নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

রেজা ঘটক

ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।

রেজা ঘটক › বিস্তারিত পোস্টঃ

চিটার-বাটপারদের কথা (পর্ব এক) !!!

১২ ই জুলাই, ২০১৬ সকাল ১১:০১

আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, একজন লেখকের জীবনের কোনো অভিজ্ঞতাই ফেলনা না। জীবনের সকল অভিজ্ঞতাই লেখকের জীবনকে আরো সমৃদ্ধ করে। আপনাদের সবার মনে আছে ১৯৯৮ সালের ৪ সেপ্টেম্বর বৃটেনে 'হু ওয়ান্টস টু বি এ মিলিনিয়র' নামে একটি জনপ্রিয় টেলিভিশন রিয়েলেটি শো শুরু হয়েছিল আইটিভিতে। সোনি পিকচারস টেলিভিশনের প্রযোজনায় অনুষ্ঠানটি নির্মাণ করেছিলেন ডেভিড ব্রিগস, মাইক হোয়াইটহিল ও স্টিভেন নাইট। অনুষ্ঠানের উপস্থাপক ছিলেন ক্রিস ট্যারেন্ট। এই টেলিভিশন রিয়েলিটি শো'টি রাতারাতি জনপ্রিয় টেলিভিশন অনুষ্ঠান হওয়ার কারণে পরবর্তী সময়ে অন্তত ১৬০টি দেশে এর আন্তর্জাতিক ভার্সান চালু হয়েছিল। বৃটেনে শুরু হওয়া এই রিয়েলিটি শো ২০১৪ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলেছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই অনুষ্ঠানটি শুরু করেছিল এবিসি টেলিভিশন ১৯৯৯ সালের ১৬ আগস্ট। সেই অনুষ্ঠানের উপস্থাপক ছিলেন রেগিস ফিলবিন। ২৭ জুন ২০০২ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে এই রিয়েলিটি শো প্রচারিত হয়েছিল। অস্ট্রেলিয়ায় এই অনুষ্ঠানটি শুরু হয়েছিল ১৯৯৯ সালের ১৮ এপ্রিল নাইন নেটওয়ার্কের মাধ্যমে। অনুষ্ঠানের উপস্থাপক ছিলেন এডিল ম্যাকগুইরি। ২০০৬ সালের ৩ এপ্রিল পর্যন্ত এটি চলেছিল। এই অনুষ্ঠানটি আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতে শুরু হয়েছিল অমিতাভ বচ্চনের উপস্থানায় 'কৌন বনে গা ক্রোড়পতি' নামে ২০০০ সালের ৩ জুলাই। একই রিয়েলিটি শো'র বাংলাদেশ ভার্সান শুরু করেছিল দেশ টিভি ২০১১ সালের ২৬ মে। অনুষ্ঠানে প্রথম সঞ্চালক হিসাবে নেওয়া হয়েছিল ঢাকা সিটি কর্পোরেশানের (উত্তর) বর্তমান মেয়র আনিসুল হককে। আনিসুল হকের চোখের সমস্যার কারণে পরবর্তী সময়ে এই অনুষ্ঠানের সঞ্চালক হন জনপ্রিয় অভিনেতা আসাদুজ্জামান নূর (বর্তমানে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী ও নীলফামারীর এমপি)। অনুষ্ঠানের আয়োজক ছিল মোবাইল ফোন কোম্পানি রবি।

তো রবি নিবেদিত দেশ টিভি'র 'কে হতে চায় কোটিপতি' অনুষ্ঠানটি কেমন ছিল? অনুষ্ঠানটি কেমন দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছিল তা নিয়ে আমার কোনো বক্তব্য নাই। কিন্তু এই অনুষ্ঠান নির্মাণ পর্বে আয়োজকরা আমার সঙ্গে সোজা বাংলায় সরাসরি চিটারি করেছিল। ভাগ্যিস আমি খুব অল্পতে এদের জালিয়াতি'র মোটিভ বুঝতে পেরে নিজেই নিজেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছিলাম। একদিন দুপুরে আমার এক বন্ধু (নাম বলতে চাই না) ফোন করে বলল, তুই এখন কী কিছু করছিস? জানতে চাইলাম কেন? কোনো কাজ দিবি নাকি? জবাবে বন্ধু বলল, কাজ তো আছে, তুই কী করতে পারবি, তা তুই ঠিক কর। তো এক পর্যায়ে আমাকে বলা হলো তুই বারোটার মধ্যে এফডিসিতে গিয়ে অমুক ভাইয়ের সঙ্গে দেখা কর। উনি তোকে কাজের সবকিছু বুঝিয়ে বলবেন।

তখন পর্যন্ত রবি নিবেদিত 'কে হতে চায় কোটিপতি'র তিন বা চারটা এপিসোড দেশ টিভিতে অনএয়ার হয়েছে বা আরো বেশিও হতে পারে এখন ঠিক মনে নাই। তো আমি সাড়ে এগারোটা নাগাদ এফডিসিতে হাজির হলাম। সেখানে গিয়ে অনেক পরিচিত মুখের সঙ্গে দেখা। বন্ধু গোলাম মোস্তাফা'র সঙ্গে দেখা হতেই একপাশে গিয়ে সিগারেট টানতে টানতে জানতে চাইলাম, তুমি এইখানে কী করো? মোস্তফা বলল, আমি তো ক্যামেরাম্যান হিসাবে কাজ করতেছি। তুই কেন আইছিস ক? কইলাম এই এই বিত্যন্ত। বন্ধু কইল, কাম করতে পারো মাগার টাকা পয়সা পাইবা কিনা আল্লাহ জানে! কইলাম কস কী মোমিন! হ্যাচানি?

আমরা যেখানে দাঁড়িয়ে সিগারেট ফুকছিলাম কিছুক্ষণের মধ্যে সেখানে একটি গাড়ি আসলো। অনুষ্ঠানের সঞ্চালক আসাদুজ্জামান নূর মানে আমাদের প্রিয় নূর ভাই গাড়ি থেকে নামলেন। নূর ভাই তার প্রিয় কুকুরটি কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কয়েক মিনিট আমাদের সঙ্গে আড্ডা দিলেন। নূর ভাই বুঝলেন আমরা সবাই তাঁর জন্য বেকার বসে আছি। তাই নূর ভাই দ্রুত মেকআপ নিতে ভেতরে চলে গেলেন। মোস্তফা বলল, চল আগে লাঞ্চ করেনি। শ্যুটিং শুরু হলে আর খাবার টাইম পাবো না।

এফডিসি'র ক্যান্টিনে সেদিন আমার প্রথম খাওয়া। মোস্তফা আর আমি খাওয়া শেষ করতে করতেই ভেতর থেকে মোস্তফার ডাক পড়ল। আমাকে জিগাইল তুই কী করবি? কইলাম, আমি তো সেই ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করতে চাই। মোস্তফা বলল, বিকাল ছাড়া আসবে না। চল শ্যুটিং দেখবি। চল। তারপর আমরা স্টুডিওতে ঢুকে পড়লাম।

স্টুডিওতে বিশাল সেট। মোস্তফা বলল পুরো সেটআপ ভারত থেকে আনা হয়েছে। কয়েকজন ভারতীয় ক্যামেরাম্যান ও টেকনিসিয়ানের সঙ্গে আমার পরিচয় করিয়ে দিল মোস্তফা। আমরা ক্যামেরা যেদিকে সেদিকে অবস্থান নিলাম। এক সময় নূর ভাই সেটে আসলেন। প্রতিযোগীরা যার যার জন্য বরাদ্দ করা আসনে বসলেন। নূর ভাই নিয়ম কানুন গুলো সবাইকে আবার মনে করিয়ে দিলেন। তারপর শ্যুটিং শুরু হলো। প্রথম দুইটা শট রিহার্সাল হলো। নূর ভাই আবার মেকআপ রুমে গেলেন।

