নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।
বিগত সাত বছর ধরে সরকার বাহাদুর ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কথা বলছেন। ডিজিটাল বাংলাদেশের উন্নয়নের যে চিত্র দেখা যায়, তা অনেকটা কাজীর গরুর মত। গোয়ালে নেই কাগজে আছে। অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের কথা যদি আমলে নাও নেই অন্তত স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট দুটি পরিকল্পিতভাবে সাম্প্রতিক থাকার কথা। কিন্তু বাস্তবে এই দুটি মন্ত্রণালয় ওয়েবসাইটের আপডেট বলতে সর্বশেষ মিটিংয়ের ছবি আর টেন্ডার নোটিশের আপডেট বোঝে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েব সাইট আবার পুরোটা বাংলায়। সেখানে অন্যান্য যেসকল অধিদপ্তরের লিংক দেওয়া হয়েছে সেগুলো কেবল ইমেজ আকারে প্রথম পাতাটি প্রদর্শন করে। অর্থ্যাৎ কেউ যদি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাইট থেকে বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর ভিজিট করতে চায়, তার কোনো উপায় নাই। সেখানে বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের একটি ঝড়ে খাওয়া পুরানা ছবি ইমেজ আকারে লাগানো। কেউ যদি বাংলাদেশ পুলিশের ওয়েব সাইট ভিজিট করতে চায়, সেখানেও ওই সাইটের একটি ইমেজ শোভা পায়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েব সাইট দেখে বোঝার উপায় নাই, এই সাইট জনসাধারণের জন্য আসলে কী কী তথ্য দিতে চায়। মানে হলো স্বয়ং মন্ত্রণালয় বোঝেই না তাদের ওয়েব সাইটে কী কী তথ্য কীভাবে পরিকল্পিত উপায়ে থাকার কথা। দুনিয়ার আবর্জনা জড়ো করলে যা হয়, এই সাইটকে আমার তাই মনে হয়েছে। অথচ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েব সাইটের সঙ্গে দেশের বিমানবন্দর, স্থলবন্দর ও নৌবন্দরের লিংক থাকাটা খুব জরুরি ছিল। কেবল বাংলাদেশ পুলিশ নয়, আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত অন্যান্য বাহিনীর লিংক থাকার কথা ছিল। সবচেয়ে টাস্কি খাওয়ার মত যে বিষয়টি সেটি হলো, আপনি যদি কোনো তথ্য দেখতে চান, সেখানে একটি লিংক আসে। তারপর সেই লিংকে ক্লিক করলে আসে একটি পিডিএফ ফাইল। ওয়েব সাইট কী জিনিজ হয়তো এই ন্যূনতম জ্ঞানটি এখনো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হয়ে ওঠেনি। এই জ্ঞানটি থাকলে এটির চেহারা অন্যরকম হতে পারতো।
ওয়েব সাইট বাংলায় হলেও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সচিব মহোদয়ের পরিচয়টি আছে ইংরেজিতে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে বিএসসি অনার্স অবটেইন্ড লিখেছেন পরিচিতিতে। বিএসসি অনার্স কোন সাবজেক্টে সেটি কেন উল্লেখ নেই? সচিবের পরিচিতিতে একটি বায়োডাটা দেওয়া আছে। সেখানে টাইটেল অব পোস্ট হেল্ড অংশটি দেখলেই যে কেউ বুঝবেন, একজন মানুষ নিজের পরিচিতি লিখতে কী কী লেখেন, এই কী তার নমুনা!
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েব সাইটের দশা আরো করুন। যদিও এটি ইংরেজিতে করা হয়েছে। কিন্তু পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাইট কীভাবে ডেভলপ করা উচিত এই ন্যূনতম পরিকল্পনাটি সেখানে নেই। বাংলাদেশ মিশনস অ্যাব্রোড-এ ঢু মারলে আপনি কেবল মিশনটির নাম জানবেন। সেখানে কে আছেন, তারা কী সেবা দিচ্ছেন, কোথায় নালিশ করা যাবে, এসব কিচ্ছু বোঝার উপায় নাই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই ওয়েব সাইট থেকে। আবার ফরেন মিশনস ইন ঢাকা-তে ক্লিক করে আপনি কেবল বিদেশী মিশনগুলোর নাম পাবেন। অথচ সেই সকল বিদেশী মিশনের লিংক এখানে যুক্ত করে দেওয়া যেত।
স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েব সাইট দেখে যেটুকু বঝলাম, ওয়েব সাইট সম্পর্কে এই দুটি মন্ত্রণালয়ের বোধের জায়গাটি এখানো বাঙাল পর্যায়ে রয়ে গেছে। অথচ ডিজিটালের নামে এই দুটি মন্ত্রণালয় সবচেয়ে বেশি দরকারি এবং যুগপোযুগী হওয়ার কথা ছিল। একটা উদাহরণ দিলে বিষয়টি আরো স্পষ্ট বোঝা যাবে। আমাদের বিমানবন্দর, স্থলবন্দর ও নৌবন্দরগুলোতে দুটি ফরম অবশ্যই থাকার কথা। দেশ থেকে যারা বিদেশে যাচ্ছেন, তাদের তথ্য এবং বিদেশ থেকে যারা দেশে আসছেন, তাদের সকল তথ্য সংরক্ষণ করার জন্য। এই ফরম দুটি আবার পাসপোর্ট ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মূল সার্ভারের সঙ্গে যুক্ত থাকার কথা।
