নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

রেজা ঘটক

ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।

রেজা ঘটক › বিস্তারিত পোস্টঃ

\'মানঝি: দ্য মাউন্টেন ম্যান\' কেতন মেহতার নতুন মাত্রার ছবি!

২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ৭:০০

সাম্প্রতিক সময়ে ভারতীয় হিন্দি ফিল্মে একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছেন বলিউড নির্মাতা কেতন মেহতা। বিহারের গেহলৌর গ্রামের দশরথ মানঝি'র জীবনের সত্য কাহিনী অবলম্বনে নির্মিত 'মানঝি' ছবিটি ভারতীয় সিনেমায় এক নতুন চমক। ছবিটি 'দ্য মাউন্টেন ম্যান' নামে ইতিমধ্যে ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছে। বিহারের গেহলৌর গ্রামের দরিদ্র দশরথ মানঝি এক অদ্ভুত ব্যক্তি ছিলেন। যিনি একাই একটা পাহাড় কেটে রাস্তা তৈরি করেছিলেন। স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসার অমন চরম নিদর্শন কেবল ভারতীয় সাহিত্যেই এর আগে দেখা যায়।

ছবিতে দশরথ মানঝির চরিত্রে অসাধারণ অভিনয় করেছেন ‘গ্যাংস অব ওয়াসিপুর’ খ্যাত অভিনেতা নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকী। আর দশরথ মানঝির স্ত্রী'র চরিত্রে অত্যন্ত সাহসী অভিনয় করেছেন ‘অহল্যা’ খ্যাত অভিনেত্রী রাধিকা আপ্তে। পরিচালক কেতন মেহতা এই 'মানঝি' ছবিতে এমন কিছু সাহসী শট নিয়েছেন, যা ভারতীয় সিনেমায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে। ২০১৫ সালের ২১ আগস্ট 'মানঝি' মুক্তি পাওয়ার পর প্রথম সপ্তাহে দেড় মিলিয়ন ডলার আয় করে। 'মানঝি' ছবিটির চিত্রনাট্য রচনা করেন কেতন মেহতা, আনজুম রাজাবলী ও মহেন্দ্র ঝাকার। সিনেমাটোগ্রাফি করেছেন রাজীব জৈন। ছবিটি প্রডিউস করেছেন নিনা লাথ গুপ্তা ও দীপা শাহী।

ছবিটির গল্পটি এরকম- বিহারের গেহলৌর গ্রামের দরিদ্র দশরথ মানঝি নিজের স্ত্রীকে খুব ভালোবাসেন। স্ত্রীর নাম ফাগুনিয়া দেবী। গ্রামের পাশেই উঁচু পাহাড়। দ্বিতীয় সন্তান মেয়ের জন্মের ঠিক কয়েক দিন আগে পাহাড় ডিঙিয়ে জল আনতে গিয়ে ফাগুনিয়া দেবী পাহাড় থেকে পড়ে মারাত্মকভাবে আহত হন। স্বামী দশরথ মানঝি তার বন্ধু'র সহযোগিতায় ঘুর পথে ফাগুনিয়াকে শহরের হাসপাতালে নিয়ে যায়। ডাক্তাররা অনেক চেষ্টা করে পেটের বাচ্চাকে বাঁচাতে সক্ষম হন কিন্তু ফাগুনিয়া দেবীকে আর বাঁচাতে পারেননি। স্ত্রীকে হারানোর পর দশরথ মানঝি মনে করেন ওই পাহাড় না থাকলে তার স্ত্রী ওভাবে পড়ে মারা যেত না। তাছাড়া ওই পাহাড়ের কারণেই ঘুর পথে শহরের হাসপাতালে যেতে অনেক সময় লাগে। তাই দশরথ মানঝি সিদ্ধান্ত নেয় একা একাই ওই পাহাড় কেটে ধ্বসিয়ে দেবেন।

