নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

রেজা ঘটক

ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।

রেজা ঘটক › বিস্তারিত পোস্টঃ

‘মীর কাদিমের গাভী’ সমাচার!!!

১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১:২৫

অনেকটা কৌতুহল নিয়েই বন্ধু নাহিদের প্ররোচনায় আজ গেছিলাম পুরান ঢাকার রহমতগঞ্জ। পুরান ঢাকার রহমতগঞ্জ খেলার মাঠে বসেছে কোরবানির পশুর অস্থায়ী হাট। রাজধানীর পুরান ঢাকার রহমতগঞ্জ হাটের প্রধান আকর্ষণ মুন্সীগঞ্জের ‘মীর কাদিমের গাভী’। ঢাকার অন্য কোনো কোরবানির পশুর হাটে ‘মীর কাদিমের গাভী’ পাওয়া যায় না। একমাত্র রহমতগঞ্জ হাটেই ‘মীর কাদিমের গাভী’ ওঠে। আমাদের কৌতুহলের কেন্দ্রেও ছিল তাই ‘মীর কাদিমের গাভী’।

ঢাকার পার্শ্ববর্তী জেলা মুন্সীগঞ্জের মীর কাদিমে সাধারণত এসব গাভীর চাষ হয়। মীর কাদিমের গাভী'র প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো বিভিন্ন আকারের এসব গাভীর অধিকাংশের গায়ের রঙ ধবধবে সাদা। তবে কিছু কিছু গাভী লালচে রঙেরও দেখলাম। প্রত্যেক গাভীরই খাড়া সিং, কাজল কালো চোখ আর তুলতুলে শরীর। মীর কাদিমের গাভীর লালন-পালন প্রক্রিয়া অন্যান্য সাধারণ গরু থেকে একটু ভিন্ন। রোদ, বৃষ্টি, ঝড়, মশা-মাছি স্পর্শ করতে দেওয়া হয় না এসব গরুকে। নির্দিষ্ট তাপমাত্রার মধ্যে রাখা হয় এসব গরু। খাবার হিসেবে দেওয়া হয় গম, চাল, খৈল, ভূষি, খড়, ধানের কুড়া ইত্যাদি। সাধারণত এসব গরুকে সবসময় দানাদার খাবার খাওয়ানো হয়। কোনো ধরনের কাঁচা ঘাস দেওয়া হয় না। ফলে মাংসের স্বাদ হয় ভালো। মাংসও থাকে কিছুটা সফট।

মীর কাদিমের গাভী ছাড়া পুরান ঢাকাবাসীর কোরবানির ঈদ একদম জমে না। দিনেদিনে পুরান ঢাকার কোরবানির ঐতিহ্য হয়ে গেছে এই মীর কাদিমের গাভী। এই গাভীর দাম যতই হোক, এই গাভী কিনেই ঘরে ফিরতে চান পুরান ঢাকার প্রভাবশালী পরিবারগুলো। যে কারণে রহমতগঞ্জ হাটে অন্যান্য গরুর তুলনায় মীর কাদিমের গাভীর দাম কিছুটা আকাশচুম্বী। চার মণ মাংস পাওয়া যাবে এমন একটি গরুর দাম হাঁকা হয়েছে এক লাখ ৬০ হাজার টাকা। আবার ছয় মণ মাংস পাওয়া যাবে এমন একটা গাভী বিক্রি হলো এক লাখ ৮০ হাজার টাকায়।

রহমতগঞ্জ মাঠে মীর কাদিমের গাভী নিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে তাই এক ধরনের প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। যে কারণে গাভীর দামও হাঁকা হচ্ছে সেভাবে। এ হাটের অধিকাংশ ক্রেতাই পুরান ঢাকার। চাহিদার তুলনায় হাটে মীর কাদিমের গাভী এবার কিছুটা কম এসেছে বলে অভিযোগ রয়েছে ক্রেতাদের পক্ষ থেকে। আজ অন্তত তিনশো থেকে সাড়ে তিনশো ‘মীর কাদিমের গাভী’ রহমতগঞ্জ হাটে উঠেছে। যার অর্ধেকের বেশি বিক্রি হয়ে গেছে বলে অনেক বিক্রেতা দাবি করলেন। আমরা যখন হাট থেকে বের হচ্ছিলাম, তখন মাইকিং হচ্ছিলো, আরো তিনশো গরু আসছে। তবে সেগুলো ‘মীর কাদিমের গাভী' কিনা তা স্পষ্ট করেননি ঘোষক।

