নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করার পেছনে কেবল সেনাবাহিনীর গুটিকয়েক মধ্যম সারির সেনা কর্মকর্তা-ই জড়িত ছিলেন না। শেখ মুজিবকে হত্যার জন্য দেশী-বিদেশী চক্র অত্যন্ত সুদূরপ্রসারী এক নীলনকশা করেই এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করেছিল।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ পুনরায় ক্ষমতায় আসলে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিলো। ১৯৯৮ সালে ১৫ জনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে নিম্ন আদালত থেকে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায় দেয়া হলেও পরবর্তী সময়ে বিএনপি নেতৃত্বাধীন সরকার এবং সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দীর্ঘ সময় উচ্চ আদালতে আপিলের কার্যক্রম ঝুলে ছিলো। এরপর ২০০৯ সালে ১২ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে উচ্চ আদালত বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার চূড়ান্ত রায় দেয়। ২০১০ সালের ২৮ শে জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় ৫ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়। বাকি দণ্ডপ্রাপ্ত সাত আসামীর ছয় জন এখনো বিভিন্ন দেশে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন আর একজন মারা গেছেন।
বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় কেবল সরাসরি হত্যাকাণ্ড এবং পরিকল্পনায় যারা অংশ নিয়েছিল, দেশের প্রচলিত আইনে অন্যান্য সাধারণ হত্যাকাণ্ডগুলো যেভাবে হয়ে থাকে, সেভাবেই বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়েছে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু হত্যার পেছনে দেশী ও বিদেশী চক্রের যারা নানাভাবে জড়িত ছিল, তাদের ভূমিকা এবং তাদের কর্মকাণ্ডের কোনো বিচার এখনো হয়নি। এমনকি বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায়ে দেশী-বিদেশী এই নীলনকশা প্রণয়নকারী চক্র সম্পর্কে সুস্পষ্ট কোনো ধারণাও দেওয়া হয়নি।
কিন্তু বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পেছনে একটি সুদূরপ্রসারী অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছিলো। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরোধীতাকারী অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক চক্রের যে সুদূরপ্রসারী নীলনকশা ছিলো, সেই নীলনকশার অংশ হিসেবেই বঙ্গবন্ধুকে দেশী-বিদেশী এই চক্র মিলে হত্যার পরিকল্পনা করেছিলো।
তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন ও মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার, মার্কিন সামরিক হেড কোয়ার্টার পেন্টাগন ও মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো ও পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই, সৌদি-রাজ পরিবারসহ আন্তজার্তিক অঙ্গনের অনেকেই বঙ্গবন্ধু হত্যার পেছনে গোপনে কলকাঠি নেড়েছেন। আর তাদের এই গোপন মিশনে যুক্ত হয়েছিলো দেশীয় কুচক্রী মহলসহ কিছু বিপদগামী সেনা অফিসার।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশকে এককভাবে সমর্থন দেওয়ার কারণে প্রেসিডেন্ট নিক্সন তাঁর উপরে ক্ষিপ্ত ছিলেন। যে কারণে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার জন্য ভারতের স্বাধীনতা দিবসকেই সবচেয়ে মোক্ষম সময় হিসেবে বেছে নিয়েছিলো এই খুনীচক্র। এমন কি এই কুচক্রী মহল বঙ্গবন্ধু হত্যায় ভারতকে জড়িয়ে নানা প্রোপাগাণ্ডাও ছড়ানোর চেষ্টা করেছিলো তখন।
কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর দেশী ও বিদেশী এই কুচক্রী মহলের পরিচয় নানাভাবেই ধীরে ধীরে প্রকাশ পেতে শুরু করে। যে কারণে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বিচারের রায়ে কেবল দেশীয় জড়িতদের একটা খণ্ডাংশের চিত্রই প্রকাশ পেয়েছে। গোটা হত্যাকাণ্ডে দেশী ও আন্তর্জাতিক মহলের যারা যেভাবে জড়িত ছিল, সেই অংশটি কার্যত বিচারের রায়ে প্রকাশ পায়নি। এমনকি দেশী-বিদেশী এই কুচক্রের পরিচয় পর্যন্ত এখনো পুরোপুরি আবিস্কৃত হয়নি। তাছাড়া বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পেছনে যে অভ্যন্তীরণ ও আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছিল, সেটি নিয়েও এখন পর্যন্ত কোনো সুনির্দিষ্ট গবেষণা পর্যন্ত হয়নি।
কিন্তু আকারে ইঙ্গিতে বঙ্গবন্ধু হত্যার সঙ্গে কারা কীভাবে জড়িত ছিলেন তা নিয়ে বিচ্ছিন্ন অনেক আলোচনা বা লেখালেখি হয়েছে। কিন্তু সেটাকে মৌলিক গবেষণা হিসাবে এখনো কোনো কাজ হয়নি। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পেছনে সেই সুদূরপ্রসারী নীলনকশার যারা রূপকার ছিলেন, তাদের সুস্পষ্ট পরিচয় এবং ভূমিকা নিয়ে যতদিন সুনির্দিষ্ট গবেষণা না হবে, ততদিন বঙ্গবন্ধুর আসল খুনীদের সেই মুখোশ উন্মোচিত হবে না।
এমন কি বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর খুনী ডালিমদের সঙ্গে বাংলাদেশ বেতারে সেদিন সকালে প্রয়াত কর্নেল তাহেরের উপস্থিতি নিয়েও বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায়ে কিছু বলা হয়নি। অথচ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সকালে বাংলাদেশ বেতারে খুনী ডালিমদের সঙ্গে কর্নেল তাহেরের উপস্থিতি বা তাঁর রাজনৈতিক দল জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল বা জাসদের ভূমিকা নিয়েও কোনো সুনির্দিষ্ট গবেষণা হয়নি। এমন কি খুনী খোন্দকার মোশতাক সরকারকে আনুগত্য প্রকাশকারী ঊর্ধ্বতন সামরিক অফিসারদের ভূমিকা নিয়েও কোনো উচ্চবাচ্য হয়নি!
