নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

প্রলাপ

হয়তো আমি নিয়ত আবর্তনশীল এক আবদ্ধ ঘূর্ণিপাকে

রিয়াসাত মোর্শেদ খান

জিরো ডিভাইডেড বাই জিরো

রিয়াসাত মোর্শেদ খান › বিস্তারিত পোস্টঃ

সরলীকৃত রাজনৈতিক চক্র এবং একটি উৎকট রসিকতা

০২ রা অক্টোবর, ২০১৪ বিকাল ৪:৪৭


বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে মোটামুটি প্রবাসী-এদেশী সকলেই হতাশ। অবশ্য হতাশ না হওয়ার কোন কারণই নাই। তবে হতাশার পয়েন্ট অফ ভিউ সবার একই না। যেমন- সাধারণ খেটেখাওয়া মানুষজন হরতালে হতাশ হয় রাজনীতির মার-কাটারি দেখে, আমজনতা হতাশ হয় দুইদলের কাদা-ছোঁড়াছুড়ি দেখে, প্রবীণ মানে দাদুরা হতাশ হন রাজনীতির নীতিহীনতা দেখে, আর সমাজের সুশীল স্যারেরা হতাশ হন আরো নানাভাবে যেমন- রাজনীতিতে ব্যবসায়ীর সংখ্যা বৃদ্ধিতে, তাদের লুটপাটে, রাজনীতিকে ব্যবসার কিংবা বিনিয়োগের ক্ষেত্র বানাতে। অর্থাৎ হতাশার অনেক ডাইমেনশান কিন্তু কনসেপ্ট একটাই আর সেটা হলো নষ্টামি। সোজা হিসেবে আমরা সকলে রাজনীতির নামে নষ্টামি দেখে ত্যক্ত-বিরক্ত হওয়া ছেড়ে তারও অগ্রসর ধাপ হতাশায় এসে পৌঁছেছি। ত্যক্ত-বিরক্ত হওয়ার সুবিধা হলো সেটাকে মেনে না নিয়ে বরং প্রতিহত করার যৎসামান্য বাসনা তাতে থাকে কিন্তু হতাশ হয়ে গেলে সবই শেষ কেননা তখন প্রতিহত করার সেই মানসিক অবস্থা থাকেনা; কারণ সেটাই তখন নিয়মে পরিণত হয়।
যাই হোক, একজন খাঁটি বাঙ্গালী কিংবা বাংলাদেশি (চেতনা নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে কাজেই জন্মসূত্রে হলেও খাঁটি!!) হিসেবে রাজনীতি নিয়ে আমারও নিজস্ব একটা মতামত আছে। সেটা বিএনপি না আওয়ামী লীগ তা নিয়ে না। কারণ দুটাকেই নষ্ট মেনে নিলে ধারণা হতে হয় নষ্টামির পয়েন্ট অফ ভিউ নিয়ে।
মতটা সোজাসাপ্টা হিসেবে, “রাজনীতিকে সকল সুবিধা ভোগের কিংবা সুবিধা লাভের উৎসে পরিণত করা।” যত দোষ এই ঘোষেরই।
আসলে যখন আমরা সিস্টেম নিয়ে কথা বলি তখন একটু খেয়াল করলে দেখবো প্রত্যেক সিস্টেমই একেকটা লুপ। কিংবা আরো পরিষ্কার অথবা ঠিক করে বললে পুনঃপ্রক্রিয়াকরণ; যেখানে একই জিনিসের পুনরাবৃত্তি ঘটে।
আজকে আমরা যেসব নেতা কর্মী দেখছি কিংবা মেম্বার অফ পার্লামেন্ট বলে নিজেদের প্রতিনিধি বানাচ্ছি তাদের নামে যখন হত্যা- চাঁদাবাজির মামলা দেখি তখন নিজেদের নেতা নিয়ে একটু কৌতুহলী হতে হয় বৈকি। আর সে কৌতুহল থেকেই সামান্য উপলব্ধি।
ছাত্র-রাজনীতির মত এক বিরাট নেতা বানানোর প্রসেসিং আমাদের দেশে প্রচলিত। আর যেসব ছাত্র রাজনীতি করেন তাদেরও আছে এক বিরাট গালভরা উপাধি “ছাত্র-নেতা”। ঠিক যেমন, মেজর, ক্যাডেট, সিনিয়র অফিসার, লয়ার, টিচার তেমনি “ছাত্রনেতা”। নামের মধ্যেই কেমন জানি “হাওয়ামে উড়তা যায়ে, মেরা লাল দুপাট্টা মলমল”- টাইপের অনুভূতি! বলতে হয়না যে ক্লাসে সবচেয়ে ভালো ছেলেটি এই