![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
রাজপুত্র আসে, রাজপুত্র যায় কিন্তু গল্প থেকে যায়; তার রাজত্বের গল্প, তার সৈন্য-সামন্তের, তার প্রভাব-প্রতিপত্তির। রাজপুত্র তখন নাটকের দর্শক। বীরত্বগাঁথাই তার নাটকের ধারালো সংলাপ, মজবুত গাঁথুনী, কিংবা শিল্পীত অভিনয়; অবশ্য বিধাতা স্বয়ং যদি পরিচালক হন তাতে অভিনেতারা ভালো হবেন সন্দেহ নেই!!
যাই হোক, বলছিলাম রাজপুত্রের কথা। রাজপুত্র খুব বেশিদিন আগের নন, কাজেই আলোচনায় তিনি চলে আসতে পারেন, অনেক সময় তার বীরত্বগাঁথা ছাপিয়ে। আশা করি ক্ষমার সুন্দর দৃষ্টিটুকু পাবো! রাজপুত্রের নাম তবে শাহী কায়দাতেই ঘোষণা করা যাক- “আল সুলতান আল আজম ওয়াল খাকাল আল মুকাররাম, জামিই সুলতানাত-ই-হাকিকি, ওয়া মাজাজি, সৈয়দ আল সালাতিন, আহমেদ হুমায়ূন জিল্লুল্লাহ”। উল্লেখ্য সালতানাতটি বাংলা নামের এক দুঃখিনী মায়ের রাজকীয় সাম্রাজ্য। দুঃখিনী মায়ের রাজকীয় সাম্রাজ্য!! Irony- ই বটে!!
মধ্যবিত্ত সমাজ সবসময়ই একটু ভাববাদী কিংবা আরো নির্দিষ্ট করে বললে অ্যাবস্ট্র্যাক্ট ধারার অনুসারী। জীবনের দ্বিচারিতায় তাদের আশা-আকাঙ্কখার কপট অভিব্যক্তি কিংবা নির্লজ্জ প্রত্যাশা। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় এ সমাজই কখনো প্রভাবক কিংবা কখনো বিক্রিয়ক; সেই বঙ্গভঙ্গ থেকেই। স্বভাবতই হারানো সাম্রাজ্যের রাজার মতো না পারে সেই গৌরব ভুলতে কিংবা না পারে দীনতা ঢাকতে। এ-ই ছিলো মোটামুটি মধ্যবিত্তের স্বরূপ; অন্তত বিগত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশক পর্যন্ত। আর কোন লেখক যখন তাদের কেন্দ্র করে গল্প সাজান তাকে অবশ্যই সংবেদনশীলতার চূড়ান্ত পরীক্ষাটি দিতে হয়। বাদশাহ হুমায়ূন চৌকস ছাত্র। কাজেই মধ্যবিত্তের পরীক্ষা উৎরে গেলেন। এরপর আসলো ভাটি অঞ্চল; রাজার নিজের অঞ্চল। বাদশাহ সিংহাসনে বসলেও তার প্রিয় খাল-বিলকে যে বুকের বাঁ-পাশটিতে ঠাঁই দিয়েছেন তা তাঁর বিভিন্ন নাটক কিংবা উপন্যাস সাক্ষ্য দেয়। অতএব, রাজপুত্রের অধিকৃত অঞ্চল এরই মধ্যে যথেষ্ট। তবে তিনি তার সাম্রাজ্য বাড়ালেন সুররিয়েলিস্টিক ওয়ার্ল্ডে, যুক্তি-সাম্রাজ্যের দুর্ভেদ্য প্রাচীর ভেদ করে ঢুকলেন সেখানেও; মিসির আলী নামের এক ঘোড়ায় আসীন হয়ে। রাজপুত্র একটু আধুনিক কিনা!! কাজেই টিভির রূপালী জগতেও হানা দিলেন। শেষবয়সে কি হলো কি জানি!! রাজপুত্র ক্যানভাসের রুক্ষ জগত জয় করবেন; কাজেই রং-তুলি হাতে তুলে নিলেন- এই তো তার সাম্রাজ্য!!
