্টস সেফটির উপর কোকানে গ্লাসিয়ার আলপাইন ক্যাম্পেইন নামে একটি অ্যাডভোকেসি কর্মসূচি শুরু করেন। এ সময় তিনি ব্রিটিশ কলাম্বিয়া সরকারের পাবলিক অ্যাভাল্যান্সের উপর ভর্তুকি বন্ধ করার কড়া সমালোচনা করেছিলেন। ২০০২ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত পারিবারিক বন্ধু জ্যাকুইজ হেবার্টকে নিয়ে জাস্টিন ট্রুডো শুরু করেন কাটিমাভিক ই্য়ুত প্রোগ্রাম নামে তরুণদের একটি অ্যাডভোকেসি কর্মসূচি। জাস্টিন ট্রুডো ছিলেন এই কর্মসূচির সভাপতি। ২০০২ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত তিনি ছিলেন কানাডার সেবিসি রেডিও'র 'কানাডা রিডস সিরিজ'-এর একজন প্যানেললিস্ট মিডিয়া ব্যক্তিত্ব। এই অনুষ্ঠানে ওয়ানি জনস্টনের 'দ্য কলোনি অব আনরিকুইটেড ড্রিমস'-এর জন্য তিনি তখন চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন। ছোট ভাই আলেক্সজান্দ্রে ট্রুডোকে নিয়ে ২০০৪ সালে টরোন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ে জাস্টিন ট্রুডো চালু করেন 'ট্রুডো সেন্টার ফর পিস এন্ড কনফ্লিক স্ট্যাডিজ' বিভাগ। পরবর্তী সময় এই ট্রুডো সেন্টার মাংক স্কুল অব গ্লোবাল অ্যাফায়ার্সের অংশভূত হয়। ২০০৬ সালে সাহিত্যের উপর 'গিলার পুরস্কার'-এর তিনি ছিলেন একজন হোস্ট।
২০০৫ সালে নর্থওয়েস্ট টেরিটরিতে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক হেরিটেইজ সাইট নাহান্নী নদীতে জিঙ্ক মাইন উত্তলনের জন্য সরকারের প্রাক্কলিত ১০০ মিলিয়ন ডলারের প্রজেক্টকে নদী দূষণের দায়ে অভিযুক্ত করে তিনি তখন সরকারি এই নীতির কঠোর সমালোচনা করেন। জাস্টিন ট্রুডো তখন এক বিবৃতিতে বলেছিলেন, "The river is an absolutely magnificent, magical place. I'm not saying mining is wrong [...] but that is not the place for it. It's just the wrong thing to be doing."
২০০৬ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর 'দারফুর ক্রাইসিস'-এ নিহতদের স্মরণে টরোন্টো র্যালিতে জাস্টিন ট্রুডো নেতৃত্ব দেন। যেটি আয়োজন করেছিল রোমিও ডাল্লাইরে।
রাজনৈতিক ক্যারিয়ার:
১৯৮৮ সালের সাধারণ নির্বাচনে তরুণ জাস্টিন ট্রুডো লিবারেল পার্টির নেতা জন টার্নারকে সমর্থন করেন এবং তাঁর নির্বাচনী প্রচারাভিযানে যোগদান করেন। দুই বছর পর ১৯৯০ সালে কানাডার এলিটদের হাই স্কুল নামে খ্যাত 'কলেজ জিন-ডে-ব্রেবেউফ' -এর একজন ছাত্র হিসেবে জাস্টিন কানাডিয়ান ফেডারেলিয়জমের বিরোধিতা করেন। ২০০০ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর বাবা পিয়েরে ট্রুডো মারা গেলে জাস্টিন ট্রুডো রাজনীতিতে আরো বেশি সক্রিয় হন। বাবার মৃত্যুতে মা মার্গারেটের সঙ্গে তিনি নতুন করে মিডিয়ার আলোচিত ব্যক্তিতে পরিনত হন।
