নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বখত এ ইশক

বখত এ ইশক › বিস্তারিত পোস্টঃ

কেয়ামতের আলামতের প্রকাশ ও প্রস্তুতি । ঈমাম মাহদী আঃ থেকে দাজ্জালের ফিতনা ।

০৩ রা জুন, ২০১৬ রাত ১:১৪

সময় এত দ্রুত চলছে যে শেষ সময় নিয়ে আমরা ভাবছি না। আমাদের আলেমরা পর্যন্ত ঈমাম মাহদী আঃ ও মিথ্যুক দাজ্জাল নিয়ে মিম্বরে দাঁড়িয়ে খুতবা রাখেন না । কিছু পথভ্রষ্ট আলেম যেমন খারেজী শিয়া আর কাদিয়ানীদের পথভ্রষ্ট নীতি আজ আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামায়াত এর বিশ্বাসের উপর গুলি চালাচ্ছে। আহলে সুন্নাহর প্রত্যেকই তাদের নেতা ঈমাম মাহদী আঃ এর অপেক্ষায় থাকবে। তবে আহলে সুন্নাহর কিছু আলেম ইহুদী-নাসারার গোলাম হয়ে ঈমাম মাহদীর প্রকাশকালে ভিন্ন ভূমিকা রাখতে পারে। কারণ বর্তমান অনেক পরিস্থিতিতে এসব দরবারী আলেমরা ইসলামের চরম ক্ষতি করছে। তখন যে ক্ষতির পরিমাণ বেশি হবে সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
আবু যার (রা.) থেকে বর্ণিত : আমি একদিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাথে ছিলাম। আমি তাঁকে বলতে শুনলাম, “আমি আমার উম্মতের জন্য দাজ্জালের থেকে কিছু একটা ব্যাপার ভয় করি।” এটা শুনে আমি ভয় পেলাম এবং তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, “ইয়া রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সেটা কি?” তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন,“পথভ্রস্ট এবং ধ্বংসযোগ্য আলেমরা” [মুসনাদে আহমাদ (৫/১৪৫), হাদিস নং ২১৩৩৪ এবং ২১৩৩৫]
আমরা অনেকেই শেষ জমানার আলামত নিয়ে সচেতন নই । অনেক মুসলমান এমন ভাবে যে কেয়ামততো শত শত বছর পরে হবে । আমাদের আলেমরাও এসব নিয়ে তেমন কিছু বলেন না।
হযরত মু’আয ইবনে জাবাল (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “বাইতুল মাকদিসের আবাদ হওয়া(ইসরাইল রাষ্ট্র সৃষ্টি) মদিনার ক্ষতির কারণ হবে। মদিনার ক্ষতি মহাযুদ্ধের প্রেক্ষাপট(সমগ্র আরবের যুদ্ধ) তৈরি করবে। মহাযুদ্ধ কুস্তুন্তুনিয়ার (ইস্তাম্বুলের) বিজয়ের কারণ হবে(ঈমাম মাহদী আসার পর)। কুস্তুন্তুনিয়ার বিজয় দাজ্জালের আবির্ভাবের কারণ হবে।”

কিন্তু এসব মুসলমানরা ঘন ঘন ভূমিকম্পন ও বজ্র দেখলেই বলে উঠে আহা কেয়ামতের ছোট আলামতগুলো প্রকাশিত হচ্ছে । তবে এরা যতঠুকু জানে ঠিক ততঠুকুই মানে । কেয়ামতের ছোট আলামতগুলো ক্রমশই প্রকাশ পাচ্ছে । কেয়ামতের ছোট ছোট আলামতের মধ্যে রয়েছে-
১. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নবুয়ত লাভ। ২. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মৃত্যু। ৩. বায়তুল মোকাদ্দাস বিজয়। ৪. ফিলিস্তিনের “আমওয়াস” নামক স্থানে প্লেগ রোগ দেখা দেয়া। ৫. প্রচুর ধন-সম্পদ হওয়া এবং যাকাত খাওয়ার লোক না-থাকা। ৬. নানারকম গোলযোগ (ফিতনা) সৃষ্টি হওয়া। যেমন ইসলামের শুরুর দিকে উসমান (রাঃ) এর হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হওয়া, জঙ্গে জামাল ও সিফফিন এর যুদ্ধ, খারেজিদের আবির্ভাব, হাররার যুদ্ধ, কুরআন আল্লাহর একটি সৃষ্টি এই মতবাদের বহিঃপ্রকাশ ইত্যাদি। ৭. নবুয়তের মিথ্যা দাবিদারদের আত্মপ্রকাশ। যেমন- মুসাইলামাতুল কাযযাব ও আসওয়াদ আনসি। ৮. হেজাযে আগুন বের হওয়া। সপ্তম শতাব্দীর মাঝামাঝি ৬৫৪হিঃ তে এই আগুন প্রকাশিত হয়েছে। এটা ছিল মহাঅগ্নি। তৎকালীন ও তৎপরবর্তী আলেমগণ এই আগুনের বিবরণ দিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। যেমন ইমাম নববী লিখেছেন- “আমাদের জামানায় ৬৫৪হিজরিতে মদিনাতে আগুন বেরিয়েছে। মদিনার পূর্ব পার্শ্বস্থ কংকরময় এলাকাতে প্রকাশিত হওয়া এই আগুন ছিল এক মহাঅগ্নি। সকল সিরিয়াবাসী ও অন্য সকল শহরের মানুষ তাওয়াতুর সংবাদের ভিত্তিতে তা অবহিত হয়েছে। মদিনাবাসীদের মধ্যে এক ব্যক্তি আমাকে এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন, যিনি নিজে সে আগুন প্রত্যক্ষ করেছেন।” ৯. আমানতদারিতা না-থাকা। ১০. ইলম উঠিয়ে নেয়া ও অজ্ঞতা বিস্তার লাভ করা। ইলম উঠিয়ে নেয়া হবে আলেমদের মৃত্যু হওয়ার মাধ্যমে। সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিম এর সপক্ষে হাদিস এসেছে। ১১. ব্যভিচার বেড়ে যাওয়া। ১২. সুদ ছড়িয়ে পড়া। ১৩. বাদ্য যন্ত্র ব্যাপকতা পাওয়া। ১৪. মদ্যপান বেড়ে যাওয়া। ১৫. বকরির রাখালেরা সুউচ্চ অট্টালিকা নির্মাণ করা। ১৬. কৃতদাসী কর্তৃক স্বীয় মনিবকে প্রসব করা। এই মর্মে সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিমে হাদিস সাব্যস্ত হয়েছে। এই হাদিসের অর্থের ব্যাপারে আলেমগণের একাধিক অভিমত পাওয়া যায়। ইবনে হাজার যে অর্থটি নির্বাচন করেছেন সেটি হচ্ছে- সন্তানদের মাঝে পিতামাতার অবাধ্যতা ব্যাপকভাবে দেখা দেয়া। সন্তান তার মায়ের সাথে এমন অবমাননাকর ও অসম্মানজনক আচরণ করা যা একজন মনিব তার দাসীর সাথে করে থাকে। ১৭. মানুষ হত্যা বেড়ে যাওয়া। ১৮. অধিকহারে ভূমিকম্প হওয়া। ১৯. মানুষের আকৃতি রূপান্তর, ভূমি ধ্বস ও আকাশ থেকে পাথর পড়া। ২০. কাপড় পরিহিতা সত্ত্বেও উলঙ্গ এমন নারীদের বহিঃপ্রকাশ ঘটা। ২১. মুমিনের স্বপ্ন সত্য হওয়া। ২২. মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া বেড়ে যাওয়া; সত্য সাক্ষ্য লোপ পাওয়া। ২৩. নারীদের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া। ২৪. আরব ভূখণ্ড আগের মত তৃণভূমি ও নদনদীতে ভরে যাওয়া। ২৫. একটি স্বর্ণের পাহাড় থেকে ফোরাত (ইউফ্রেটিস) নদীর উৎস আবিষ্কৃত হওয়া। ২৬. হিংস্র জীবজন্তু ও জড় পদার্থ মানুষের সাথে কথা বলা। ২৭. রোমানদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়া এবং মুসলমানদের সাথে তাদের যুদ্ধ হওয়া। ২৮. কনস্টান্টিনোপল বিজয় হওয়া।
