নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

রেজা ঘটক

ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।

রেজা ঘটক › বিস্তারিত পোস্টঃ

অমর একুশে বইমেলার ডায়েরি!!!

০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১২:১৮

গতকাল ছিল অমর একুশে বইমেলার চতুর্থ দিন। বইমেলায় যেতে একটু দেরি হয়েছে। কিন্তু পৌঁছে দেখি বইমেলা বেশ জমে উঠেছে। এ বছর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে একাডেমি থেকে যেভাবে প্রকাশকদের স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল, অনেকেই একাডেমি'র সেই বরাদ্দকৃত জায়গায় স্টল করেননি। সোহারাওয়ার্দী উদ্যানে এবার মেলার জায়গা বেড়েছে। সেই সুযোগে দাপুটে প্রকাশকরা একাডেমি কর্তৃক বরাদ্দ করা জায়গায় স্টল না দিয়ে নিজেদের পছন্দের জায়গায় বাহুবল, অর্থবল, ক্ষমতার অপব্যবহার করে স্টল দিয়েছেন। ফলে বইমেলায় সিরিয়াল অনুযায়ী আপনি কোনো স্টল খুঁজে পাবেন না।

নির্দিষ্ট স্টলটি খুঁজে পেতে যাতে বইপ্রেমীদের সুবিধা হয়, সেজন্য পরসু আমি একাডেমি'র উপ-পরিচালক কবি সরকার আমিনকে আনুষ্ঠানিকভাবে বলেছিলাম, অন্তত প্রতিটি প্রবেশ দ্বারে কিছু মানচিত্র টানিয়ে দিলে এই বিশৃঙ্খলা কিছুটা দূর হবে। আমিন ভাই বললেন, হ্যা আমরাও সেরকম কিছু করার কথা ভাবছি। গতকাল বইমেলায় ঢুকে বহেরাতলায় লিটল ম্যাগাজিন চত্বরে প্রথমেই পেয়ে গেলাম বইমেলার এসব অসঙ্গতি বিষয়ে মনিটরিং করার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে, সাইমুন জাকারিয়া। সাইমুন আমার বন্ধু হওয়ায় অনেকটা ধমকের সুরেই এই বিশৃঙ্খলা বিষয়ের নালিশটি করেছি। এখন থেকে যতদিন বইপ্রেমীদের জন্য স্টল খুঁজে পাবার এই বিড়ম্বনা দূর না হবে, ততদিন সাইমুনকে আমি ধমকানোর সুযোগটি কাজে লাগাবো। বন্ধুরা বইমেলার কোনো অসঙ্গতি আপনার চোখে পড়লে সাইমুন জাকারিয়াকে সেসব বলুন। যদি ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, আরো উপর মহলে জানানোর জন্য আমরা তৎপর থাকব। আমাদের প্রাণের বইমেলা সুশৃঙ্খল একটি উৎসব হয়ে উঠুক এটা আমাদের সবারই প্রাণের চাওয়া।

বইমেলায় একজন ছোট্টবন্ধু কাল আমাকে জাদু দেখালো। ছোট্ট এই বন্ধুর হাতে ছিল চার ইঞ্চি লম্বা একচিলতে বই। তার ভেতরে কোনো লেখা নেই। কেবল কার্টুন। এই কার্টুন এঁকেছেন উন্মাদ সম্পাদক আহসান হাবিব। মশা নিয়ে। ছোট্ট বন্ধুটি এত দ্রুত বইটির পাতা উল্টে আমাকে ধাঁধাঁয় আটকে দিল, আমি প্রথম পাঁচবারে কিছুই বুঝলাম না। তারপর সেই বন্ধু'র মা বললেন, একটু ধীরে ধীরে কর, নইলে তোমার আঙ্কেল বুঝবে না। তারপর একটু ধীরে ধীরে পাতা উল্টালো বটে। আমার মন ভরলো না। পরে বইটি হাতে নিয়ে শাহীন ভাই'র কৌশলটি ভালো করে দেখলাম। এককথায় ছোট্টবন্ধুদের জন্য দারুণ এক মাইন্ড গেম এটা। এই তো চাই উন্মাদ শাহীন ভাই!
পরে শাহেদ ভাইকে পেয়ে চা খেতে খেতে আড্ডায় শাহীন ভাই'র এই কেরামতি'র গল্প করলাম। বন্ধুদের জন্য সুখবর হলো- এখন থেকে শাহেদ ভাই রোজ বইমেলায় থাকবে। এবার স্টুডেন্ট ওয়েজ থেকে বের হয়েছে শেখ শাহেদ আলী'র প্রথম বই 'আত্মজীবনী লেখা যায় না'। তারপর বইমেলায় ঘুরে ঘুরে যথারীতি বন্ধুদের সঙ্গে দেখা আর আড্ডায় সময়টা খুব দ্রুতই ফুরিয়ে গেছে। বইমেলা এবার রাত আটটায় বন্ধ হচ্ছে। ফলে অফিস ফেরত বন্ধুদের সঙ্গে প্রায়ই দেখা হচ্ছে বইমেলা শেষে। বাংলা একাডেমি'র যেখানে এবার বইমেলার সময় গত বছরের রাত নয়টা থেকে বাড়িয়ে ১০টা করা উচিত ছিল, সেখানে তারা বইমেলার সময়কে ছেটে আরো ছোট করেছেন। এই যে একঘণ্টা এবার বইমেলার সময় কর্তন করা হল, এটা মৌলবাদীদের রক্তচক্ষুর কাছে আয়োজকদের নত হওয়ার একটি বাস্তব উদাহরণ।

