নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।
আজ ছিল অমর একুশে বইমেলার তৃতীয় দিন। আজ ভিড় আরো বেড়েছে। আজ একাডেমিতে বাংলা একাডেমির হীরকজয়ন্তী উপলক্ষ্যে দুটি অধিবেশন ছিল। সকালে প্রথমটা ছিল একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে সুইডেন, বৃটেন, মরক্কো, স্লোভাকিয়া, তাইওয়ান, ভারত ও বাংলাদেশের কবিদের নিয়ে আন্তর্জাতিক কবিতা উৎসব। এই অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন সৈয়দ শামসুল হক, সঞ্চালক ছিলেন কবি আসাদ চৌধুরী ও কায়সার হক। সাত দেশের কবিরা কবিতা পাঠ করেন। বিকালে দ্বিতীয় অধিবেশনে একাডেমির মূল মঞ্চে দেশি ও বিদেশি কবিরা কবিতা পাঠ করেন। এই অধিবেশনে প্রধান অতিথি ছিলেন সৈয়দ শামসুল হক, সভাপতিত্ব করেন হাবিবুল্লাহ সিরাজী। আর সঞ্চালক ছিলেন কবি মুহাম্মদ সামাদ।
সোহারাওয়ার্দী উদ্যানে আজ জাগৃতি প্রকাশনীতে এসেছিলেন ফয়সল আরেফিন দীপনের বাবা প্রফেসর আবুল কাসেম ফজলুল হক। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, বিদেশ থেকে অনেক কবি এসেছেন, এত বুদ্ধিজীবী কত বক্তব্য দেন, কিন্তু কারো কথায় অভিজি' বা দীপন বা নিহত কোনো লেখকদের নিয়ে একটা শব্দও উচ্চারিত হয়নি। শুধু এবারের বইমেলায় নয় আর কোনো বইমেলায় আর কোনো দিন দীপন আসতে পারবে না, এটা যে কত কষ্টের, তা ভাষায় বোঝাতে পারব না।
আজ বইমেলায় ঢুকেই প্রথমে দেখা হল বন্ধু কবি ও নির্মাতা টোকন ঠাকুরের সঙ্গে। আজ মূল মঞ্চে নিজের কবিতা পাঠ করে ঠাকুর ২৩০০ টাকা পেয়েছে। কিন্তু ভ্যাট হিসাবে একাডেমি ৩০০ টাকা কেটে রেখেছে। বললাম, তাইলে ভ্যাট নিয়া একটা কবিতা লেইখা ওই টাকা কড়ায়গণ্ডায় উসুল করা হোক। কবিতার উপরও সরকার ভ্যাট বসিয়েছে। যা একটি দেশে সুস্থ সংস্কৃতিবিকাশের পথে কতটা যে অন্তরায়, এইটা এই সরকারকে কে বোঝাবে? কবিতার উপর ভ্যাট দিয়ে মুর্খদের সরকারি খরচ চালানো হয় যে দেশে, সেই দেশ মোটেও কবি-লেখকদের জন্য স্বাস্থ্যকর নয়!