২০০৩ সালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী জিন ক্রিটিয়েন-এর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অলিম্পিয়ান চারমাইন ক্রুকসের সঙ্গে জাস্টিন ট্রুডো কো-হোস্টের দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৬ সালে লিবারেল পার্টি নির্বাচনে পরাজিত হলে দলের জাতীয় কনভেনশনে দলের পরাজয়ের কারণ চিন্থিত করার জন্য গঠিত তরুণ টাস্ক ফোর্সের জাস্টিন ট্রুডো ছিলেন সভাপতি। ২০০৬ সালের অক্টোবরে জাস্টিন ট্রুডো কুইবেক জাতীয়তাবাদের কঠোর সমালোচনা করেন। এসময় তিনি বলেন, কুইবেক জাতীয়তাবাদ হল ঊনিশ শতকের দুর্বল চিন্তার একটি আস্ফালন। যার সঙ্গে আধুনিক কুইবেক মোটেও সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। লিবারেল পার্টি থেকে কুইবেকে তখন প্রার্থী ছিলেন মিখাইল ইগনাটিয়েফ। যিনি ছিলেন কুইবেক জাতীয়তাবাদের প্রধান প্রণেতা, যার এই নীতির চরম সমালোচনা করে জাস্টিন ট্রুডো' বলেছিলেন, আমার বাবা যা বিশ্বাস করতেন কুইবেক জাতীয়তাবাদ তার সম্পূর্ণ বিরুদ্ধবাদী একটি ধারণা। তাই দলের জাতীয় কনভেনশনের পরেই তিনি কুইবেকে প্রার্থী হিসেবে জেরার্ড কেনেডি'র নাম প্রস্তাব করেন। কিন্তু প্রার্থী হিসেবে কেনেডি নাম প্রত্যাহার করলে, তাঁর সঙ্গে জাস্টিন ট্রুডো চূড়ান্তভাবে প্রার্থী মনোনয়নে বিজয়ী স্টিফেন ডিয়োনকে সমর্থন করেন।
২০০৭ সালের সাধারণ নির্বাচনে পাপিনিউ আসনে জাস্টিন ট্রুডো লিবারেল পার্টির নমিনেশান পাবার জন্য মেরি ডেরোস ও বাসিলিও জিয়ারদানো'র সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে লিবারেল পার্টির নমিনেশান লাভ করেন। দলীয় নিমনেশান পেতে তিনি পান ৬৯০ ভোট, মেরি ডেরোস পান ৩৫০ ও বাসিলিও জিয়ারদানো পান ২২০ ভোট।
২০০৮ সালের ১৪ অক্টোবর কানাডার সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী স্টিফেন হারপার। ওই নির্বাচনে পাপিনিউ আসনে জাস্টিন ট্রুডো ব্লোক কুইবিকুইজ দলীয় প্রার্থী ভিভিয়ান বারবোটকে অল্প ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে প্রথমবারের মত কানাডার পার্লামেন্ট মেম্বার হিসেবে জয়লাভ করেন। তখন দ্য গ্লোব এন্ড মেইল পত্রিকা এক সম্পাদকীয়তে লিখেছিল যে, জাস্টিন ট্রুডো এবারের পার্লামেন্টে একজন আলোচিত পার্লামেন্টারিয়ান হিসেবে আবির্ভূত হলেন। যিনি হয়তো আগামীতে একদিন কানাডার প্রধানমন্ত্রীও হবেন।
২০০৮ সালের নির্বাচনে কনজারবেটিভ পার্টি মাইনর সংখ্যাগরিষ্ঠতায় সরকার গঠন করে। জাস্টিন ট্রুডো তখন পার্লামেন্টে বিরোধীদলীয় সাংসদ হিসেবে চৌকশ ভূমিকা পালন করেন। এসময় তিনি কনজারবেটিভ দলের প্রধান টার্গেটে পরিনত হন। সংসদে একজন বিরোধীদলীয় সাংসদ হিসেবে তিনি "national voluntary service policy for young people" বিল উত্থাপন করলে তা সংসদে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে এবং পাশ হয়।
