নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

রেজা ঘটক

ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।

রেজা ঘটক › বিস্তারিত পোস্টঃ

দেশে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক শিক্ষার দুর্বলতার আড়ালেই জঙ্গিসন্ত্রাসের বিস্তার ঘটছে!!!

১৯ শে আগস্ট, ২০১৬ দুপুর ১:২৯

কেবলমাত্র সুনির্দিষ্ট দিবস ছাড়া দেশের জাতীয় শহীদ মিনার, জাতীয় স্মৃতিসৌধ, বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ, রায়ের বাজর বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধসহ সারা দেশের শহীদ মিনার বা স্মৃতিসৌধ বা মনুমেন্টগুলো অবহেলায় অযত্নে অপাংতেয় থাকে। কেবল ২১ ফেব্রুয়ারি, ২৬ মার্চ, ১৪ ডিসেম্বর আর ১৬ ডিসেম্বর সেখানে আমাদের সকল ত্যাগ-সম্মান-আবেগ বিস্ফোরণের মত ঝড়ে পড়ে। অথচ সারা দেশেই এই মনুমেন্টগুলো বছরের অবশিষ্ট ৩৬৪ দিনও পরম শ্রদ্ধায়, মননে, প্রদর্শনে ও যত্নে থাকার কথা। এই যে বিপরীত চিত্র দেখি, বছরের একদিন একেবারে জীবন উৎসর্গ করে দেবার মত আবেগ-দরদ, সারা বছর তা কোথায় লুকিয়ে থাকে?

আর এটা নিয়ে সরকারেরও তেমন কোনো আগ্রহ নেই! জাতি হিসাবে আমাদেরও কোনো ভাবান্তর নেই। অথচ দেশের প্রতিটি নাগরিকেরই এই বিষয়ে সচেতন হবার কথা ছিল! দেশের প্রায় প্রতিটি মনুমেন্টের টেক-কেয়ার করার জন্য সরকারের লোকবল আছে, জাতীয় বাজেটে বরাদ্দ আছে। কেবল সারা বছর এগুলোর যত্ন নেবার বা সম্মান দেখানোটা আমাদের খাসিলতে নেই! এ কেমন বিপরীত সংস্কৃতির অভ্যাস এখানে!

এসব নিয়ে আমাদের মিডিয়াও তেমন সরব হয় না। অথচ নতুন প্রজন্মের শিশুদের জন্য এসব বিষয়ে সারা বছরই নানান ধরনের খবরাখবর প্রচার করা সম্ভব। আমাদের মিডিয়াগুলো কেবল ইস্যুভিত্তিক খবরের আশায় বেকার দিন কাটায়। কোনো নতুন ঘটনা না ঘটলে তাদের যেন কিচ্ছু করার নেই! অথচ এসব বিষয়ে মিডিয়ার বিশাল ভূমিকা থাকার কথা ছিল, যেখানে মিডিয়া পুরোপুরি ব্যর্থ বা অনাগ্রহ দেখায়। তাহলে প্রশ্ন হলো সামাজিক শিক্ষার জন্য মিডিয়ার যে নিজস্ব একটি রেসপনসিবিলিটি আছে, সেটি তারা কোথায় পালন করছে? কিভাবে পালন করছে?

সরকারের উচিত মিডিয়ার প্রতি এসব বিষয়ে কিছু শর্তারোপ করা। প্রতি সপ্তাহে বা প্রতি মাসে কোনো মিডিয়া যদি সামাজিক শিক্ষায় কোনো অবদান রাখতে ব্যর্থ হয়, তাহলে তাদের জন্য কিছু মাইনাস পয়েন্ট রাখার ব্যবস্থা করা উচিত। আর একটি সীমা পর্যন্ত তা পৌঁছালে সেই মিডিয়াকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা উচিত। সরকারি বিজ্ঞাপন বা সুযোগসুবিধা পাবার বা নেবার বেলায় কিন্তু কোনো মিডিয়া শূন্য পারেসন্টও ছাড় দেয় না। তাহলে তাদের এসব দায়িত্ব এড়ানো নিয়ে প্রশ্ন তোলা বা জবাবদিহিতা হবে না কেন?

