নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।
আজ আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস। ১৯৬৬ সাল থেকে প্রতি বছর ৮ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস পালিত হচ্ছে। বাংলাদেশের বর্তমান সাক্ষরতার হার ৬১.৫ শতাংশ। মানে হলো দেশে এখনো ৩৮.৫ শতাংশ মানুষ নিরক্ষর। জাতিসংঘের মিলেনিয়াম ডেভলপমেন্ট গোল বা সংক্ষেপে এমডিজি'র লক্ষ্যমাত্রায় ২০১৫ সালের মধ্যে সাক্ষরতার হার ৯১ শতাংশ করার টার্গেট ছিল। গোটা বিশ্বে জাতিসংঘের এই টার্গেট ব্যর্থ হবার পর এখন জাতিসংঘ সদস্য দেশগুলোর জন্য নতুন মওকা দিয়েছে সাসটেইনেবল ডেভলপমেন্ট গোল বা এসডিজি। সেখানে বলা হয়েছে কোয়ালিটি এডুকেশানের কথা।
জাতিসংঘের এমডিজি'র লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে গিয়ে বাংলাদেশের মত গরীব দেশগুলো স্কুলে শিক্ষার্থীদের পাস করানোর সংখ্যার উপর এতদিন জোর দিয়েছিল। পাসের হার কৃত্রিমভাবে বাড়ানোর সেই প্রচেষ্টার কারণে পাসের সংখ্যা কিছুটা বেড়েছে বটে কিন্তু কোয়ালিটি ফল করেছে। আমাদের সরকারগুলো জাতিসংঘের এই ফাঁকিবাজির সঙ্গে নিজেরাও ফাঁকিবাজিতে দক্ষ হয়ে উঠেছে। ২০১৫ সালে এমডিজি ব্যর্থ হবার পর এখন এসডিজি নিয়ে নতুন লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। সেখানে কোয়ালিটি এডুকেশানকে গুরুত্ব দেওয়া হবে। এটা করতে গিয়ে আবার পাসের হার কমে যাবে। জাতিসংঘ তখন আবার সদস্য দেশগুলোর সরকারগুলোকে নতুন চালাকি শিখিয়ে দেবে। মাঝখান থেকে একটি দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা বলতে যা বুঝায় তা প্রকৃত অর্থেই ধ্বংসের চূড়ান্তপর্বে উত্তীর্ণ হয়েছে।
আজকে চারিদিকে পাসের উচ্চ হার আর জিপিএ প্লাসের ছড়াছড়ি। কিন্তু সেখানে কোনো কোয়ালিটি নেই। আমাদের শিক্ষার কোয়ালিটি বোঝার জন্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার-এর কথাবার্তার দিকে নজর দিলেই বিষয়টি ক্লিয়ার হবার কথা। উনি ভুল লিখতে ভুল করেন। আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবসের সঙ্গে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস গুলিয়ে ফেলেন। এই চিত্র থেকেই গোটা জাতির এডুকেশানের কোয়ালিটি কিছুটা আন্দাজ করা যায়। আন্দাজ করা যায় জাতিসংঘ আসলে উন্নয়নের নামে দেশকে কোথায় ঠেলে দিচ্ছে। জাতিসংঘের এমডিজি অনুযায়ী, বর্তমান ধারায় উন্নয়ন চলতে থাকলে ২০৫৫ সাল নাগাদ বাংলাদেশ শতভাগ সাক্ষরতা অর্জন করতে সক্ষম হবে! জাতিসংঘের ঠেলা বোঝেন! জাতিসংঘ যদি না ঠেলে তবে আগামী ২১০০ সালেও বাংলাদেশের শতভাগ সাক্ষরতা অর্জনের আগ্রহ নেই! জাতিসংঘ গরীব দেশের সরকারগুলোকে একটা ছকের মধ্যে মাপামাপি করেই অভ্যস্থ। কারণ গরীব দেশগুলো যদি নিজেরাই স্বয়ংসম্পন্ন হয়ে ওঠে তাহলে এই পিকনিক পার্টি জাতিসংঘের আর কোনো প্রয়োজনীয়তা থাকে না।
খেয়াল করবেন, সারা বিশ্বের যেখানে যেখানে এখন যুদ্ধ চলছে সেখানে জাতিসংঘ কিন্তু নপুংসক। যুদ্ধ শেষ হলে সেখানে তারা নানান কিসিমের উন্নয়ন সাহায্য নিয়ে দৌড়ঝাপ করছে। জাতিসংঘের বিভিন্ন দিবস পালনে বাংলাদেশের মত সরকারগুলো'র বছরে যে খরচ হয়, তা দিয়েই বরং কোনো একটি সেক্টরের টেকসই উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব। বড় বড় বক্তৃতা দেবার কৌশল শেখানো জাতিসংঘ আসলে একটা কাগুজে সিংহ। বাস্তবে এটি মার্কিন সরকারের দালাল। এবং কার্যক্ষেত্রে পুরোপুরি নপুংসক। আর এটি চলে সদস্য দেশগুলোর মোটা অংকের চাঁদায়। তবে সবচেয়ে বেশি বকেয়া চাঁদা কিন্তু সেই বড় মোড়লের মানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের।
এসব দিবস পালন বাদ দিয়ে বরং আমাদের মন্ত্রীদের জন্য একটা কোয়ালিটি বক্তৃতা কোর্স চালু করা যেতে পারে। যাতে মন্ত্রীরা ভুল লিখতে আর ভুল না করেন। আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবসের সঙ্গে যাতে আর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস গুলিয়ে না ফেলেন। অন্তত মানুষের সামনে যাতে আর জোকার হতে না হয়, সেজন্য মন্ত্রীদের জন্য একটা কোয়ালিটি এডুকেশান কোর্স চালু করলে সেটা বরং আমাদের অনেক বেশি কাজে দেবে। শিক্ষা খাতকে চূড়ান্ত ধ্বংস করতে এখনো যা কিছু অবশিষ্ট আছে, তা হয়তো সেই সুযোগে কিছুটা রক্ষা পাবে।
...............................
৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬
©somewhere in net ltd.
১| ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১০:০৫
চিন্তিত নিরন্তর বলেছেন: জিপিএ সিস্টেম অনেক আগেই উঠিয়ে দেয়া দরকার ছিল। কিন্তু কারোই বোধদয় হচ্ছে না। এত বেশি পাশের হার হবার কথা ছিলনা। এ প্লাস পেয়ে দশ লাইন ইংরেজী রিডিং পড়তে পারেনা। এমন ছাত্রদের নিয়ে গর্ব করার কিছু নেই।