২০১০ সালে হাইতিতে ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর জাস্টিন ট্রুডো হাইতিবাসীদের অভিবাসী সুবিধা প্রদাণের পক্ষে প্রচারণা চালান। এ সময় কানাডায় হাইতি কমিউনিটিতে তিনি বিশাল জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। ২০১১ সালের ফেডারেল নির্বাচনে লিবারেল পার্টি পার্লামেন্টে তৃতীয় দল হিসেবে মাত্র ৩৪টি আসন লাভ করে। নির্বাচনে লিবারেল পার্টির চরম ভরাডুবির পর দলনেতা মিখাইল ইগনাটিয়েফ দলপ্রধানের পদ থেকে পদত্যাগ করেন। নতুন দলনেতা হন ডিয়োন। এরপর ২০১৩ সালে লিবারেল পার্টির নতুন নেতা নির্বাচিত হন জাস্টিন ট্রুডো। আর ২০১৫ সালের ১৯ অক্টোবরের নির্বাচনে লিবারেল পার্টি চূড়ান্ত সংখ্যাগিরষ্ঠতা অর্জন করলে তিনি কানাডার ২৩তম প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন।
জাস্টিন ট্রুডো'র রাজনৈতিক অবস্থান:
১. অ্যাবরশন ইস্যু: জাস্টিন ট্রুডো নির্বাচনের আগে ঘোষণা দেন, যাঁরা অ্যাবরশন বিলের বিরোধীতা করবে, তাঁদের লিবারেল পার্টি থেকে নমিনেশান দেওয়া হবে না। আমরা এমন একটি লিবারেল পার্টি করতে চাই, যে দলটি ক্ষমতায় গেলে পার্লামেন্টে অ্যাবরশন বিল পাশ করবে।
২. মারিজুয়ানা ইস্যু: জাস্টিন ট্রুডো কানাডায় মারিজুয়ানাকে লিগ্যালাইজ করার পক্ষে সব সময় বক্তৃতা বিবৃতি দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের কলরাডো ও ওয়াশিংটনে মারিজুয়ানাকে লিগ্যালাইজ করার অভিজ্ঞতাকে কানাডায় কাজে লাগানোর পক্ষে জনমত সৃষ্টি করেন।
৩. ধর্মীয় স্বাধীনতা: কুইবেকের ধর্মীয় স্বাধীনতা, স্বাধীন মতামত ও ইচ্ছা প্রকাশ এবং অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ও কর্মক্ষেত্রের স্বাধীনতার উপর কুইবেক চার্টার অব ভ্যালুজকে গুরুত্ব দিতে তিনি ২০১৪ সালে কুইবেক প্রাদেশিক নির্বাচনের বিজয়কে সমর্থন করেন ও ভিত্তি মনে করেন।
ব্যক্তিগত জীবন:
ছোট ভাই মাইকেল ট্রুডো'র ছোটবেলার বন্ধু ও ক্লসমেট সোফি গ্রেগরি'র সাথে জাস্টিন ট্রুডো'র ২০০৩ সালে নতুন করে আবার যোগাযোগ শুরু হয় ও তাঁদের মধ্যে বন্ধুত্ব হয়। একটি চ্যারিটি বল অনুষ্ঠানে দু'জনে কো-হোস্ট করার পর তাঁদের বন্ধুত্ব আরো নিবিঢ় হয়। সোফি তখন টেলভিশনের একজন জনপ্রিয় টকশো অ্যাংকর ও অভিনেত্রী। ২০০৪ সালের অক্টোবরে তাঁদের এনগেজমেন্ট হয়। আর ২০০৫ সালের ২৮ মে তাঁরা মন্ট্রিলের ক্যাথলিক চার্চে বিয়ে করেন। জাস্টিন ও সোফি'র তিনটি সন্তান। বড় ছেলে জাভিয়ার জেমস ট্রুডো'র জন্ম ২০০৭ সালের অক্টোবর মাসে, মেয়ে ইল্লা গ্রেস মার্গারেট ট্রুডো'র জন্ম ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আর ছোট ছেলে হাড্রিয়েন ট্রুডো'র জন্ম ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে।
২০১৩ সালে পার্টির নেতা নির্বাচিত হবার পর জাস্টিন ট্রুডো ও সোফি গ্রেগরি মন্ট্রিলের বাড়ি বিক্রি করে অটোয়ায় রকক্লিফ পার্কের পাশে একটি ভাড়া বাড়িতে বসবাস শুরু করেন। যেখানে বাবা প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন জাস্টিনের ছোটবেলার অধিকাংশ সময় কেটেছে।
...................................
২১ অক্টোবর ২০১৫
ঢাকা
©somewhere in net ltd.
১| ২১ শে অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৫:২০
রংহীন-পানি বলেছেন: নেতার ঘরে নেতাই জন্ম নেয়.....
যেমন আমাদের প্রধানমন্ত্রী....................।