নিচের কয়েকটি আলামত ছাড়া বাকী ছোট আলামতগুলো সম্পন্ন হয়ে গেছে। যখন কেয়ামতের ছোট আলামতগুলো প্রকাশ পেতে থাকবে তখনই ঈমাম মাহদীর আত্মপ্রকাশ ঘনিয়ে আসবে । ঈমাম মাহদী হবেন কেয়ামতের ছোট আলামত ও বড় আলামতের মধ্যে যোগসূত্র । কারণ কেয়ামতের ১০টি বড় আলামতের মধ্যে ঈমাম মাহদীর আত্মপ্রকাশ ও শাসন কোনটিই নেই । তবে তার সময়কালেই কেয়ামতের ১ম বড় আলামত মিথ্যুক দাজ্জাল আবির্ভুত হবেন ।
হযরত আসমা বিনতে ইয়াজিদ আনসারিয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একদিন আমার ঘরে অবস্থানরত ছিলেন। সে সময় তিনি দাজ্জালের বিষয়ে আলোচনা করলেন। তিনি বললেন, “তার আগে তিনটি বছর অতিবাহিত হবে। প্রথম বছরটিতে আকাশ একতৃতীয়াংশ বৃষ্টি আটকে রাখবে আর মাটি একতৃতীয়াংশ ফসল ধরে রাখবে। দ্বিতীয় বছর আকাশ দুইতৃতীয়াংশ বৃষ্টি আটকে রাখবে আর মাটি দুইতৃতীয়াংশ ফসল ধরে রাখবে। তৃতীয় বছর আকাশ পূর্ণ বৃষ্টি আটকে রাখবে আর মাটি পূর্ণ ফসল ধরে রাখবে। ফলে সব ধরনের গবাদিপশু ধ্বংস হয়ে যাবে”। (আল মুজামুল কাবীর, হাদিস নং ৪০৬; মুসনাদে আহমাদ)
ঈমাম মাহদীর প্রকাশের আগ থেকেই মুমিন আর মুনাফিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলাদা হতে থাকবে। তবে ঈমাম মাহদীর সময় ঈমানী ও নিফাকের তাঁবু পুরোপুরি আলাদা হয়ে যাবে । কারণ যারা ঈমাম মাহদীর সৈনিক হবে তাদের তাঁবুতে কোন মুনাফিক থাকবে না। আর ঈমাম মাহদীর বিপক্ষ শিবিরে কোন মুমিন থাকবে না । কারণ দাজ্জাল এর কয় বছর পরই আত্মপ্রকাশ করবে।
উমাইর ইবনে হানী থেকে বর্ণিত, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “একটি সময় আসবে, যখন মানুষ দুটি তাঁবুতে (দলে) বিভক্ত হয়ে যাবে। একটি তাবু হবে ঈমানের, যেখানে কোন নিফাক (কপটতা/দ্বিমুখীতা) থাকবে না। অপর তাঁবুটি হবে নিফাকের, যেখানে কোন ঈমান থাকবে না। যখন এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়ে যাবে, তখন সেদিন থেকে বা তার পরদিন থেকে দাজ্জালের অপেক্ষা করো”। (সুনানে আবু দাউদ, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ৯৪; মুসতাদরাকে হাকেম, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ৫১৩)

প্রায় মুসলিম দেশে বিভিন্ন ইস্যুতে মুসলমানরা আলাদা আলাদা মতের উপর দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে মিডিয়া মূখ্য ভূমিকা পালন করছে।
দাজ্জাল আবির্ভূতের কিছু দিনের মধ্যে কেয়ামতের আরেক বড় আলামত ঈসা ইবনে মারইয়াম আঃ পৃথিবীতে প্রত্যাবর্তন করবেন । ঠিক এভাবে কেয়ামতের অন্য ৮টি বড় আলামত ছিড়ে যাওয়া পুঁতির মালা থেকে পুঁতি পড়ার মত দ্রুততার সাথে ঘটতে থাকবে ।
ইমাম মুসলিম হুযাইফা বিন আসিদ (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন যে, একবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে কথাবার্তা বলতে দেখে বললেন: তোমরা কি নিয়ে আলাপ-আলোচনা করছ? সাহাবীগণ বলল: আমরা কেয়ামত নিয়ে আলোচনা করছি। তখন তিনি বললেন: নিশ্চয় দশটি আলামত সংঘটিত হওয়ার আগে কেয়ামত হবে না। তখন তিনি ধোঁয়া, দাজ্জাল, বিশেষ জন্তু, সূর্যাস্তের স্থান হতে সূর্যোদয়, ঈসা বিন মরিয়মের অবতরণ, ইয়াজুজ-মাজুজ, পূর্ব-পশ্চিম ও আরব উপদ্বীপে তিনটি ভূমি ধ্বস এবং সর্বশেষ ইয়েমেনে আগুন যা মানুষকে হাশরের দিকে তাড়িয়ে নিয়ে যাবে বলে উল্লেখ করেন।
