নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।
সফররত জিম্বাবুয়ের বাংলাদেশের সঙ্গে তিনটি একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচের সিরিজ শুরুর আগে যেমনটি ধারণা করেছিলাম, বাস্তবে তাই ঘটল। কোনো ধরনের প্রতিরোধ ছাড়াই অসহায় আত্মসমর্পণ করল এল্টন চিগুম্বুরার জিম্বাবুয়ে। ফলাফল তিন ম্যাচ সিরিজে বাংলাদেশ ৩-০ তে হোয়াইট ওয়াশ করল সফররত জিম্বাবুয়েকে। এবারের হোয়াইট ওয়াশ নিয়ে বাংলাদেশের কাছে টানা ৮বার হারল জিম্বাবুয়ে। আর সব মিলিয়ে বাংলাদেশের বিপক্ষে এটি তাদের ৩৯তম হার। আর চলতি বছর এটি বাংলাদেশের পঞ্চম বারের মত সিরিজ জয়। এর আগে বাংলাদেশ ২০০৬-০৭ এবং ২০০৯ মৌসুমে চার বারের সিরিজ জয়ের নিজেদের পুরনো রেকর্ডকে নতুন করে লেখালো টিম টাইগার্স। হ্যাভ এ বিগ কংগ্রাচুলেশানস টু টিম টাইগার্স। চলতি বছর এনিয়ে দুটি ওয়ানডে সিরিজে প্রতিপক্ষকে হোয়াইটওয়াশ করল বাংলাদেশ। এর আগে পাকিস্তানকে ৩-০ ব্যবধানে হারায় টাইগার্স বাহিনী। সর্বশেষ বাংলাদেশ সফরেও ওয়ানডে সিরিজে সব ম্যাচ হেরেছিল জিম্বাবুয়ে। গত বছর নভেম্বরে তাদের ৫-০ ব্যবধানে হারায় মাশরাফি'র টাইগার্স বাহিনী।
চলতি সিরিজের প্রথম ওডিআইতে ১৪৫ রান, দ্বিতীয় ওডিআইতে ৫৮ রান এবং আজ তৃতীয় ও সর্বশেষ ওডিআইতে ৬১ রানের জয় নিয়ে ঘরের মাঠে নতুন রেকর্ড স্পর্শ করল টাইগার্সরা। প্রতি ম্যাচে পরাজয়ের ব্যবধানে কিছুটা পার্থক্য থাকলেও বাংলাদেশের দাপট একটুও কমাতে পারেনি এল্টন চিগুম্বুরার দল।
হোয়াইটওয়াশ যা এখন বাংলাওয়াশ নামেই সর্বাধিক জনপ্রিয়, সেই বাংলাওয়াশ এড়াতে তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে ২৭৭ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে জিম্বাবুয়ে বাংলাদেশ দলের নতুন সেনসেশান মুস্তাফিজ কাটারের কাছেই ২১৫ রানে কুপোকাত। মুস্তাফিজ ৮ ওভারে ৩৪ রানে নিয়েছেন ৫ উইকেট। ম্যাচের প্রথম ওভারেই দ্বিতীয় বলে মুস্তাফিজের আঘাতে জিম্বাবুয়ের ওপেনার চামু চিবাবা সরাসরি বোল্ড হন। সপ্তম ওভারের ৫ম বলে 'কাটার' মুস্তাফিজ ৪৩ রানের মাথায় তুলে নেন অপর ওপেনার রেগিস চাকাবাকেও। তখন পর্যন্ত রান রেট ধরে রেখে ম্যাচে ফেরার আশা বাঁচিয়ে রেখেছিল সফরকারীরা। কিন্তু দলীয় ৪৭ রানের মাথায় ক্রেইগ আরবিন নাসির হোসেনের কাছে এলবিডব্লিউর শিকারে হলেও অধিনায়ক এল্টন চিগুম্বুরা সিয়ান উইলিয়ামসকে সাথে নিয়ে ভালোই জবাব দিচ্ছিলেন। এই জুটি ৮০ রান তোলার পর টাইগার্স ক্যাপ্টেন মাশরাফির সাহসী সিদ্ধান্তে ব্রেক থ্রো এনে দেন সাব্বির। চিগুম্বুরাকে সরাসরি বোল্ড করায় যতটা না সাব্বিরের কৃতিত্ব, তার পেছনে ক্যাপ্টেন 'ম্যাশের' বিচক্ষণ অধিনায়কত্বেরই জোড়ালো ভূমিকা ক্রিকেটভক্তদের কাছে নজর কাড়ার মত।
এরপর ৫ম উইকেট জুটিতে আরেকটি প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেছিল জিম্বাবুয়ে। ম্যালকম ওয়ালারকে সঙ্গী করে সিয়ান উইলিয়ামস বলের সাথে পাল্লা দিয়ে রান তুলে আবারো জিম্বাবুয়েকে ক্ষিণ আশার আলো দেখাচ্ছিলেন। এই জুটি করেন মূল্যবান ৫৯টি রান। কিন্তু এই পর্যায়ে আল-আমিনের আঘাতে ৩২ রান করা ম্যালকম ওয়ালারের বিদায় এবং জিম্বাবুয়াইনদের আজকের ম্যাচ সেরা ৬৪ রান করা সিয়ান উইলিয়ামসকে মুস্তাফিজ আউট করলে ম্যাচ টাইগার্সদের নাগালের মধ্যে চলে আসে।
