নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

রেজা ঘটক

ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।

রেজা ঘটক › বিস্তারিত পোস্টঃ

দলকানা বা ইগো সমস্যায় না ভুগে সুন্দরবন রক্ষায় মনোযোগী হন!!!

২৮ শে আগস্ট, ২০১৬ ভোর ৫:৫০

রামপাল কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের বিরোধীতা মোটেও কোনো রাজনৈতিক দলের আন্দোলন নয়। এটা সম্পূর্ণরূপে সুন্দরবন রক্ষার আন্দোলন। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ, যারা মনে প্রাণে বিশ্বাস করেন যে, রামপালে কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প সুন্দরবনের ক্ষতি করবে, ধীরে ধীরে এটি সুন্দরবনের সর্বনাশ ডেকে আনবে, সুন্দরবনের বিভিন্ন জীববৈচিত্রের ভারসাম্য নষ্ট করবে, এটা তাদের আন্দোলন। এটাকে গণহারে বাম রাজনৈতিক দলের আন্দোলন বা তেল-গ্যাস-বন্দর-জাতীয় সম্পদ রক্ষা কমিটির আন্দোলন বা শেষ পর্যায়ে বেগম জিয়া এই আন্দোলনের প্রতি সমর্থন দিয়েছে বলে এটি এখন বিএনপি'র আন্দোলন, এমনটি ভাবার কোনো কারণ নাই। এমন কি এটা বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধেও কোনো আন্দোলন নয়। এটা সুন্দরবন রক্ষা করার জন্য গণসচেতনামূলক আন্দোলন।

আওয়ামী লীগ এবং বর্তমান সরকার যদি মনে করে, যেহেতু সুন্দরবন রক্ষার এই আন্দোলনে বিএনপি সমর্থন দিয়েছে, তার মানে এই আন্দোলনে আগে থেকেই বিএনপি'র মৌন সমর্থন ছিল, এখন রাজনৈতিক ভাবেই এই আন্দোলনকে নস্যাৎ করার জন্য রামপালেই কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে, তাহলে সেটি হবে বাংলাদেশের জন্য একটি বড় ধরনের ভুল রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। 'মা'র চেয়ে মাসীর দরদ বেশি' এই ধরনের কথা বলে সরকার যদি মনে করে কেবল তারাই বাংলাদেশের মা বাকি জনগণ দেশের মাসী, তাহলে সেটাও ভুল অনুমান।

বাংলাদেশের ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের ভেতরে অন্য কোথাও কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প করেন, পরিবেশ ও জীব বৈচিত্রের ক্ষতি না করে অন্য যেখানে খুশি করেন, কিন্তু সুন্দরবনের ক্ষতি হতে পারে বা এই প্রকল্প সুন্দরবন ধ্বংস করতে পারে, কেবল এই আশংকা থাকলেই তো এই প্রকল্প অন্য কোথাও সিফট করা উচিত। অমুকে কেন কইলো, এইবার কইরা ছাড়বো, এমন বক্তব্য কোনো ফল দেবে না। এই প্রকল্প যেহেতু সুন্দরবনের জন্য হুমকি, কেবল সেই বিবেচনায় এটাকে সরিয়ে নেওয়া হবে বুদ্ধিমানের কাজ।

ফুলবাড়ি কয়লা প্রকল্পের সময় ক্ষমতায় ছিল বিএনপি। ফুলবাড়ির স্থানীয় মানুষই সেই আন্দোলন শুরু করেছিল। পরবর্তী সময় সারা দেশের মানুষ সেই আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করেছিল। বিএনপি সরকারের পুলিশ ফুলবাড়ির আন্দোলনকারীদের উপর গুলি ছুড়েছিল। একসময় প্রধান বিরোরধীদল আওয়ামী লীগও সেই আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করেছিল। কিন্তু ফুলবাড়ির আন্দোলন আওয়ামী লীগের আন্দোলন হিসেবে পরিচিতি পায় নাই। তারপর বিএনপি সরকার জনগণের দাবির কাছে নত হতে বাধ্য হয়েছিল। বলতে হবে বিএনপি সরকারের শুভ বুদ্ধির উদয় হয়েছিল। তখন বিএনপি সরকার ফুলবাড়ি আন্দোলনের দাবি মেনে না নিলে আরো ভয়ংকর ঘটনা ঘটত। কিন্তু ফুলবাড়ি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা সম্ভব হতো না।

