নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সবার উপরে মানুষ সত্য

রাফি বাংলাদেশ

আমার পরিচয় আমি একজন বাঙ্গালী

রাফি বাংলাদেশ › বিস্তারিত পোস্টঃ

নাটক ও সংস্কৃতি চর্চায় সাম্রাজ্যবাদ এখন তুঙ্গে

২৭ শে জুন, ২০১৬ রাত ৮:১৫


ছোট বেলায় নাটক বা সিনেমা বলতে শুধুমাত্র বিনোদনই বুঝতাম। তবে স্কুলে থাকতে পালিয়ে সিনেমা দেখতে যাওয়াটা ছিলো বেস রোমাঞ্চকর। সেই রোমাঞ্চ কবে যে আমার স্বপ্নে কোঠরে বাসা বেধেছিলো মনে নেই। এ পল্লিতে এসেছিলাম একজন লেখক হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার জন্য। নাটক এবং সিনেমার গল্প লিখতাম আর স্বপ্ন দেখতাম আমার লেখা গল্প দিয়ে নাটক বা সিনেমা হবে। একটু আধটু ঢুমারার পর হঠাৎ মনে হলো আমি নির্মাতা হবো। সহকারী নির্মাতা হিসেবে যাত্রা শুরু করেছিলাম এ পল্লির অলিগলি চেনা। ঠিক কি কারনে এমন ইচ্ছা জেগেছিলো সেটা বলতে পারবো না তবে কোন কিছু সৃষ্টির মধ্যে যে একটা চরম স্বার্থকতা বা পরম আনন্দের সেটা ছোট বেলা থেকেই টের পেতাম। আমি বিশ্বাস করি প্রতিটা সৃজনশীল মানুষ অনেক বড় স্বপ্নবাজ হয়ে থাকে।
অনেকটা পরিবারের অসম্মতীতেই এই পেশায় এসেছি। পেশা এবং নেশা এই দুটো শব্দ একজন নির্মাতাকে মাতাল করে তোলে। এখানে যারা আসে তারা সবাই অনেক স্বপ্নবাজ। বিশেষ করে যারা নির্মাতা হতে চায় তারা অনেক বেসি স্বপ্ন দেখে। যাদের স্বপ্নের বেসির ভাগই দুস্বপ্ন হয়ে হাওয়ায় মিশে যায়। ঠিক হাওয়াই মিঠার মত। তবে স্বপ্ন মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে এবং স্বপ্ন মানুষকে সফলতার পথ দেখায়। আর সেই সফলতার পথ চেনার জন্য আমার মত অসংখ্য স্বপ্নবাজেরা এখানে আটকে আছে শুধুমাত্র একজন ভালো নির্মাতা হওয়ার আশায়। প্রশ্ন হচ্ছে এখানে ভালো নির্মাতা হওয়ার সুজোগ কতটুকু?
এজেন্সি গুলো নাটক এবং নাটকের মান গিলে খাচ্ছে। মুষ্টিমেয় কয়েকজন নির্মাতারাই একক ভাবে বিস্তার লাভ করছে। বরাবরই সুজোগের অভাবে অনেক নির্মাতার স্বপ্ন ধূসর হচ্ছে। ঝরে যাচ্ছে অনেক মেধাবী মুখ। কারো কোন দৃষ্টি নেই। প্রতিবার ঈদে হাতে গোনা কয়েকজনই কাজ পাচ্ছে। যাদের বেসির ভাগই দশটা বা ১৫টার উপরে নির্মান করছে। আবার তারাই সারা বছর কাজ করছে আর নতুন নির্মাতারা শুধুমাত্র তাদের কারনেই বঞ্চিত। অথচ নতুন নির্মাতাদের সুজোগ করে দেয়া বড়দেরই দায়িত্ব। এখানে মেধা বা যোগ্যতার বিচার নেই বললেই চলে। আমার এই কথা গুলোর হয়তো বা কোন ভিত্তি নেই কারো কাছে বা আমি যদি চিৎকার ছেড়ে বলি তাতেও লাভ হবে না। কর্তারা নিজের স্বার্থের বাইরে অন্য কোন শব্দ কানে শোনে না। টিভি চ্যানেলে কোন নাটকের প্রপোজাল নিয়ে গেলে সরাসরি এজেন্সির কথা বলে। মানে ওই মধ্যসত্বভোগী লোকেরা এখন নাটক নিয়ন্ত্রন করছে। ওনারাই ঠিক করে দেন চ্যানেলে কোন নাটক চলবে বা কখন চলবে। নাটকের মান পরিবর্তন করা হবে বলে যে দির্ঘ বছর আলাপন শুনছি সেটাও কল্পলোকের গল্প কথার মত। এখানে নাটক এখন এক কেন্দ্রিক হয়ে গেছে। নাটক মানেই ফানি হতে হবে এই বিশ্বাসে বলিয়ান আমাদের টিভি চ্যানেল। সিরিয়াস কোন নাটক নিয়ে গেলে