ঈমাম মাহদীর আগমন এবং তাঁর সময়কালের যুদ্ধের কথা হাদিসে উল্লেখ আছে এবং তাঁর রাজত্ব ঠিকে থাকবে ৭ কিংবা ৯ বছর। তাঁর সময়কালে দাজ্জালের আগমন ও তাঁর ফিতনায় মুসলমানদের পথভ্রষ্ট্রতা থেকে আল্লাহর কাছে আমাদের পানাহ চাওয়া উচিত। কারণ আল্লাহ বলেন-
“আল্লাহ যার বক্ষকে ইসলামের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছেন, সে তার রবের আলোর উপরই প্রতিষ্ঠিত। এই ব্যক্তি অন্যদের মতো হতে পারে না।” (সূরা জুমারঃ ২২)
ইসলামের জন্য বক্ষ প্রসারিত করার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করা উচিত। আর কেউ নিজ থেকে জান্নাতি মনে করলেও সে কি জান্নাতি হবে । তাঁর জন্য রয়েছে কঠিন পরীক্ষা।
“তোমরা কি মনে করছ যে, তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করবে, অথচ এখনও আল্লাহ জেনে নেননি যে, তোমাদের কে আল্লাহর রাহে যুদ্ধ করেছে আর কারা দৃঢ়পদ।” (সূরা আল ইমরান : ১৪২)

এখানে মূল ভয়টা দাজ্জালের ফেতনা নিয়ে । কারণ তার সূক্ষ চালে যে ধরা খাবে সে তো নিশ্চিত জাহান্নামী । ব্যাক্তির অন্য কোন আমল তখন কাজে আসবে না । আল্লাহ মানুষকে টাকা-পয়সা ,জমি ,নারী ,অসুখ সহ নানা ফিত্‍না দিয়ে আমাদের পরীক্ষা করেন । তবে দাজ্জালের ফিত্‍না এ সব কিছুকে অতিক্রম করবে । পৃথিবী সৃষ্টির পর দাজ্জালের মত অতবড় ফেত্‍না আসে নি আর আসবেও না ।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) সম্পর্কে বর্ণিত আছে, তিনি বলেছেন, “তিনটি আর্তনাদ উত্থিত হবে, যা পৃথিবীর পূর্ব ও পশ্চিমের সবাই শুনতে পারে…..। হে আব্দুল্লাহ, যখন তুমি দাজ্জালের সংবাদ শুনবে, তখন পালিয়ে যেয়ো। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) বলেন, আমি হুজায়ফাকে জিজ্ঞেস করলাম, আমরা যাদেরকে পিছনে রেখে যাব, তাদের হেফাজত কিভাবে করব? হযরত হুজায়ফা (রাঃ) বললেন, তাদেরকে আদেশ করে যাবেন, যেন তারা পাহাড়ের চূড়ায় চলে যায়। হযরত আব্দুল্লাহ (রাঃ) বলেন, তারা যদি সবকিছু ত্যাগ করে যেতে না পারে? তখন হুজায়ফা (রাঃ) বললেন, তাদেরকে আদেশ করে যাবেন, যেন তারা সবসময় ঘরেই থাকে। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, যদি তারা এ-ও করতে না পারে, তাহলে? হযরত হুজায়ফা (রাঃ) বললেন, হে ইবনে ওমর! সময়টি হবে আতঙ্ক, ফেতনা, অনাচার ও লুটপাটের। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে হুজায়ফা, সেই দুর্যোগ থেকে কোন মুক্তি আছে কি? হযরত হুজায়ফা (রাঃ) বললেন, কেন থাকবে না? এমন কোন ফেতনা নেই, যার থেকে মুক্তি নেই”।

মিডিয়া ও দরবারী আলেমরা আপনার এই পরীক্ষাকে কিভাবে কঠিন করবে জানেন ?
