নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

রেজা ঘটক

ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।

রেজা ঘটক › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমার স্কুল!!!

১৯ শে জুন, ২০১৬ রাত ২:১৮

ভারতে প্রায় দুইশো বছরের বৃটিশ শাসনামলে ইংরেজ শাসকগণ ভারতীয় উপমহাদেশে শিক্ষা বিস্তারের ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রেখেছিলেন। যদিও ভারতীয় উপমহাদেশে প্রথম আনুষ্ঠানিক স্কুল প্রতিষ্ঠার কৃতিত্ব ডেনিসদের। ১৭১৬ সালে ভারতের দক্ষিণের তামিলনাডু প্রদেশের নাগাপত্তনাম জেলার ট্রাংকুইভার টাউনে (বর্তমান নাম তরঙ্গমবাদি) ডেনিশরা প্রথম স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। স্কুলের নাম ছিল নরমাল স্কুল। ১৬৮৫ সালে ফ্রান্সের রিমস শহরে বিশ্বের সর্বপ্রথম নরমাল স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন সেইন্ট জন ব্যাপ্টিস্ট ডে লা সাল্লে। ফরাসি ভাষায় নরমাল স্কুলকে বলা হতো ইকোলে নরমালে। এখন আমরা যেটাকে বলি টিটার্স ট্রেইনিং ইনস্টিটিউট। পরবর্তী সময়ে প‌্যারিসে উচ্চশিক্ষার জন্য উচ্চতর নরমাল স্কুল বা ইকোলে নরমালে সুপারিয়ারে প্রতিষ্ঠা করা হয়। ইংরেজদের ভারতীয় উপমহাদেশে শিক্ষা বিস্তারের অংশ হিসাবে উইলিয়াম কেরি বোম্বে শহরে ১৮০২ সালে প্রথম নরমাল স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। একইভাবে ১৮৫২ সালে কলকাতায় প্রথম নরমাল স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৮৫৬ সালে হুগলি ও ১৮৫৭ সালে ঢাকায় প্রথম নরমাল স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হয়। ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্কের পাশে সেই প্রথম নরমাল স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। ১৮৬৩ সালে ঢাকার সুত্রাপুরে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল মেয়েদের জন্য একটি নরমাল স্কুল। যেটি অবশ্য পর্যাপ্ত শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের অভাবে ১৮৭২ সালে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। একই সময়ে ঢাকার আর্মানিটোলায় আর্মেনিয়ানসরাও একটি নরমাল স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ১৮৭৪ সালে লেফটেন্যান্ট গভর্নর ক্যম্পবেল গোটা ভারতীয় বঙ্গপ্রদেশে (পশ্চিমবঙ্গ, পূর্ববঙ্গ ও আসাম) মোট ৪৬টি নরমাল স্কুল প্রতিষ্ঠা করার অনুমোদন দিয়েছিলেন।

তখন নরমাল স্কুলে দুই ধরনের কোর্স চালু ছিল। প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষকদের জন্য দুই বছরের কোর্স আর নিম্ন-মাধ্যমিক স্কুলের জন্য তিন বছরের কোর্স। এছাড়া মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষকদের জন্য অত্যন্ত উচ্চমানের শর্ট-টার্ম গুরু ট্রেনিং কোর্স। তখন প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলের কোর্সগুলো ছিল অবিকল ল্যাবরেটরি স্কুলের মত। সেই আমলে নরমাল স্কুল থেকে পাস করা যে কোনো শিক্ষককে বলা হতো পণ্ডিৎ। আর বঙ্গদেশে বৃটিশদের প্রতিষ্ঠিত এসব নরমাল স্কুলকে বলা হতো গুরু ট্রেইনিং স্কুল। ঊনবিংশ শতকের প্রথম দশকের দিকে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের পিরোজপুর মহাকুমার নাজিরপুর থানার দীঘিরজান গ্রামের শ্রী রূপচান হালদারের পুত্র শ্রী ঈশান চন্দ্র হালদার ছিলেন তৎকালীন ঢাকার গুরু ট্রেনিং স্কুলের একজন স্বনামধন্য শিক্ষক। তখন তিনি মাসিক এক টাকা পঁচিশ পয়সা বেতন পেতেন। ওই সময়ে লর্ড কার্জন ঢাকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। শ্রী ঈশান চন্দ্র হালদার তখন ঢাকায় গুরু ট্রেনিং স্কুলের শিক্ষক থাকার কারণে ইংরেজদের শিক্ষা বিস্তারের কর্মসূচি সম্পর্কে খুব ভালোভাবে অবগত ছিলেন। যে কারণে শিক্ষা নিয়ে নিজের স্বপ্নকে বাস্তবায়নের জন্য তিনি নিজের এলাকা দীঘিরজান গ্রামে একটি ইংলিশ স্কুল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন। দীঘিরজান গ্রামে বাবা রূপচান হালদারের বাড়ির সামনে খালপাড়ে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন দীঘিরজান ইংলিশ মিডল স্কুল (ই.এম. স্কুল)। তৎকালীন সময়ে রূপচান হালদারের খালপাড়ে শ্রী ঈশান চন্দ্র হালদার প্রতিষ্ঠিত এই দীঘিরজান ইংলিশ মিডল স্কুল (ই.এম. স্কুল) ছিল গোটা পিরোজপুর মহাকুমায় প্রথম দিকে প্রতিষ্ঠিত ইংলিশ মিডল স্কুলগুলোর মধ্যে অন্যতম।