মোস্তফা কইল কীরে দর্শকদের আসনে বসবি না খাঁড়ায়া খাঁড়ায়া দেখবি? বললাম আমি তো যে কোনো সময় বের হবো। দর্শক আসনে বসলে বের হতে ঝামেলা হবে। কারণ ওই এপিসোড শেষ না হওয়া পর্যন্ত দর্শক হিসাবে থাকা লাগবে। মূল সেটের যেখানে কম্পিউটার সেটআপ, তার পাশেই একটা টুলে মোস্তফা আমাকে বসতে বলল। নূর ভাই আবার সেটে আসলেন। শ্যুটিং আবার শুরু হলো। প্রথমে দশ জন থেকে কে আগে হট সিটে নূর ভাই'র সঙ্গে বসবে তার একটা ট্রায়াল হলো। তিনবার রিহার্সাল করার পর ফাইনাল টেক নেওয়া হলো। হট সিটের ভাগ্যবান কে তা আমরা জানলাম। শ্যুটিংয়ে একটু বিরতি। সেই ফাঁকে আমি একটু বাইরে আসলাম। যে ভাইয়ের সঙ্গে আমি দেখা করতে এসেছি, উনি আসলেন কীনা বা কখন আসবেন, সেই খোঁজ নিলাম। আমাকে বলা হলো পাঁচটার দিকে উনি আসবেন। তো কী আর করা আবার শ্যুটিং দেখতে ভেতরে গিয়ে বসলাম।

সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে সেই কাঙ্খিত বড় ভাই আসলেন। আমাকে নিয়ে ছোট্ট একটা রুমে বসলেন। জানতে চাইলেন এই অনুষ্ঠানে আমি কোন বিষয়ে কাজ করতে পারব? বললাম আমি স্ক্রিপ্ট রাইটিংয়ে কাজ করতে পারব। উনি আমাকে বনানী'র একটি ঠিকানা ধরিয়ে দিয়ে বললেন, ওখানে আমাদের অনুষ্ঠানের এডিটিং হচ্ছে। তুমি ওখানে গিয়ে অমুকের সাথে গিয়ে বসো। তোমার কী কী করতে হবে ও তোমাকে বুঝিয়ে দেবে। বললাম বনানী কখন যাবো? জবাবে উনি বললেন, এখনই যাও। আমি মোস্তফাকে একটা এসএমএস করে বললাম, আমি দেখা করেছি। বনানী এডিটিং হাউজে যাচ্ছি।

বনানী এডিটিং হাউজটি গোরস্তানের কাছাকাছি। রাত সাড়ে আটটার দিকে আমি সেখানে পৌঁছালাম। নির্দেশনা অনুযায়ী সেই ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করার পর তিনি বললেন, আজকের শ্যুটিং তো আপনি দেখছেন? এখন আজকের এডিটিং পর্বটা দেখেন। এটা গত পরসু শ্যুট করা। আজকে যেটা অনএয়ার হবে ওটা আমরা এখন ছেড়ে দিচ্ছি। মঙ্গলবার যেটা অনএয়ার হবে, ওটা এখন আপনি দেখেন। এডিটরের পাশে আমরা দু'জন বসলাম। আমার কাজ কী তা সেই ফাঁকে ফাঁকে আমাকে বুঝিয়ে দেওয়া হলো। রাত দশটার দিকে পুরো এপিসোড দেখা শেষে আমি বললাম, বুঝতে পেরেছি আমার কী করতে হবে। আজ বরং আমি যাই। কাল কখন আসব বলেন? সেই ভাই বললেন, আপনি ওস্তাদরে একটা ফোন দেন। ওস্তাদকে ফোন দেওয়ায় উনি ধরলেন না। পরে সেই ভাইয়ের ফোন ধরে বললেন, ও কী কাজ বুঝতে পেরেছে? ওই ভাই বললেন, হ্যা, এতক্ষণ আমার থেকে সব বুঝেছে। ওস্তাদ বললেন, ওর একটা টেস্ট নাও, কেমন পারে তা দেখার জন্য। তারপর সেই ভাই বললেন, ওস্তাদ তো এই কইলেন। আমি বললাম ওকে। তাহলে চলেন শুরু করি। তারপর সেই এপিসোডে রাত সাড়ে এগারোটা পর্যন্ত কাজ করার পর সেই ভাই বললেন, বুঝছি, আপনে পারবেন। কাল সকালে আটটার মধ্যে চলে আসেন। আমি বললাম আটটা? এতো সকালে? দশটায় আসলে হয় না? ভাই বললেন, ঠিক আছে দশটায় আসেন।

