নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

রেজা ঘটক

ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।

রেজা ঘটক › বিস্তারিত পোস্টঃ

আজ শ্বেত ভাল্লুকের জন্মদিন !!!

২৩ শে জুন, ২০১৬ রাত ৯:১৬

কবি সমুদ্র গুপ্ত আমাকে দেখলেই ভাল্লুকের মত ভয় দেখাতেন। আর সুউচ্চ অট্টহাসিতে হৃদয় নিড়ানো ভালোবাসায় বলতেন, তুই একটা কালা ভাল্লুক। যে কারণে আমি কবিকে ডাকতাম শাদা ভাল্লুক। একদিন আজিজে গল্পে গল্পে বললেন, তুই তো আমার মামুর দেশের ভাল্লুক রে। আজ থেকে তুই আমার মামু। সেই থেকে কবি সমুদ্র গুপ্ত আমার ভাগ্নে! সমুদ্র গুপ্ত তাঁর ছদ্ম নাম। আসল নাম আব্দুল মান্নান বাদশা। আজ কবি সমুদ্র গুপ্ত'র ৭৩তম জন্মদিন। ২০০৮ সালের ১৯ জুলাই কবি ভারতের ব্যাঙ্গালুরু'র নারায়ণী হৃদয়লয়া হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

কবি সমুদ্র গুপ্ত'র কোনো সুনির্দিষ্ট পেশা ছিল না। জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে তিনি কখনো ছিলেন প্রেসের কমর্চারী, কখনো ছিলেন করাতকলের ম্যানেজার, কখনো ছিলেন জুটমিলের বদলি শ্রমিক, কখনো ছিলেন উন্নয়ন সংগঠনের নির্বাহী, কখনো বা ওষুধ ও চিকিৎসা ব্যবসা করেছেন, কখনো ছিলেন প্রুফ রিডার, কখনো সাংবাদিকতা করেছেন। আর ষাটের দশক থেকেই তিনি ছিলেন কবি ও একজন পেশাদার লেখক। পত্রিকায় তিনি নিয়মিত কলাম লিখতেন।

সারা জীবনে তাঁর ১৩টি কাব্যগ্রন্থ, ১টি গদ্যগ্রন্থ, একাধিক সম্পাদিত ও অনুবাদগ্রন্থ ছাড়াও অনেক সৃজনশীল লেখা প্রকাশিত হয়েছে। এমনকি কবি সমুদ্র গুপ্তের বহু কবিতা বাংলা ভাষা ছাড়াও হিন্দি, উর্দু, অসমীয়া, নেপালি, সিংহলি, ফরাসি, ইংরেজি, নরওয়েজীয়, চিনা ও জাপানি ভাষায় অনুদিত ও প্রকাশিত হয়েছে। কবি সমুদ্র গুপ্তের প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থগুলো হলো-
১). রোদ ঝলসানো মুখ, ২). স্বপ্নমঙ্গল কাব্য, ৩) এখনো উত্থান আছে, ৪). চোখে চোখ রেখে, ৫). একাকী রৌদ্রের দিকে, ৬). সাত সমুদ্র নদীও বাড়িতে ফেরে, ৭). শেকড়ের শোকে, ৮). ঘাসপাতার ছুরি, ৯). খালি হয়ে গেছে মাথা শুধু ওড়ে, ১০). ছড়িয়ে ছিনিয়ে সেই পথ, ১১). চলো এবার গাছে উঠি, ১২). হাতে হাতে তুলে নিলে এই বাংলার মাটি রক্তে ভিজে যায়, ১৩). তাহলে উঠে দাঁড়াবো না কেন। নিবন্ধ গ্রন্থ: ডিসেম্বরের রচনা (শত্রুতা চিহ্নিতকরণ ও শত্রুতা বিকাশ প্রকল্প)। সম্পাদনা গ্রন্থ: বাংলাদেশে বঙ্কিম।

কবি সমুদ্র গুপ্ত সিরাজগঞ্জ জেলার রায়গঞ্জ থানার হাসিল গ্রামে ১৯৪৬ সালের ২৩ জুন জন্মগ্রহণ করেন। পারিবারিকভাবে দেয়া কবির নাম ছিল আব্দুল মান্নান। বাল্যকালে তিনি অবশ্য বাদশা নামেও পরিচিত ছিলেন। কমিউনিজম চিন্তাচেতনায় উদ্ধুদ্ধ হয়ে নষ্টভ্রষ্ট ঘুণেধরা সমাজব্যবস্থা পরিবর্তনে বিশ্বাসী কবি এক সময় রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে জড়িয়ে পড়েন এবং ষাটের দশকের মাঝামাঝি সময়ে সাহিত্যচর্চা করতে এসে সমুদ্র গুপ্ত ছদ্মনাম ধারণ করেন। তারপর থেকে এই নামেই তিনি সাহিত্য অঙ্গনে পরিচিতি লাভ করেন।

১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে কবি সমুদ্র গুপ্ত ছিলেন একজন সক্রিয় কর্মী। আর একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তিনি সরাসরি রণাঙ্গনে সশস্ত্র নির্ভীক যোদ্ধার দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া দেশের বিভিন্ন জাতীয় সংকটকালে একেবারে সামনে থেকে তিনি একজন নিষ্ঠাবান কর্মীর মতো সর্বদা দায়িত্ব পালন করতেন। ১৯৯০ সালে স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী তীব্র আন্দোলনে গণতন্ত্রের জন্য তিনি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। নব্বইয়ের আন্দোলনকালে প্রতিষ্ঠিত জাতীয় কবিতা পরিষদের তিনি সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া বিভিন্ন সামাজিক উন্নয়ন সংস্থা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।