প্রসেসিঙে আসে না কিংবা পরে না। কিংবা ক্লাসের দেশ-বিদেশ জানা ছেলেটিও না। তাহলে কারা আসে? আসে ক্লাসের দুষ্টু ছেলেরা! যাদের মাথা নেই কিন্তু আছে পেশিবহুল হাত; যাদের হাতে কলম থাকে না, থাকে ছুরি-রামদা, যাদের মুখে থিওরি-ডকট্রিন থাকে না, থাকে মুখস্থ স্লোগান। আর যাদের কাজ টেন্ডারবাজি করা, মিছিল করা, হকিস্টিক নিয়ে হকি না খেলে দৌড়ানি দেওয়া কিংবা দৌড়ানি খাওয়া। এখন প্রশ্ন থাকতে পারে দৌড়াদৌড়ির মত এতো পরিশ্রমের কাজ করতে তাদের আগ্রহ কেন! আসলে ব্যাপারটি হলো ব্রেড এন্ড বাটারের!!
যতো বলশালী “ছাত্র” ততবেশি বিরোধী “ছাত্রদের” উপর চড়াও হতে পারবে, ততবেশি সরকারী দলের লাভ, ততবেশি এলাকায় প্রভাব; ফলে টেন্ডারবাজি থেকে শুরু করে অবৈধ দখল, নদী ভরাট, বালুর ব্যবসা- ফলাফল?? বিশাল টাকা-পয়সার মালিক। আর মানুষমাত্রই জানে Money is the second God!! আর বয়স যতই বাড়তে থাকে ততই এলাকার সবচেয়ে প্রভাবশালী কিংবা বিত্তশালীদের তালিকায় তিনি উঠে আসেন। তারপর নির্বাচনে দাঁড়ান। তারপর মেম্বার অফ পার্লামেন্ট! তারপর চামে-চিকনে আঞ্চলিক নেতা আর তারপর চাই কি মন্ত্রী!!
এখন এ তো গেলো ছাত্র রাজনীতির সুদূরপ্রসারী ফলাফল। কিন্তু তার চেয়ে ভয়ংকর সেটা যেটা ছাত্র থেকে উঠে আসে না; আসে ‘যুবক’ থেকে!! যেমন- প্রত্যেক রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনের মতো থাকে যুব সংগঠন! আমার মতে এগুলোই নষ্টের আরেক প্রকারের গোড়া।
যেমন- কোন রাজনৈতিক দল যদি তরুণদের মধ্যে তার অনুসারী সৃষ্টি করতে চায় তাহলে ছাত্ররাজনীতির সংগঠন থাকাই যথেষ্ট। কারণ স্বাভাবিকভাবেই দেশের তরুণেরা শিক্ষা নামের প্রক্রিয়াতেই যুক্ত থাকে। কিন্তু যখন আলাদা করে যুব-সংগঠন নাম দিয়ে কিছু একটা বানানো হয় তখন এ প্রশ্ন তুলতেই হয় যে তারা আসলে কাদেরকে তাদের অনুসারী বানাতে চায়? কারণ তরুণ সমাজের সবাই যদি ছাত্র হয়ে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করে তাহলে ছাত্রদের টার্গেট করলেই তাদের ইচ্ছা পূরণ হয়। কিন্তু যুব-সংগঠন টাইপের ব্যাপার গড়ে ওঠে কারণ এমন অনেকেই আছে যারা আদৌ ছাত্র নয়, কিংবা কোথাও লেখাপড়া করে না। কাজেই বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয় যে এরা কেউই ভদ্রস্থ তরুণ না কারণ ভদ্র ঘরের যে কাউকে শিক্ষার ট্যাগ নিয়ে থাকতে হয়। সোজা বাংলায় যুব-সংগঠনের নামে কিছু পাড়াতো মাস্তানদের পোষা হয় কিংবা জনসাধারণের ভাষ্যে বললে যারা হলো “বড় ভাই”! কাজেই এসব বড় ভাইরা এলাকার উপর তাদের ছড়ি ঘোরান, জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে চলেন, রাজনীতির বলে পুলিশ এবং প্রশাসন দুইটাকেই পকেটে নিয়ে চলাফেরা করেন। আর রাজনৈতিক দলগুলো তাদের পুষে কারণ তাদের দরকার আধিপত্য আর “বড় ভাইরা”ও পরম উৎসাহে এ কাজ করেন কারণ তাতে তাদের পকেট ভারি হয়।