যে কারণে দেশের প্রচলিত আইনে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার যে চূড়ান্ত রায় হয়েছে এবং দণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে যাদের দণ্ড কার্যকর হয়েছে, তারা ছাড়া বঙ্গবন্ধুকে হত্যার সঙ্গে জড়িত সবচেয়ে বড় অংশটির বিচার বা বিচারের প্রক্রিয়া এখনো কার্যত এগোয়নি। এমন কি বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার দণ্ডপ্রাপ্ত বাকি সাত আসামিকে দেশে ফিরিয়ে এনে দণ্ড কার্যকর করাও এখনো সম্ভব হয়নি। ভবিষ্যতে এই মামলায় দণ্ডপ্রাপ্তদের দেশে ফিরিয়ে এনে দণ্ড কার্যকর করার কোনো লক্ষণ বা অগ্রগতিও এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান নয়।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার সঙ্গে জড়িত দেশী-বিদেশী সকল চক্রের সুস্পষ্ট ভূমিকা নিয়ে সুনির্দিষ্ট গবেষণা বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্বার্থেই করা উচিত। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার নীলনকশার সঙ্গে জড়িতদের দণ্ড দেওয়া সম্ভব না হলেও অন্তত তাদের পরিচয় উন্মোচন হওয়াটা ইতিহাসের দায় বটে। বাংলাদেশের নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের জন্য ইতিহাসের এই কালো অধ্যায়ের সুস্পষ্ট দায় উন্মোচনকে বাংলাদেশ কিছুতেই এড়াতে পারে না।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের হত্যাকাণ্ডের ৪১ বছর পেরিয়ে গেলেও ইতিহাসের এই দায় থেকে বাংলাদেশকে মুক্তি পেতে হলে, ইতিহাসের এই কালো অধ্যায়কে সুস্পষ্টভাবে উন্মোচন ছাড়া আর কোনো বিকল্প নাই। আর স্বাভাবিকভাবেই এই দায় যতটা না রাষ্ট্রের, তারচেয়েও বেশি বাংলাদেশের মানুষের। বাংলাদেশের মানুষকেই বঙ্গবন্ধুকে হত্যার নীলনকশার সঙ্গে জড়িত সকল দেশী-বিদেশী কুচক্রী মহলের ভূমিকা ও কর্মকাণ্ডকে উন্মোচন করে এই দায় থেকে মুক্তি নিতে হবে। নইলে ইতিহাসের কাছে বাংলাদেশের এবং বাংলাদেশের মানুষের এই দায় থেকেই যাবে। আর তা থেকে আমাদের মুক্তি নেই।
খোন্দকার মোশতাকের ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বা দায়মুক্তি অধ্যাদেশ বাতিল করে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার চূড়ান্ত রায় ও দণ্ডপ্রাপ্তদের দণ্ড কার্যকরের মধ্যেই কেবল এই দায় শেষ হয়ে যায় না। বরং ইতিহাসের কাছে বাংলাদেশের এবং বাংলাদেশের মানুষের এই দায়মুক্তি এখনো ঘটেনি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে কোনো দলীয় নির্দিষ্ট গণ্ডির ভেতরে নিয়ে পরিমাপ করলে বাংলাদেশ এই দায় থেকে কখনোই মুক্তি পাবে না। দলমতের ঊর্ধ্বে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বাংলাদেশের স্থপতি ও জাতির জনক হিসেবেই এই দায় মুক্তির অনুসন্ধান করতে হবে।
....................................
১৫ আগস্ট ২০১৬
©somewhere in net ltd.
১| ১৬ ই আগস্ট, ২০১৬ রাত ১:৪৯
চাঁদগাজী বলেছেন:
করতে হবে, অবশ্যই করতে হবে; ৫০০০ বছর পরে করলে চলবে?