১৮৮ রানে জিম্বাবুয়ের ৬ উইকেট পড়ে যাবার শেষ ভরসা ছিল সিকান্দর রাজা। কিন্তু মুস্তাফিজ আজ যে বল হাত অনন্য রেকর্ডের সামনে সেখানে সিকান্দর রাজা আর লুকে জঙ্গীরা অসহায় আত্মসমর্পণ ছাড়া আর কিছুই করতে পারলেন না। শেষ পর্যন্ত ৪৩.৩ ওভারে ২১৫ রানে অলআউট হয় সফরকারীরা। বাংলাদেশ তুলে নেয় ৬১ রানের দাপুটে জয়। এই নিয়ে টানা তিন ম্যাচ জয়ে সিরিজে হোয়াইট ওয়াশ হলো জিম্বাবুয়েনরা।
এর আগে টস জিতে বাংলাদেশ ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেয়। বাংলাদেশের ওপেনিং জুটি তামিম ইকবাল ও ইমরুল কায়েস টাইগার্সদের জন্য দারুণ সূচনা এনে দেন। ৩০তম ওভারের তৃতীয় বলে সিকান্দর রাজার বলে স্প্যাম্প হবার আগে ইমরুল কায়েস করেন মারমুখী ৭৩ রান। ইমরুলের ৯৫ বলে করা ৭৩ রানের ইনিংসে ছিল ৬টি চার ও চারটি বিশাল ছক্কার মার। ১৪৭ রানে ইমরুলের বিদায়ের পর ব্যাটিং অর্ডারে একধাপ এগিয়ে আজ ওয়ান ডাউনে নামেন চলতি সিরিজে তুখোর ফর্মে থাকা আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান মুশফিকুর রহিম। মুশফিক আর তামিম রানের চাকা দারুণভাবে সচল রাখার মুখে ৩৫তম ওভারের দ্বিতীয় বলে গ্রায়েম ক্রিমারের বলে স্ট্যাম্প হন তামিম। দলীয় রান তখন ২ উইকেট ১৭৩। তামিম করেন ৯৮ বলে ৭৩ রান, যার মধ্যে ছিল ৭টি চার ও একটি বিশাল ছক্কা।
৩৮তম ওভারে ১৯০ রানের মাথায় মুশফিক আউট হলে কিছুটা চাপে পড়ে টাইগার্সরা। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে সঙ্গী করে লিটন দাস সেই চাপের মোকাবেলা ভালোই করছিলেন। কিন্তু চতুর্থ ব্যাটসম্যান হিসেবে মাঠে নাম লিটন দাস আজও নামের প্রতি খুব একটা সুবিচার করতে পারেননি। মাত্র ১৭ রান করে দলীয় ২২২ রানের মাথায় আউট হন লিটন। চলতি সিরিজে লিটনের পারফর্মামেন্স ছিল ধারাবাহিকভাবেই খারাপ। ব্যাটিং অর্ডার বদল করেও লিটন নিজের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারলেন না। এরপর হঠাৎ আবার বাংলাদেশ দলে ছন্দপতন। ২২৬ রানের মাথায় প্রথমে সাব্বির ও পরে নাসির শূন্য রানে আউটন হলে আবারো অলআউটের আশংকা জাগে টাইগার্স শিবিরে। কিন্তু বিশ্বকাপের পর আজ প্রথম হাফ সেঞ্চুরি পাওয়া মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ সেই শঙ্কাকে অনেকটাই উড়িয়ে দেন ক্যাপ্টেন মাশরাফিকে সঙ্গী করে। শেষদিকে আবারো অলআউটের শঙ্কা জাগানো টাইগার্সরা শেষপর্যন্ত নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ২৭৬ রান তুলতে সক্ষম হয়। যা হোয়াইট ওয়াশ এড়ানোর জন্য সফরকারী জিম্বাবুয়ের জন্য তখন ছিল অনেকটাই পাহাড় সমান।
বাংলাদেশের নতুন সেনসেশান মুস্তাফিজ নিজের সেকেন্ড স্পেলে সবসময়ই ভয়ংকর। তা আবারো প্রমাণ করতেই যেন ক্যাপ্টেন মাশরাফি তাকে ফিরিয়ে আনায় সফরকারীদের হোয়াইটওয়াশ তখন সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। এই পর্যায়ে মুস্তাফিজের নিজস্ব তৃতীয় উইকেটে যতটা না অবদান তাঁর স্লোয়ারের, তারচেয়ে ঢের বেশি অবদান যেন সাব্বিরের জন্টি রোডস বনে গিয়ে চিলের মত ছোঁ মেরে বল লুফে নেওয়ায়। বেশ কয়েক গজ দৌঁড়ে হাওয়ায় ভেসে সাব্বির আজ যে ক্যাচ নিলেন সেটা বাংলাদেশ ক্রিকেটের বর্তমান সময়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতীকি ছবি হয়ে থাকবে। মুস্তাফিজের করা ৪১তম ওভারের দ্বিতীয় বলে শিকার হয়েছিলেন সিকান্দর রাজা। আর ঠিক পরের বলেই লুকে জোঙ্গীকেও ফিরিয়ে দেন মুস্তাফিজ, আর এবারো ফিল্ডার সেই সাব্বির। পরের বলে হ্যাটট্রিকের সামনে দাঁড়িয়ে থেকেও শেষ পর্যন্ত হ্যাটট্রিক পেলেন না মুস্তাফিজ। এটাই আজকের ম্যাচে মুস্তাফিজের একমাত্র আফসোস!