দূর থেকে পুকুর পাড়ে ছুটে আসলেন কবি দিলদার হোসেন। আমরা দিলদার ভাই'র স্টলে গিয়ে সাইনআপ করলাম। দেখা হল রানা ভাই'র সাথে, কবি শাহীন লতিফের সঙ্গে। পরে মেলায় ঘুরতে ঠাকুর আর আমি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঢু মারি। প্রথমেই ছায়াবীথিতে দেখা হল জাহিদ ও আশার সাথে। পাঠসূত্রে তনুজাদি ও অপারের সাথে।
অবসরের সামনে আমাদের পাইলো আলোকচিত্রী সাহাদাৎ পারভেজ অঞ্চল। আর যাই কোথায়? অঞ্চল নানান কিসিমের ছবি তুললো। আমাদের সঙ্গে যোগ দিল তরুণকবি মাসুদ আহমেদ ও অঞ্চল গং। ফটোসেশন শেষে আমরা এলোমেলাে ঘুরতে থাকি। দিব্যপ্রকাশে দেখা হয় কথাসিহিত্যিক মঈনুল আহসান সাবের ভাই ও কেয়া ভাবীর সাথে। আরেকটু সামনে গেলে আবার আমরা ক্যামেরা শিকারীর শিকার। এবার রাফিয়া আহমেদ ও তার গং আমাদের ক্যামেরাবন্দি করল। সেখানে পেয়ে গেলাম অভিনেতা প্রাণেশ চৌধুরীকে। প্রাণেশদা আবার আমার প্রিয় শিল্পী বৌদি'র লেগে মুঠোফোনে কথা বলাই দিলেন।
একটু সামনে যেতেই ঠাকুরের মাধ্যমে পরিচয় হল চারুকলার চারু'র সাথে। তারপর কিছুক্ষণ আড্ডা ও ঘোরা শেষে টোকন চলে গেল এক প্রডিউচারের লগে মিটিং করতে। রাস্তার মধ্যে দেখা হল শাহীন ভাই (উন্মাদ শাহীন) ও শাহেদ ভাই গংদের সঙ্গে। আজ শাহেদ ভাই'র বই মেলায় এসেছে। 'আত্মজীবনী লেখা যায় না'। যার জবাবে শাহীন ভাই শিঘ্রই লিখবেন 'চেষ্টা করলে আত্মজীবনী লেখা যায়'। কিছুক্ষণ শাহেদ ভাই'র লগে আড্ডা মাইরা আমি আবার একাডেমি প্রাঙ্গনে ফিরে আসলাম। দেখা হল প্রিয় লুৎফর রহমান রিটন ভাইয়ের সঙ্গে। পেছন থেকে আমার সঙ্গে যোগ দিলেন কথাসাহিত্যিক স্বকৃত নোমান। বহেরাতলায় লিটল ম্যাগাজিন চত্বরে গিয়ে পেলাম ইউসুফ ভাই ও চৈতী আপাকে। শুরু হল আবার আমাদের আড্ডা।
একফাঁকে আমাদের সঙ্গে যোগদিলেন ফরিদ ভাই (কবি ফরিদ কবির)। ফরিদ ভাই সিগারেট খান-না ৩৪ দিন। মাঝখানে চারদিন অবশ্য খাইছেন। কবি কখনো মিথ্যা বলেন না। কইলেন, একটু পান করেছিলাম, তখন খাইছি। ফরিদ ভাই সিগারেট ছাইরা আমাদের খুব সমস্যা কইরা দিলেন। প্রতি বছর বইমেলা মানে রোজ ফরিদ ভাই'র প্যাকেট শেষ না কইরা আমরা আড্ডা শেষ করিনা। ফরিদ ভাইরে দুইজন আইসা পাকরাউ কইরা লইয়া গেলেন। আমরা আর কী করমু, যার লগে সিগারেট নাই, তার লগে ঘুইরা আমাগো পোষায় না। ফরিদ ভাই আমাগো না জিগাইয়অ এইটা কী কাম করলেন! নাকি ফরিদ ভাই'র নতুন প্রেমিকা সিগারেটের গন্ধ সহ্য করতে পারেন না, খোদা মালুম! শিঘ্রই এইটা নিয়ে আমরা বিষদ গবেষণা চালামু। অবশ্য নোমান কইলো, আপনি তো শতায়ু পাবেন। কামের কাম করছেন একটা।
নোমান আর আমি একটা সিডিউল করলাম যে আমরা মেলা থেকে সংস্কৃতি বিকাশ কেন্দ্রে যাব। সেখানে আজ ঘরোয়া আড্ডায় পালিত হবে কবি আহমেদ স্বপন মাহমুদের পঞ্চাশপূর্তী জন্মদিন। কবি জুয়েল মোস্তাফিজ আর কবি মামুন খান যে অনুষ্ঠানের নাটের গুরু। নোমান বলল, তরুণ কথাসাহিত্যিক হামিম কামালের প্রথম উপন্যাস 'জঠর' এর মোড়ক উন্মোচন হবে এখন। হামিমের বউ আসলেই সেই অনুষ্ঠান। এই ফাঁকে আমাদের তুলা ভাবী এসে যোগ দিলেন। কী আশ্চার্য আজ নীলসাধু