১৯২১ সালে শ্রী ঈশান চন্দ্র হালদার প্রতিষ্ঠিত ইংলিশ মিডল স্কুলে পরবর্তী সময়ে সপ্তম শ্রেণী চালু করে এই ইংলিশ মিডল স্কুলকে ইংলিশ হাই স্কুলে রূপান্তর করা হয়। তখন এই স্কুলের নতুন নামকরণ করা হয় দীঘিরজান ইংলিশ হাই স্কুল। তখনকার দিনে ইংলিশ হাই স্কুলগুলো ছিল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে। পুরোপুরি হাই স্কুল করার জন্য তখন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সরাসরি অনুমোদন প্রয়োজন হতো। তখন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ছিলেন স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়। দীঘিরজান গ্রামের শ্রী সনাতন মজুমদারের পুত্র শ্রী প্রহ্লাদ চন্দ্র মজুমদার দীঘিরজান ইংলিশ মিডল স্কুলে (ই.এম. স্কুল) ক্লাস সিক্স পর্যন্ত পড়াশুনা করেন। কাছাকাছি কোথাও ইংলিশ হাই স্কুল না থাকায় তিনি তখন বানড়ীপাড়া ইংলিশ হাই স্কুলে সপ্তম শ্রেণীতে ভর্তি হন এবং দশম শ্রেণী পর্যন্ত সেখানে পড়াশুনা করেন। দীঘিরজান ইংলিশ হাই স্কুলের অনুমোদন পাবার জন্য ১৯২৩ সালে দীঘিরজান ইংলিশ মিডল স্কুলের প্রধান শিক্ষক শ্রী যতীন্দ্র নাথ বিশ্বাস, একই স্কুলের শিক্ষক শ্রী ললিত কান্তি বলকে সঙ্গে নিয়ে শ্রী প্রহ্লাদ চন্দ্র মজুমদার কলকাতায় গমন করেন। ভাইস চ্যান্সেলর স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় তখন রোগশয্যায় হাসপাতালে ভর্তি। কলকাতা সিটি কলেজের অধ্যক্ষ শ্রী হিরম্ব মিত্রকে তখন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত ভাইস চ্যান্সেলর নিযুক্ত করা হয়েছে। শ্রী প্রহ্লাদ চন্দ্র মজুমদারের নেতৃত্বাধীন দলকে হাসপাতাল থেকে স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় একটি চিঠি লিখে ভারপ্রাপ্ত ভাইস চ্যান্সেলর শ্রী হিরম্ব মিত্র'র কাছে পাঠান। ওই চিঠিতে ভাইস চ্যান্সেলর দীঘিরজান ইংলিশ মিডল স্কুলকে দীঘিরজান ইংলিশ হাই স্কুল করার পরামর্শ দেন। ভাইস চ্যান্সেলরের কাছ থেকে চিঠি পেয়ে ভারপ্রাপ্ত ভাইস চ্যান্সেলর শ্রী হিরম্ব মিত্র তখন তৎকালীন বাকেরগঞ্জ ও বরিশাল জেলার সমন্বয়ে গঠিত শিক্ষা অঞ্চলের পরিদর্শক সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেনকে টেলিফোন করেন।

