নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।
আজ ১০ নভেম্বর ২০১৫ বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে পা রাখার ১৫তম বার্ষিকী। ২০০০ সালের ১০ নভেম্বর ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশ প্রথম টেস্ট ম্যাচ খেলতে মাঠে নেমেছিল। দীর্ঘ এই ১৫ বছরে বাংলাদেশ মোট ৯৩টি টেস্ট খেলেছে। ২০০০ সালের ২৬শে জুন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল বা আইসিসি থেকে টেস্ট খেলার ছাড়পত্র পেয়েছিল বাংলাদেশ। বাংলাদেশের টেস্ট ম্যাচ খেলান ছাড়পত্র পেতে তখন সবচেয়ে বেশি সহায়তা করেছিল ভারত। আর ঢাকায় ভারত খেলেছিল বাংলাদেশের বিপক্ষে সেই ঐতিহাসিক ডেব্যু টেস্ট। বাংলাদেশ ও ভারতের সেই ঐতিহাসিক টেস্ট ম্যাচটি আমি বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের ভিআইপি গ্যালারিতে বসে দেখার সুযোগ পেয়েছিলাম।
বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে ভারতের ক্যাপ্টেন সৌরভ গাঙ্গুলীর সঙ্গে সেদিন টস করতে নেমেছিলেন বাংলাদেশ দলের ক্যাপ্টেন নাঈমুর রহমান দুর্জয়। টসে জিতে ব্যাট করতে নেমেছিল বাংলাদেশ। অভিষেক টেস্টেই ইতিহাসে ঢুকে পড়েছিল বাংলাদেশ। টেস্ট ইতিহাসে ডেব্যু টেস্টে বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে টেস্ট ক্রিকেটের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দলীয় স্কোর করেছিল। আমিনুল ইসলাম বুলবুলের অভিষেক সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে ১৫৩.৩ ওভারে করেছিল ৪০০ রান। প্রথম ইনিংসে আমিনুল ইসলাম বুলবুল করেছিলেন ১৪৫ রান। বুলবুলের ১৪৫ রান ছিল তখন ডেব্যু টেস্টে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্কোর। বাংলাদেশের পক্ষে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্কোর করেছিলেন হাবিবুল বাশার সুমন ৭১ রান। আর ভারতের স্পিনার সুনীল জোসি ১৪২ রানে নিয়েছিলেন ৫ উইকেট, জহির খান ৪৯ রানে ২ উইকেট, অজিত আগারকার ৬৮ রানে ২ উইকেট ও শচিন টেন্ডুলকার ৩৪ রানে নিয়েছিলেন ১টি উইকেট।
জবাবে ভারত তাদের প্রথম ইনিংসে ১৪১.৩ ওভারে ৪২৯ রানে অলআউট হয়েছিল। ভারত নিয়েছিল ২৯ রানের লিড। ভারতের পক্ষে সর্বোচ্চ স্কোর করেছিলেন ৫ উইকেট নেওয়া সেই সুনীল জোসি। জোসি করেছিলেন ৯২ রান। ভারতের পক্ষে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্কোর করেছিলেন সৌরভ গাঙ্গুলী ৮৪ রান। বাংলাদেশের ক্যাপ্টেন নাইমুর রহমান দুর্জয় ১৩২ রানে নিয়েছিলেন ৬ উইকেট। যা তখন পর্যন্ত ডেব্যু টেস্টে দ্বিতীয় সেরা বোলিং রেকর্ড ছিল। মোহাম্মদ রফিক ১১৬ রানে নিয়েছিলেন ৩টি উইকেট আর রঞ্জন দাস ৬৪ রানে নিয়েছিলেন ১টি উইকেট।