বইমেলায় আসেননি। সেই সুযোগে তুলা ভাবী টিং টিং করতে করতে বইমেলায় চলে এসেছেন। শুনলাম এবার যেদিন সাধুদা আসবেন সেদিন তুলা ভাবী আসবেন না। এটা নাকি রিক্সাভাড়া বাঁচানোর একটা কৌশল। কইলাম, কেন এক রিক্সায় তো আসা যায়। প্রিয় তুলা ভাবী কইলেন, হের লগে আমার সিডিউল মেলে না। হে বৈরাগী মানুষ, কোনো ঠিকঠিকানা নাই কহোন আহে যায়। আমাদের সঙ্গে যোগ দিলেন কথাসাহিত্যিক ঋষি এস্তেবান, কবি শাফি সমুদ্র, শিল্পী চারু পিন্টু। ফেরার পথে দেখা হল দ্রষ্টব্যের পথিকদার সঙ্গে।
তারপর আমরা ইউসুফ ভাই'র নেতৃত্বে নজরুল মঞ্চে হামিমের প্রথম উপন্যাস 'জঠর'-এর মোড়ক উন্মোচনে যোগ দিলাম। বাতাসা খেতে খেতে আমি আর নোমান দ্রুত কেটে পড়লাম। কারণ আমরা যাব সংস্কৃতিবিকাশ কেন্দ্রে। স্বপন ভাইকে শুভেচ্ছা জানাতে। আজিজে আইসা নোমান কইলো খুব ক্ষুধা লাগছে। ভাজাপোড়া দুইথাল খাইলো নোমান, আমি একথাল। পরিবাগের মুখে চা খাবার সময় নোমান আবার কেক খাইলো। বুঝলাম নোমানের পেটে আজ নৌকা ডুবাইলেও কাম হইতো না।
সংস্কৃতিবিকাশ কেন্দ্রে পৌঁছে দেখি অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেছে। মাসুক ভাই (শিল্পী মাসুক হেলাল) যে এত সুন্দর বক্তৃতা করেন, এইটা যারা শুনেন নাই তারা বিশ্বাস করবে না। এরপর আরো সুন্দর সুন্দর কথা বললেন কবি রহমান হেনরী, কবি সঞ্জীব পুরহীত, কবি পারভেজ চৌধুরী। মুগ্ধ করলেন কবি আবু হাসান শাহরিয়ার ভাই, কবি সাদেক ভাই, ও কবি অসীম সাহাদাদা। দাদা ঘোষণা দিলেন যাদের বয়স পঞ্চাশের উপরে তাদের সাথে দাদা আড্ডা মারেন না। সেই হিসাবে আগামী বছর স্বপন ভাই বাদ! কিন্তু স্বপন ভাই যদি বয়স চব্বিশ নিয়ে আসতে পারেন, তাহলে অসীমদার আড্ডা মারতে কোনো সমস্যা নাই।
আমরা অবশ্য স্বপন ভাইয়ের উপর কবি মুজি মেহদী'র গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা মিস করেছি। তার আগের আলোচকদের কথা মিস করেছি। অনুষ্ঠানে দেখা হল বন্ধু কবি আলফ্রেড খোকন, কবি তপন বাগচী, কবি শামীমুল হক শামীম, ন্যান্সী আপু, সোহানা আপু, জিনিয়া ও তানিয়ার সাথে। দেখা হল কবি অমিতাভ পাল, কবি ফিরোজ এহতেশাম, রিয়াজ ভাই সহ অনেকের সাথে। এই সময় আবার বিপুদার ফোন। শিল্পী শাহীনূর রহমান, ডাক্তার কল্লোল চৌধুরী, গল্পকার খোকন কায়সার, কামরুল হাসান মেনন, সত্যজিৎ পোদ্দার বিপুদা এরা বইমেলায়। বললাম, আমি পরীবাগ থেকে শিঘ্র বের হব। শাহবাগ দেখা হবে। পরে আমি গিয়ে সেই আড্ডায় যোগ দিলাম। পরে সেখানে আড্ডায় আরো যোগদিল কবি জাফর আহমেদ রাশেদ, শিল্পী মোবাশ্বির আলম মজুমদার, বন্ধু হুমায়ুন কবির, দোয়েল ও শওকত। রাত সাড়ে দশটা পর্যন্ত আড্ডা শেষে আমরা কল্লোলদার গাড়িতে বাড়ি ফেরা। ফেব্রুয়ারি মাস মানে জমজমাট আড্ডা। পুরো বছর আমরা এই সময়টার জন্য অপেক্ষা করি। আহা জয়তু আড্ডা। জয়তু বন্ধুরা...
...................................
৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬
©somewhere in net ltd.
১| ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৯:৩৬
অগ্নি কল্লোল বলেছেন: সুন্দর লেখা।।