নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

রেজা ঘটক

ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।

রেজা ঘটক › বিস্তারিত পোস্টঃ

অমর একুশে বইমেলার ডায়েরি-৪

০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ১:৫২

বুধবার ছিল অমর একুশে গ্রন্থমেলার চতুর্থ দিন। সরকারি ছুটি না থাকলেও বইমেলা খুব জমে উঠেছে। সেই তুলনায় নতুন বইয়ের বিক্রি খুব একটা নাই। হয়তো বইমেলায় আগত বইপ্রেমীরা নতুন বই ঘুরে ঘুরে দেখছেন, বাছাই করছেন, লিস্ট করছেন, পরে কোনো একদিন কিনবেন। তাই বই বিক্রিতে এখনো তেমন সাড়া পড়েনি।

আজ টিএসসিতে দেখা বন্ধু কথাশিল্পী মানস চৌধুরী'র সাথে। একসাথে বইমেলায় ঢুকে বায়ান্ন'র স্টলে গেলাম একটি ইন্টারেস্টিং বই দেখতে। অনলাইনে মানস চৌধুরী'র লেখা পড়ে অচেনা একজন ভক্ত মঈন কয়েক দফা ইন্টারভিউ নিয়ে একটি সংকলন করেছেন। পরে জানলাম এবার পরানকথা থেকে প্রকাশ পাচ্ছে মানস চৌধুরী'র গল্প সংকলন 'জলপরী আর জলাতঙ্ক'।

লিটলম্যাগ কর্নারে গিয়ে দেখি এলাহি কাণ্ড। সেখানে এবছর একুশে পদক পাওয়া সুধীদের নিয়ে ছিঃ ছিঃ শ্লোগান হচ্ছে, অট্টহাসি হচ্ছে। কয়েকজন যোগ্য লোকের পাশাপাশি একগাদা অযোগ্য লোককে একুশে পদক দিয়ে এই পুরস্কারের আনুষ্ঠানিকভাবেই বারোটা বাজানো হয়েছে। এবছর তিনজনকে সাহিত্যে একুশে পদক দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে দুইজনকে বইমেলার কোনো কবি-লেখক চিনতেই পারলো না! এবার বোঝেন একটি রাষ্ট্রীয় পুরস্কার কোথায় গিয়ে ঠেকেছে। একজন ক্বারী এবং একজন সুফিকেও এবার একুশে পদক দিয়ে সরকার বাহাদুর মদিনা সনদ অনুযায়ী দেশ পরিচালনাকে পুরোপুরি জায়েজ করে নিল!

আমাদের ষাটোর্ধ্ব কিছু গর্ধভ বুদ্ধিজীবী আছেন যারা নানান কিসিমের উপঢৌকনের বিনিময়ে বিভিন্ন পুরস্কারের পেছনে হরেকরকম ওকালতি করেন। এরা যোগ্যতা বিচার বিবেচনা না করেই এমন সব অখাদ্য অযোগ্য লোকদের বিভিন্ন পুরস্কারের জন্য নাম প্রস্তাব করেন যে, রাষ্ট্রীয় হোক কিংবা প্রাইভেট হোক, বাংলাদেশে বিভিন্ন বিষয়ে পুরস্কার এখন রীতিমত একটা প্রহসনে পরিনত হয়েছে। এবার একুশে পদকে এমন কিছু নাম দেখা গেছে যাদের খোদ বইমেলায় কবি-সাহিত্যিকরা আজকেই তাদের নাম প্রথম শুনে আতকে উঠলেন। এজন্য লিটলম্যাগ চত্বরে একটি অট্টহাসি'র আয়োজন করা হয়েছিল। তরুণ প্রজন্মের কবি-সাহিত্যিকরা সেই অট্টহাসিতে দলে দলে যোগ দিয়েছিল।

চোখের সামনে এই রাষ্ট্রটি ধীরে ধীরে পুরোপুরি ইসলামী প্রজাতন্ত্র হয়ে গেল। অথচ ত্রিশ লাখ শহীদের রক্ত আর পাঁচ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা এখন তামাশায় পরিনত হয়েছে ক্ষমতালোভী সরকারের কারণেই। কতটা অধপতনে গেলে খোদ জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী'র নামের আগে 'হযরত' বসানোর প্রস্তাব করেন এক গর্ধভ সাংসদ। যদিও ইতোমধ্যে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী হেফাজতে ইসলাম থেকে 'কওমী জননী' উপাধী গ্রহণ করেছেন। ফলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রতিশ্রুতি দেওয়া সেই ভাষণের প্রতিফলন ঘটেছে এবার একুশে পদক পুরস্কার ঘোষণায়।

তবে বাংলা একাডেমি মুজিব বর্ষে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে উৎসর্গ করা এবারের অমর একুশে গ্রন্থমেলায় একটি আকর্ষণীয় ইনস্টলেশন করেছে বাঁশ দিয়ে। সেখানে 'বঙ্গবন্ধু পাঠ' নামে একটি অস্থায়ী পাঠাগার তৈরি করা হয়েছে। সেখানে রাখা হয়েছে বঙ্গবন্ধু'র লেখা তিনটি বই এবং বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা কিছু বই। আগ্রহী পাঠক সেখানে বসে বঙ্গবন্ধুকে পড়তে পারবেন। এই সুন্দর উদ্যোগটির জন্য বাংলা একাডেমিকে ধন্যবাদ।