তবে রাজপুত্র একটু খামখেয়ালী আর একগুঁয়ে কিনা! কাজেই বাঁধলো গোল! চশমা-আঁটা প্রফেসররা তার সাম্রাজ্যের অধীনস্ত হতে প্রবল আপত্তি তুললেন। তাঁদের ভাষ্যমতে, এ সাম্রাজ্যের গভীরতা নেই-নেই দায়িত্ববোধ- তবে মানুষজন রাজপুত্রের ভক্ত কাজেই রাজা বর্তমানের সাথে যে অস্তিত্বের লড়াই তাতে টিকে গেলেন। ভবিষ্যত নিয়ে কথা অনেক হচ্ছে। তা হোক- হতেই হবে। তবে শেষ হিসাবে জনগণের সাম্রাজ্য তাদেরই হাতে। কাজেই রাজপুত্র নিশ্চিন্তে লিচু তলায় জোছনা দেখতে পারেন।
“নন্দিত নরক” আর “শঙ্খনীল কারাগার”- ঘোষিত হলো আগমন ধ্বনি। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় বলি বইটা পড়ার পর আমার প্রথম অনুভূতি ছিলো “কেন এরকম হবে”? জানি না কেন, কিটকির প্রতি বিতৃষ্ণা অনুভব করেছিলাম কিংবা রুনু-ঝুনুদের দাদাভাইয়ের বুকটা জন্য হুহু করে উঠেছিলো, রাবেয়া আপার জন্য বোবা কষ্ট! আর...... এখানেই হুমায়ূন আহমেদ অনন্য, একক, অবসংবাদী। তিনি গল্প লিখেন না; তিনি গল্প বুনেন; দুঃখের বুনন, কষ্টের বুনন, আনন্দের বুনন; যে কথা আমাদের নয়টা-পাঁচটার রুটিন বলতে পারে না, তিনি অবলীলায় বলে যান, লিখে যান, বুনে যান। কাজেই মানুষের মণিকোঠা কেন তার জন্য বরাদ্দ থাকবে না? তিনি রাবেয়া আপার কথা বলেন যে রাবেয়া আপা আমাদের প্রতিবেশী বড় বোন, তিনি রুনু-ঝুনুর কথা বলেন যারা কিনা আমাদের খেলার সাথী, তিনি খোকা দাদাভাইয়ের কথা বলেন যিনি আমাদের পাড়াতো বড় ভাই। কাজেই মন জয় ছিলো মুহূর্তের ব্যপার।
তারপর তিনি সাদা-কালো জগতে আসলেন- একের পর এক ধারাবাহিক, নাটক দিয়ে আমাদের চারপাশে মায়াবী জাল বুনে দিলেন আর আমরা তাতে বুঁদ হয়ে রইলাম। আমি সেসময় দেখি নি; তবে পড়েছি, কল্পনায় লেখকের সাথে পাড়ি দিয়েছি সেই সাদা-কালোর বর্ণিল জগতে। আর জেনেছি একটা রাজপুত্র কতোটা মায়াবী হলে বাকের ভাইয়ের মতো এক কাল্পনিক চরিত্রের জন্য আন্দোলনের মুখোমুখি হন, একজনের কলমের কালি কতোটা শক্তিশালী হলে বহুব্রীহি নাটকের প্রচারের জন্য ডাক্তাররা তাঁকে অবাঞ্ছিত করে। সন্দেহ নেই এসব তার ব্যক্তিগত দুর্ভোগ কিন্তু এসবই সাক্ষ্য দেয় হুমায়ূন কি ছিলেন, হুমায়ূন কেমন ছিলেন। “বাদশাহ নামদার” বইয়ের শেষে তিনি বলেছেন যে ক্ষুদার্ত সময় সব গিলে ফেললেও “গল্প” নাকি গিলতে পারে না। কাজেই হুমায়ূনীয় এসব গল্পও থেকে যাবে।
তিনি “হিমু”কে বানালেন। এক বইয়ে তিনি আক্ষেপ করে বলেছিলেন “মানুষ হিমুর উদ্ভট কান্ড-কীর্তি দেখে মজা পায়; কিন্তু এতে আমি যে আমাদের জগতের পিছনের কালো পর্দার দিকে নির্দেশ করছি সেটা আর কেউ বুঝে না”। (মস্তিষ্ক প্রতারণা না করলে এটিই মোটামুটি সারকথা)! অর্থাৎ পরবাস্তব জগতেও তিনি প্রবেশ করে ফেললেন। আবারো তার সেই ব্রহ্মাস্ত্র তিনি নিক্ষেপ করলেন- মায়া! আর সেই মায়ার ছলনায় আমরা পাঠকরা মত্ত হয়ে রইলাম। ময়ূরাক্ষী নদীতে সাঁতার কাটা, তেঁতুল বনে জোছনা দেখা, হলুদ পাঞ্জাবী পরা- কি দিলেন না তিনি আমাদের। অনেকে নাকউঁচু করে বলেন হিমুর পাগলামীর কথা; কিন্তু দার্শনিক হুমায়ূনকে অনুসন্ধান করতে তাদের অবচেতন অনীহা। আবার ভারসাম্য রক্ষায়(?) তিনি বানালেন মিসির আলীকে। বর্ণনা নিষ্প্রয়োজন।
