নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।
সবাইকে ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি'র শুভেচ্ছা। আজ বিকালে মাসব্যাপী 'অমর একুশে বইমেলা ২০১৬'-এর শুভ উদ্ভোধন করেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তৃতায় বাংলা সাহিত্যের অনুবাদ প্রকাশের ওপর গুরুত্ব দেন এবং এ দেশের ধ্রুপদী ও সাম্প্রতিক সাহিত্যের নির্বাচিত সম্ভার বিশ্বপাঠকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নিতে তাগিদ দিয়েছেন। উদ্ভোধনী অনুষ্ঠানেই ২০১৫ সালের বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্ত ১১ জন লেখকের হাতে সম্মাননা তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী। ২০১৫ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন আলতাফ হোসেন- কবিতায়, শাহীন আখতার- কথাসাহিত্যে, আবুল মোমেন ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনর আতিউর রহমান- যৌথভাবে প্রবন্ধে, অধ্যাপক মনিরুজ্জামান- গবেষণায়, আবদুস সেলিম- অনুবাদে, তাজুল মোহাম্মদ- মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সাহিত্যে, সাবেক পররাষ্ট্রসচিব ফারুক চৌধুরী- আত্মজীবনী/স্মৃতিকথা/ভ্রমণ সাহিত্যে, মাসুম রেজা- নাটকে, শরীফ খান- বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ও পরিবেশ বিভাগে এবং সুজন বড়ুয়া- শিশুসাহিত্যে।
এবার অমর একুশে বইমেলায় প্রায় সাড়ে চারশো প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান অংশ নিচ্ছে। একাডেমি প্রাঙ্গণে ৮২টি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৩২০টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ৯২টি লিটল ম্যাগাজিনকে স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বাংলা একাডেমিসহ ১৪টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের এবার থাকছে ১৫টি প্যাভিলিয়ন। এবারও একাডেমির নজরুল মঞ্চে এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা থাকবে। বইমেলার দুই অংশেই ওয়াই-ফাই সুবিধা থাকবে। বইমেলায় বাংলা একাডেমি প্রকাশিত বই ৩০ শতাংশ কমিশনে এবং মেলায় অংশগ্রহণকারী অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকে ২৫ শতাংশ কমিশনে বই বিক্রি করার নির্দেশনা দিয়েছেন আয়োজক কমিটি।
ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চলবে মেলা। তবে ছুটির দিন বেলা ১১টা থেকে রাত ৮টা এবং ২১শে ফেব্রুয়ারি সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মেলা সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
অমর একুশে বইমেলার প্রথম দিনেই অনেক বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে দেখা হয়েছে, আড্ডা হয়েছে। আজ প্রথমদিনের মেলায় আলোক স্বল্পতা এবং মেলার বিশেষ করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ময়লার ব্যাপক ছড়াছড়ি চোখে পড়েছে। বইমেলা শুরু হয়ে গেছে কিন্তু অনেক স্টলের নির্মাণ প্রক্রিয়া এখনো পুরোপুরি শেষ হয়নি। পুরো বইমেলা চত্বর ঝাড়ু দেওয়া খুব জরুরি। এবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে স্টলগুলো বেশ ছড়ানো ছিটানো। নির্দিষ্ট স্টল খুঁজে পেতে বইপ্রেমীদের একটু কষ্টই হবে। যেমন কবি মাহবুব কবির আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেবার পরেও আমি অনেকক্ষণ হাঁটাহাঁটি করে শ্রাবণ প্রকাশনী খুঁজে পাইনি। সেক্ষেত্রে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে গেটের পাশে একটা ম্যাপ টানানো থাকলে বইপ্রেমীদের নির্দিষ্ট প্রকাশনার স্টলটি খুঁজে পেতে অনেক সুবিধা হবে। আশা করি আয়োজকরা এই বিষয়টি বিবেচনা করবেন।
প্রথম দিনের মেলায় অনেক ধূলা টের পেয়েছি। আয়োজকদের ধূলা তাড়ানোর কার্যকর উদ্যোগও নিতে হবে। পাশাপাশি যতদ্রুত সম্ভব প্রকাশকদের স্টল নির্মাণের কাজ শেষ করাটা জরুরি। পুরো মেলা অঙ্গনকে ঝাড়ু দিয়ে পরিচ্ছন্নতা আনাটা খুব জরুরি। এবার সোহারাওয়ার্দী উদ্যান অংশে মুক্তমঞ্চ মেলার ভেতরে থাকায় মেলায় আগত বইপ্রেমীরা নাটক উপভোগ করার সুযোগ পাবেন। আর একাডেমি প্রাঙ্গনের মূল মঞ্চের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানতো বরাবরের মতই থাকবে। বইমেলার উভয় অংশেই বইপ্রেমীদের জন্য বাংলা একাডেমি'র প্যাভেলিয়ান রয়েছে।