বলে এটা আসলে নাটক নয় আর্ট ফিল্ম। গোটা পরিস্থিতিই এখন একটা এজেন্ডার ভেতরে সীমাবদ্ধ। এখানে কোন শিক্ষক নেই সবাই ম্যানেজিং কমিটির সদস্য যাদের কাজ শুধু খবরদারী করা আর বাহাদুরি দেখিয়ে নিজের স্বর্থ হাসিল করা। শিক্ষক থাকলে শেখার সুজোগ থাকে কিন্তু সেই সুজোগটা আমাদের এ পল্লিতে নেই। কতশত মেধাবী নির্মাতা শুধুমাত্র একটা ভালো সুজোগের অপেক্ষায় থেকে থেকে ঝরে যাচ্ছে সেটার খবর রাখার এখানে কেউ নেই। যে পরিবারের কোন গার্ডিয়ান থাকে না সে পরিবারের সন্তানেরা নষ্ট হয়ে যায় পঁচে যায়। শুধুমাত্র গার্ডিয়ান আর সমন্ময়ের অভাবে দিন দিন নাটকের মান যেমন খারাপ হয়ে যাচ্ছে তেমন ভাবেই ঝরে যাচ্ছে অসংখ্য মেধাবী মুখ।
আমাদের দেশে ভারতের কালচারে তৈরি টিভি চ্যানেল ও নাটক তৈরি হচ্ছে এবং দর্শক জরিপে তারা প্রথম শারিতে আসছে। আমাদের এ পল্লিতে কোন কর্তৃপক্ষ নেই তাই এসব দেখার কেউ নেই। আর আমার এই কথা গুলো শোনার কোন মানুষ ও নেই।
নাটক সমাজ পরিবর্তনের সব থেকে বড় হাতিয়ার। কিন্তু এটা যখন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হয়ে যায় তখন সেটা হয় সাম্রাজ্যবাদের আখড়া যেখানে ক্ষমতার দাপট আর স্বার্থের শেকলে বন্দি থাকে সমাজ এবং সমাজের বিবেক। প্রতিবাদ করার দ্বিতীয় কোন শক্তি থাকে না। আমাদের ঠিক একই অবস্থা হয়েছে। আমরা যারা অনেক বড় স্বপ্ন বুকে লালন করে নির্মাতা হতে এসেছি তারা কেউ ই মনের কথাটা প্রকাশ করা জায়গা খুজে পাই না। মনে হয় আমরা ও এ পল্লিতে সাম্রাজ্যবাদের জাতাকলে পিষে মরছি।
একটা ভালো প্রতিষ্ঠান নেই যেখান থেকে একজন ভালো নির্মাতা বের হয়ে আসবে। শেখার কোন সুজোগ নেই। বেসির ভাগ নির্মাতারাই তাদের সহকারিকে স্ক্রিপ্ট ধরে রাখা আর্টিষ্ট ডাকা আর ‍দুপয়শা দিয়ে শ্রমীক হিসেবে কাজ করিয়ে নেন কিন্তু হাতে কলমে নির্মান শেখার কোন সুজোগ তারা পায় না। সঠিক শিক্ষা আর সুজোগের অভাব প্রতিনিয়ত এখানে থেকেই যাচ্ছে। কাজ জানার বা বোঝার ক্ষমতা থাক বা না থাক যে কেউ নির্মাতা বনে যাচ্ছে। মুড়ির মত নাটক তৈরি হচ্ছে আর সে নাটক চ্যানেলে ও অন এয়ার হচ্ছে যার বড় কৃতিত্ব রাখছে মধ্যসত্বাভোগী এজেন্সি। খুব কম টাকায় নাটক কিনে লাভবান হচ্ছে তারা আর প্রযোজক হাজার হাজার টাকা লস করে নাটক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। আর এই সুজোগটা নিচ্ছে এক শ্রেনীর অসৎ চরিত্রের মানুষ। শুধুমাত্র অসৎ উদেশ্যে এখানে টাকা ঢালছে এক শ্রেনীর অশিক্ষিত মৌসুম প্রযোজকেরা। আবার এইসব অসৎ শ্রেনীর প্রযোজকদের ব্যবহার করে অযোগ্য ব্যক্তিরা নির্মাতা বনে যাচ্ছেন খুব সহজেই। এটাই যখন বর্তমান অবস্থা তখন নাটকের মান পরিবর্তনের আশা করাটা নিতান্তই পাগলামি। উইপোকার মত নির্মাতা গজাচ্ছে দিন দিন আর নাটকের মান চলে যাচ্ছে শুণ্যের কোঠায়। দেখার কেউ নেই। যারা দির্ঘ দিন ধরে নির্মাতা হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে সহকারী হিসেবে কাজ শিখছে তারা বঞ্চিত হচ্ছে। তাদের যোগ্যতা বা মেধার মুল্যায়ন হচ্ছে না। এখানকার স্বপ্নবাজেরা ঠিক এ ভাবেই ধংশ হয়, অকালে ঝরে যায়।