আবু যার (রা.) থেকে বর্ণিত : আমি একদিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাথে ছিলাম। আমি তাঁকে বলতে শুনলাম, “আমি আমার উম্মতের জন্য দাজ্জালের থেকে কিছু একটা ব্যাপার ভয় করি।” এটা শুনে আমি ভয় পেলাম এবং তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, “ইয়া রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সেটা কি?” তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন,“পথভ্রস্ট এবং ধ্বংসযোগ্য আলেমরা” [মুসনাদে আহমাদ (৫/১৪৫), হাদিস নং ২১৩৩৪ এবং ২১৩৩৫]
হযরত আবু দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “আমার উম্মতের ব্যাপারে আমি যে বিষয়টিকে বেশি ভয় করি, তা হল, বিভ্রান্তকারী নেতৃবর্গ।”

হাদিস অনুসারে ঈমাম মাহদীর আত্মপ্রকাশ হজ্বের সময় মিনায় যুদ্ধের মধ্যদিয়ে হবে । বর্তমান মিডিয়া তাঁকে হয়ত জঙ্গী হিসেবে আখ্যায়িত করবেন । আর আপনিও তাঁকে জঙ্গী বলবেন । কিছু দরবারী আলেমও হয়ত জেনে শুনে ,ভয়ে কিংবা টাকার লোভে মিথ্যা বলবেন। তবে মাহদী আঃ এর রাজত্বকাল খুব সুন্দরভাবে অতিবাহিত হবার প্রাক্কালে দাজ্জাল আসার সমূহ লক্ষণ প্রকাশ পাবে । চারদিকে খাদ্য ও পানি সংকট দেখা দিবে । তখন বর্তমান জায়ান্ট দেশগুলো দাজ্জালের অধীনে চলে আসবে এবং তাদের খাদ্য ও পানীয় শুধুমাত্র ঈমানের বিনিময়ে দিবে । দাজ্জালকে খোদা না মানলে হয়ত আপনি খাবার রিলিফ পাবেন না ।ঐদিকে আপনার সন্তান একফোঁটা পানি না পেয়ে মারা যাবে ।
নু’আইম ইবনে হাম্মাদ সংকলিত ‘আলফিতান’ –এ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) এর সূত্রে উল্লেখিত হয়েছে, ‘দাজ্জালের সঙ্গে ঝোল ও এমন গোশতের পাহাড় থাকবে, যা কখনো ঠাণ্ডা হবে না’।

যে দাজ্জাল মানুষকে খাদ্য ,পানি ও মৃত ব্যাক্তি জীবিত সহ নানা লোকদেখানো হিতমূলক কাজ করবে তাকে আজকের মিডিয়া তো “দ্যা ওয়ার্ল্ড হিরো” বলে ঘোষণা করবে । দাজ্জাল কেমন হবে তা না জানলে আপনি তাঁর ফাঁদে পা দিবেন।

দাজ্জালঃ দাজ্জাল আরবি ‘দাজলুন’ থেকে ব্যুৎপন্ন। ‘দাজলুন’ অর্থ আচ্ছাদিত করা। দাজ্জাল অর্থ অনেক আচ্ছাদনকারী। দাজ্জালকে এজন্য দাজ্জাল বলা হয় যে, সে নিজের মিথ্যা ও প্রতারণার মাধ্যমে সত্যকে ঢেকে ফেলবে। প্রতারণার মাধ্যমে সে বড় বড় লোকদেরকে বিভ্রান্ত করে ফেলবে। তার ধোঁকা ও প্রতারণার ফাঁদে পড়ে মানুষ দেখতে না দেখতে ঈমান থেকে হাত ধুয়ে বসবে ।

হযরত ইবনে ওমর (রাঃ) বর্ণনা করেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “দাজ্জালের ডান চোখ কানা হবে, যেন সেটি ফুলে থাকা আঙুর”। (সহিহ বুখারি, হাদিস নং ৬৫৯০)