আমাদের মিডিয়ায় দেশের কোনো শহীদ মিনার বা কোনো স্মৃতিসৌধ নিয়ে কোনো অবহেলার খবর যদি সারা বছল থাকতো, তখন সরকারও সেখানে খোঁজখবর নিতে আরো বেশি আগ্রহ দেখানোর কথা। সরকারের দায়িত্ব যেখানে অবহেলা বা জবাবদিহিতার আড়ালে থাকে, সেখানেই তো মিডিয়ার সচল থাকার কথা! নইলে মিডিয়াকে কেন আমরা রাষ্ট্রের পঞ্চ ইন্দ্রীয় বলি!

কেবল রাজধানী ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার যেভাবে সারা বছর অবহেলার অযত্নের শিকার, এটা নিয়েই তো সারা বছর নিউজ হবার কথা। সরকারের যতক্ষণ টনক না নড়ে ততক্ষণ মিডিয়ার সেই বিষয়ে লেগে থাকার কথা। কিন্তু আমরা যেন এক আদিখ্যেতা জাতি। সুনির্দিষ্ট দিবস না থাকলে বছরের বাকি দিনগুলোতে আমাদের মনুমেন্টগুলোকে আমরা কেবল অসম্মান দেখাই বা অযত্ন অবহেলা করি। এটা জাতির জন্য বড় লজ্বার! একটি জাতি গঠনে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক শিক্ষার উপর যতক্ষণ সর্বশক্তি নিয়োগ করা না হবে, ততক্ষণ সুবিধাভোগী স্বার্থান্বেসী মহলগুলো বিভিন্ন দিবসের আড়ালে আসলে কেবল উৎসব পালন করবে। তা দিয়ে নতুন প্রজন্মের কোনো শিক্ষা হবে না।

সামাজিক ও সাংস্কৃতিক শিক্ষায় পিছিয়ে থাকা দেশেই ধর্মীয় অন্ধ শক্তিগুলো শেকড় গড়ার সুযোগ পায়। বর্তমানে সারা দেশে ধর্মকে ব্যবহার করে সন্ত্রাসী ও জঙ্গি উত্থানের যে চিত্র দেখা যায়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক শিক্ষার ঘাটতির কারণেই এটি উত্থান হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। কেবল রাজনীতির মাঠ গরম করে এই দানব প্রতিরোধ করা যাবে না। রাষ্ট্রের প্রতিটি যন্ত্রের সঙ্গে দেশের প্রতিটি নাগরিকেরও সেখানে ভূমিকা নিতে হবে। নইলে দানবের এই থাবা কেবল প্রসারিত হবে। সেই প্রসারণ প্রতিরোধে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক শিক্ষাকে যথাযথ গুরুত্ব দিয়েই ভাবতে হবে।

আমাদের সবচেয়ে বড় লজ্বা যে, আমাদের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় একটি অন্ধ ষাড়ের মত এসব কিছুই দেখতে পায় না। আমার তো মনে হয়, আমাদের ধর্ম মন্ত্রণালয় নামে আলাদা কোনো মন্ত্রণালয়ের কোনো প্রয়োজন নাই। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গেই এটি একীভূত হওয়া উচিত। আমাদের ধর্মীয় যে উৎসব ও পার্বনগুলো রয়েছে সেগুলো আমাদের সংস্কৃতির অংশ। আমাদের ক্রীড়া মন্ত্রণালয় আলাদা থাকার কোনো প্রয়োজনীয়তা নাই। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীনেই এটি থাকার কথা।

আমাদের দেশের বয়স ৪৫ বছর। অথচ অলিম্পিকে আমাদের কোনো পদক নাই এই লজ্বা সরকারের যেমন হয় না, দেশের কোনো নাগরিকের মধ্যেও হয় না। অথচ গ্রেনাডা, পোয়েত্রো রিকো, ফিজি, বাহামা, ইথিওপিয়ার মত দেশগুলো অলিম্পিকে পদক জয় করে। আমাদের ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এক ক্রিকেট নিয়েই সারা বছর হৈ চৈ করে এখন! আমাদের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় কেবল কয়েকটি দিবসের ভেতরেই ৪৫ বছর ধরে আটকে আছে। অথচ একজন চৌকশ সংস্কৃতিমন্ত্রী সেখানে ঘোড়ার ঘাস কাটছে সারা বছর! এটা জাতির জন্য লজ্বার। আমাদের ধর্ম মন্ত্রণালয় দুই ঈদে চাঁদ দেখা, হজ্ব ব্যবস্থাপনা, দুর্গাপূজা, খ্রিস্টমাস্ট, বৌদ্ধপূর্ণিমাসহ মাত্র কয়েকটি বিষয় নিয়েই বছর পার করছে! আমাদের ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সারা বছর ঘুমায়। কেবল ক্রিকেট খেলা থাকলে এটার কিছু অস্তিত্ব টের পাওয়া যায়।