পরবর্তী সময়ে সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন বেশ কয়েকবার দীঘিরজান ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল পরিদর্শন করেন এবং সরকারি নিয়ম অনুযায়ী হাই স্কুলের অনুমোদন পাবার জন্য কিছু প্রয়োজনীয় শর্ত আরোপ করেন। সেই শর্তগুলো ছিল হাই স্কুল ও স্কুলের খেলার মাঠের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা এবং রিজার্ভ ফান্ডের টাকার যথাযথ ব্যবস্থা করা। ওই সময় দীঘিরজান গ্রামের প্রয়াত রাম চন্দ্র মজুমদারের পুত্র শ্রী প্রসন্ন কুমার মজুমদার হাই স্কুলের জন্য দীঘিরজান বাজার সংলগ্ন জমি দান করেন। আর চালিতাবাড়ি গ্রামের জনাব মোহাম্মদ রসুলের পুত্র জনাব বাবর আলী প্রয়োজনীয় ফান্ডের টাকা প্রদান করেন। ইংলিশ হাই স্কুল প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজনীয় সকল শর্ত পূরণের পর ১৯২৪ সালের ১৮ ডিসেম্বর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় দীঘিরজান ইংলিশ হাই স্কুলকে প্রাথমিকভাবে এক বছরের জন্য সাময়িক অনুমোদন প্রদান করা হয়। যা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় স্বারক নং ৩৩। আনুষ্ঠানিকভাবে হাই স্কুলের অনুমোদন পাবার পর শ্রী ঈশান চন্দ্র হালদার প্রতিষ্ঠিত দীঘিরজান ইংলিশ মিডল স্কুল রূপচান হালদারের খালপাড় থেকে দীঘিরজান ইংলিশ হাই স্কুল নামে বাজারের কাছে নতুন জায়গায় স্থানান্তিরত হয়।

দীঘিরজান ইংলিশ হাই স্কুল প্রতিষ্ঠার পেছনে যাদের অবদান চির স্মরণীয় সেই সকল স্বপ্নদ্রষ্টা শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিগণ হলেন শ্রী ইশান চন্দ্র হালদার, শ্রী প্রহ্লাদ চন্দ্র মজুমদার, জনাব বাবর আলী, প্রধান শিক্ষক শ্রী যতীন্দ্র নাথ বিশ্বাস, শিক্ষক শ্রী ললিত কান্তি বল, জনাব আবদুল কাদের হাওলাদার প্রমুখ। দীঘিরজান ইংলিশ হাই স্কুল প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে পিরোজপুর মহাকুমার সাব ডিভিশনাল অফিসার (এসডিও) ছিলেন জনাব বাহাদুর। তিনি পদাধিকার বলে তখন স্কুল কমিটির সভাপতি নিযুক্ত হন। স্কুল কমিটির প্রথম সেক্রেটারি নিযুক্ত হন দীঘিরজান গ্রামের নসাই হালদারের পুত্র শ্রী চন্ডিচরণ হালদার। পরবর্তী সময়ে ১৯২৬ থেকে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত একটানা ২৭ বছর স্কুল কমিটির সেক্রেটারির দায়িত্ব পালন করেন শ্রী প্রহ্লাদ চন্দ্র মজুমদার। ১৯৮০ থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত আমি দীঘিরজান মাধ্যমিক স্কুলে পড়াশুনা করার সুযোগ পেয়েছি। তখন আমাদের প্রধান শিক্ষক ছিলেন রুহিনী কুমার মজুমদারের পুত্র শ্রী মণীন্দ্র নাথ মজুমদার এবং প্রিয় শিক্ষক ছিলেন শ্রী প্রহ্লাদ চন্দ্র মজুমদারের পুত্র শ্রী অনন্ত কুমার মজুমদার। সম্পর্কে মণীন্দ্র স্যার ও অনন্ত স্যার কাজিন। ওই সময় আমার ক্লাস ফ্রেন্ড ছিল প্রাণেশ কুমার হালদার ও প্রদীপ কুমার মজুমদার (খোকন)। প্রাণেশ হলো শ্রী ঈশান চন্দ্র হালদারের নাতী। আর খোকন হলো শ্রী প্রহ্লাদ চন্দ্র মজুমদারের নাতী।


............................................. চলবে........................................
১৯ জুন ২০১৬

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.