সবচেয়ে মজার বিষয় হল, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এত ঢাকঢোল পিটিয়ে ঘোষণা করেছিল যে, এবার বইমেলায় চার স্তরের নিরাপত্তা থাকবে। ২৫০টি ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা (সিসিটিভি) বসানো হবে। বাস্তবে সেই নিরাপত্তায় বড় ধরনের গোজামিল চোখে পড়েছে। প্রকাশক-লেখকদের জন্যও বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছিল। সন্দেহভাজনদের গতিবিধি নজরদারি করতে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ঘিরে যে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা (সিসিটিভি) বসানো হয়েছে, তাতে বড় ধরনের ত্রুটি ধরা পড়েছে। এখন পর্যন্ত স্থাপিত ১১৩টি সিসিটিভি ক্যামেরার মধ্যে অন্তত ২০টি পুরোপুরি অকেজো। আবার অনেক ক্যামেরার ধারণকৃত ফুটেজের মানও খুব খারাপ। এসব সিসিটিভিতে ধারণকৃত ফুটেজ স্পষ্টভাবে দেখাও সম্ভব নয়। বাংলা একাডেমির তত্ত্বাবধানে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এসব সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হয়েছে।

বইমেলার নিরাপত্তায় লাগানো সিসিটিভির ফুটেজের অস্পষ্টতা ও অপর্যাপ্ততার কথা উল্লেখ করে বুধবার রাতে শাহবাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছে পুলিশ। সেখানে বলা হয়েছে, বইমেলা উপলক্ষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাতি লাগানোর সিদ্ধান্ত ছিল। মেলার তিন দিন পার হলেও এখন পর্যন্ত একটি বাতিও লাগানো হয়নি। নিরাপত্তা আয়োজনের এমন গাফিলতির কথা নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে জানানো হয়েছে। এ ব্যাপারে পুলিশের রমনা বিভাগের এডিসি জসীম উদ্দিন জানান, বইমেলার নিরাপত্তায় বসানো ২০টি সিসিটিভি নষ্ট। বিষয়টি বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষকে বুধবার মৌখিকভাবে জানানো হয়েছে। শাহবাগ থানার ওসি আবু বকর সিদ্দিক বলেন, সিসিটিভি ক্যামেরার গুরুতর ত্রুটি ধরা পড়ার পর বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একাধিকবার কথা হয়েছে। অধিকাংশ ক্যামেরার ফুটেজ অস্পষ্ট। ভালোমানের ক্যামেরা লাগাতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দুই দিনের সময় নিয়েছে। মেলা শুরুর আগেই পর্যাপ্ত সিসিটিভি লাগানোর কথা থাকলেও দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান তাতে ব্যর্থ হয়। এ ছাড়া এখনো সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এলাকায় বাতি লাগানো হয়নি। এ ব্যাপারে থানায় একটি জিডি হয়েছে।