সত্তর দশকের শুরুর দিকে কবি সমুদ্র গুপ্ত লেখক শিবিরের হুমায়ুন কবির স্মৃতি পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়া তিনি যশোর সাহিত্য পরিষদ পুরস্কার, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে বিষ্ণু দে পুরস্কার ও ত্রিপুরা রাজ্য সরকার প্রদত্ত ভাষা দিবস পুরস্কার লাভ করেন। কিন্তু আমাদের বাংলা একাডেমি এই কবিকে বাংলা একাডেমি পুরস্কার দেয়নি। অত্যন্ত নির্লোভ ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন কবি সমুদ্র গুপ্ত জীবনে কারো কাছে কখনো হাত পাতেননি। অথচ দীর্ঘ চার দশকেরও বেশি সময় ধরে তিনি শুধু কবিতা লিখে এক চরম জীবন-জীবিকার অনিশ্চয়তায় কাটিয়েছেন। আর ভেতরে ভেতরে শরীরে লালন করেছেন কঠিন দুরারোগ্য ব্যধি।

বাংলা ভাষা সাহিত্যের অন্যতম প্রতিভাবান কবি সমুদ্র গুপ্ত ২০০৮ সালের ১০ মে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রথমে তাঁকে ঢাকার বারডেম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু সেখানে তাঁর রোগের উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা না হওয়ায় পরে কবিকে ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। স্কয়ার হাসপাতালে কবির শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর চিকিৎসা দিয়েও অবস্থার উন্নতি না হওয়ায়, ‘জাতীয় কবিতা পরিষদ’-এর সহযোগিতা ও ব্যবস্থাপনায় কবি সমুদ্র গুপ্তকে ৩ জুলাই ভারতের ব্যাঙ্গালোরে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু উন্নত চিকিৎসাসেবা পাওয়ার পরেও ২০০৮ সালের ১৯ জুলাই, শনিবার বাংলাদেশ সময় সকাল ৮টায় ব্যাঙ্গালুরু'র নারায়ণী হৃদয়লয়া হাসপাতালে কবি সমুদ্র গুপ্ত শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী সোহানা হ্যাপী ও দুই মেয়ে নীল সমুদ্র ও স্বপ্ন সমুদ্র সহ অসংখ্য শুভানুধ্যায়ী রেখে গেছেন। ২০১৪ সালের ২০ জুন কবিপত্নী সোহানা হ্যাপী (৫৪) মারা যান। দীর্ঘদিন থেকে তিনি ব্রেইন টিউমারে ভুগছিলেন।

বাংলা একাডেমি কবি সমুদ্র গুপ্তকে বাংলা একাডেমি পুরস্কার দেয়নি। এমনকি কবি'র রচনাবলী প্রকাশেরও কোনো উদ্যোগ নেয়নি। অথচ কবি এগারো বছর আগে প্রয়াত হয়েছেন। আমাদের প্রকাশকরা ভবিষ্যতে কবি সমুদ্র গুপ্ত রচনাবলী প্রকাশে উদ্যোগী হবেন বলেই আমি এখনো বিশ্বাস করি। এই লেখা শেষ করতে চাই কবি'র লেখা 'মানুষের নিয়ম' কবিতা দিয়ে।

''স্বাধীনতা জিনিসটা অন্যরকম
একেক পরিপ্রেক্ষিতে একেক বিষয়কেন্দ্রে
একেক পরিস্থিতিতে একেক চাহিদাক্ষেত্রে
স্বাধীনতার একেক চেহারা

আজ যা তোমার স্বাধীনতা
একই সাথে অন্যের ক্ষেত্রে বিপরীত
আবার
সহসাই এটির চিত্র ও ভঙ্গি পাল্টে যায়''

...................
২৩ জুন ২০১৯



মন্তব্য ২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে জুন, ২০১৬ রাত ১১:২৬

কালনী নদী বলেছেন: মানুষের নিয়ম

''স্বাধীনতা জিনিসটা অন্যরকম
একেক পরিপ্রেক্ষিতে একেক বিষয়কেন্দ্রে
একেক পরিস্থিতিতে একেক চাহিদাক্ষেত্রে
স্বাধীনতার একেক চেহারা

আজ যা তোমার স্বাধীনতা
একই সাথে অন্যের ক্ষেত্রে বিপরীত
আবার
সহসাই এটির চিত্র ও ভঙ্গি পাল্টে যায়''




কবি সমুদ্র গুপ্ত


মানুষের নিয়ম

''স্বাধীনতা জিনিসটা অন্যরকম
একেক পরিপ্রেক্ষিতে একেক বিষয়কেন্দ্রে
একেক পরিস্থিতিতে একেক চাহিদাক্ষেত্রে
স্বাধীনতার একেক চেহারা

আজ যা তোমার স্বাধীনতা
একই সাথে অন্যের ক্ষেত্রে বিপরীত
আবার
সহসাই এটির চিত্র ও ভঙ্গি পাল্টে যায়''




কবি সমুদ্র গুপ্ত





কবিকে শুভ জন্মদিন আর আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ কবির সাথে আমাদের পরিচয় করিয়ে দেবার জন্য।

২| ২৫ শে জুন, ২০১৬ রাত ৮:৩৭

মিঃ অলিম্পিক বলেছেন: ''স্বাধীনতা জিনিসটা অন্যরকম
একেক পরিপ্রেক্ষিতে একেক বিষয়কেন্দ্রে
একেক পরিস্থিতিতে একেক চাহিদাক্ষেত্রে
স্বাধীনতার একেক চেহারা
আজ যা তোমার স্বাধীনতা
একই সাথে অন্যের ক্ষেত্রে বিপরীত
আবার
সহসাই এটির চিত্র ও ভঙ্গি পাল্টে যায়''

হেব্বী লাগলো ভাউ.....

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.