এবার রামপাল কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের আন্দোলনের সময় ঘটনাচক্রে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়। গোটা দেশের মানুষের প্রাণের দাবি সরকার এই প্রকল্প অন্য কোথাও সরিয়ে নিক। দেশের মানুষের প্রাণের বিট বুঝতে পেরে বিএনপি এই আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করেছে। এখানে দোষের কিছু নাই। কোনো রাজনৈতিক দল সংহতি প্রকাশ করলেই সেই আন্দোলনটি তাদের হয়ে যাবে বা তাদের আন্দোলন হিসেবে পরিচিতি পাবে, এমনটি ভাবারও কোনো কারণ নাই। দেশের একমাত্র ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবন রক্ষার জন্য বাংলাদেশের যে কোনো সুস্থ মস্তিস্কের মানুষ এই আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করতে পারে। তাতে দোষের কিছু নাই। বরং আওয়ামী লীগ ও সরকার যে এটা নিয়ে ঘাড় তেড়া করে এখনো ঘাউরামি করছে, এটাই একটা অশুভ ইঙ্গিত। সরকারের শুভ বুদ্ধির উদয় না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশের মানুষ এই আন্দোলনে হৃদয় দিয়ে সংহতি জানাবে। এটাই হলো বাস্তবতা।

বিএনপি এই আন্দোলন থেকে রাজনৈতিক সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করবে সেই জন্য এর বিরোধীতা করে রামপালেই কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে, সরকারের এমন মনোভাবের মধ্যে রাজনীতি থাকলেও দেশের মঙ্গলের বা কল্যাণের চিন্তা নাই। বাংলাদেশের মানুষ কোনো একটি রাজনৈতিক দলের কাছে নিজেদের সারা জীবন বন্দক দেয় নাই। সরকারের সকল কর্মকাণ্ডকে দেশের মানুষ নিশর্ত সমর্থন দেবে এমনটি ভাবারও কোনো কারণ নাই। ভোটের সময় যে কোনো রাজনৈতিক দলকে ভোট দিয়ে বা সমর্থন দিয়ে ক্ষমতায় বসিয়ে দিলেই সেই দল দেশের একক মালিক হয়ে যায় না। দেশের মালিক সবসময় দেশের সাধারণ মানুষই থাকে। এই ন্যূনতম কমোন সেন্স যদি সরকারের ভেতরে কাজ না করে, তাহলে সুন্দরবনকে সত্যি সত্যি বাঁচানো যাবে না।

কারণ একটি স্বার্থন্বেসী মহলের সুন্দরবনের সম্পদের উপর শকুন চোখ পড়েছে। সুন্দরবনের হাজার কোটি টাকার সম্পদকে এভাবে খোলা আকাশের নিচে রেখে তাদের ঘুম হারাম হচ্ছে। এরাই সরকারকে যত ধরনের তেলমর্দন সম্ভব তাই করে যাচ্ছে। এরাই সুন্দরবন শিল্পাঞ্চলে নিজেদের অবকাশ যাপনের পায়তারা করছে। এই সিন্ডিকেট এমন শক্তিশালী যে সরকারকে তারা ভালোই জাদু করে নিজেদের স্বপ্নকে কৌশলে বাস্তবায়নের কাজে লিপ্ত হয়েছে। যা সরকার আমলে নিতে এখন পর্যন্ত ব্যর্থ হয়েছে।