মাতাল হাওয়া, জোছনা ও জননীর গল্প, মধ্যাহ্ণ, বাদশাহ নামদার, সর্বশেষ দেয়াল। সময়ের কোন উইপোকাই এই বইগুলোর পৃষ্ঠা কাটতে পারবে না। এই ভার্চুয়াল পৃথিবীকেই না হয় সাক্ষী রাখলাম। ইতিহাস আর সময়কে একইসাথে ধরতে গেলে পাঠক চিরকালই আশ্রয় খুঁজবে এসবে।
ব্যক্তি হুমায়ূন প্রচণ্ড রসিক- মৃত্যু নিয়ে, নিজের কুলখানী নিয়ে, জগতকে নিয়ে তার শ্লেষাত্মক বুদ্ধিদীপ্ত উক্তির শেষ নেই। মুর্খ প্রজাতির অনেকে তার ধর্মীয় বিশ্বাস নিয়ে কথা-বার্তা কম বলে নি। তার বইই সাক্ষ্য দেয় তিনি কি ছিলেন ।অতএব, মূর্খদের হিসেবে আনার সময় নেই। বিভিন্ন হাস্য-রসাত্মক নাটকে কিংবা অধ্যাপকদের ভাষায় বলতে গেলে “সস্তা বাজারী নাটকে” তিনি প্রকারান্তরে সমাজের অন্যায়ে, দ্বিচারিতায় আঙ্গুল তুলেছিলেন-“এনায়েত আলীর ছাগল”, “রুপার ঘণ্টা”- আরো কত কিছু।
তবে হুমায়ূন যখন জনপ্রিয়তার চূড়ায় প্রথমবার আরোহণ করলেন তারপর লেখক প্রকাশকদের অনুরোধে তাঁকে বই লিখতে হলো। পড়লেই বোঝা যায় এটা “প্রকাশক-জনরা” 'র বই। কাজেই এসব হয়তো......। তারপরও বলতে হয় “হুমায়ূনের কালি মোছা কি এতোই সোজা”??
নব্বই এর দশকে শেষদিকে এসে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক খাতে লাগলো লু-হাওয়া। পুঁজিবাদী বহুজাতিকরা তাদের জাদুকরী ল্যাপটপ নিয়ে বাংলাদেশে কঠিনভাবে প্রবেশ করলো। ফলাফল অবশ্যই পুঁজিবাদীয়। আয়-বৈষম্যের ক্রমাগত বৃদ্ধি, অসুস্থ অর্থনীতির লাগামহীন অনুপ্রবেশ, মধ্যস্বত্বভোগী নতুন এক “উচ্চ-মধ্যবিত্ত” শ্রেণির উদ্ভব। কাজেই পরিবেশ বদলে গেলো। এখন রাজপুত্র তার সমসাময়িক রাবেয়া আপা কিংবা দাদাভাইকে খুঁজে পেলেন নাহ। শুরু হলো তার নতুন অভিযাত্রা। ব্যক্তিগত মতামত, এ সময়ই এসে তিনি তার “মধ্যবিত্ত-প্রতিভূ” পরিচয় ফেলে দেন। অবশ্য দেয়া ছাড়া কোন উপায়ই ছিল না; কারণ পুঁজি তখন বেপরোয়া; তথাকথিত মধ্যবিত্তের তখন আর কোন অস্তিত্বই নেই। ফলাফলে-হিমু, মিসির আলী সহ আরো ইতিহাস নির্ভর কাজ এ সময়েই।
একটা ক্ষেত্রে আমার মনে হয় তার প্রতি কৃতজ্ঞতা ছাড়া আর কিছুই দেবার নেই। আর সেটা হলো লোকসাহিত্যে তার অবদান। হাসন রাজাকে, উকিল মুনশীকে তিনি তুলে এনেছেন আমাদের সামনে, বারী সিদ্দিকীকে আমাদের সামনে এনেছেন। তার নাটকে, বইয়ে- তিনি অজস্র-অজস্র বার এনাদের এনেছেন। সচেতনভাবেই এনেছেন। আমাদের মাটির ডাক শুনিয়েছেন। বাউলদের মুখ দিয়ে উচ্চারণ করিয়েছেন “পিরিতের বাজার ভালো না”!! নিজেও সে ঢঙ্গে লিখেছেন “চান্নিপসর রাইতে যেনো আমার মরণ হয়”
কিছু “পাগলামী”ও আমাদের মাঝে ঢুকিয়েছেন। আমাদের বৈষয়িকতাকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে তিনি শিখিয়েছেন টিনের চালে বৃষ্টি শুনতে, শিখিয়েছেন ভরা পূর্ণিমায় জোছনা দেখতে, শিখিয়েছেন বর্ষার প্রথম কদম ফুল উপহার দিতে!
