নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।
কোনো একটি দেশের গণতন্ত্র কতটা মজবুত তা সুস্পষ্টভাবে বোঝার জন্য কিছু সাধারণ ক্রাইটারিয়া থাকে। একটি দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় কতোটা নিরাপদে আছে, কতোটা স্বাধীনভাবে তারা সংগঠন করতে পারছে বা বক্তব্য দিতে পারছে, সংখ্যালঘু সম্প্রদায় কতটা সুখে আছে নাকি দুঃখে আছে, অথবা রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন সংস্থায় তাদের কতোটা সংশ্লিষ্টতা আছে, তারা সত্যিকার অর্থেই সংখ্যাগুরু জনগোষ্ঠী থেকে কতোটা চাপের মধ্যে আছে নাকি নাই, এসব বিবেচনায় নিয়েই একটি রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সম্পর্কে সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন ধারণা পাওয়া সম্ভব। বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় সেই তুলনায় বড়ই দুর্ভাগা। তাদের অসহায়ত্ব থেকেই বাংলাদেশের গণতন্ত্রের অসহায়ত্ব সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে। এর বিপরীতে সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থান ও ক্রমবৃদ্ধি গণতান্ত্রিক সেই অসহায়ত্বকে দিন দিন আরো লেজেগোবরে করে তুলছে।
গতকাল পুরান ঢাকার হোসনি দালান এলাকায় শিয়া সম্প্রদায়ের পবিত্র আশুরার তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতিকালে বোমা হামলার যে ঘটনা ঘটল, এটি বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর গত ৪৪ বছরে এই প্রথম সংখ্যালঘু শিয়া সম্প্রদায়ের ধর্মীয় উৎসবে সরাসরি বোমা হামলার ঘটনা। ঢাকার ৪০০ বছরের ইতিহাসে শিয়া সম্প্রদায়ের উপর এরকম কোনো হামলার ঘটনার নজির নেই। বাংলাদেশে ধর্মীয় সম্প্রদায়গত সহিংসতা বিস্তারে নিঃসন্দেহে এটি একটি নতুন মাত্রা। এতদিন বাংলাদেশে মুসলিম শিয়া সম্প্রদায়ের উপর এরকম কোনো হামলার ঘটনা ঘটেনি। পুলিশ এটাকে পরিকল্পিত নাশকতা বললেও এটাকে জঙ্গী হামলা বলছে না। তাহলে প্রথমে প্রশ্ন উঠবে- পরিকল্পিত হামলা হলে পুলিশ কেন আগেই তা টের পেল না? আমাদের গোয়েন্দা সংস্থা কী তাহলে আবারো এ ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা ধরতে ব্যর্থ? কোনো কোনো পত্রিকা লিখেছে, বোমা হামলার পর পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়েছে। কেউ কেউ লিখেছে, রাতে কোনো ধরনের মিছিল না করার জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে নির্দেশনা ছিল। কিন্তু পুলিশের কথা কেউ শোনেনি। তাহলে পুলিশের সেই নির্দেশনা উপেক্ষা করে রাতে মিছিল করার প্রস্তুতি পুলিশ কেন বন্ধ করতে পারল না?