বিহারের গয়ার আত্তারি আর ওয়াজিরগঞ্জ ব্লকের মাঝে খাড়া দাঁড়িয়ে এক দৈত্যাকার পাথুরে পাহাড়, যার সামনেই গেহলৌর গ্রাম। ফাগুনিয়া দেবীর মৃত্যুই বদলে দিল এ গ্রামের ভূগোল। এ ঘটনা ৫৪ বছর আগের। এরপরেই শুরু হয় এ গল্পের হতদরিদ্র শ্রমিক দশরথের হাতে। স্ত্রী মারা যাওয়ার পর গ্রামের আর কাউকে যাতে অসুস্থ হয়ে পথেই না মরতে হয় তার জন্য বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা খাড়া পাহাড়টি, ওই পাহাড়টি কেটে ফেলার সিদ্ধান্ত নেন দশরথ মানঝি। শেষ পর্যন্ত কারো সহায়তা না পেয়ে একাই পাহাড় কেটে রাস্তা তৈরির কাজে নেমে পড়েন তিনি। সঙ্গী শুধু শাবল আর হাতুড়ি। একা হাতে দিনভর হাড়ভাঙা খাটুনিকে নিত্যসঙ্গী করে পাথর ভাঙলেন দশরথ। তার নাম হয়ে গেল ‘পাহাড়-মানব’।

বৃদ্ধ বাবার নিষেধ সত্ত্বেও দশরথ মানঝি ছেলেমেয়ে সংসার ফেলে একটানা ২২ বছর ধরে ওই পাহাড় কাটতে থাকেন। গ্রামের সবাই এক সময় দশরথ মানঝিকে পাগল ডাকতেন। ২৫ ফুট উঁচু ৩০ ফুট চওড়া ও ৩৬০ ফুট লম্বা পাহাড় কাটার পর শহরের হাসপাতালে যাবার জন্য একটা সোজা পথ তৈরি হয়। ১৯৬৩ সালে দশরথ মানঝি ওই পাহাড় কাটা শুরু করেন। আর ত্রিশ বছর পরে সেখানে চলাচলের মত রাস্তা হয়ে যায়। ধীরে ধীরে দশরথ মানঝিকে গ্রামের সবাই পাগলা বাবা ডাকা শুরু করেন। দশরথ মানঝি একাই এমন একটি অসাধ্য কাজ করায় ভারত সরকার দশরথ মানঝিকে পরবর্তী সময়ে পুরস্কৃত করে। দশরথের গ্রাম থেকে নিকটবর্তী শহর ওয়াজিরগঞ্জের দূরত্ব ছিল ৬৫ কি.মি.। দশরথের সৌজন্যে সেই দূরত্ব কমে দাঁড়ায় ১৫ কি.মিটারে। ২০০৭ সালে দশরথ মানঝি মারা যাবার পর ২০১১ সালে ভারত সরকার ওই পাহাড় কাটা পথে গেহলৌরের সড়ক নির্মাণ করে।

দশরথ যে পাথুরে পাহাড়টি কাটেন তার নাম ‘গেহলৌর পাহাড়’। এই মহতী সাহসী কর্মবীরের সম্মানে বিহার সরকার ‘গেহলৌর থেকে আমেথি’ পর্যন্ত যে রাস্তা নির্মাণ করেছেন তার নাম এখন ‘দশরথ মানঝি সড়ক’। ২০০৬ সালে মানঝিকে পদ্মশ্রী পুরস্কার দেয়া হয়। ২০০৭ সালে ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে মারা যান দশরথ। মৃত্যুর পর রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাকে সমাহিত করা হয়।

ছবিতে দশরথ মানঝির চরিত্রে নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকী অসাধারণ অভিনয় করেন। দশরথ মানঝির স্ত্রীর চরিত্রে রাধিকা আপ্তে অত্যন্ত সাহসী কিছু শট দিয়েছেন। যা ভারতীয় সিনেমায় এ যুগে বিরল। এছাড়া ল্যান্ডলর্ড মুখিয়া'র চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিগমাংশু ঢুলিয়া। মুখিয়ার ছেলে রুয়াবের চরিত্রে অভিনয় করেছেন পংকজ ত্রিপাঠী। সাংবাদিক অলোক ঝায়ের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন গৌরব দ্বিবেদী। দশরথের বাবা মাগরুর চরিত্রে অভিনয় করেছেন আশরাফুল হক। লাউকি চরিত্রে উর্মিলা মহান্ত, শুকলাজি চরিত্রে জগৎ রাওয়াত, ঝুমরু চরিত্রে প্রশান্ত নারায়ণ, গোপালের বাবার চরিত্রে ভরদরাজ স্বামী অভিনয় করেন। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী'র চরিত্রে অভিনয় করেছেন প্রডিউসার দীপা শাহী। 'মানঝি' ছবিতে গান লিখেছেন দীপক রামোলা, কেতন মেহতা ও কুমার। গানের কম্পোজ করেছেন সন্দেশ সান্দিলিয়া ও হিটসেন সোনিক। আর সংগীতে কণ্ঠ দিয়েছেন ভাবীন শাস্ত্রী, পাওয়ানী পাণ্ডে ও দিব্য কুমার।