পরদিন সকাল দশটায় আমি আবার বনানী সেই এডিটিং হাউজে গেলাম। দুপুর দুইটা পর্যন্ত কাজ করার পর সেই ভাইকে জিজ্ঞেস করলাম, ভাই আমাকে পেমেন্ট দেওয়া হবে কোন সিস্টেমে যদি একটু কইতেন। উনি বললেন এইটা তো ওস্তাদ জানে। ওস্তাদকে ফোন দেন। ওস্তাদকে ফোন দিয়ে জানতে চাইলাম যে আমি তো কাজ শুরু করেছি। তো আমার পেমেন্ট কীভাবে হবে? উনি বললেন তোমাকে ঘণ্টা হিসাবে পেমেন্ট দেব। তোমার কত ঘণ্টা হয়, এটা লিখে রেখো। আর ওকে একটু দাও। আমি ফোন সেই ভাইকে দিলে সেও ওস্তাদের সঙ্গে কথা বললেন। তারপর আমাকে বললেন, সমস্যা নাই। আপনার হিসাব আমাকে রাখতে বলেছে। বললাম, তাহলে লাঞ্চ করতে যাই। বিকালে কখন আসব? ভাই বললেন, আসেন, পাঁচটার মধ্যে আসেন।

বিকাল পাঁচটা থেকে আবার রাত এগারোটা পর্যন্ত কাজ করলাম। পরিদন সকালে দশটা থেকে দুপুর তিনটা। তারপর আবার পাঁচটা থেকে রাত এগারোটা। হিসাব করে দেখলাম দুইদিনে আমার মোট (৪+৬+৫+৬) ২১ ঘণ্টা কাজ হয়েছে। পেমেন্ট পাবো কীনা সেই সন্দেহ থেকে আবার মোস্তফাকে ফোন দিলাম। মোস্তফা বলল, কয়দিন করলি? কইলাম দুইদিন। আরো দুইদিন কর। তারপর একটা পেমেন্ট চা। মোস্তফার পরামর্শ অনুযায়ী তারপর আরো দুইদিন কাজ করলাম। (৪+৬+৪+৬) ২০ ঘণ্টা। মোট ৪১ ঘণ্টা কাজের পর ওস্তাদকে একটা ফোন করলাম। বললাম, ভাইয়া আমাকে কিছু টাকা দেন। খুব দরকার। তাছাড়া আমি কাজটা তো বুঝে গেছি। এখন আর কোনো ঝামেলা হবে না। ওস্তাদ বললেন, আগামীকাল সকাল শিফটে কাজ করো। বিকালে তোমাকে একটা পেমেন্ট দেওয়া হবে। মোস্তফাকে ফোন দিয়ে বললাম, কাল পেমেন্ট দেবার কথা কইছে। মোস্তফা কইল, আগে পেমেন্ট হাতে নে, তারপর কইস! বুঝলাম কিছু একটা ঝামেলা আছে।

ওদিকে রবি'র সাথে বিটিআরসি'র একটা ঝামেলা শুরু হয়েছে। হয়তো প্রোগ্রাম-ই শাটডাউন হয়ে যেতে পারে। ঘটনা কী? একটু খোঁজ নিলাম। ব্যাপার মোটেও সুবিধার না। সারা দেশে প্রতিযোগীদের জন্য রবি এসএমএস চালু করেছিল। একজন প্রতিযোগী যে কিনা এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন করতে চায়, তাকে মিনিমাম ৭টি এসএমএস করতে হবে। এমনটি নিয়ম ছিল। কারো কারো বেলায় ১৪টি এসএমএস। প্রতিটি এমএমএস-এর খরচ ৬ টাকা ৯০ পয়সা। সেখানে ৬ টাকা পাবে রবি। আর ৯০ পয়সা ট্যারিফ পাবে বিটিআরসি। সারা দেশ থেকে মোট ৭ লাখ প্রতিযোগী এই রবি এসএমএস-এ অংশগ্রহন করে। সেখান থেকে বাছাই করে ৬ লাখ ৮৮০ জনকে প্রাথমিক বাছাইয়ে বাদ দিয়ে মাত্র ১২০ জনকে রাখা হয়েছে। এই বাছাই প্রক্রিয়া মোটেও স্বচ্ছ ছিল না। এটা নিয়েই প্রথম বিতর্কের শুরু।