আমার জানা মতে পাশের দেশ ভারতেই নির্মাতাদেরকে প্রথম শ্রেনীর নাগরীক হিসেবে গন্য করা হয় এবং তাদেরকে সে ভাবেই সম্মান করা হয় কিন্তু আমাদের দেশে! কারো কাছে একজন নির্মাতা হিসেবে পরিচয় দিতে লজ্জা করে। অনেকের দৃষ্টিতে নির্মাতাদের স্বভাব চরিত্র খারাপ হয়। এটা শুধুমাত্র তাদের ভাবনা বাস্তবতা যায় হোক না কেন। কিন্তু এই ব্যর্থতার দায় কে নেবে? এই দায়ভার নেয়ার ও কোন মানুষ নেই। যে নির্মাতা দর্শক তৈরি করে সেই নির্মাতা দর্শকদের দৃষ্টি ভঙ্গি পরিবর্তন করাতে পারে না এটা কখনোই বিশ্বাস যোগ্য নয়। আসলে এসব বিষয়ে ও কারো মাথা ব্যাথা নেই। এখানে কেউ মধ্যসত্বভোগী কেউ এজেন্ডা আবার কেউ শিল্প ব্যবসায় ব্যস্ত। নাটক সমাজ পরিবর্তনের যে বড় হাতিয়ার সে কথা সবাই বেমালুম ভুলে গেছে। যিনি এই সমাজ পরিবর্তনের জন্য পরবর্তিতে হাল ধরবেন তিনি সর্বদায় বঞ্চিত হচ্ছেন। নির্মাতা হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে প্রতিদিন কতশত তরুন মেধাবীরা ঝরে যাচ্ছে সেটার খবর কেউ রাখে না।
নাটক এখন পুরোদমে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যেখানে মুষ্টিমেয় কিছু ব্যবসায়ি শিল্পের নামে ব্যবসা করে যাচ্ছেন। আর ধস নামছে বাংলা নাটকের। সিনেমার কথা না হয় বাদই দিলাম। কিন্তু এভাবে আর কতদিন! আমরা যারা বাবা মায়ের স্বপ্নকে মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়ে শুধুমাত্র নিজেদের স্বপ্ন আর একান্ত ইচ্ছাকে বাস্তবায়ন করতে এসেছি। তাদের কি হবে? নির্মানকে সারথী হিসেবে বুকের মাঝে আগলে রেখে প্রতিদিন কতশত মেধাবী মুখ না খেয়ে দিন কাটায় কেউ কি তার খবর রাখে? একটা ভালো সুজোগের অভাবে কতশত তরুন তার বাবা মায়ের স্বপ্নকে জলাঞ্জলি দিয়ে অকালেই ঝরে যাচ্ছে। কেউ কি জানে শুধুমাত্র একজন নির্মাতা হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে বছরের পর বছর বাবা মায়ের আদর ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে! কে রাখে কার খবর। যাদের সুজোগ আছে শুধুমাত্র তারাই সব সুজোগ নিচ্ছে আর যাদের সুজোগ নেই তারা ধংশ হয়ে যাচ্ছে।
তবুও স্বপ্ন দেখি নির্মাতা হতে এসে কোন মেধাবী মুখ অকালে ঝরে যাবে না। যোগ্যরা সঠিক মুল্যায়ন পাবে আর নাটকের মান আবার ফিরে আসবে। এজেন্সি মুক্ত ঝকঝকে সুন্দর নাটক উপহার দিতে চাই। যেখানে দর্শক প্রান ভরে নাটক উপভোগ করতে পারবে। সমাজ ও সভ্যতার শালিন পরিবর্তনের জন্য নাটক সব থেকে বেসি ভুমিকা রাখতে পারে বলে আমি বিশ্বাস করি। আর এটাও বিশ্বাস করি এখনো সমগ্র ভারত বর্ষে আমরাই নাটকে সবার থেকে বেসি প্রশংসিত। আমাদের নিজেদের গাফিলতীর কারনে সেটা ধংশ হবে সেই কামনা করি না। আমরা যারা নির্মাতা হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে এখানে দিনের পর দিন কষ্ট করে বেঁচে থাকি তাদের কষ্ট লাঘব হবে একদিন। বাংলা নাটক আবার প্রান ফিরে পাবে আর প্রতিটা নির্মাতা ফিরে পাবে তাদের যোগ্য সম্মান একজন নির্মাতা হিসেবে এই কামনা করতেই পারি।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে জুন, ২০১৬ রাত ৮:৫১