হযরত হুজায়ফা (রাঃ) বর্ণনা করেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “দাজ্জালের বাম চোখ কানা হবে। মাথার চুলগুলো হবে ঘন ও এলোমেলো। তার সঙ্গে জান্নাত ও জাহান্নাম থাকবে। কিন্তু মূলত তার জাহান্নাম হল জান্নাত আর জান্নাত হল জাহান্নাম”। (সহিহ মুসলিম, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ২২৪৮)
হযরত উবাই ইবনে কা’ব (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “দাজ্জালের চোখ সিসার মতো সবুজ হবে।” (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস নং ২১১৮৪; সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস নং ৬৭৯৫)

দাজ্জালের চোখ সম্পর্কে একাধিক বর্ণনা এসেছে। কোথাও তার ডান চোখ কানা বলা হয়েছে। কোথাও বাম চোখ। এ বিষয়ে মুফতি মুহাম্মদ রফী’ উসমানী সাহেব ‘আলামতে কেয়ামাত ওয়া নুযূলে মাসিহ’ নামক গ্রন্থে লিখেছেন, “সার কথা হল, দাজ্জালের দুই চোখই ত্রুটিপূর্ণ হবে। বায়েরটি একদম জ্যোতিহীন ও মোছানো আর ডানেরটি কোঠর থেকে বের হওয়া থাকবে আঙ্গুরের মতো।

হযরত আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) বর্ণনা করেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “পৃথিবীতে যত নবী রাসূল প্রেরিত হয়েছে, তারা প্রত্যেকেই নিজ নিজ উম্মতকে মিথ্যাবাদী কানা দাজ্জাল সম্পর্কে সতর্ক করেছে। দাজ্জাল কানা-ই হবে। আর তোমাদের রব অবশ্যই কানা নন। আর দাজ্জালের দুই চোখের মাঝখানে লিখা থাকবে ‘কাফিরুন’”। (সহিহ বুখারি, হাদিস নং ৬৫৯৮)
দাজ্জালের চুল সম্পর্কে ফাহুল বারীতে আছেঃ ‘তাঁর মাথাটা যেন কোনও গাছের কতগুলো ডাল’। অর্থাৎ – চুল পরিমাণে বেশি ও এলোমেলো হওয়ার কারণে মাথাটিকে গাছের ডাল পালার মত মনে হবে। অপর এক বর্ণনায় আছে, “দাজ্জালের একটি চোখ বসানো থাকবে। অপর চোখে মোটা দানা থাকবে। তাঁর দুই চোখের মাঝে ‘কাফিরুন’ লিখা থাকবে, যেটি লেখাপড়া জানা অজানা সব মুমিন পড়তে পারবে”। (মিশকাত শরীফ, খণ্ড ৩, হাদিস নং ৫২৩৭)
মুসনাদে আহমাদের বর্ণনায় একথাও আছে যে, “তাঁর সঙ্গে দুজন ফেরেশতা থাকবে। তারা দুজন নবীর আকারে তার হাতে থাকবে। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আমি চাইলে উক্ত দুই নবী ও তাদের পিতাদেরও নাম বলতে পারবো। তাদের একজন দাজ্জালের ডান দিকে, একজন বাঁ দিকে থাকবে। এটি হবে পরীক্ষা। দাজ্জাল বলবে, আমি তোমাদের রব নই কি? আমি কি মৃতকে জীবিত করতে পারি না? আমি কি মৃত্যু দিতে পারি না? উত্তরে এক ফেরেশতা বলবে, তুমি মিথ্যা বলছ। তার এই উক্তি দ্বিতীয় ফেরেশতা ছাড়া আর কেউ শুনতে পাবে না। ফলে দ্বিতীয় ফেরেশতা তার উত্তরে বলবে, তুমি ঠিকই বলেছ। দ্বিতীয় ফেরেশতার এই উক্তি সবাই শুনতে পাবে এবং ধরে নিবে, এই ফেরেশতা দাজ্জালকে সত্যায়ন করছে। এটিও হবে একটি পরীক্ষা”। (মুসনাদে আহমাদ, খণ্ড ৫, পৃষ্ঠা ২২১)