সুন্দরবনের প্রাকৃতিক সম্পদের কথাও যদি হিসেবে না ধরি, এই বন যে প্রতি বছর বাংলাদেশকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে প্রাকৃতিক ঢাল হিসেবে রক্ষা করছে, ঘূর্ণিঝড়, জ্বলোচ্ছ্বাস, বন্যা, প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রাথমিক ধাক্কা যে সুন্দরবন নিজেই প্রতিরোধ করে বাংলাদেশকে রক্ষা করছে, সুন্দরবনের কেবল এটুকু অবদানের জন্যই আমাদের উচিত এই প্রাকৃতিক ম্যানগ্রোভ সুন্দরবনকে রক্ষা করা। এটা নিয়ে খামাখা রাজনীতিতে জড়িয়ে এটাকে ধ্বংস করা মোটেও মনুষ্য সভ্যতার কাজ হতে পারে না।

ভারতের সঙ্গে রামপাল কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের কেমন বৈষম্যমূলক চুক্তি হয়েছে, সেই চুক্তি কতোটা দেশবিরোধী, সেই আলোচনায় যদি নাও যাই, যে কোনো সুস্থ ব্যক্তি অন্তত এটুকু হিসাব করতে জানে যে, ভারতের এক্সিম ব্যাংক এই প্রকল্পের ৭০ ভাগ খরচ দেবে। বাকি ৩০ ভাগের ১৫ ভাগ বাংলাদেশ ও ১৫ ভাগ ভারত বহন করবে। কিন্তু প্রকল্প থেকে লাভ বা সুবিধা ভোগ করবে উভয় দেশ ৫০ ভাগ করে। কিন্তু ঋণের টাকা পরিশোধ করতে হবে কেবল বাংলাদেশের। আবার এই প্রকল্প থেকে সব ধরনের ঝুঁকিও বহন করবে কেবল বাংলাদেশ। এই চুক্তির কেবল এটুকু বিশ্লেষণ করলেই এটাকে দেশ বিরোধী চুক্তি হিসাবে আখ্যা দেওয়া যায়।

একটি দেশের সরকার কতটা অসহায় হলে এমন একটি বৈষম্যমূলক চুক্তি করতে রাজি হয়! আবার সেই চুক্তি বাস্তবায়ন হলে যেখানে সুন্দরবনের মত আমাদের একটা জাতীয় সম্পদ ধ্বংস হবার আশংকা আছে। সেখানে তেমন একটি চুক্তি করার পেছনে অন্য কোনো সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্র আছে। যা সুন্দরবন রক্ষা আন্দোলন বা বৈষম্যমূলক চুক্তি বা সরকার বনাম বিরোধী দলের কোনো আলোচনায় নেই।
সেই অদৃশ্য ষড়যন্ত্রের আড়ালেই সরকার এখন নিজের নাক কেটে অপরের যাত্রা নষ্ট করার খেলায় মেতে উঠেছে। একটা বিষয় মনে রাখতে হবে, ক্ষমতা কোনো চিরস্থায়ী বিষয় নয়। আজ যে সুপার ডুপার জনপ্রিয়, কাল সে খলনায়ক হতে পারে যে কোনো দেশ বিরোধী কাজের অছিলায়।

আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছে বলে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের মালিক বনে যায় নাই। সুন্দরবন আওয়ামী লীগের একক কোনো সম্পত্তি নয় যে তা নিয়ে তারা যা খুশি তাই করতে পারবে। বাংলাদেশের মানুষ জানে কীভাবে আন্দোলন করতে হয়। কীভাবে আন্দোলন করলে সুপার ক্ষমতাসম্পন্ন সরকারও পিছু হটে, তা বাংলাদেশ জানে, বাংলাদেশের মানুষ জানে। কেউ যদি ইতিহাস থেকে শিক্ষা না নেয়, তাহলে তাদের কেউ রক্ষা করতে পারবে না।

