নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।
বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের চেয়ারম্যান বা সদস্যগণ কী আইনসঙ্গতভাবে পাবলিক মিটিং বা গণসংযোগ করতে পারেন? পারলে কতটুকু করতে পারেন? এ বিষয়ে বন্ধুদের অভিমত কী?
মহামান্য আদালতের বিচারপতিদের যেমন গণমানুষ থেকে বিচ্ছিন্ন থাকার বিধান, মহামান্য বিচারকের প্রদত্ত বিচার যাতে নিরপেক্ষ থাকে বা পক্ষপাতদুষ্ট না হয়, এটাই হয়তো তার কারণ। তেমনি সরকারি কর্ম কমিশনের চেয়ারম্যান বা কমিশনের সদস্যগণেরও পাবলিক মিটিং বা গণসংযোগ মোটেও বিধিসম্মত হতে পারে না। কারণ সেক্ষেত্রে কমিশনের চেয়ারম্যান বা সদস্যগণের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক!
এমনিতে আমাদের সরকারি কর্ম কমিশনের সরকারি চাকুরিতে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় নানান কিসিমের অনিয়ম এখন বিধিসম্মত রূপ নিয়েছে। বিসিএস পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস থেকে শুরু করে সরকার দলীয় কর্মীদের দলীয় পরিচয়ে নিয়োগ, সরকারি কর্ম কমিশনের বিভিন্ন স্তরের দুর্নীতি, বিসিএস প্রশ্নপত্র বিক্রি, বিসিএস পরীক্ষার্থীদের বিশেষ বিশেষ গ্রুপের কাছে অর্থের বিনিময়ে পরীক্ষা হলে পছন্দমত সিট বরাদ্দ দেওয়া, বিসিএস প্রিলিমিনারি টেস্টে অর্থের বিনিময়ে পাস করিয়ে দেওয়া, বিসিএস লিখিত পরীক্ষায় নকল করার সুযোগ দেওয়া, পরীক্ষা কেন্দ্রের বাইরে থেকে উত্তরপত্র তৈরি করা, পরীক্ষা কেন্দ্রে না গিয়ে পরীক্ষার্থীর পরীক্ষায় অংশগ্রহন, পরীক্ষার খাতা অদলবদল, পরীক্ষার খাতায় নম্বর অদলবদল, বিসিএস পরীক্ষার ফলাফলে জালিয়াতি, পরীক্ষায় অকৃতকার্য পরীক্ষার্থীর মেরিট লিস্টে স্থান পাওয়া, বিসিএস ভাইভাতে নানান মাত্রার অনিয়ম, বিসিএস ভাইভাতে সরকার দলীয় লিস্টেড পরীক্ষার্থীদের ভাইভা বোর্ডে তুলনামূলক সহজ প্রশ্ন করা এবং সাধারণ পরীক্ষার্থীদের জন্য জটিল প্রশ্ন করা, সরকার দলীয় লিস্টেড পরীক্ষার্থীদের জন্য কমিশনের চেয়ারম্যান কর্তৃক সকল ভাইভা বোর্ডে গোপন ইনস্ট্রাকশন পাঠানো যাতে লিস্টেড পরীক্ষার্থীদের বেশি নম্বর দেওয়ার অনুরোধ, বিসিএস পরীক্ষার্থীদের রাজনৈতিক বা দলীয় পরিচয় আবিস্কার নিয়ে ভাইভা বোর্ডের নানান মাত্রার প্রচেষ্টা এবং সেই পরিচয়ের ভিত্তিতে নম্বর প্রদান প্রক্রিয়া, ভাইভা বোর্ডের এক্সটার্নালদের কাছে সরকার দলীয় লিস্টেড পরীক্ষার্থীদের পরিচয় সম্পর্কে আগেভাগে পরিচিতি তুলে ধরা, ভাইভা বোর্ডের পরীক্ষার্থীর সঙ্গে রূঢ় ও অপ্রাসঙ্গিক আচরণ করা, অমুসলিম পরীক্ষার্থীদের সম্পর্কে ভাইভাতে রূঢ় বা নিয়ম বহির্ভূত আচরণ করা, বোর্ড কর্তৃক বিশেষ বিশেষ পরীক্ষার্থীকে এক্সট্রা অরডিনারি নম্বর প্রদান করা, বিসিএস পরীক্ষার্থীদের ভাইভা হয়ে যাওয়ার পর পরবর্তী সময়ে বিশেষ বিশেষ পরীক্ষার্থীকে কমিশনে গোপনে ডাকা বা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা, চাকরির নিশ্চয়তা প্রদান করে অর্থের বিনিময়ে কমিশনের বিভিন্ন স্তরের সিন্ডিকেট বা গ্রুপের