যারা রবি থেকে ফিরতি এসএমএস পেয়েছে তারাই প্রাথমিক বাছাইয়ে টেকার কথা। কিন্তু এসএমএস না পাওয়া অনেকেই এই ১২০ জনের তালিকায় ঠাই পেয়েছে। এই নিয়ে গুলশানের ইমানওয়েলসে এক ধরনের কেওয়াজ। এই কেওয়াজ থেকে বিটিআরসি'র কাছে নানান অভিযোগ যাওয়া শুরু করল রবি'র বিরুদ্ধে। ওদিকে রবি'র কাছে 'কে হতে চায় কোটিপতি' অনুষ্ঠানের বিজ্ঞাপন ও এসএমএস-এর হিসাব নিকাশ চেয়ে বসে বিটিআরসি। বিটিআরসি-কে রবি মোট ৪৯ লাখ টাকা আয়ের একটা হিসাব প্রদান করে। সেখান থেকে ৬ লাখ টাকা ট্যারিফ হিসাবে বিটিআরসিকে পেমেন্ট করে। রবি'র দেওয়া সেই হিসাবে বড় ধরনের গোজামিল ধরা পড়ে।

আসল ব্যাপার হলো একজন প্রতিযোগী মোট ৭ থেকে ১৪টি এসএমএস করেছে রবি-কে। আর রবি বিটিআরসি-কে হিসাব দিয়েছে প্রতি প্রতিযোগী'র জন্য একটি এসএমএস-এর। রবি তাদের সফটওয়্যার এমনভাবে সেট করেছে যেখানে সাত লাখ প্রতিযোগীর সাত লাখ নম্বর থেকে এসএমএস পাঠানো হয়েছে। একজন প্রতিযোগী অন্তত ৭ টি এসএমএস করেছেন। কেউ কেউ ১৪টি এসএমএস করেছেন। কিন্তু রবি সফটওয়্যার একটি নম্বরের বিপরীতে একবার হিট কাউন্ট করেছে। অর্থ্যাৎ একজন প্রতিযোগী থেকে ৭টি এসএমএস বাবদ রবি ৪৮ টাকা ৩০ পয়সা বা ৯৬ টাকা ৬০ পয়সা ইনকাম করলেও সরকারের বিটিআরসি-কে হিসাব দেখিয়েছে মাত্র ৬ টাকা ৯০ পয়সার। রবি'র এই জালিয়াতি নিয়ে অংশগ্রহনকারীদের ব্যাপক বাকচিতের পর বিটিআরসি রবি'র এই অনুষ্টান থেকে আয় নিয়ে সন্দেহ পোষণ করে।