তারপর সেই একই চক্র- বয়স হতে হতে এলাকার সবচেয়ে প্রভাবশালী হয়ে নির্বাচনে দাঁড়ান আর কয়েকদিন পর আমরা আবিষ্কার করি আমাদের প্রতিনিধিদের নামে এতো এতো হত্যা মামলা, চুরি মামলা, ডাকাতি মামলা- দুনিয়ার মামলা!! হয়তো দেখে অবাক হই কিন্তু অবাক হওয়ার তো কিছু নেই কারণ যৌবনকালে যেসব কু-কীর্তি করে বেড়িয়েছেন তা কি এতো সহজে মোছা যায় কিংবা সেই অভ্যাস কি এতো সহজে ছাড়া যায়?
তাতেই শেষ না কারণ তারপর মধ্যবয়সে এসে নিজেও এরকম ছাত্র কিংবা যুব সংগঠন পুষেন আর তাতে আরেক মাস্তান প্রজন্ম জন্ম নেয়। এই প্রক্রিয়াই তো বাংলাদেশ দেখে আসছে, কাজেই রাজনীতির কাছ থেকে ভালো আর কি-ই বা আশা করবো? যে রাজনীতির উদ্ভব ঘটে পাড়াতো সন্ত্রাসী থেকে, যে রাজনীতির উদ্ভব ঘটে ছাত্র নামের কুলাঙ্গারদের থেকে; যে রাজনীতির জন্ম হয় স্বার্থের উভমুখী বিক্রিয়ায়।

অনেক তো বিলাপ হলো এবার একটু রসিকতা করি...... রসিকতাটা হলো :-
“এভাবে গড়ে উঠা, আজীবন আইন ভেঙ্গে আসা “নেতা”রাই সংসদে “আইন” প্রণয়ণ করেন!!”

কাঁদো বাঙ্গালী, কাঁদো!!

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা অক্টোবর, ২০১৪ বিকাল ৪:৫৬

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: এবার একটু রসিকতা করি...... রসিকতাটা হলো :-
“এভাবে গড়ে উঠা, আজীবন আইন ভেঙ্গে আসা “নেতা”রাই সংসদে “আইন” প্রণয়ণ করেন!!”

কাঁদো বাঙ্গালী, কাঁদো!!

উপরি রসিকতা: এতদিনতো লোকদেখানো হলেও নির্বাচন নামক বৈতরনী পার হতে হত! এবার হাম্বারা তাও বাইপাসের সিস্টেম এস্টাবলিশ করে গেল!
অনির্বাচিত আইন প্রণেতা!!!

আর তাই বাঙালী কাঁদতে ভুুলে গিয়ে পাথর হয়ে গেছে X((

২| ০২ রা অক্টোবর, ২০১৪ বিকাল ৫:০৯

রিয়াসাত মোর্শেদ খান বলেছেন: ঠিক; ঠিক!! তবে পাথর হয়ে আঘাত করতে পারলে হয়।:৩

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.