দাজ্জাল সুনির্দিষ্ট এক ব্যক্তি হবে। কারণ, হাদিসে সুস্পষ্টভাবে এ বিষয়টি বর্ণনা করা হয়েছে। কাজেই কোন রাষ্ট্র বা মিডিয়াকে দাজ্জাল মনে করা ঠিক নয়। যেমনটি খাওয়ারিজ , জাহমিয়া ও হিজবুত তওহীদ প্রভৃতি ভ্রান্ত দলসমূহ মনে করে থাকে। তামীমদারি(রাঃ) এর ঘটনা থেকে দাজ্জাল যে সুনির্দিষ্ট এক ব্যাক্তি তা সহজেই বুঝা যায়।
দাজ্জালের সাথে হযরত তামীমদারি (রাঃ) এর সাক্ষাত
হযরত ফাতেমা বিনতে কায়েস (রাঃ) বর্ণনা করেন, “একদিন আমি নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এক ঘোষককে ঘোষণা করতে শুনলাম, ‘নামাজ প্রস্তুত’। শুনে আমি মসজিদে চলে গেলাম এবং নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ইমামতে নামাজ আদায় করলাম। আমি মহিলাদের সেই সারিটিতে ছিলাম, যেটি পুরুষদের একেবারে পেছনে ছিল। নামাজ সমাপ্ত করে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মিটিমিটি হাসতে হাসতে মিম্বরে উঠে বসলেন এবং বললেন, ‘প্রত্যেকে নিজ নিজ নামাজের স্থানে বসে থাকো’। তারপর বললেন, ‘তোমরা কি জান, আমি তোমাদেরকে কেন সমবেত করেছি?’ সাহাবাগন বললেন, ‘আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভালো জানেন।’ নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘আল্লাহর কসম, আমি তোমাদেরকে কোন বিষয়ের প্রতি উৎসাহ প্রদান কিংবা ভীতি প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে সমবেত করিনি। আমি তোমাদেরকে একটি ঘটনা শোনাবো। তামীমদারি নামে এক খ্রিষ্টান ছিল। সে আমার কাছে এসে মুসলমান হয়ে গেছে। সে আমাকে একটি ঘটনা বলেছে, যেটি আমি দাজ্জাল সম্পর্কে আগে যা বলেছি, তার অনুরূপ। সে আমাকে বলেছে :আমরা বনু লাখম ও বনু জুজামের ত্রিশজন লোক নিয়ে নৌভ্রমনে বের হয়েছিলাম। সমুদ্রের তরঙ্গ এক মাস যাবত আমাদের নিয়ে দুলতে থাকল। এক পর্যায়ে আমরা একটি দ্বীপে গিয়ে উপনীত হলাম। তখন সময়টা ছিল সন্ধ্যাবেলা। আমরা ছোট ছোট ডিঙ্গিতে করে নেমে দ্বীপের ভেতরে ঢুকে গেলাম। ওখানে আমরা বিস্ময়কর প্রকৃতির একটি প্রাণীর সাক্ষাত পেলাম, যার মাথায় মোটা ও ঘন চুল ছিল। চুলের আধিক্যের কারণে আমরা বুঝতে পারিনি, প্রাণীটি আসলে কি। আমরা বললাম, তোমার ধ্বংস হোক, কে তুমি? প্রাণীটি বলল, আমি ‘জাসসাসা’। আমরা জিজ্ঞেস করলাম, ‘জাসসাসা’ কি? সে বলল, তোমরা গির্জায় সেই লোকটির নিকট যাও, যে তোমাদের সংবাদ নিয়ে খুবই বিচলিত। প্রাণীটি যখন আমাদের নাম উল্লেখ করল, তখন আমরা ভয় পেয়ে গেলাম যে, ওটা শয়তান কিনা! আমরা তাড়াতাড়ি গির্জায় চলে গেলাম। গিয়ে দেখলাম, ভেতরে বৃহদাকৃতির এমন একজন লোক বসে আছে যে, এমন ভয়ানক মানুষ আমরা এর আগে কখনও দেখিনি। লোকটির হাতদুটো কাঁধ পর্যন্ত আর পা দুটো হাঁটু পর্যন্ত শিকল দ্বারা বাঁধা।
আমরা জিজ্ঞেস করলাম, তোমার ধ্বংস হোক, কে তুমি? সে বলল, তোমরা যখন আমাকে পেয়েই গেছ আর আমাকে চিনে ফেলেছ, তা হলে বল, তোমরা কারা?