এমনিতে গতকাল ছিল বিজয়া দশমীতে দুর্গাপূজার সমাপনী উৎসব, যা প্রতীমা বিসর্জনের মাধ্যমে শেষ হয়। সেখানে পুলিশের সুস্পষ্ট নির্দেশনা ছিল- সন্ধ্যা ছয়টার মধ্যে প্রতীমা বিসর্জন শেষ করার। পাশাপাশি একই দিনে আশুরা পরায় সন্ধ্যা সাতটার আগে কোনো তাজিয়া মিছিল যাতে বের না হয়, পুলিশের সে ধরনের নির্দেশনার কথাও পত্রিকায় দেখেছি। এখন পুলিশ নতুন করে বলছে- রাতে মিছিল না করার নির্দেশনা ছিল। পুলিশ তাহলে রাত বলতে কী মধ্যরাত বোঝাতে চাইছে? আর এই বোমা হামলার ঘটনা ঘটল রাত ১টা ৫৫ মিনিটে। মানে মধ্যরাতেরও পর। একটা জিনিস প্রাথমিকভাবে স্পষ্ট যে, হোসনি দালান একাকায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থার যথেষ্ট ঘাটতি ছিল। হামলাকারীরা বা দুর্বৃত্তরা সেই সুযোগটিকে কাজে লাগিয়েছে।
তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতি থেকে বোঝা যায়- এই মিছিলটি পল্টন ঘুরে আবার হোসনি দালানে গিয়ে শেষ হবার কথা ছিল। পুলিশ কেন মধ্যরাতের এমন মিছিলের প্রস্তুতিকে যথেষ্ঠ সময় নিয়ে আগেই বন্ধ করার নির্দেশনা দেয়নি? পুলিশের তেমন কোনো নির্দেশনা থাকলে তা কেন ফলাও করে আগেই মিডিয়ায় প্রচার পেল না? পুলিশের এই গাফিলতি থেকেই কী দুর্বৃত্তরা সুযোগ নিয়েছে? এখন পুলিশ যতই বলুক রাতে মিছিল করার নির্দেশনা ছিল না, কিন্তু তাদের কথা কেউ শোনেনি, এটা নিজেদের ব্যর্থতা আড়াল করার অপচেষ্টা মাত্র। পুলিশের কথা কেউ শোনেনি, পুলিশের নির্দেশনা কেউ মানেনি, এটা ভূতের মুখে রাম-নাম বলার মত কেচ্ছা। পুলিশের কথা সবাই শুনতে বাধ্য, এটাই বাংলাদেশের ৪৪ বছরের ইতিহাস। ঢাকায় একটি সাধারণ মানববন্ধন করতে গেলেও যেখানে পুলিশের অনুমোদন নিতে হয়, সেখানে পুলিশের কথা কেউ শোনেনি বা মানেনি, এটা বলে পুলিশ এখন নিজেদের দায় এড়ানোর কৌশল নিয়েছে।
বর্তমানে দেশে কোনো রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা নেই। কিন্তু জনমনে প্রচণ্ড নিরাপত্তাহীনতা আছে। পুলিশ সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। এমনকি গত বৃহস্পতিবার গাবতলিতে পর্বত সিনেমা হলের সামনে নিরাপত্তা চৌকিতে তল্লাশি চালালোর সময় সন্ত্রাসীর ছুরিকাঘাতে পুলিশের কর্তব্যরত এএসআই ইব্রাহিম মোল্লা (৩৭) নিহত হয়েছেন। সেই ঘটনায় পুলিশ একজনকে গ্রেফতার করতে পারলেও ঘাতককে এখনো গ্রেফতার করতে পারেনি। সবচেয়ে দুঃখের বিষয়, একজন দায়িত্বরত পুলিশ অফিসার নিহত হবার পরেও পুলিশ নিজেরা বাদি হয়ে ওই ঘটনায় এখনো পর্যন্ত কোনো মামলা করেনি। একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে মাত্র। নিজেদের ডিপার্টমেন্টের একজন সদস্যের প্রতি এই পুলিশ এতটা অকৃতজ্ঞ হয় কী করে? নাকি গরিব মানুষ মরে গেলে ফুটা পয়সাও দাম নেই!!