বাংলা একাডেমির পরিচালক (প্রশাসন) একেএম মুজাহিদুল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, সিসিটিভি ক্যামেরার ব্যাপারে পুলিশের কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আজকালের মধ্যে ক্যামেরা পরীক্ষা করে দেখা হবে। চার বছর ধরে 'ইভেন্ট টাচ' নামক প্রতিষ্ঠান থেকে ক্যামেরা নেওয়া হয়। এবারও তাদের কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে। বইমেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ড. জালাল আহমেদ বলেন, বইমেলার নিরাপত্তায় আড়াইশো সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানোর পরিকল্পনা রয়েছে। এখনও সব লাগানো সম্ভব হয়নি। বৃহস্পতিবারের মধ্যে সব ক্যামেরা লাগানো হবে।

গতকাল মেলায় এসেছে কবি আমির খসরু স্বপনের কবিতার বই 'বিড়ালের মত ঘরে ফেরা'। বইটির প্রচ্ছদ করেছেন শিল্পী নির্ঝর নৈঃশব্দ্য। দুই ফর্মা বইটির মূল্য ৫০ টাকা। এছাড়া মেলায় এসেছে কবি মনির ইউসুফের গল্পের বই ‘তীরবিদ্ধ মহাদেশ’ নগুগী ওয়া থিয়াঙ্গোঁ ও নিকানোর পাররা'। বইটির প্রচ্ছদ করেছেন শিল্পী নির্ঝর নৈঃশব্দ্য। দেড় ফর্মা বইটির মূল্য ২০ টাকা। দুটো বই-ই পাওয়া যাচ্ছে লিটল ম্যাগ চত্বরে। অভিনন্দন কবি আমির খসরু স্বপন ও কবি মনির ইউসুফকে। এ লিটল বিট’ পাঠ ও পরাপাঠের বিশ্ব নামে- ‘কবিতার রাজপথ’ একটি সিরিজ প্রকাশনা হাতে নিয়েছে। বাংলাদেশের চিন্তা জগতকে জাতীয় ও আর্ন্তজাতিক চিন্তার সঙ্গে একীভূত করতে, তরুণদের সৃষ্টিশীলতাকে উসকে দিতে, বুদ্ধির মুক্তি ও মুক্তচিন্তার নৈতিক বিস্তৃতি এবং প্রাচ্য- প্রতীচ্যের ভাষিক, সাংস্কৃতিক যুদ্ধ, সাংস্কৃতিক বিনিময় ও আলোকায়নকে আরও বেশি মানুষের কাছাকাছি পৌঁছে দিতেই ‘এ লিটল বিট’ নামে একটি মাটিবর্তী চিন্তার প্রকাশনী আত্মপ্রকাশ করছে এবারের অমর একুশে বইমেলায়। এ সময়ের সৃষ্টিশীল ও চিন্তাশীল তরুণদের এক ফর্মা, দুই ফর্মার মূল্যবান এসব গ্রন্থ ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করছে এবার এ লিটল বিট ‘কবিতার রাজপথ’ সিরিজ।

বইমেলায় গতকালও অনেক বন্ধু'র সঙ্গে দেখা হয়েছে, আড্ডা হয়েছে। বইমেলায় এসেছিলেন আমার বন্ধু শাহীন তার জাপান প্রবাসী কাকাকে নিয়ে। জাপানের শিশুদের জন্য কেমন বই প্রকাশিত হয়, তা নিয়ে মজার মজার বিষয় শুনলাম কাকার কাছে। বইমেলায় দেখা ও আড্ডা হয়েছে কথাসাহিত্যিক ঋষি এস্তেবান, দ্রষ্টব্য সম্পাদক কবি কামরুল হুদা পথিক, শিল্পী চারু পিন্টু, কবি শাফি সমুদ্র, কবি কাজী টিটো, কবি কামরুল ইসলাম, গীতি কবি রুমি রহমান, কবি মানিক মোহাম্মদ রাজ্জাক, কবি চৈতী আহমেদ, মেনন, ফরহাদ, জাহিদ, বাপী, সমুন শামস, সন্দীপ, লক্ষীসহ প্রমুখের সঙ্গে।

আজ শুক্রবার বইমেলা শুরু হবে সকাল ১১টায় চলবে রাত ৮টা পর্যন্ত। এবারের বইমেলার আজ প্রথম ‘শিশু প্রহর’। বেলা ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত পুরো সময়টাই আজ শিশুদের জন্য। মাঝে বিরতি দিয়ে বেলা তিনটায় আবার শুরু হবে বড়দের বইমেলা। আগামীকালও বইমেলা শুরু হবে সকাল ১১টায়। বন্ধুরা দেখা হবে, আড্ডা হবে প্রাণের বইমেলায়।

.......................................
৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬





মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.