তবে আমরা যে ভদ্রলোকের সঙ্গে কথা বলেছি তিনি দাবি করলেন, তিনি মীর কাদিমের গাভী হিসেবে যে গাভীগুলো হাটে এনেছেন, সেগুলো তিনি ঢাকাতেই লালন-পালন করেছেন। গাভীগুলোর বয়স দুই থেকে আড়াই বছর। সবগুলোই ধবধবে সাদা। সিং খাড়া। ভদ্রলোক দাবি করলেন, তিনি শুকনো দানাদার খাবারের পাশাপাশি ঘাসও দিয়েছেন। গাভীগুলো যে খামারে চাষ করছেন সেখানে সিলিং ফ্যান আছে। মশারি আছে। নরমাল ঘাস দিলে এই গাভী তা খেতে চায় না। ঘাসগুলো কুচি কুচি করে কেটে দিলেই কেবল খায়। ভদ্রলোক বললেন, এরা খুব আহ্লাদি টাইপের গরু। ঠিক ঠাক লালন-পালন না হলে এরা কিছু খেতে চায় না।

‘মীর কাদিমের গাভী’ দেখতে গিয়ে নিজেরাও আজ অনেকটা গরু হয়ে গিয়েছিলাম। আউটার স্টেডিয়াম থেকে এক্সারসাইজ করার একটা গুডস কিনেছে নাহিদ। তারপর আমরা গুলিস্তান থেকে ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে গেলাম লালবাগ। গাড়ির মালিকের আজকের নির্ধারিত টিরিপ আগেই শেষ হয়েছিল। গুলিস্তান থেকে সদরঘাট পর্যন্ত তার নির্ধারিত রুট। কামরাঙ্গীরচর বাসায় ফিরছিলেন তিনি ঘোড়ার গাড়ি নিয়ে। বললেন, আমাদের লালবাগ নামিয়ে দিতে পারবেন। ব্যাস, আমরা উঠে বসলাম। অন্য কোনো যাত্রী নেই। কেবল আমরা দু'জন আর মালিকের দুই'জন এসিসট্যান্ট। এসিসট্যান্টের একজন আবার বঙ্গবাজারের এখানে নেমে গেল। মালিক তাকে বললেন, রাত তিনটায় তিনি আবার ঘোড়া নিয়ে আসবেন। আগামীকাল চাঁদ রাত। তাই টিরিপ একটু আর্লি শুরু করবেন।

খেয়াল করলাম, ঢাকায় রিক্সা ভাড়ার চেয়ে ঘোড়ার গাড়িতে ভাড়া কম। আবার অনেক বেশি আরামদায়ক। নাহিদ তো ঘোষণা দিল, শিঘ্রই সময় করে একবার ছেলেকে নিয়ে ঘোড়ার গাড়িতে ঘোরার জন্য আবার আসবে। ঘোড়ার গাড়ির সবচেয়ে মজা হলো সুন্দর রিদমিক শব্দটা। টক্কর টক্কর টক্কর টক্কর শব্দটা বেশ তালে তালে গাড়িয়ালের ইনস্ট্রাকশান অনুযায়ী বাড়ে কমে। গাড়িয়াল জানালেন, এসব রাস্তা তার ঘোড়া দুটির মুখস্থ। কোন মোড়ে এসে কোনদিকে যেতে হবে, এটা নিয়ে তেমন সমস্যা হয় না।

কিন্তু এসব বলতে বলতেই আমাদের ডানপাশ দিয়ে যাচ্ছিল একটি প্রাইভেট কার। ঘোড়ার গাড়ি আর প্রাইভেট কারের মাঝখান দিয়ে যাচ্ছিলেন একটি দল, যারা কোরবানির গরু কিনে খুব অদক্ষ ভাবে রাস্তার মাঝখান দিয়ে গরু নিয়ে যাচ্ছিলেন। গরুটা একটু ভরকে গেলে প্রাইভেট গাড়ির সঙ্গে গরুর একটা টক্কর হয়। দেখলাম, সাদা প্রাইভেট কারের বামপাশের পেছনের অংশটা কিছুটা ধসে গেছে।

ওই অনাকাঙ্খিত টক্করের আগে আমাদের গাড়িয়াল তার ঘোড়ার জন্য ঘাস কিনলেন। প্রতি আটি ঘাসের দাম ১২০ টাকা। রাজধানী ঢাকায় কোরবানির ঈদের সময় এই ঘাসের দাম একটু বাড়ে। অন্যান্য সময় এই ঘাসের দাম আটি প্রতি ৮০ থেকে ৯০ টাকা বলে গাড়িয়াল জানালেন। তো লালবাগ আসার পর আমরা নেমে গেলাম। গুলিস্তান থেকে লালবাগ যেতে আমাদের দু'জনের ভাড়া নিলেন মাত্র ৪০ টাকা। আগেই বলছিলাম যে ‘মীর কাদিমের গাভী’ দেখতে গিয়ে আমরাও কিছুটা যেন গরু হয়ে গেছিলাম, এবার সেই ঘটনা বলি।