টেস্ট ক্রিকেট অনভিজ্ঞতার কারণে দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশ মাত্র ৪৬.৩ ওভারে ৯১ রানে অলআউট হয়ে যায়। ভারতের প্রথম ইনিংসে ২৯ রানের লিড থাকায় ম্যাচ জিততে ভারতের তখন প্রয়োজন পড়ে মাত্র ৬৩ রানের। দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের মাত্র দুইজন ব্যাটসম্যান দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছাতে পেরেছিলেন। হাবিবুল বাশার সুমন করেছিলেন ৩০ রান আর উইকেটরক্ষক খালেদ মাসুদ পাইলট ২১ রানে অপরাজিত ছিলেন। ভারতের পক্ষে জাভাগাল শ্রীনাথ ১৯ রানে ৩ উইকেট, সুনীল জোসি ২৭ রানে ৩ উইকেট, অজিত আগারকার ১৬ রানে ২ উইকেট, জহির খান ২০ রানে ১ উইকেট ও মুরালি কার্তিক ১ রানে ১ উইকেট নিয়েছিলেন। মাত্র ৬৩ রানের সহজ জয়ের লক্ষ্যে খেলতে নেমে দ্বিতীয় ইনিংসে ভারত সদাগোপ্পান রমেশের উইকেট হারিয়ে মাত্র ১৫ ওভারে তুলে নেয় ৬৪ রান। রাহুল দ্রাবিঢ় ৪১ রানে ও শিবসুন্দর দাস ২২ রানে অপরাজিত ছিলেন। চতুর্থ দিনেই ভারত ৯ উইকেটে জয় তুলে নিয়েছিল। বাংলাদেশের পক্ষে একমাত্র উইকেটটি পেয়েছিলেন হাসিবুল হোসেন শান্ত। ভারতের সুনীল জোসি ১৬৯ রানে ৮ উইকেট পাওয়ায় হয়েছিলেন ম্যান অব দ্য ম্যাচ।
বাংলাদেশের ডেব্যু টেস্টে বাংলাদেশের পক্ষে সেদিন যাঁদের টেস্ট ক্রিকেটে ডেব্যু হয়েছিল বা বাংলাদেশের দলের সেই ঐতিহাসিক স্কোয়াডে যাঁরা ছিলেন, তাঁরা হলেন, আকরাম খান, আমিনুল ইসলাম বুলবুল, হাবিবুল বাশার সুমন, মেহরাব হোসেন অপি, নাইমুর রহমান দুর্জয় (ক্যাপ্টেন), খালেদ মাসুদ পাইলট (উইকেটরক্ষক), আল শাহরিয়ার, শাহরিয়ার হোসেন, মোহাম্মদ রফিক, হাসিবুল হোসেন শান্ত ও রঞ্জন দাস। সেদিন ভারতের পক্ষে তিন জন খেলোয়াড়ের টেস্ট ম্যাচে ডেব্যু হয়েছিল। তাঁরা হলেন, ওপেনার শিবসুন্দর দাস, ইউকেটরক্ষক সাবা করিম ও ফাস্ট বোলার জহির খান।
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ দলের ডেব্যু টেস্ট ম্যাচটি পরিচালনার দায়িত্বে মাঠের দুই আম্পায়ার ছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্টিভ বাকনর ও ইংল্যান্ডের ডেভিড শেফার্ড। টিভি আম্পায়ারের দায়িত্বে ছিলেন বাংলাদেশের মাহবুবুর রহমান। আর ম্যাচ রেফারি ছিলেন ইংল্যান্ডের রমন সুব্বা রাও। আর ভারতীয় দলের খেলোয়াড়রা ছিলেন, শিবসুন্দর রাও, সদাগোপ্পাান রমেশ, মুরালি কার্তিক, রাহুল দ্রাবিঢ়, শচিন টেন্ডুলকার, সৌরভ গাঙ্গুলী (ক্যাপ্টেন), সাবা করিম (উইকেটরক্ষক), সুনীল জোসি, অজিত আগারকার, জাভাগাল শ্রীনাথ ও জহির খান।