এবার মিস্টার করিম যদি ঢাকা বিমানবন্দর থেকে বিমানে কলকাতায় যান, তাহলে মিস্টার করিমের পাসপোর্ট মেশিনে দেবার সঙ্গে সঙ্গে তার পাসপোর্টের সকল তথ্য আসার কথা। মিস্টার করিম যে কলকাতায় যাচ্ছেন, অন্তত এই তথ্যটুকু সেই মূল তথ্যে যোগ করার দায়িত্ব এবার ইমিগ্রান্ট অফিসারের। আবার মিস্টার করিম যখন দেশে ফিরলেন, তখনও সেখানে আপডেট রাখা উচিত যে মিস্টার করিম কলকাতা থেকে দেশে ফিরেছেন। মিস্টার করিমের দেশের বাইরে যাওয়া এবং ফিরে আসার এই তথ্যটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সার্ভারেও সংরক্ষিত থাকা উচিত। যদি মিস্টার করিম কলকাতায় গিয়ে যদি কোনো ক্রাইম করেন, তাহলে চট করেই তার ঘটের সকল খবর পুলিশ এখান থেকে সংগ্রহ করতে পারার কথা।
আবার বিদেশীদের ক্ষেত্রে যারা বাংলাদেশে ঢুকছেন, তাদের জন্য একটা বাধ্যতামূলক ফরম থাকা উচিত, বাংলাদেশে অবস্থানকালে তিনি কোন ঠিকানায় অবস্থান করবেন। সম্ভব হলে কোনো ব্যক্তির যথাযথ রেফারেন্সসহ। যদি পাকিস্তান থেকে মিস্টার খায়ের নামের কেউ বাংলাদেশে আসেন, তার বাংলাদেশে অবস্থান কোথায়, তিনি কী করছেন, সেসকল তথ্য পুলিশের নজরদারির ভেতরে থাকবে। এখন মিস্টার খায়েরকে যদি আপনি বাংলাদেশে ঢোকার সময় তার কোনো তথ্য সংরক্ষণ না করেন, তাহলে তিনি যদি কোনো অপকর্ম করেন এবং বার্মা সীমান্ত দিয়ে পালিয়ে যান, তাকে ধরার জন্য বাংলাদেশ পুলিশ কিছুই করতে পারবে না।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পৃথিবীর যে কোনো দেশের নাগরিক ঢুকলেই তাকে সকল তথ্য দিয়ে ইমিগ্রান্ট অফিসকে তার যথাযথ ব্যাখ্যা দিয়ে তারপরেই ঢোকার সুযোগ হয়। তাহলে প্রশ্ন হলো একই নজরদারি বাংলাদেশ সরকার কেন করবে না? বিশেষ করে পাকিস্তান, ভারত, আফগানিস্তান, তুরস্ক, সৌদি আরব, লিবিয়া, এবং আফ্রিকান দেশের যে সকল নাগরিক বাংলাদেশে প্রবেশ করছে, তাদের তথ্য সংরক্ষণ করাটা এখন সময়ের দাবি। নইলে এসব দেশের নাগরিকরা এখানে এটিএম ভূত থেকে টাকা চুরি, সন্ত্রাসী কর্মকান্ডসহ যা যা করছে, পুলিশ তা টের পেলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাদের ধরতে পারছে না কেন?
বেশি কিছু না, কেবল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েব সাইটগুলো অনুকরণ করেও যদি বাংলাদেশের সরকারি ওয়েব সাইট গুলো ডেভলপ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়, তাহলেই অনেক বিষয় সহজ হয়ে যাবার কথা। অন্তত স্বরাষ্ট্র আর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েব সাইট দুটি হালনাগাদ করাটা খুবই জরুরি। নইলে ডিজিটালের নামে উন্নয়নের জোয়ারে কাজীর গরু গোয়ালে নেই কাগজে আছে, এমন দশাই কেবল দেখতে হবে। এই যে এখন পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে এতজন তরুণ নিখোঁজ! এটা আর বলা লাগতো না। নিজেদের ওয়েব সাইট আপডেট থাকলে, এরা কে কোথায় আছে, পুলিশ এমনিতেই বুঝতে পারতো। চোর ছেড়ে দিয়ে তারপর বুদ্ধি পাকালে চোরের নাগাল পাওয়া যে কঠিন, তা কী আর নতুন করে বলা লাগবে।
.......................................
১১ জুলাই ২০১৬
২| ১২ ই জুলাই, ২০১৬ সকাল ১০:১৬
অপু দ্যা গ্রেট বলেছেন:
আমার কাছে বিষয় টা অতি রঞ্জিত মনে হচ্ছে । সরকার এর দোষ তো আছেই
কিন্তু কথা হচ্ছে তাদের পরিকল্পনায় ঘাটতি আছে ।
সাত বছর অনেক দীর্ঘ একটা সময় তাই তাদের উচিত সব কিছুর ডেভলপমেন্ট এ নজর দেয়া ।
আর সরকারের দিকে আঙ্গুল দেয়া সহজ । নিজের দিকেও দেয়া উচিত ।
©somewhere in net ltd.
১| ১১ ই জুলাই, ২০১৬ বিকাল ৫:২২
বিজন রয় বলেছেন: বিগত সাত বছর ধরে সরকার বাহাদুর ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কথা বলছেন।
গল্পের গরু গাছেই চড়ে।