পরের ওভারে পিনাশে পানিয়াঙ্গাকে আউট করে ক্যারিয়ারে তৃতীয়বারের মত ৫ উইকেট লুফে নেন বিশ্ব ক্রিকেটের নতুন সেনসেশান মুস্তাফিজ। আর ৪৪তম ওভারের তৃতীয় বলে তাউরাই মুজারাবানিকে আউট করে ম্যাচে উইকেটের খাতায় নাম লেখান আরাফাত সানিও। ৫ উইকেট পেয়ে ম্যাচ সেরার দাবিদার মুস্তাফিজুর রহমান হলেও শেষ পর্যন্ত ব্যাটিং বিচারে ম্যাচ সেরা হন তামিম ইকবাল। আর প্লেয়ার অব দ্য ম্যাচ হন মুশফিকুর রহিম।
জিম্বাবুয়েকে ৩-০তে সিরিজে ধবল ধোলাই নিশ্চিত করার বিনিময়ে বাংলাদেশ দল পেল ১ পয়েন্ট। ফলে আরও একটু এগিয়ে গেল র্যাঙ্কিংয়ে। আজকের ৬১ রানের জয় তাই বাংলাদেশকে আরও একটু এগিয়ে দিল র্যাঙ্কিংয়ের ছয় নম্বরের দিকে। এখন যে জায়গাটি ইংল্যান্ডের দখলে। আবুধাবিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে ব্যাটিংয়ে খোঁড়াতে থাকা ইংল্যান্ড ম্যাচটি হেরে গেলে তাদের সঙ্গে বাংলাদেশের দূরত্ব কমে আসবে দুই পয়েন্টে। এখন বাংলাদেশের রেটিং পয়েন্ট ৯৭।
আজ বল হাতে যেমন নায়ক ছিলেন মুস্তাফিজুর রহমান। এর আগে ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে আলোটা প্রায় একাই টেনে নিয়েছিলেন মুস্তাফিজ। কিন্তু এবার সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে অনেকটাই আড়ালে ছিলেন তিনি। আজ আট ওভার বোলিং করে মুস্তাফিজ ৩৪ রানে নিলেন ৫ উইকেট। যা তাঁর ছোট্ট ক্যারিয়ারে এর মধ্যেই তৃতীয়বারের মতো ইনিংসে ৫ উইকেট নেওয়ার ইতিহাস। মাত্র নয় ম্যাচে এখন ২৬ উইকেট মুস্তাফিজের দখলে, যা ক্যারিয়ারে প্রথম নয় ইনিংসে সবচেয়ে বেশি উইকেট পাওয়ার রেকর্ডটাও ছোঁয়ার ইতিহাস। মুস্তাফিজের ভয়ংকর বোলিংয়েই মাত্র ২১৫ রানেই অলআউট হয় জিম্বাবুয়ে। আজ ক্যাপ্টেন মাশরাফি ম্যাচে ছয় বোলার ব্যবহার করেছেন। মজার ব্যাপার হলো কেউ ফেরেননি খালি হাতে। মুস্তাফিজের দিনে বাকি পাঁচজন মানে আল-আমিন, আরাফাত সানি, সাব্বির আর ক্যাপ্টেন মাশরাফি ভাগ করে নিয়েছেনএকটি করে বাকি পাঁচটি উইকেট।
এমনিতে চিরচেনা চিত্রনাট্যেই সমাপ্তি হলো বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে ওয়ানডে সিরিজের। তিনটিতে সফরকারীদের বড় পরাজয়ই সঙ্গী। এই নিয়ে বাংলাদেশের কাছে টানা আটটি ওয়ানডেতে হারল জিম্বাবুয়ে। বাংলাদেশের কাছে এটি তাদের তৃতীয়বারের মতো ধবল ধোলাই বাংলাওয়াশ। শেষ পর্যন্ত হাসিমুখে আরও একটি ট্রফি হাতে তুললেন টাইগার্স ক্যাপ্টেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। জয়তু টিম টাইগার্স। জয়তু বাংলাদেশ ক্রিকেট।
....................................
১১ নভেম্বর ২০১৫
ঢাকা
২| ১৩ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:৫৬
সাবুজ বলেছেন: অভিনন্দন ।
©somewhere in net ltd.
১| ১১ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:৪৭
মোঃ-আনারুল ইসলাম বলেছেন: অভিনন্দন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে।