নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

রেজা ঘটক

ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।

রেজা ঘটক › বিস্তারিত পোস্টঃ

খেলোয়াড়দের ডোপিং, নাটকীয় পারফর্মামেন্স ও নিষেধাজ্ঞা!!

০৩ রা আগস্ট, ২০১৬ বিকাল ৪:৩১

রক্তে লোহিত কণিকার সংখ্যা বাড়াতে পারলে শরীরে বেশি শক্তি অনুভূত হয়। কোনো খেলোয়াড় যদি কৃত্তিম উপায়ে নিজের শরীরের রক্তে লোহিত কণিকার সংখ্যা বাড়িয়ে বেশি শক্তি ধারণ করে কোনো প্রতিযোগিতামূলক খেলায় অংশগ্রহণ করে, তাহলে সেটা থেকে স্বাভাবিক পারদর্শীতা বোঝা যায় না। যে কারণে কৃত্তিমভাবে কেউ যদি এটা করে সেটাকে বলা হয় ডোপিং। ডোপিং নিয়ে যে কোনো খেলাধুলায় অংশগ্রহণ করা আন্তর্জাতিকভাবে নিষিদ্ধ। আন্তর্জাতিক ডোপিংবিরোধী সংস্থা (ওয়ার্ল্ড এন্টি-ডোপিং এজেন্সির বা ওয়াডা) প্রবর্তিত ডোপ টেস্ট যে কোনো আন্তর্জাতিক খেলায় খেলোয়াড়দের জন্য প্রযোজ্য।

প্রাচীনকালে গাধার খুর কিংবা ভেড়ার অণ্ডকোষ সেবন করে নিজেদের শৌর্যশক্তি বাড়াতে সব রকম চেষ্টাই করতেন প্রাচীন অ্যাথলেটরা। অনেকে আবার বানরের গ্রন্থির নির্যাস নিয়ে শরীরের শক্তি বৃদ্ধি করতেন। আধুনিককালে এখন আর গাধার খুর বা ভেড়ার অণ্ডকোষ বা বানরের গ্রন্থির নির্যাস কেউ নেন না। এখন নানান কিসিমের ট্যাবলেট, ক্যাপসুল, সিরাপ, বা ইনজেকশান আবিস্কার হয়েছে। এখন মেলডোনিয়াম, স্ট্যানোজোলল স্টেরয়েড, এফিড্রিন, ডিউরেটিকসহ নানান কিসিমের স্টেরয়েড আবিস্কার হয়েছে। এগুলো সেবন করলে রক্তে লোহিত কণিকার সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পায়। যা শরীরে কিছু সময়ের জন্য শক্তিবর্ধক হিসেবে কাজ করে।

ডোপিং টেস্টে ডোপ নেওয়ার বিষয়টি ধরা পড়ে অনেক খেলোয়াড় তাদের গড়া কৃতিত্ব ও সম্মান হারিয়েছেন। যেমন টেনিস কোর্টে রূপকথার মত আবির্ভাব রাশিয়ার টেনিস তারকা মারিয়া শারাপোভার। কিন্তু গত বছর জানুয়ারিতে অস্ট্রেলিয়ান ওপেন চলার সময় দেওয়া নমুনায় নিষিদ্ধ ঘোষিত মেলডোনিয়ামের উপস্থিতি পাওয়া গিয়েছিল তার শরীরে। ডোপ নেওয়ার অপরাধে গত মার্চ মাসে যে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা পেয়েছিলেন, সেটাই রূপ নিল দুই বছরে। ডোপ পরীক্ষার তারিখ ২৬ জানুয়ারি থেকে কার্যকর ধরা হবে এই নিষেধাজ্ঞা। শেষ হবে ২০১৮ সালের ২৫ জানুয়ারি।

ল্যান্স আর্মস্ট্রং যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক এই সাইক্লিস্ট নিজেকে নিয়ে গিয়েছিলেন কিংবদন্তির কাতারে। শুধু সাতবার ট্যুর ডি ফ্রান্স জিতেছেন তিনি। এক টিভি অনুষ্ঠানে গিয়ে আর্মস্ট্রং ডোপ নেওয়ার কথা স্বীকার করেন। ২০০০ অলিম্পিকে জেতা ব্রোঞ্জ মেডেলের পাশাপাশি তার সাতটি ট্যুর ডি ফ্রান্সের পদকও কেড়ে নেওয়া হয়। কানাডার বেন জনসন ১৯৮৮ অলিম্পিকে ট্র্যাকে প্রতিদ্বন্দ্বী যুক্তরাষ্ট্রের কার্ল লুইস তো বটেই বিশ্ব রেকর্ডের তালিকায় পেছনে ফেলে দিলেন সবাইকে। সে সময়ের নতুন বিশ্ব রেকর্ড ৯.৭৯ সেকেন্ড টাইমিং গড়লেন ১০০ মিটার স্প্রিন্টে। কিন্তু ৪৮ ঘণ্টা যেতে না যেতেই জানা গেল, এই অতিমানবীয় কীর্তি জনসন গড়েছেন অন্যায়ভাবে। স্ট্যানোজোলল নামের একটি স্টেরয়েড নিয়েছিলেন জনসন।

অনেকেই ভেবেছিল ম্যারাডোনা ফুরিয়ে গেছেন, দেওয়ার আর কিছুই নেই। কিন্তু ১৯৯৪ বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে গ্রিস আর নাইজেরিয়ার বিপক্ষে দুর্দান্ত খেলে দারুণ ভেলকি দেখালেন ডিয়েগো ম্যারাডোনা। ম্যারাডোনা আরও চমক দেখানোর আগেই মাঠের বাইরের আরেক চমকে বিশ্ববাসীর চোখ ছানাবড়া। বুলগেরিয়ার বিপক্ষে ম্যাচের ঠিক ছয় ঘণ্টা আগে টুর্নামেন্ট থেকে বহিষ্কৃত হলেন ম্যারাডোনা। কারণ ডোপ টেস্টে ধরা পড়ল নিষিদ্ধ এফিড্রিন। যে ড্রাগ পারফরম্যান্স বাড়াতে ম্যারাডোনাকে সাহায্য করেছিল। আট বছর আগে যে টুর্নামেন্টে নিজের অমরত্ব নিশ্চিত করেছিলেন, সেটি থেকেই নিতে হলো তাকে কলঙ্কিত বিদায়। ডোচ টেস্টে ধরা পড়ে ২০০৩ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট খেলতে পারেননি অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটার শেন ওয়ার্ন।

ডোপ পাপে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাথলেটিকস যখন জর্জরিত, একের পর এক তারকার পতন হয়ে আকাশটাও যখন শূন্য; সেই সময় ধূমকেতুর মতো তাঁর আবির্ভাব টাইসন গে'র। ২০০৭ বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপে ইতিহাস গড়ে জিতলেন ‘ট্রেবল’। স্প্রিন্টের তিনটি সোনাই উঠল গলায়। উসাইন বোল্টের আবির্ভাবে আড়ালে চলে গেলেন। তবে ফিরেও আসছিলেন দারুণভাবে। ২০১৩ সালের বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপে বোল্টকে শক্ত চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়ার কথা ছিল তার। ঠিক তখনই নিষিদ্ধ ড্রাগের অস্তিত্ব ধরা পড়ে টুর্নামেন্ট থেকেই ছিটকে গেলেন। ২০১২ অলিম্পিকে জেতা রুপার পদকটাও ফিরিয়ে দিতে হলো। গত বছর নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ফিরেছেন। বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ৯ জনের মধ্যে হয়েছেন ষষ্ঠ!

মারিয়ন জোন্সকে বলা হতো স্প্রিন্টের রানি। অনেকের চোখে যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে অলিম্পিকে প্রতিনিধিত্ব করা সেরা নারী অ্যাথলেটও ছিলেন জোন্স। ২০০০ সিডনি অলিম্পিকে ৩টি সোনাসহ জিতেছিলেন পাঁচ পদক। কিন্তু ছয় বছর পরই পতন! সবগুলো পদক কেড়ে নেওয়া হলো। নিষিদ্ধ হলেন আজীবন। এক সময় বিশ্বের সবচেয়ে বেশি আয় করা নারী ক্রীড়াবিদদের একজন ছিলেন জোন্স। সেই জোন্স পড়ে হয়ে গেলেন দেউলিয়া। আদালতের খরচা মেটাতে নিজের তো বটেই, মায়ের বাড়িঘরও বেচে দিতে হলো!

১৯৮৬ সালে এক সাইক্লিস্ট নিজের গতি বাড়াতে হেরোইন ও কোকেনের মিশ্রণ নিয়েছিলেন, কাজ হয়নি, উল্টো দ্রুতগতিতে মৃত্যুবরণ করেছেন। ১৯০৪ অলিম্পিকে ইঁদুরের বিষ ও ব্রান্ডি মিশিয়ে ম্যারাথনে দৌড়েছিলেন টমাস হিক। সোনা জিতেছিলেন ঠিকই, তবে এরপর মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জাও লড়েছেন বেশ কিছুদিন। ১৯৩০ সালে উলভার হ্যাম্পটনের ফুটবলাররা বানরের গ্রন্থির নির্যাস নিয়েছিলেন শক্তি বৃদ্ধির জন্য!

এ বছর ব্রাজিলের রিও ডি জেনেরিও অলিম্পিকের জন্য ডোপিং কেলেঙ্কারিতে রাশিয়ার পুরো অ্যাথলেটিকস দলই নিষিদ্ধ হয়েছে। ফলে কোনো রকম ডোপিংয়ের অভিযোগ না থাকলেও পোল ভল্টের রানি থাকবেন না রিওতে। ইসিনবায়েভা হয়তো সেসব দুর্ভাগার একজন, যাকে সঙ্গীদের পাপের বোঝা বইতে হচ্ছে। কিন্তু এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই, নিজেদের পারফরম্যান্স বাড়ানোর জন্য অ্যাথলেটরা ডোপিং করছেন বহুদিন ধরেই। নিজেকে সেরা প্রমাণের আশায়, এমনকি মৃত্যুর ঝুঁকিও নিতে পিছপা হচ্ছেন না তাঁরা! রাশিয়ার এন্টি-ডোপিং সংস্থার সাবেক প্রধান গ্রিগোনি রডচেনকভ বলেন, দু বছর আগে রাশিয়ার সোচিতে শীতকলীন অলিম্পিকের সময় রাষ্ট্রীয় সহায়তায় ডোপিং প্রতারণা হয়েছে। আগামী মাসে এ্যাথলেটিকসের আন্তর্জাতিক প্রশাসক সংস্থা রাশিয়ার ট্র্যাকএ্যান্ড ফিল্ড প্রতিযোগীদের ওপর আরোপ করা নিষেধাজ্ঞাটি পুনর্বিবেচনা করবে। রাশিয়ায় এ্যাথলেটদের নিষিদ্ধ বলবর্ধক ওষুধ বা 'ডোপ' সেবন নিয়ে যে কেলেংকারি হয়েছে, তা স্বীকার করে নিয়ে দু:খ প্রকাশ করেছেন দেশটির ক্রীড়ামন্ত্রী ভিটালি মুটকো।

.......................................
৩ আগস্ট ২০১৬









মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা আগস্ট, ২০১৬ বিকাল ৫:৫৫

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: এই পোস্টে যেসব ক্রীড়াবিদের কথা লিখেছেন, তাদের বাইরেও অনেক ক্রীড়াবিদ ডোপিং কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে নিজেদের ক্যারিয়ার ধ্বংস করেছেন। এ এক আকর্ষণীয় অথচ নিসিদ্ধ গন্দম ফল।
ধন্যবাদ রেজা ঘটক।

২| ০৭ ই আগস্ট, ২০১৬ ভোর ৫:৪৮

ডঃ এম এ আলী বলেছেন: ধন্যবাদ রেজা ঘটক । ভাল লাগল এ তথ্যপুর্ণ লিখাটি ।
শুভেচ্ছা জানবেন ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.