সাম্প্রতিক সময়ে দুই বিদেশি নাগরিক হত্যার পর সন্ত্রাসীর হাতে দায়িত্বরত পুলিশ অফিসারের নিহত হবার ঘটনা দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুরাবস্থাই প্রমাণ করে। গতকাল ফরিদপুরে এক সন্ত্রাসী পুলিশের গুলিতে নিহত হবার আগে একজন পুলিশ সদস্যকে ছুরিকাঘাত করে আহত করেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে যে কোনো ঘটনায় পুলিশ কেবল রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের মুখাপেক্ষী হয়ে সময় ক্ষেপণ করে থাকে। রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত আসার পর পুলিশ অ্যাকশানে যায়। ততক্ষণ পুলিশ ধরি মাছ না ছুই পানি- এমন নীতিতে এক ধরনের নিস্ক্রীয়তা দেখায়। পুলিশের নিজস্ব দায়িত্ব বলে যে বিষয়টি স্বয়ংক্রিয়ভাবে কার্যকর থাকার কথা, বাংলাদেশের রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়তনের ক্রমবর্ধমান বিপন্নতায় সেটি এখন আর কোনো ফল দিচ্ছে না। যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে, সেই দলের রাজনৈতিক পারপাস সার্ভ করাই পুলিশ এখন কর্তব্য মনে করছে। যে কারণে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা দেবার প্রতি পুলিশের যে দায়িত্ববোধ, সেটি এখন নষ্ট হয়ে গেছে। এই ধারাটি যতদিন চলবে, ততদিন পুলিশের মধ্যে এই সিদ্ধান্তহীনতাও চলতে থাকবে।
পুলিশ জনগণের বন্ধু, এই কথাটি এখন রূপকথায় পরিনত হতে বসেছে। অথচ একটি রাষ্ট্রে পুলিশের কার্যকর ভূমিকা হওয়ার কথা ছিল জনসাধারণের সেবা প্রদান করা। জনসাধারণের নিরাপত্তা প্রদান করাই পুলিশের এক নম্বর দায়িত্ব। সেটি না করে আমাদের পুলিশ রাজনৈতিক অ্যাসাইনমেন্ট অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করতে গিয়েই শ্যাম রাখি না কুল রাখি, এমন একটি দোটানায় কালক্ষেপণ করে থাকে। ফলে সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সন্ত্রাসীরা তাদের কাজ হাছিল করতে সমর্থ হচ্ছে। বাংলাদেশে কে কে সন্ত্রাসী, কে কে খারাপ কাজের সঙ্গে জড়িত, কত ধরনের খারাপ কাজের সঙ্গে জড়িত, কত মাত্রায় জড়িত, তা আমাদের পুলিশের চেয়ে মনে হয় আর কেউ ভালো জানে না। নইলে উত্তরবঙ্গে গর্ত খুড়ে ব্যাংকের ভল্ট থেকে কোটি টাকা চুরি করে, সেই চোরকে রাতারাতি পুলিশে কীভাবে দক্ষিণবঙ্গ থেকে ধরে ফেলতে পারে? বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের কে কোন চরিত্রের তার একটি সুস্পষ্ট নজরদারি আমাদের পুলিশের আছে। দেশের সাধারণ মানুষের কে কতোটা খারাপ আর কে কতোটা ভালো, সেই তথ্যও পুলিশের কাছে আছে। কিন্তু সেই খারাপ লোকগুলো সম্পর্কে পুলিশ নিজেদের ইচ্ছামত কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে না। যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নিতেও পারে না। এখানেই বাংলাদেশে আমাদের পুলিশ বিভাগ রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের কাছে, পেশিশক্তির কাছে পুরোপুরি বন্দি। এখানেই পুলিশ চরমভাবে ব্যর্থ।