ঘটক কাজী সাহেব বলেছেন: যিনি এই সমাজ পরিবর্তনের জন্য পরবর্তিতে হাল ধরবেন তিনি সর্বদায় বঞ্চিত হচ্ছেন। নির্মাতা হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে প্রতিদিন কতশত তরুন মেধাবীরা ঝরে যাচ্ছে সেটার খবর কেউ রাখে না।

আমরা যারা বাবা মায়ের স্বপ্নকে মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়ে শুধুমাত্র নিজেদের স্বপ্ন আর একান্ত ইচ্ছাকে বাস্তবায়ন করতে এসেছি। তাদের কি হবে?

নির্মানকে সারথী হিসেবে বুকের মাঝে আগলে রেখে প্রতিদিন কতশত মেধাবী মুখ না খেয়ে দিন কাটায় কেউ কি তার খবর রাখে? একটা ভালো সুজোগের অভাবে কতশত তরুন তার বাবা মায়ের স্বপ্নকে জলাঞ্জলি দিয়ে অকালেই ঝরে যাচ্ছে। কেউ কি জানে শুধুমাত্র একজন নির্মাতা হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে বছরের পর বছর বাবা মায়ের আদর ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে! কে রাখে কার খবর। যাদের সুজোগ আছে শুধুমাত্র তারাই সব সুজোগ নিচ্ছে আর যাদের সুজোগ নেই তারা ধংশ হয়ে যাচ্ছে।

তবুও স্বপ্ন দেখি নির্মাতা হতে এসে কোন মেধাবী মুখ অকালে ঝরে যাবে না। যোগ্যরা সঠিক মুল্যায়ন পাবে আর নাটকের মান আবার ফিরে আসবে।

আমরা যারা নির্মাতা হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে এখানে দিনের পর দিন কষ্ট করে বেঁচে থাকি তাদের কষ্ট লাঘব হবে একদিন।

প্রতিটা নির্মাতা ফিরে পাবে তাদের যোগ্য সম্মান একজন নির্মাতা হিসেবে এই কামনা করতেই পারি।

কথাগুলি বাস্তব। ছোট্ট দু'লাইনে ভালো কিছু লেখাও একটা নির্মাণ, এবং তিনি নির্মাণদাতা।

এই যেমন আমার একটি এক লাইনের লেখা,

''তোমরা যদি সৃষ্টিকর্তাকে ভালবাসতে চাও তবে সবার আগে মানুষ কে ভালোবাসো, কারন তিনি মানুষের মাঝেই বিরাজও মান''

ভালো থাকুন কবি সব সময়।

২| ২৭ শে জুন, ২০১৬ রাত ৯:২৭

রাফি বাংলাদেশ বলেছেন: আপনার এই এক লাইনের কথা অনেক শক্তিশালী। আপনার জন্য শুভ কামনা :|

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.