২০০০ সালের ১০ নভেম্বর থেকে বিগত ১৫ বছরে বাংলাদেশ মোট ৯৩টি টেস্ট খেলেছে। পরিসংখ্যানের বিচারে টেস্ট ম্যাচে বাংলাদেশের প্রাপ্তির চেয়ে অপ্রাপ্তির খাতাই বেশি ভারী। ৯৩ টেস্টের মধ্যে বাংলাদেশ মাত্র ৭টি টেস্টে জয় পেয়েছে। ড্র করতে পেরেছে ১৫টি টেস্ট। যেখানে আবার দলীয় পারফর্মামেন্সের চেয়ে বৃষ্টির আনুকুল্য বেশি ছিল। আর বাংলাদেশ হেরেছে ৭১টি টেস্ট। মাঝে মধ্যে দু'একটা টেস্টে বাংলাদেশের দুর্দান্ত কিছু করার আভাসও ছিল। কিন্তু টেস্ট ক্রিকেটে একচেটিয়া কোনো ধারাবাহিকতা একদমই ছিল না। তবে দলীয় সাফল্যের চেয়ে কিছু কিছু ব্যক্তিগত সাফল্যের ঝলক ছিল।
এখন পর্যন্ত মাত্র ১০টি দেশ টেস্ট ক্রিকেট খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে। যার মধ্যে বাংলাদেশ সবচেয়ে নবীন দল। তবে বর্তমানে টেস্ট র্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থান নবম। একমাত্র জিম্বাবুয়ের চেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ। আর র্যাংকিংয়ের শীর্ষে রয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। দ্বিতীয় অবস্থানে পাকিস্তান, তৃতীয় অস্ট্রেলিয়া, চতুর্ত অবস্থানে ভারত, পঞ্চম অবস্থানে নিউজিল্যান্ড, ষষ্ঠ অবস্থানে ইংল্যান্ড, সপ্তম অবস্থানে শ্রীলংকা, অষ্টম অবস্থানে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, নবম অবস্থানে বাংলাদেশ, আর দশম অবস্থানে জিম্বাবুয়ে। দশটি টেস্ট দল বিভিন্ন সময়ে টেস্ট খেলা শুরু করেছে। একেক সময় ক্রিকেটের মানচিত্র ছিল একেক রকম। বাকি টেস্ট দলগুলোর অগ্রগতির সঙ্গে বাংলাদেশের তুলনা করলে ‘প্রথম ১৫ বছর’কে মানদণ্ড হিসেবে নেওয়ার তেমন সুযোগ নেই। কারণ, টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে প্রথম ১৫ বছরে বাংলাদেশ যেখানে ৯৩টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছে, সেখানে ভারত খেলেছিল মাত্র ১০টি, আর দক্ষিণ আফ্রিকা খেলেছিল মাত্র ১১টি।
বরং টেস্ট দলগুলোর প্রথম ৯৩টি টেস্ট ম্যাচকে যদি বিবেচনায় নেওয়া হয়, তাহলে দেখা যায় যে, প্রথম ৯৩ টেস্ট ম্যাচে নিউজিল্যান্ড জিতেছিল মাত্র ৬টি টেস্ট। ভারত জিতেছিল ৯টি টেস্ট। সেদিক দিয়ে সবচেয়ে এগিয়ে আছে ইংল্যান্ড। ইংল্যান্ড জিতেছিল ৪৩টি টেস্ট আর প্রথম ৯৩ ম্যাচের ৩৯টি জিতেছিল অস্ট্রেলিয়া। তবে শুরুর দিকে যেহেতু কেবল ইংল্যান্ড আর অস্ট্রেলিয়ার মধ্যেই টেস্ট ম্যাচ অনুষ্ঠিত হতো। যে কারণে তাদের জয়ের সংখ্যাও তুলনামূরক বেশি। সে তুলনায় অনেক পরে খেলতে আসা দক্ষিণ আফ্রিকার রেকর্ড বরং এই দুই দলের চেয়ে অনেক পিছনে।