কেতন মেহতা 'মানঝি' ছবিতে কাহিনী, গল্পের চিত্রায়ন, বস্তুনিষ্ঠতা, লোকেশান নির্বাচন, সেট, কস্টিউম, বিহারের গেহলৌর পাহাড়ের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কৃষ্টি, আচার, রিচুয়াল আর সমকালীন নকশাল আন্দোলনের যে সংমিশ্রণ করেছেন, তা সত্যি সত্যিই দর্শকদের মুগ্ধ করার জন্য যথেষ্ঠ। দশরথ মানঝি চরিত্রে নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকী অসাধারণ অভিনয় ছবিটিকে এক অনন্য উচ্চতায় ঠাই দিয়েছে। পরিচালকের কিছু সাহসী শট নায়িকা রাধিকা আপ্তে যে অমায়িক অভিনয় করেছেন, এটা সত্যি মুগ্ধ করার মত। বিশেষ করে কাদার মধ্যে নওয়াজ সিদ্দিকী ও রাধিকা আপ্তে'র যে শর্টটি এবং কূপের মধ্যে তাদের সঙ্গমের যে দৃশ্যায়ন, এটি সত্যিই অপূর্ব। বেশ কিছু এক্সপারিমেন্টাল শটেও পরিচালক মুন্সীয়ানার পরিচয় দিয়েছেন। জয়তু কেতন মেহতা। জয়তু নওয়াজ সিদ্দিকী ও রাধিকা আপ্তে। জয়তু সিনেমা।

...............................
২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ৭:১২

এম এ কাশেম বলেছেন: ছবিটি দেখার ইচ্ছে রইলও।
শুভ কামনা।

২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ৭:৩৩

রেজা ঘটক বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে

২| ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ৭:২৮

রুদ্র জাহেদ বলেছেন: অসাধারন রিভিউ।মুভিটা দেখার ইচ্ছা আছে

২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ৭:৩৪

রেজা ঘটক বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে...

৩| ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ৭:৫৯

রক্তিম দিগন্ত বলেছেন:
মুভিটা আসলেও চমৎকার ছিল।

আপনি রিভিউ-এ ইতিহাসটাও ভালভাবেই আলোকপাত করেছেন। +

২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ৮:৫৫

রেজা ঘটক বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে!

৪| ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ৮:৩১

অচিরে অশেষ কবি বলেছেন: চমৎকার লিখেছেন ভাইয়া.. মুভিটা এখনি ডাউনলোড দিলাম আশা করি ভাল হবে :-)

২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ৮:৫৬

রেজা ঘটক বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে!

৫| ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ৯:৫৫

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: এই ছবিতে নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকীর অভিনয় অসাধারণ হয়েছে। ছবিটিকে তিনি একাই টেনে নিয়ে গেছেন।

৬| ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ১০:৪৫

মো: হাসানূর রহমান রিজভী বলেছেন: নওয়াজ উদ্দিন যে কোন ছবি কে টেনে নিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা রাখেন।

৭| ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:২৫

অঞ্জন ঝনঝন বলেছেন: দশরথ মাঝির গল্পটা অসাধারণ অনুপ্রেরণার। আমি নওয়াজউদ্দীনের অভিনয়েরও ভক্ত তবে সিনেমাটা থেকে যতটা আশা করেছিলাম ততটা পাইনি। শুধুমাত্র সমালোচকদের খুশী করার মতো সিনেমা দর্শকদের কিছুটা হতাশই হতে হয়।

৮| ২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১:০২

সৈয়দ আবুল ফারাহ্‌ বলেছেন: ভাল বর্ণনা করেছেন। সিনেমাটি দেখব হয়ত।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.