পাঠক সমাজের পক্ষ থেকে রাজপুত্রের কাছে শুধু একটিই আর্জি, তার মতো করেই বলবো “যদি মন কাঁদে তুমি চলে এসো একা বরষায়”!!
( আজকে তার জন্ম-মৃত্যু কোন দিবসই নাহ। তবুও অনেকদিন ধরেই ভাবছিলাম লিখবো, লিখবো। অবশেষে সাহস করেই ফেললাম। আর তাতেই এই । )
২| ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৩৮
রিয়াসাত মোর্শেদ খান বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া।
৩| ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ৮:১৭
আমিনুর রহমান বলেছেন:
চমৎকার লেখা !
৪| ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:০৩
হানিফ রাশেদীন বলেছেন: ভালো লাগা রইলো।
৫| ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:৪৫
রিয়াসাত মোর্শেদ খান বলেছেন: এত্তগুলা ধন্যবাদ আপনাদের
৬| ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:২৮
কলমের কালি শেষ বলেছেন: চমৎকারভাবে সাজিয়ে লিখেছেন । রাজপুত্রের অবদানগুলো এবং তার সাথে বাস্তবের যোগসাজস । তিনি তো তাঁর জন্মদিন এবং মৃত্যুদিনের জন্য স্বরনীয় না তিনি তিনশ পয়ষট্টি দিনের জন্য স্বরনীয় । ভালো করেছেন এই দুই দিনের বাহিরে লিখে ।
৭| ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সকাল ১০:৩৪
রিয়াসাত মোর্শেদ খান বলেছেন: আসলে সাজিয়ে লেখার সর্বাত্মক চেষ্টাটাই করেছিলাম। কিন্তু হলো না দেখে খুঁতখুঁত লাগছিলো। অবশেষে খুঁতখুঁতানি সামান্য গেলো!!
"তিনি তো তাঁর জন্মদিন এবং মৃত্যুদিনের জন্য স্বরনীয় না তিনি তিনশ পয়ষট্টি দিনের জন্য স্মরণীয়"- এটা আমি নিজেও বিশ্বাস করি .....
৮| ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১২:৫৫
বাঙ্গাল অ্যানোনিমাস বলেছেন: সুন্দর লেখা ...
৯| ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:৪৫
আফসানা যাহিন চৌধুরী বলেছেন: এক কথায় অসাধারণ কাজ এবং এজন্য অবশ্যই আপনার বাহবা প্রাপ্য।
হুমায়ুন আহমেদকে আমি নিজেও সম্বোধন করি “দি হুমায়ুন” বলে দি ওয়ান এন্ড অনলি...!
আশা করছি বাদশাহ হুমায়ুনকে নিয়ে এমন নিরীক্ষাধর্মী লেখা আমাদের আরও উপহার দেবেন।
ভালো থাকবেন।
১০| ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সকাল ৮:১৮
রিয়াসাত মোর্শেদ খান বলেছেন: "দি ওয়ান এন্ড অনলি- একদম সত্যি।
আর আমরা বাদশাহ-প্রেমীরা আরো বেশি লিখবো আর তাকে ভালোবাসবো এই কামনাই থাকলো।
ভালো থাকবেন।
১১| ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১:২৭
মনিরা সুলতানা বলেছেন: রাজপুত্রের জন্য ভালোবাসা ...
আপনার লেখার হাত অসাধারন
মুগ্ধতা রেখে গেলাম
©somewhere in net ltd.
১|
০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:০৮
মাহমুদ০০৭ বলেছেন: হুমায়ূন আহমেদ কে নিয়ে আপনার এই লেখাটা অনেক ভাল লাগল ভাই । ভাল থাকবেন ।