সক্রিয় কর্মকাণ্ড, পুরো বিসিএস পরীক্ষার জন্য এসব সিন্ডিকেটের অর্থের বিনিময়ে এককালীন চুক্তি বা বিভিন্ন পর্যায়ের চুক্তি, সরকার দলীয় পরীক্ষার্থীর জন্য বিশেষ বিবেচনা, ভুয়া সার্টিফিকেট প্রদান, ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট প্রদান, বিসিএস পরীক্ষার ফরম পূরণের পর পরবর্তী কোনো সময়ে কমিশনে মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট প্রদান, কোটা সিস্টেমে দুর্নীতি, কমিশনের স্টাফদের মানি-মেকিং বিসনেস, পিএসসি-সিন্ডিকেট, তদন্ত রিপোর্ট অপ্রকাশিত থাকা, বিসিএস পরীক্ষার্থীদের বিভিন্ন পর্যায়ের পরীক্ষার নম্বর কমিশনে থেকে গোপনে সরবরাহ করাসহ অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে সরকারি কর্ম কমিশনের বিরুদ্ধে।
আমি নিজে ১৭তম, ১৮তম ও ২০তম বিসিএস পরীক্ষায় তিনবার ভাইভা থেকে প্রত্যাখ্যাত হওয়া একজন প্রাক্তন বিসিএস পরীক্ষার্থী। যে কারণে সরকারি কর্ম কমিশনের যে কোনো ধরনের দুর্নীতি, কর্মকৌশল, কর্মপদ্ধতি ও কর্মপ্রক্রিয়া সম্পর্কে মোটামুটি একটা ধারণা আমার আছে। আমার পরিবারের চাপে বিসিএস ক্যাডার হওয়ার দৌঁড়ে আমার জীবন থেকে যে মূল্যবান ছয়টি বছর পিএসসি কেড়ে নিয়েছে, কেবল সেই অযুহাতে পিএসসি'র যে কোনো ধরনের অনিয়মের বিরুদ্ধে আমার কলম সবসময় সজাগ থাকবে। সর্বশেষ ২০তম বিসিএস পরীক্ষায় যে অনিয়ম করা হয়েছিল, তার বিরুদ্ধে আমরা তখন রাস্তায় প্রতিবাদ করেছিলাম। বাংলাদেশের ইতিহাসে ২০তম বিসিএস পরীক্ষার অনিয়ম একটি কালো ইতিহাস হয়ে আছে। এরপর আমার সরকারি চাকরির বয়স সীমা ফুরিয়ে গেলে (২০তম বিসিএসের পর) আমার বিসিএস মিশন দুর্ভাগ্য নিয়েই শেষ হয়েছিল। কিন্তু সরকারি কর্ম কমিশনের সেই অনিয়ম ধীরে ধীরে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের পর্যায়ে বংশবৃদ্ধি করেছে। যার বিরুদ্ধে আমার কলম সবসময় জেগে আছে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সাথে থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত সরকারি কর্ম কমিশন ২৭টি বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে ২৮টি ক্যাডারে মোট ৪১ হাজার ৪১৩ জনকে বিসিএস ক্যাডার হিসেবে নিয়োগ প্রদান করেছে। বর্তমানে কয়েকটি বিসিএস পরীক্ষা প্রক্রিয়াধীন। সরকারি কর্ম কমিশনের গড়ে একটি বিসিএস পরীক্ষা শেষ করে প্রার্থীদের চাকুরিতে নিয়োগ দিতে ২৪.৭৫ মাস সময় লাগে। বিসিএস, নন-বিসিএস, প্রোমোশনাল এক্সাম, আর বার্ষিক রিপোর্ট তৈরির বাইরে সরকারি কর্ম কমিশনের বাকি সকল কাজ মোটামুটি রুটিন মাফিক। সংবিধান অনুসারে পিএসসি'র চেয়ারম্যান বা সদস্যগণ সাংবিধানিক পদমর্যাদা ভোগ করেন। সাংবিধানিক পদমর্যাদা ভোগকারী কোনো ব্যক্তি নিয়ম অনুযায়ী রাষ্ট্রের অন্য কোনো পদ বা পদবি ভোগ করতে পারেন না। যে কারণেই পিএসসি'র চেয়ারম্যান বা সদস্যগণের পাবলিক মিটিং বা গণসংযোগকে সাধারণ দোষে দুষ্ট হিসেবে ধরা যায়।
বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন বা সরকারি কর্ম কমিশন বা সংক্ষেপে পিএসসি'র চেয়ারম্যান বা সদস্যগণের পাবলিক মিটিংয়ে যাতায়াত, গণসংযোগ, বা বিশেষ বিশেষ নাগরিক শ্রেণির সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ স্থাপনকে মোটেও স্বাভাবিক ভাবে দেখার সুযোগ নাই। যে প্রতিষ্ঠানের কর্মকাণ্ড প্রায় সবসময়ই বিতর্কিত, সেই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যানকে ঘনঘন বিভিন্ন শ্রেণিগোষ্ঠীর মিটিংয়ে উপস্থিত থাকাটা মোটেও সংবিধান সম্মত নয় বলেই আমি মনে করি।
বর্তমান কমিশনের চেয়ারম্যান জনাব ড. মুহাম্মদ সাদিক একজন প্রাক্তন আমলা ও কবি। কেবল কবি পরিচয়ের সূত্র ধরে সাংবিধানিক পদমর্যাদা নিয়ে বিভিন্ন পাবলিক মিটিংয়ে তাঁর যাতায়াত মোটেও সংবিধান সম্মত হতে পারে না। প্রজাতন্ত্রের একটি সাংবিধানিক পদমর্যাদা নিয়ে তাঁর এমন গণসংযোগ মোটেও পক্ষপাতদুষ্টের ঊর্ধ্বে নয়। এমন গণসংযোগের আড়ালে বিভিন্ন দুর্নীতিগ্রস্থ সিন্ডিকেটের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন হওয়ার সুযোগ কিন্তু সেক্ষেত্রে অবারিত!
বিষয়টি একদিকে যেমন দৃষ্টিকটু তেমনি খুব সেনসেটিভ। সরকারি কর্ম কমিশনের চেয়ারম্যান বা সদস্যগণের এভাবে গণসংযোগ থাকাটা মোটেও নিরপেক্ষভাবে দেখার সুযোগও নাই। আশা করি, বর্তমান কমিশনের চেয়ারম্যান জনাব মোহাম্মদ সাদেক বিষয়টিকে তাঁর মেধা ও প্রজ্ঞা অনুযায়ী অত্যন্ত বিচক্ষণতার সঙ্গে মানিয়ে নেবেন। কারণ সাংবিধানিক পদমর্যদার যে কোনো ব্যক্তি প্রথমে সংবিধানের বাধ্যবাধকতা রক্ষার প্রতি প্রতিশ্রুতিশীল। এরপর নিজের অবস্থান ও নিজেকে সৎ, নিরপেক্ষ এবং রোল মডেল হিসেবে প্রদর্শনের দৃষ্টান্ত তো আছেই।
...................................
২৭ আগস্ট ২০১৬
©somewhere in net ltd.
১| ২৭ শে আগস্ট, ২০১৬ রাত ৩:১০
ডঃ এম এ আলী বলেছেন:
যেখানে খুশী সেখানে উনারা কবিতার আসর করতে পারে , আসরে যেতে দু:শ্চিন্তার কোন কারণ নাই , কারণ তাদের বিশেষ কোন ক্ষমতা নাই । তারা সম্পুর্ণভাবে সংস্থাপন মন্ত্রনালয়ের নিয়ন্ত্রনে চলে , তাদের কথায় উঠে বসে চলে । দেখুন ট্রানসপারেনসি ইন্টারন্যাশনালের রিপোর্টের অংশ বিশেষ
Although PSC is an independent Constitutional body, and its independence and autonomy have been guaranteed under provisions made in the Constitution and President’s Orders, as per Schedule I of the Rules of Business (issued in 1975), the Ministry of Establishment solely controls the policy decisions, composition, administration and financial matters of the Commission. The Establishment Division of the ministry interprets and determines the broad scope of functional responsibilities of PSC through issuing various orders, instructions, memoranda, circulars and so forth.31 The functional jurisdiction of the Commission now covers only gazetted Class I and Class II officers belonging to government bodies (Zafarulla and Khan, 2005:103).
সুত্র :http://www.ti-bangladesh.org/research/Full_BPSC_eng.pdf