প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে এখানেই আমাদের পুলিশ রাজনৈতিক লেজুরবৃত্তির দাসত্ব করতে গিয়ে জনগণ থেকে দিন দিন দূরে সরে যাচ্ছে। যে কারণে জনগণও একান্ত দায় না ঠেকলে সাধারণত পুলিশের শরণাপন্ন হয় না। কারণ, পুলিশ সম্পর্কে জনগণের মধ্যে নেতিবাচক ধারণাটি পুলিশের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের ফলেই সৃষ্টি হয়েছে। বাঘে ছুঁইলে আঠারো ঘা, পুলিশে ছুঁইলে ছত্রিশ ঘা, এমন একটি ধাঁধাঁ এখন আমাদের পুলিশ বিভাগকে হজম করতে হয়। জনগণের কাছে আস্থা অর্জনের চেষ্টায়ও পুলিশের অনেক ঘাটতি আছে। যে দায় পুলিশ এড়াতে পারে না।
সংবিধানে আইন সবার জন্য সমান। কিন্তু পুলিশের চারিত্রিক দোষে হোক কিংবা রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের অপকৌশলের বলিতেই হোক না কেন, পুলিশ নিজেদের সেই হারানো ভাবমুর্তি উদ্ধারেও ততটা আগ্রহী নয়, এমনই যেন তাদের নিয়তি। তাই বড়লোকের কোনো পোলা গাড়ির রেস করে প্রকাশ্যে অপরাধ করলেও পুলিশ জি-হুজুর মার্কা দাসত্বের পরিচয় অটুট রাখতে মটর সাইকেলে স্কর্ট করে তাকে নিরাপদে বাসায় পৌঁছে দেয়। আইন এখানে বড় লোকের জন্য একরকম ছোটলোকের জন্য অন্যরকম, এটা পুলিশই তাদের আচরণ দিয়ে বারবার প্রমাণ করছে। যে কারণে সরকার বদলের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের পুলিশের চরিত্রেরও বদল ঘটে। অথচ একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় জনগণের কাছে সবচেয়ে সম্মান পাওয়ার কথা ছিল পুলিশের। কারণ পুলিশ জনগণের বন্ধু হিসেবে সবসময় জনগণের পারপাস সার্ভ করার কথা।
যেখানে সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতন বাড়ার আগে পুলিশের বেতন সবার আগে বাড়া উচিত। যাতে জনগণকে সেই ন্যায্য সেবা প্রদান করতে পুলিশ সদা প্রস্তুত থাকে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, আমাদের পুলিশ নিজেদের কারো কারো হাজারো দুর্নীতি, অপকর্ম ও অপতৎপরতার কারণে, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে, নিজেদের সেই সৎ সাহসকে পুঁজি করে নিজেদের সেই ন্যায্য দাবি পর্যন্ত সরকারের কাছে তুলে ধরতে ব্যর্থ। যে কারণে সরকারে যারাই থাকুক না কেন, পুলিশের অভ্যন্তরীণ সেই দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে তারাও তাদের নিজেদের লাঠিয়াল হিসেবে পুলিশকে ব্যবহার করে থাকে। যে কারণে বাংলাদেশে পুলিশ বলতে এখন ক্ষমতাসীন দলের পুলিশ বোঝায়। রাষ্ট্রের পুলিশের যে দায়িত্ব ও কর্তব্য, সেটি পালনে তাই এই বিদ্যমান পুলিশি ব্যবস্থা অনেকটাই ব্যর্থ। নইলে নিজেদের একজন পুলিশ অফিসার দায়িত্বরত অবস্থায় সন্ত্রাসীর ছুরিকাঘাতে নিহত হবার পরেও পুলিশ এখনো মামলা করেনি, এটা কী ভাবা যায়, পুলিশের নিজস্বতার দেউলিয়াত্ব কোথায় গিয়ে ঠেকেছে?