এখন ভারতের জনগণের উচিত তাদের সরকারকে বোঝানো যে রামপাল কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প যদি তারা করতে চায়, বাংলাদেশের মানুষের ভেতরে আরো বেশি ভারত বিদ্বেষী মনোভাব তৈরি হবে। প্রতিবেশি দুইটি দেশের জনগণের মধ্যে এমন বৈরি মনোভাব কখনো শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারে না। ভারত সরকার যদি রামপাল ইস্যু দিয়ে বাংলাদেশে অশান্তি সৃষ্টির পায়তারা করে, সেটিও বাংলাদেশের মানুষের বুঝতে বেশি দেরি হবার কথা নয়। বাংলাদেশের মানুষের হার্টবিট বুঝতে পেরে ভারত সরকারের এখন উচিত এই প্রকল্প থেকে নিজেদের গুটিয়ে নেওয়া বা প্রত্যাহার করা। এটাই হতে পারে প্রতিবেশি দেশের জনগণের প্রতি ভারত সরকারের বন্ধুত্বের নিদর্শন।

আর যদি সেরকম কিছু না হয় এবং আওয়ামী লীগ ও বর্তমান সরকার রামপালেই কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নে সকল শক্তি নিয়োগ করে, তাহলে বুঝতে হবে সরকার নিজেই নিজের পায়ে কুড়াল মারার জন্য প্রতিজ্ঞা করেছে। তাদের পতন ঠেকানোর জন্য বাংলাদেশের মানুষের আন্দোলন করতে হবে না। ভবিষ্যতে ভোটের বাক্সেই তার প্রতিদান পাবে। কারণ পুলিশের গুলির মুখে হয়তো সুন্দরবন রক্ষা আন্দোলন একসময় সরকারের জবরদস্তির কাছে থেমে যাবে, কিন্তু মানুষের মন থেকে দেশের জাতীয় সম্পদ ধ্বংস করার জন্য কেউ হয়তো এই সরকারকে আর ক্ষমা করবে না।

এই সরকারের অনেক ভালো কাজের প্রতি দেশের মানুষের যেমন অকুণ্ঠ সমর্থণ রয়েছে তেমনি তারা যদি অন্যায় কিছু চাপিয়ে দিতে চায়, তার প্রতি বিরোধীতা করার মনোভাবও দেশের মানুষের রয়েছে। ক্ষমতা কোনো চিরস্থায়ী বিষয় নয়, যে জনগণকে উপেক্ষা করে যেন তেন ভাবেই ক্ষমতায় টিকে থাকা যাবে। পৃথিবীর ইতিহাসে কোথাও ক্ষমতার চিরস্থায়ী ব্যাপারটি নাই। অটোমান সাম্রাজ্যও ছয়শো বছরের মাথায় ভেঙে গেছে। পৃথিবীর ইতিহাসে অসংখ্য ডাইনেস্টির পতন ঘটেছে।

আমরা এখনো বিশ্বাস করতে চাই, প্রয়োজনে সরকার দেশের ও বিদেশের বিশেষজ্ঞ নিয়োগ করে রামপাল কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের উপর সমীক্ষা করুক। যাচাই বাছাই করুক। কোনো ধরনের লুকোচুরির আশ্রয় না নিয়ে সকল বৈজ্ঞানিক দিক বিবেচনায় নেবার পরেও জনগণের সমর্থন নেবার বিষয়টি খুবই জরুরি। দেশের জনগণ যদি না চায় সেটি জোর করে সরকারের করার কোনো এখতিয়ার নাই। সরকারের শুভ বুদ্ধির উদয় হোক, সুন্দরবন রক্ষা করার দায়িত্ব দেশের সকল নাগরিকের এমন কি সরকারেরও কর্তব্য। দেশের জনগণকে উপেক্ষা করে সুন্দরবন ধ্বংসের নীলনকশা বাস্তবায়নের যে কোনো ধরনের প্রচেষ্টা হবে আগামী বাংলাদেশের জন্য একটি কলংকের ইতিহাস। এখন সিদ্ধান্ত আপনার। আপনি কলংক করবেন নাকি শুভ বুদ্ধি বিবেচনায় সুন্দরবন রক্ষায় মনস্থ হবেন। অপ্রয়োজনীয় শিবের গীত না শুনিয়ে রামপাল কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিল করুন। নইলে বাংলাদেশের জনগণই এই প্রকল্প ছুড়ে ফেলবে! অতএব সাধু সাবধান।

...................................
২৮ আগস্ট ২০১৬

মন্তব্য ০ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.