ইউনেস্কোর সদর দপ্তর প্যারিসে অনুষ্ঠিত ইউনেস্কোর ৪০তম সাধারণ অধিবেশনে সদস্য দেশগুলোর সর্বসম্মতিক্রম সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথভাবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ‘মুজিববর্ষ’ উদযাপন করবে বিশ্বের ১৯৫টি দেশ। এটি যেমন বাংলাদেশের জন্য গৌরবের তেমনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় পুরস্কারের নামে যাদের পুরস্কার প্রদান করা হচ্ছে তা দেশের জন্য সত্যিই খুব লজ্বার!

এবছর পেন্ডুলাম থেকে প্রকাশিত হয়েছে শুভঙ্কর দাশের অনুবাদ গ্রন্থ রিচার্ড ব্রটিগান-এর 'ইন ওয়াটারমেলন সুগার'। শব্দশৈলী প্রকাশ করেছে ফ্রান্স প্রবাসী লেখক রবীশঙ্কর মৈত্রী'র বাংলা ভাষায় রচিত প্রথম 'ক্রিয়াপদ অভিধান'। সব্যসাচী প্রকাশ করেছে শতাব্দী ভব'র 'ব তে বর্ণমালা'। বাতিঘর প্রকাশ করেছে মহিউদ্দিন আহমদের ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত অস্থির সময়কে নিয়ে লেখা 'বেলা অবেলা'।

বইমেলায় আজকে একুশে পদক নিয়ে এতই ব্যঙ্গবিদ্রুপ হয়েছে যে কয়েকজন সত্যিকারের যোগ্য মানুষ সেই বিদ্রুপের আড়ালে পড়ে গেছেন। যেমন জাফর ওয়াজেদ, মিতা হক, ফরিদা জামান, আব্দুল জব্বার, সিকদার আমিনুল হক। এঁরা সবাই নিজেদের যোগ্যতায় একুশে পদক পাবার যোগ্য। আলাদাভাবে এঁদের সবাইকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানাই। আর যাদের অভিনন্দন জানাতে পারলাম না, সেজন্য একুশে পদকের জুরিবোর্ডকে তীব্র ধিক্কার জানাই। ষাটোর্ধ্ব এসব কুলাঙ্গারদের সবকিছু থেকে অবসর নেওয়া উচিত!

বইমেলায় আসুন। নতুন বই বাছাই করুন। প্রিয়জনকে বই উপহার দিন। যে বইটি আপনি এখনো পড়েননি, সেটি আপনার জন্য একদম নতুন বই। সবাইকে একুশের শুভেচ্ছা।

----------------------
বইমেলা থেকে ফিরে
রেজা ঘটক
কথাসাহিত্যিক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ২:২৮

চাঁদগাজী বলেছেন:



শেখ সাহেবের উপর আপনার পরিচিত কেহ লিখেছেন?

২| ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ৩:০১

এমজেডএফ বলেছেন: বর্তমান সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য ও ক্ষমতায় থাকার জন্য এখন নির্বাচন বা জনগণকে তোয়াক্কা করার প্রয়োজন মনে করে না। কারণ নির্বাচন এখন ভোট-ভোট খেলায় পরিণত হয়েছে আর জনগণ এখন রাজনীতি নিয়ে আর মাথা ঘামায় না। সব দলের শাসন দেখা হয়েছে, পেট্রোল বোমার ক্ষত এখনও শুকায়নি। তাই ভালো-মন্দ নিয়ে বর্তমানেই সন্তুষ্ট। কিন্তু ধর্মীয় লেবাসে বদমাস লোকের সংখ্যা এদেশে দিনদিন বাড়ছে। এরা সংগঠিত এবং মারমুখী। এদেরকে মিথ্যা চবক দিয়ে শাপলা চত্বরের মতো তান্ডব করার জন্য উস্কিয়ে দেওয়া যায়। দাঁড়িওয়ালা ও টুপি পড়া কোনো হুজুর অবাস্তব কিছু বললেও এরা তা বিশ্বাস করে শহীদ হওয়ার জন্য সর্বদা প্রস্তুত। তাই সরকারি ও বিরোধী দল এদেরকে খুশি করে ভাগে আনার প্রতিযোগিতায় নেমেছে। সে সুযোগে এরাও নতুন নতুন আবদার করে যাচ্ছে এবং তা পূরণও হচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় এখন থেকে একুশে পদকেও ওদের কোটা চালু হয়ে গেলো।

৩| ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সকাল ৯:২৪

রাজীব নুর বলেছেন: সুন্দর ঝরঝরে লেখা ।

৪| ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ৮:৩৮

নেওয়াজ আলি বলেছেন: দারুণ প্রকাশ ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.