প্রথম ৯৩ টেস্ট ম্যাচে ড্রয়ের হিসেবে সবার চেয়ে এগিয়ে পাকিস্তান। পাকিস্তান প্রায় অর্ধেকেরও বেশি ৫২টি ম্যাচ ড্র করেছিল। দ্বিতীয় স্থানে আছে ভারত ৪৯টি ড্র। ড্রয়ের বিচারে সবচেয়ে পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ, মাত্র ১৫টি ম্যাচ ড্র করতে পেরেছে বাংলাদেশ। আর হারের হিসাবে সবচেয়ে লজ্জার রেকর্ডও বাংলাদেশের, ৭১টি ম্যাচে হেরে মাঠ ছাড়তে হয়েছে বাংলাদেশকে। হারের দিক থেকে বাংলাদেশের ধারেকাছেও নেই অন্য কোনো দল। হারের পরিসংখ্যানে প্রথম ৯৩ ম্যাচের মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে জিম্বাবুয়ে, তাদের হারের সংখ্যা ৫৬টি। টেস্ট ক্রিকেট হারের পরিসংখ্যানে সবচেয়ে উজ্জ্বল রেকর্ড পাকিস্তানের, মাত্র ২৬টি ম্যাচে হেরেছে পাকিস্তান। ওয়েস্ট ইন্ডিজ হেরেছে ৩২ ম্যাচে।
তবে সময় বিচারে সবচেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ। ৯৩টি টেস্ট খেলতে বাংলাদেশের লেগেছে মাত্র ১৫ বছর। শ্রীলঙ্কার ৯৩টি টেস্ট খেলতে সময় লেগেছে ১৭ বছর। জিম্বাবুয়ের সময় লেগেছে ২১ বছর। সবচেয়ে বেশি সময় লেগেছে দক্ষিণ আফ্রিকার। ৯৩টি টেস্ট খেলতে দক্ষিণ আফ্রিকার লেগেছে ৫৮ বছর।
প্রথম ৯৩ টেস্টে টেস্ট খেলুড়ে দলগুলোর অবস্থান—
দল- জয়- হার- ড্র- সময়
ইংল্যান্ড- ৪৩- ৩৩- ১৭- ৩০ বছর
অস্ট্রেলিয়া- ৩৯- ৩৬- ১৮- ৩৪ বছর
ওয়েস্ট ইন্ডিজ- ৩০- ৩২- ৩০- ৩৪ বছর
দক্ষিণ আফ্রিকা- ১৫- ৪৯- ২৯- ৫৮ বছর
পাকিস্তান- ১৫- ২৬- ৫২- ২৬ বছর
শ্রীলঙ্কা- ১৫- ৩৮- ৪০- ১৭ বছর
জিম্বাবুয়ে- ১১- ২৬- ৫৬- ২১ বছর
ভারত- ৯- ৩৫- ৪৯- ৩৩ বছর
বাংলাদেশ- ৭- ৭১- ১৫- ১৫ বছর
নিউজিল্যান্ড- ৬- ৪৫- ৪২- ৩৯ বছর
এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের পক্ষে ডেব্যু টেস্ট ক্রিকেটে সেঞ্চুরি পেয়েছেন মাত্র তিনজন ব্যাটসম্যান। তাঁরা হলেন, আমিনুল ইসলাম বুলবুল (১৪৫), মোহাম্মদ আশরাফুল (১১৪) ও আবুল হাসান (১১৩)। বাংলাদেশের পক্ষে এখন পর্যন্ত টেস্ট ক্রিকেটে ডাবল সেঞ্চুরি করেছেন মাত্র দুইজন খেলোয়াড়। তামিম ইকবাল (২০৬) ও মুশফিকুর রহিম (২০০)।
টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি টেস্ট খেলেছে ইংল্যান্ড, তারা খেলেছে ৯৬২টি ম্যাচ। দ্বিতীয় অবস্থানে অস্ট্রেলিয়া, তারা খেলেছে ৭৮০টি টেস্ট। তৃতীয় অবস্থানে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, তারা খেলেছে ৫০৮টি টেস্ট। ভারত খেলেছে ৪৯১টি টেস্ট, নিউজিল্যান্ড খেলেছে ৪০১টি টেস্ট, পাকিস্তান ও দক্ষিণ আফ্রিকা খেলেছে ৩৯২টি করে টেস্ট ম্যাচ, শ্রীলংকা খেলেছে ২৪১টি টেস্ট, জিম্বাবুয়ে খেলেছে ৯৭টি টেস্ট আর বাংলাদেশ খেলেছে ৯৩টি টেস্ট ম্যাচ।
.............................
১০ নভেম্বর ২০১৫
ঢাকা
©somewhere in net ltd.
১| ১০ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:২৭
রক্তিম দিগন্ত বলেছেন: অনবদ্য একটি পোষ্ট। সারাদিনে প্রথম পাতায় আজকের দিনের উপলক্ষ্যে পোষ্ট না পেয়ে হতাশ হয়েছি। আপনি দিনটি গড়ে দিলেন আজকে।
পরিসংখ্যান মূলক একটি পোষ্ট আমিও লিখেছিলাম কয়েকদিন আগে। চাইলে পড়ে দেখতে পারেন।
লিঙ্ক