এবার শিশুতোষ প্রকাশনাগুলোকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে দেওয়ায় বইপ্রেমী, শিশু ও অভিভাবকদের একটু সুবিধা হবে। কিন্তু একাডেমি'র মূল অংশে সরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বহেরাতলায় রয়েছে লিটল ম্যাগাজিন চত্বর। এছাড়া রয়েছে মিডিয়ার স্টলগুলো। লিটন ম্যাগাজিন চত্বরের পরিসর বাড়লেও বহেরাতলার দুটো গাছকে ঘিরে স্টল দেওয়ায় অনেকটা ঘিঞ্জি হয়ে গেছে জায়গাটা। দূর থেকে দেখলে মনে হবে কবি-লেখকদের জন্য কবুতরের খোপ কাটা হয়েছে। যেখানে লিটল ম্যাগাজিনের কবি-লেখকরা নিজেদের স্টলে বসবেন। লিটল ম্যাগাজিন চত্বরে এখনো কোনো বসার ব্যবস্থা করা হয়নি। আশা করি আয়োজকরা শিঘ্রই কবি-লেখকদের বসার ব্যবস্থা করবেন।
শিশুতোষ প্রকাশনাগুলোকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে দিলেও এবার উন্মাদকে লিটল ম্যাগাজিন চত্বরে স্টল দেওয়া হয়েছে। গত বছর উন্মাদকে কোনো স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়নি, সেই ক্ষোভটা এবার দূর হলো। উন্মাদ সম্পাদক প্রিয় আহসান হাবিব (শাহীন ভাই)'র সাথে আড্ডায় সেই খুশির ব্যাপারটা বলেছি। বইমেলায় প্রথম দিনেই অনুপস্থিত ছিলেন শিল্পী শেখ শাহেদ আলী। শাহীন ভাই বললেন, শাহেদরে একটা জরিমানা কইরা দাও! স্টুডেন্ট ওয়েজ থেকে ওর বই আসছে, আর ও মেলায় নাই, এইটা হইলো কিছু! উল্লেখ্য এবার স্টুডেন্ট ওয়েজ থেকে প্রকাশ পেয়েছে শিল্পী শেখ শাহেদ আলী'র প্রথম বই 'আত্মজীবনী লেখা যায় না'। শাহীন ভাই কইলেন, এইটার জবাব দিতে আমি এখন লিখব 'আত্মজীবনী লেখা যায়'।
আজ একুশের বইমেলায় যেসব বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হয়েছে, ক্ষাণিক আড্ডা হয়েছে, তারা হলেন গাণ্ডীব সম্পাদক তপন বড়ুয়া, কবি তপন বাগচী, লেখক অনু হোসেন, কথাসাহিত্যিক ঋষি এস্তেবান, কবি মাহবুব কবির, কথাসাহিত্যিক স্বকৃত নোমান, কবি নীল সাধু, শিল্পী চারু পিন্টু, কবি শাফি সমুদ্র, কবি কাজী টিটো, কবি মোস্তফা মনন ও তার গ্যাং, শিল্পী শতাব্দী ভব, কবি বদরুল হায়দার, কবি চৈতী আহমেদ, কবি কুতুব হিলালী, সেতু, তামান্না, ফরহাদ, মেনন, জুবায়ের প্রমুখ। এছাড়া আামাকে সারাক্ষণ সঙ্গ দিয়েছে ছোটবোন অদিতি ও শারমিন। এছাড়া বরিশাল থেকে মুঠোফোনে আমাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল ফারজানা।
আজ বইমেলায় পুরি আর চা দিয়ে আমাদের আপ্পায়ন করেছেন বন্ধু কবি মোস্তফা মনন। কারণ মননের এবার কবিতার বই প্রকাশ পেয়েছে। কিন্তু মনন জানালো, কবি পারভেজ চৌধুরী আর কবি আলফ্রেড খোকন মেলায় না আসা পর্যন্ত কবিতার বইয়ের মোড়ক উন্মোচন বা পাঠ উন্মোচন হবে না। এখন পারভেজ আর খোকনের মেলায় আসার অপেক্ষায় থাকতে হবে আমাদের। এছাড়া কবি শাফি সমুদ্র সিগারেট আর ঋষিদা চা খাইয়েছেন ফেরার পথে টিএসসিতে।
বইমেলা শেষ করে যোগ দিলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাকিম চত্বরে অনুষ্ঠিত জাতীয় কবিতা উৎসবে। সেখানে পেলাম প্রাবন্ধিক আহমাদ মাযহার ও শিল্পী শিরিন বকুলকে। পরিচয় হলো নরওয়ের কবি গুস্তাভ কলি'র সঙ্গে। জাতীয় কবিতা উৎসবে কবি আসাদ চৌধুরী সরকার ও বিরোধীদলের প্রতি একটি সহনশীল রাজনৈতিক পরিবেশ, জনগণের ভোটে নির্বাচিতদের প্রতি আস্থাজ্ঞাপন, মুক্তবুদ্ধি চর্চা ও কবি-লেখকদের যথাযথ নিরাপত্তার কথা উচ্চারণ করেছেন। পাশাপাশি তিনি বলেছেন, সেই সকাল ১০টা থেকে এখন রাত ১০টা পর্যন্ত যে জাতি এভাবে উন্মুক্ত মঞ্চে কবিতা শুনতে ভালোবাসে, সেই জাতিকে কেউ রুদ্ধ করে রাখতে পারবে না। কবিতা উৎসব থেকে বের হয়ে দেখা হলো বন্ধু কবি জাফর আহমেদ রাশেদ, শিল্পী মোবাশ্বির আলম মজুমদার, হুমায়ুন কবির, তিতিল, দোয়েল, শওকত ও নির্মাতা সুমন শামসের সঙ্গে। প্রথম দিনের একুশের বইমেলার ঘটনা এইটুকুই।
..................................
২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬
©somewhere in net ltd.
১| ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:৪৪
নীলসাধু বলেছেন: ভালো লাগা রইল রেজা ভাই। বইমেলা এভাবেই রঙ ছড়াক!