লালবাগে গাড়ি থেকে নেমে আমরা চায়ের দোকানে চা খাব। হঠাৎ মনে পড়ল নাহিদের কেনা সেই এক্সারসাইজের জিনিস তো গাড়িতে রয়ে গেছে। তো গাড়ির পেছনে ছুটে জিনিস উদ্ধার হলো বটে। কিন্তু সেই ঘটনা আবারো ঘটলো ফেরার সময়। লালবাগ কেল্লার কাছে একটা ছোট্ট হোটেলে আমরা পুরান ঢাকার বিখ্যাত তেহারী খেলাম। তারপর রিক্সা নিয়েছি মাগার সেই এক্সারসাইজের জিনিস সেই হোটেলে রয়ে গেছে। পরে আবার রিক্সা ঘুরিয়ে আমাদের জিনিস উদ্ধার করলাম।

সবচেয়ে দৃষ্টিকটু যে বিষয়টি নজরে পড়ল সেটি হলো, রাস্তায় গরু শুয়ে পড়ছে। তখন রাস্তায় যানজট লেগে যাচ্ছে। দেখে মনে হচ্ছে গরুগুলো আসলে খুব ক্ষুধার্ত। তাদের ঠিকমত খাবার পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। এসব গরু ঢাকায় আসার দীর্ঘপথেও নানান কিসিমের অনেক ধক্কল সয়েছে। আর এসব অসহায় ক্ষুধার্ত গরু কিনে যারা গরু নিয়ে বাড়িতে ফিরছিলেন তারা সবাই অনভিজ্ঞ। গরু কিন্তু এই মানুষগুলোর সেই অনভিজ্ঞতা ঠিকই বুঝতে পারছে। তাই হুটহাট রাস্তার মাঝখানে শুয়ে পড়ছে। অথবা সত্যি সত্যি গরুগুলো খুব ক্ষুধার্ত বা পিপাসার্ত বা দুর্বল। তাছাড়া এই মানুষগুলো গরু কীভাবে চড়াতে হয়, তা ঠিকঠাক করতে পারছে না বলেই এই নিরীহ প্রাণীগুলো কিছুটা যেন অসহায়। এদের সঙ্গে কিছুটা দুর্ব্যবহারও করা হচ্ছে। অথচ আর দু'দিন মাত্র এদের আয়ু। সেই অবস্থাও হয়তো এরা প্রাকৃতিক কারণে বুঝতে পারছে। যে কারণে এদের অসহায় চোখের সেই নিরব ভাষায় বড় বেদনা লেখা। সেই বেদনা লিখে বোঝানো যাবে না। এই অসহায় গরুগুলোর চোখের ভাষা বুঝতে পারলে হয়তো সেই বেদনা কিছুটা পড়া যায়!

আমাদের রিক্সাওয়ালা জেলখানার পাশ দিয়ে আসার সময় বলছিলেন যে, জেলখানা সরিয়ে নেবার পর থেকে এখানে যানজট আগের তুলনায় বেড়েছে। জেলখানা থাকাকালীন এখানে প্রশাসন কিছুটা তৎপর থাকতো। এখন জেলখানা কেরানিগঞ্জ চলে যাওয়ায় প্রশাসনের তৎপরতা এখানে আগের তুলনায় কিছুটা কম। তাই রোজই নাকি জ্যাম লেগে থাকে। জেলখানার জায়গাটি নিয়ে কী করা হবে এমন কৌতুহল রিক্সাওয়ালার মধ্যেও কাজ করছে। জানতে চাইলে তিনি বললেন, হুনছি পার্ক হইব। আবার একগ্রুপ ছাত্র হোস্টেলের জন্য আন্দোলন করতাছে। এখন কী হয় কইবার পারুম না। কিন্তু আমাগো দুর্ভোগ বাড়ছে!

.................................
১২ সেপ্টেম্বর ২০১৬





মন্তব্য ৭ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১:৪৩

চাঁদগাজী বলেছেন:



পরলাম

২| ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ৭:২০

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: মীর কাদিমের গরুর মাংসকে তুলনা করা হয় জাপানের কোবে বিফের সাথে। কোবে বিফ পৃথিবী সেরা।

ধন্যবাদ ভাই রেজা ঘটক।

৩| ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১:০৮

মো: হাসানূর রহমান রিজভী বলেছেন: ধন্যবাদ

৪| ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:০০

ডঃ এম এ আলী বলেছেন:



তথ্যবহুল পোস্ট পাঠে অনেক কিছু জানা হোল
ঈদ মোবারক।

৫| ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৩:১১

অশ্রুকারিগর বলেছেন: বাহহ, অনেক কিছু জানলাম নতুন। ধন্যবাদ, রেজা ঘটক। তবে একটা ছবি দিলে গরুগুলোকে চিনতাম আরকি।

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: মীর কাদিমের গরুর মাংসকে তুলনা করা হয় জাপানের কোবে বিফের সাথে। কোবে বিফ পৃথিবী সেরা। আসলেই ?

৬| ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ভোর ৪:০৩

গোফরান চ.বি বলেছেন: ভালো লাগল ।

৭| ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ৯:৩১

মাদিহা মৌ বলেছেন: মীর কাদিমের গরুর ব্যাপারে আজকেই জানলাম!
কিছুই জানলাম না দুনিয়ার :(

পোস্টে ভালোলাগা …

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.