নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।
শুক্রবার রাতে গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গীদের নিসংশ হামলায় নিহত সাত জাপানির মধ্যে সবচেয়ে বয়স্ক ছিলেন হিরোশি তানাকা। এ বছর ১২ মে তানাকা ৮০তম জন্মদিন পালন করেন। বাংলাদেশের রেলওয়ে নেটওয়ার্ক বাড়ানোর কাজে সহায়তা করতেই জাইকা'র প্রজেক্টে কাজ করতে এসেছিলেন ৮০ বছর বয়সী তানাকা।
একজন ডিভোটেড ক্যাথোলিক হিসাবে নিজের গোটা কর্মজীবনই তিনি কাটিয়েছেন রেলওয়ে ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করে। যে কারণে এই বৃদ্দ বয়সেও তিনি এশীয় দেশগুলোতে রেল যোগাযোগে একজন সহায়তাকারী হিসেবে নিজের দক্ষতার প্রমাণ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তানাকার ২০ বছর ধরে বন্ধু ৭৭ বছর বয়সী আরেক ডিভোডেট ক্যাথোলিক আকিফুজু নাকামারা বলেন, আগের মতো তিনিও জাপানে ফেরত আসবেন ভেবেছিলাম। কিন্তু তা যে এমন ভয়ঙ্কর লজ্জায় পরিণত হবে কে জানতো! দলের জন্য নানান কিছু সংগ্রহ করাই ছিল মূলত তানাকা'র কাজ। তাছাড়া দলে তিনি ছিলেন সবচেয়ে সিনিয়র কনসালট্যান্ট। দিনের কাজ শেষ করার পরপরই হয়তো তিনি আক্রমণের শিকার হয়েছিলেন।
শুক্রবার গুলশানের হলি আর্টিজানে জঙ্গীদের বর্বর হামলায় যে ২০ জন নিহত হয়েছে, তার মধ্যে হিরোশি তানাকা ছিলেন সবচেয়ে বয়স্ক। সবচেয়ে কম বয়স্ক যে জাপানি সেদিন খুন হন তিনি ছিলেন একজন মহিলা। হামলায় নিহত সাত জাপানিদের মধ্যে মাকোতো ওকামুরা, ইউকো সাকাই ও রুই সিমোদাইরা কাজ করতেন টোকিও'র আলমেক কর্পোরেশানে। কোয়ো ওগাসাওয়ারা কাজ করতেন ওসাকা'র কাটাহিরা অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্টারন্যাশনালে, আর হিরোশি তানাকা, নবুহিরো কুরোসাকি ও হিদেকি হাসিমোতো কাজ করতেন টোকিও'র ওরিয়েন্টাল কনসালট্যান্টস গ্লোবালে। নিহত সাত জাপানির পাঁচজন পুরুষ ও দুইজন মহিলা।
বাংলাদেশের রেলওয়ে নেটওয়ার্ক বাড়ানোর কাজে সহায়তা করতে কাজ করছে জাপান উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা জাইকা। জাইকা'র প্রজেক্টে একজন সিনিয়র কনসালট্যান্ট হিসাবে কাজ করতে এসেছিলেন ইয়োকোহামার এই বাসিন্দা তানাকা। এর আগে জাপানের জাতীয় রেলওয়েতে টেকনিশিয়ান হিসেবেও তিনি কাজ করেন। এছাড়া ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া ও মায়ানমারে জাপানের রেলওয়ে টেকনোলজি রপ্তানি করার কাজেও যুক্ত ছিলেন তিনি। একসময় তিনি অ্যাসোসিয়েশন অব জাপানিজ কনসালটিং ইঞ্জিনিয়ার্সের টেকনিক্যাল এক্সচেঞ্জ কমিটির প্রধান ছিলেন। যেটি এখন জাপানের ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কনসালটিং ফার্ম অ্যাসোসিয়েশান নামে পরিচিত।
৩ জুলাই সকালবেলা তানাকা'র স্ত্রী'র কাছে আকিফুজু নাকামারা বন্ধু'র এমন দুঃখজনক মৃত্যুর খবরটি প্রথম শুনতে পান। নাকামারা বলেন, টোকিও'র নোভিচ খ্রিস্টিয়ান্সের এক সভায় বক্তৃতা করতে এসে তানাকা আমাকে বলেছিলেন, আগামীকাল এক মাসের জন্য বাংলাদেশে যাচ্ছি। ওখানে জাপান বাংলাদেশের রেলরোড বানাচ্ছে। জাপানের ওই প্রোজেক্টে আমাকে সেই রেলরোডের খরচ অ্যাসেস করতে হবে। জাপানে থাকাকালীন এতো ব্যস্ততার ভেতরেও তানাকা প্রতি সপ্তাহে নোভিচ খ্রিস্টিয়ান্সে বক্তৃতা করতে আসতেন। মাঝে মাঝে তিনি স্থানীয় জাপানি শিশুদের জন্য বিজ্ঞানের ক্লাশ নিতেন।
তানাকা'র ৭২ বছর বয়সী ভাই তাকাশি বলেন, সাত ভাইবোনের মধ্যে তানাকা সবার বড়। গত ১২ মে ভাইয়ের ৮০তম জন্মদিনে পরিবারের সবাই আমরা একত্র হয়েছিলাম। আর আজকে (৩ জুলাই) তাঁর মৃত্যু সংবাদ শুনে আবার এখানে এসেছি। এটা আমাদের সবার জন্য বড়ই কষ্টের। সেদিন উনি বলেছিলেন, জাইকা'র প্রজেক্টে রেলওয়ের টেকনোলজিতে কাজ করতে বাংলাদেশে যাচ্ছি। এছাড়া স্থানীয় জনসাধারণের জন্য কাজ করার আমার ইচ্ছে আছে। এটা খুবই দুঃখজনক যে ওখানে কাজ করতে গিয়ে এভাবে তিনি সন্ত্রাসী হামলায় মারা গেলেন!
গতকাল জাপানের স্থানীয় সময় সকাল ৬টা ৫০ মিনিটে জাপানের সরকারি বিমানে নিহত সাত জাপানির লাশ জাপানে পৌঁছায়। ৭৪৭ বোয়িং বিমানটি টোকিও'র হানেডা বিমানবন্দরে পৌঁছালে জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা ও বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা নিহতদের কফিন বক্সে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
.......................................
৬ জুলাই ২০১৬
©somewhere in net ltd.