পরদিন সকালে আমি আবার বনানী স্টুডিওতে গেলাম। দেখলাম সবাই ঘুমায়। আমাকে বলল, বিকালে আসেন। বিকালে আমি না গিয়ে ওস্তাদকে ফোন দিলাম। ওস্তাদ বললেন, একটু ঝামেলায় পড়ছি। দুই তিন দিন কাজ বন্ধ থাকবে। তুমি পরসু একটা ফোন দাও। তারপর আমি মোস্তফাকে ফোন দিলাম। মোস্তফা বলল, আমি শটে আছি। তোর সাথে পরে কথা বলি। ঘণ্টা খানেক পর মোস্তফার ফোন রাজশাহী থেকে। বলল, আমি তো একটা নাটকের কাজে রাজশাহী আসছি। ওরা তো টাকা পয়সা দিলো না। আর অনুষ্ঠান মনে হয় আর হবে না। তার দুই দিন পর ওস্তাদকে ফোন দেই, ওপাশ থেকে কেউ আর ফোন রিসিপ করে না। রিব নিবেদিত দেশ টিভি'র 'কে হতে চায় কোটিপতি' অনুষ্ঠানের সেই ৪১ ঘণ্টা শ্রমের মূল্য আমি আজ পর্যন্ত পাইনি। আর ওখানেই 'কে হতে চায় কোটিপতি' অনুষ্ঠানও শেষ। এভাবেই বাংলাদেশের চিটার বাটপাররা বড় হচ্ছে। ফুলে ফেঁপে বড় হচ্ছে। আইনকে এরা থোরাই কেয়ার করে। জনগণকে ধোকা দেওয়া আর জনগণের পকেটের টাকা চুরি করাই এদের একমাত্র টার্গেট। আর নিজেদের শ্রমিকদেরও এভাবে ঠকিয়ে এরা বাংলাদেশে এখনো ব্যবসা করে যাচ্ছে। কেউ জানলো না আমার সেই পাঁচ দিনের ৪১ ঘণ্টার শ্রমের মূল্য কোথায় গেল! আমি একজন বাংলাদেশের নাগরিক। কিন্তু এখানে এই চিটার বাটপারদের ভেতরেই আমাকে বসবাস করতে হচ্ছে, এটাই সবচেয়ে দুঃখের বিষয়।

চিটার বাটপারদের কথা নিয়ে একটা ধারাবাহিক লেখা লিখব। জানি টাকা তো কোনো দিন পাবো না। কিন্তু যারা যারা আমাকে দিয়ে কাজ করিয়ে টাকা দেয়নি, তাদের ইতিহাসটা এখানে ছোট্ট পরিসরে লিখতে চাই। জানি এই লেখার পর আরো হুমকি আসতে পারে। তাই বলে সত্য তো আর ঢেকে রাখা যাবে না। সত্যের জয় না হোক অন্তত মানুষ জানুক কীভাবে চিটার-বাটপাররা মানুষকে ঠকায়। এতে যদি অন্তত একজনও সচেতন হতে পারে ক্ষতি কী!! এই লেখার আরেকটি উদ্দেশ্য হলো, যারা আমার সঙ্গে চিটারি করেছে, তাদের মুখোশ উন্মোচন করা। চিটার বাটপার নিপাত যাক। মানুষের ভেতরে সততা স্থাপিত হোক।

.........................................
১২ জুলাই ২০১৬

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই জুলাই, ২০১৬ সকাল ১১:১৭

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: চিট বাটপাড়ে সারা দেশ ভরে গেছে। অপারেটর কোম্পানি গুলো তো মহাচোর।

২| ১২ ই জুলাই, ২০১৬ সকাল ১১:২৯

নয়ন বিন বাহার বলেছেন: ভাইরে, এত দু:খ কোথায় রাখবেন?
মনে হয় বেশিরভাগ ক্ষেত্রই যেন মানুষ ঠকানোর ব্যবসা খুলে বসেছে।
কি যে হবে.....................

৩| ১২ ই জুলাই, ২০১৬ সকাল ১১:৩২

শাহরিয়ার কবীর বলেছেন: যে যত লোক ঠকাবে, সে তত বড় ....... X((

৪| ১২ ই জুলাই, ২০১৬ রাত ৯:১১

বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: সাধারণ একটা প্রশ্নের জন্য উত্তরদাতা আর আসাদুজ্জামান নূর যে ভাব নিত তাতেই বোঝা যেত পুরো অনুষ্ঠানটা লোক দেখানো। আর বাংলাদেশের মোবাইল অপারেটরের ব্যবসা তাও আবার স্বচ্ছতা! হাহাহা...

৫| ২০ শে জুলাই, ২০১৬ বিকাল ৪:৪৩

তাহ্ফীর সাকিন বলেছেন: হু.. সব মুখোশ পড়া !

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.