এভাবে লেজেগোবরে অবস্থায় জড়িয়ে একটি দেশের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অগ্রসর কিছুতেই হতে পারে না। মনে রাখতে হবে বাংলাদেশের বয়স ৪৫ বছর হয়ে গেছে। এখনো কেবল স্বপ্নের কথা বলে বছর বছর বাজেট পাস করার সুযোগ নাই। ৪৫ বছর অনেক দীর্ঘ সময়। আমাদের রাজনৈতিক শিক্ষার জন্যও সামাজিক-সাংস্কৃতিক শিক্ষার উপর গুরুত্ব দেওয়া ছাড়া আর কোনো বিকল্প নাই। নইলে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের এই যে ক্রমবর্ধমান উত্থান, এটাকে প্রতিরোধ করা যাবে না। কেবল আইন শৃঙ্খলা বাহিনী, আইন-আদালত, কারাগার, ক্রোসফায়ার এগুলো কোনো সমাধান নয়। নজর দিতে হবে শিকড়ে যেখান থেকে এই ব্যাধি ছড়ানোর সুযোগ পাচ্ছে। নইলে একসময় আমও যাবে ছালাও যাবে। তখন আর হায় হায় করেও কোনো কূল পাওয়া যাবে না।

সামাজিক ও সাংস্কৃতিক শিক্ষায় আমাদের মিডিয়ার আরো গুরুত্বপূর্ণ অবদান পালন করতে হবে। আর সেটা করতে হবে দেশের স্বার্থেই। রাজনৈতিক দলগুলোর মত আমাদের মিডিয়াগুলোও যদি নামকাওয়াস্তা দায়সারা দায়িত্ব পালন করে, তাহলে তা দিয়ে জাতির আসলে কোনো লাভ হবে না। বরং আমাদের মিডিয়াগুলোর এখন বিদেশী মিডিয়ার টাকা খেয়ে তাদের হাতে গোপনে খবর পৌঁছে দেবার যে সংস্কৃতি চালু হয়েছে, তা হয়তো ব্যবসা দিচ্ছে, কিন্তু দেশের বারোটা বাজাচ্ছে। আমাদের মিডিয়াকে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক শিক্ষার দায়িত্ব নিতে হবে। নইলে কেবল সরকারের পক্ষেও এই অদ্ভুত উটের পৃষ্ঠের দেশকে এগিয়ে নেওয়ার সুযোগ নাই!

.............................
১৯ আগস্ট ২০১৬

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে আগস্ট, ২০১৬ সকাল ১১:০১

মামুন ইসলাম বলেছেন: চমৎকার ভাবনা । ভালো বলেছেন যদি কাজ হয় ।

২| ২০ শে আগস্ট, ২০১৬ দুপুর ২:৪৪

মোহাম্মদ গোফরান বলেছেন: সম্মাতিত সঞ্চালক

এই পোস্ট কি স্টিকি হওয়ার অযোগ্য। আমি নতুন। কেন নয় একটা জবাব দেন। নতুন দের মন্তব্যের জবাব দেওয়া আপনার দায়িত্ব।


পোস্ট পর্যবেক্ষণ।

৩| ২০ শে আগস্ট, ২০১৬ রাত ১১:২৭

নোমান প্রধান বলেছেন: বাস্তব

৪| ২১ শে আগস্ট, ২০১৬ রাত ১:৪২

সাগর মাঝি বলেছেন: এটা জাতির জন্য বড় লজ্বার! একটি জাতি গঠনে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক শিক্ষার উপর যতক্ষণ সর্বশক্তি নিয়োগ করা না হবে, ততক্ষণ সুবিধাভোগী স্বার্থান্বেসী মহলগুলো বিভিন্ন দিবসের আড়ালে আসলে কেবল উৎসব পালন করবে। তা দিয়ে নতুন প্রজন্মের কোনো শিক্ষা হবে না।

আসুন! আমরা সবাই মিলে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক শিক্ষার উপর জোর দেই।

৫| ২১ শে আগস্ট, ২০১৬ সকাল ৭:৩২

আহসানের ব্লগ বলেছেন: শিরোনামে একমত । বাকি টা বুক মার্ক করে রাখলাম ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.