আমার আপনার মত অত্যন্ত সাধারণ কোনো পরিবারের, আমার আপনার ভাইবোনেরাই আমাদের পুলিশ বিভাগের সদস্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। কিন্তু রাষ্ট্রীয় সেবা পালন করতে গিয়ে দেশের চলমান রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের পেশিশক্তির কাছে পুলিশ এত বেশি জিম্মি হয়ে পড়েছে যে, পুলিশ নিজেদের নিজস্বতা বা ঐতিহ্যকে এখন আর স্মরণ করতে পারে না। রাজনৈতিক হুকুম না আসা পর্যন্ত পুলিশ অসহায় দায়িত্ব নিয়ে বসে থাকে। অনেকটা ঢাল নেই তলোয়ার নেই নিধি রাম সর্দারের মত।
আমাদের পুলিশ বিভাগের সদস্যদের এখনো সেই মানদাতা আমলের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। পৃথিবী অনেক বদলে গেছে। সন্ত্রাসীরাও নিজেদের নানান কিসিমের প্রশিক্ষণ দেয়। অথচ সেই তুলনায় পুলিশের প্রশিক্ষণে অনেক ঘাটতি রয়েছে। নইলে তল্লাশি করার সময় একজন দায়িত্বরত পুলিশ অফিসারকে ছুরিকাঘাত করতে পারে, কতটা অসতর্ক হলে, কতটা অপরিপক্ক হলে, কতটা অসেচতন হলে, এটা সম্ভব, অনুমান করা যায়! পৃথিবী থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থ্রি নট থ্রি বাতিল করা হয়েছে। আর এখনো বাংলাদেশের পুলিশ সেই থ্রি নট থ্রি ঘাড়ে নিয়ে কুজো হয়ে হাঁটে। যা দেখলে গরিব দেশের সবচেয়ে গরিব পুলিশের চেহারাই কেবল দৃশ্যমান হয়। আর এজন্য দায়ী আমাদের রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন। রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের কারণেই পুলিশ বিভাগকে একটা পঙ্গু বিভাগের মত চালানো হচ্ছে। ক্ষমতায় যারা থাকে, তাদের পাহারা ও লাঠিয়াল হিসেবে কর্তব্য পালন করাই এখন পুলিশের একমাত্র কাজ। যে কারণে কোনো ঘটনা ঘটলে রাজনৈতিক নেতৃত্ব যে ভাষায় কথা বলে, আমাদের পুলিশও একই ভাষায় কথা বলে। দুই বক্তব্যকে আলাদা করা যায় না।
আধুনিক বিশ্বের চলমান সন্ত্রাসের বিস্তারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে যেভাবে আমাদের পুলিশ বিভাগকে প্রশিক্ষণ দেওয়া উচিত, সেই বিষয়ে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে এখনো যথেষ্ঠ ঘাটতি রয়েছে বলেই পুলিশ সেই কার্যকর প্রশিক্ষণটুকুও পাচ্ছে না। রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের ভেতরের আসল চেহারা হলো তারা পুলিশকে সবসময় চাকর-বাকর গণ্য করে। যে কারণে পুলিশের ভেতরে সত্যি সত্যিই কোনো উন্নতি হোক, তা রাজনৈতিক নেতৃত্ব চায় না। চাকর-বাকরদের হুকুম করা যতটা সহজ, প্রজাতন্ত্রের নিবেদিত কর্মকর্তা বা কর্মচারীকে হুকুম করাটা ততটা সহজ নয়। যে কারণে আমরা সচিব ও মন্ত্রীদের মধ্যে অনেক সময় যে ধরনের দ্বন্দ্ব দেখি। আর প্রায় ক্ষেত্রেই মন্ত্রী বাহাদুরকেই পিছু হটতে দেখা যায়। কারণ, সচিব যদি তার দায়িত্ব ও কর্তব্যে সঠিক থাকেন, মন্ত্রী তাকে কিছুই করতে পারেন না। পুলিশের আচরণ ও ব্যবহারে সেই শৌর্য ও দাপটের যথেষ্ঠ ঘাটতি রয়েছে। প্রজাতন্ত্রের সেবক হিসেবে পুলিশের যে বীরত্ব দেখানোর কথা, সেটি দেখাতে তারা ব্যর্থ হচ্ছে বলেই ক্রমশ তারা রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নে আরো অবহেলিত চাকরবাকর ও হুকুমের দাসে পরিনত হচ্ছে। এই ধারাটি একটি গণতান্ত্রিক সমাজ কাঠামোর জন্য সত্যি সত্যি চরম হতাশার।