আমরা বললাম, আমরা আরবের লোক। সে জিজ্ঞেস করল, বায়সানের খেজুর গাছগুলোতে ফল ধরছে কি?
আমরা বললাম, হ্যাঁ, ধরছে তো। সে বলল, সেই সময়টি নিকটে, যখন সেগুলোতে ফল ধরবে না। তারপর জিজ্ঞেস করল, তারবিয়া উপসাগরে পানি আছে কি?
আমরা বললাম, হ্যাঁ, আছে। সে বলল, অদূর ভবিষ্যতে তার পানি শুকিয়ে যাবে।
তারপর সে জিজ্ঞেস করল, জুগার কূপের অবস্থা কি? তাতে পানি আছে কি? তার পার্শ্ববর্তি মানুষ সেই পানি দ্বারা কৃষিকাজ করছে কি?
আমরা বললাম, হ্যাঁ। তারপর জিজ্ঞেস করল, নিরক্ষর লোকদের নবী সম্পর্কে বল; তিনি কি করেছেন? আমরা বললাম, তিনি মক্কা থেকে হিজরত করে মদিনায় চলে গেছেন। সে জিজ্ঞেস করল, আরবরা তাঁর সঙ্গে যুদ্ধ করেছে কি?
আমরা বললাম, হ্যাঁ, করেছে। সে জিজ্ঞেস করল, তিনি আরবদের সঙ্গে কীরূপ আচরণ করেছেন? তামীমদারি জানায়, আমরা তাকে পুরো ঘটনা শোনলাম যে, আরবে যারা সজ্জন ছিল, তিনি তাদের জয় করে নিয়েছেন এবং তাঁর আনুগত্য মেনে নিয়েছে। শুনে লোকটি বলল, তাঁর আনুগত্য মেনে নেওয়াই ভালো। এবার আমি তোমাদেরকে আমার ইতিবৃত্ত বলছি। আমি মাসিহ (দাজ্জাল)। অচিরেই আমাকে আত্মপ্রকাশের আদেশ দেওয়া হবে। আমি বাইরে বের হব এবং সমগ্র পৃথিবী ভ্রমণ করব। এমনকি আমি এমন কোন জনবসতি বাদ রাখব না, যেখানে আমি প্রবেশ করব না। চল্লিশ রাত একটানা ঘুরতে থাকবো। কিন্তু মক্কা ও মদিনায় যাব না। ওখানে যেতে আমাকে বারন করা হয়েছে। আমি যখন তার কোনটিতে ঢুকতে চেষ্টা করব, তখন একজন ফেরেশতা তরবারি হাতে নিয়ে আমাকে প্রতিহত করবে। ওই শহরগুলোর প্রতিটি সড়কে ফেরেশতা মোতায়েন থাকবে।
এই ঘটনা শোনানোর পর আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাতের লাঠি দ্বারা মিম্বরের
উপর আঘাত করে বললেন, ‘এই হল তায়্যেবা – এই হল তায়্যেবা; মানে মদিনা’। তারপর তিনি বললেন, ‘শোন, আমি তোমাদেরকে এই বিষয়টিই বলতাম। মনে রেখো, মনে রেখো, দাজ্জাল শাম কিংবা ইয়েমেনের কোন সাগরে নেই। সে পূর্বের কোন একস্থানে আছে। সে পূর্বের কোন একস্থানে আছে। সে পূর্বের কোন একস্থানে আছে।’
(সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৫২৩৫)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.