আমাদের দেশে বড়লোকদের ছেলেমেয়েরা কেউ পুলিশের চাকরি নেয় না। পুলিশের চাকরি করে আমাদের মত গরিব ঘরের ছেলেমেয়েরা। মানসিকভাবে তারা দুর্বল থাকে। অর্থ ও পেশি শক্তির দাপটের কাছে দুর্বল থাকে। যে কারণে হুকুম পালনে দাসত্বগিরিই পুলিশের নিয়তিতে পরিনত হয়েছে। অথচ পরিশ্রমের কথা যদি হিসাব করা হয়, তাহলে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি বেতন হওয়া উচিত পুলিশের। ঝড় হোক বা বৃষ্টি হোক, শীত হোক বা গ্রিস্ম হোক পুলিশের ডিউটি কিন্তু চরম খাটুনির। সেই চরম খাটুনির দায়িত্ব পালন কারা করছে? দেশের সবচেয়ে গরিব ঘরের সন্তানরা। পুষ্টিহীনতা যাদের শারিরীক গঠনকে পর্যাপ্ত ফিটনেস দিতেও ব্যর্থ। যে কারণে প্রশিক্ষিত সন্ত্রাসীদের সঙ্গে এমন দুর্বল অপুষ্টিতে ভুগতে থাকা থ্রি নট থ্রি'র ওজন বয়ে বেড়ানো কাহিল পুলিশ সদস্যকে ঠায় মরতে হয়। এমন কি সেই মরনের পর তাদের পরিবার রাষ্ট্রের কোষাগার থেকে ন্যায্য হিস্যা পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ হিসেবে পায় না। অবহেলিত পুলিশের অবহেলিত মৃত্যুর দায় যেন রাষ্ট্রও নিতে চায় না। আসল কথা হলো, একটি দেশের পুলিশ কাঠামো দুর্বল রেখে সেই দেশে গণতন্ত্র শক্তিশালী করার চিন্তার ভেতরেই গলদ আছে। বাংলাদেশ স্বাধীনতার পর থেকে সেই দুর্বলতা সঙ্গে নিয়েই কেবল পুলিশ বিভাগের বংশবৃদ্ধি করেছে। পুলিশ বিভাগকে সত্যি সত্যি শক্তিশালী করা হয়নি। বংশবৃদ্ধি করা টেকনিক্যালি শক্তিশালী করা মোটেও এক ব্যাপার না। আমাদের দুর্ভাগ্য আমাদের পুলিশের ক্ষেত্রে প্রথম উপায়টা অনুসরুণ করা হয়েছে। সত্যিকার শক্তিশালী পুলিশ বিভাগ গঠনে রাষ্ট্রের যথেষ্ঠ সদিচ্ছার ঘাটতি আছে বলেই পুলিশও জনগণকে কার্যকর সেবা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। সমীকরণটা এখানেই এসে উভয়দিক থেকে মিলে যায়। একটি শক্তিশালী পুলিশ কাঠামো ছাড়া ভঙ্গুর গণতন্ত্রে পুলিশ হয়তো বড়জোর লাঠিয়ালের ভূমিকা পালন করতে পারে, কিন্তু জনগণের সেবক হবার সুযোগ সেখানে থাকে না, পুরোপুরি জনসেবা দেবার মত কাঠঅমোগত শক্তিও সেখানে অনুপস্থিত থাকে। তাই সকল ঘটনায় পুলিশের ব্যর্থতাকে সত্যি সত্যি পুলিশের ব্যর্থতা বলাটাও মোটেও যৌক্তিক নয়, অন্তত বাংলাদেশের বিদ্যমান ব্যবস্থায়।
....................................
২৪ অক্টোবর ২০১৫
ঢাকা
২| ০৬ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ২:৪২
রিকম্বিনেন্ট খান সাহেব বলেছেন: কি করবো, শত হলেও দেশতো আমাদের। তবে হাস্যকর ব্যাপার হলো পুলিশের অস্ত্রের ব্যাপারটি।
©somewhere in net ltd.
১| ২৪ শে অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ২:৪৮
গেম চেঞ্জার বলেছেন: অদ্ভুত একটা সময়ে বাস করছি আমরা..............।