নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সবার উপরে মানুষ সত্য

রাফি বাংলাদেশ

আমার পরিচয় আমি একজন বাঙ্গালী

রাফি বাংলাদেশ › বিস্তারিত পোস্টঃ

মুক্তিযুদ্ধে আকবর বাহিনী ও রাষ্ট্রের কাছে প্রার্থনা

০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ৩:০১


ছেলে বেলায় মায়ের কোলে শুয়ে শুয়ে মুক্তিযুদ্ধের গল্প শুনতাম। তখনও জানতাম না মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযোদ্ধা বা স্বধীনতা কি! আমার যখন একটু বুদ্ধি হলো বা যখন একটু বড় হলাম তখন কোন একদিন মাঠের এক কোনায় একটা মানুষের মাথা দেখতে পেলাম। মাটিটা খুড়ে দেখা গেলো একজন মানুষের কঙ্কল। সময়টা ছিলো ১৯৯০ সাল। আশে পাশের মুরব্বীরা এসে বললো এটা মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ের কোন মৃত মানুষের কঙ্কল। এই সময় একটা নাম উচ্চারিত হলো কয়েকবার। কয়েক জন বললো এটা সম্পর্কে আকবর চেয়ারম্যান ভালো বলতে পারবে। আমি তখন ছোট বলে আর কোন কিছু জানতে পারিনি। কিন্তু একটা কিউরিসিটি ভেতরে জমাট বেধে রইলো। কঙ্কল এবং আকবর চেয়ারম্যান। তারপর বড় হলাম, ইতিহাস জানলাম।
দির্ঘদিন ধরেই একজন মহানায়ককে নিয়ে লিখবো বলে প্লান করে বসে আছি। কিন্তু কোন ভাবেই সাহস করে উঠতে পারছিলাম না। যদি তার সম্পর্কে ঠিকমত লিখতে না পারি! এই ভয়টা সব সময়ই কাজ করতো। আমি যাকে নিয়ে লিখছি তার একজন উত্তরসূরীও আমি তবুও ভয় হয় যদি তাকে নিয়ে ঠিকমত লিখতে না পারি। তবে ভয়কে জয় করাটাও তার কাছ থেকে শিখেছি। কি ভাবে ভয়কে জয় করে দেশ রক্ষা করতে হয়, কি ভাবে সাধারন মানুষের জন্য জীবন উৎসর্গ করতে হয় তা এই মহামানুষটির কাছ থেকেই শিখেছি দুর থেকে হলেও। তবে আজ আমি যা লিখবো তা শুধু আপনাদের ইমোশনকে বা আপনাদের হৃদয়ে ব্যাথা দেয়ার জন্যই লিখবো। এই ব্যাথাটা আপনাদের পাওয়ার দরকার আছে।
যে মানুষটিকে নিয়ে লিখবো বলে কথা বলছি সেই মহা মানুষটির নাম প্রয়াত জনাব আকবর হোসেন মিয়া। যাকে বাংলাদেশ ন্যায্য মুল্যায়ন করেনি! তার যে সম্মানটা পাওয়ার কথা ছিলো সেটা তিনি বেঁচে থাকতে পাননি। তিনি যেদিন মারা যান সেদিন তার জানাযায় এত এত লোকের উপস্থিতি দেখে ভালো ভাবে টের পেয়েছিলাম, প্রয়াত জনাব আকবর হোসেন মিয়া আসলে কি ছিলেন। তবে খারাপ লাগাটা সেদিন থেকে আরো বেসি তৈরি হয়েছিলো! রাষ্ট্রের কাছে এই মানুষটি কতটুকু মুল্যায়ন পেয়েছিলো? বুকের ভেতের এই আফসোসটা আমাকে খুব পোড়ায়।
দির্ঘদিনের এই আফসোটাই আমি এতদিন ভেতরে লুকিয়ে রেখেছিলাম কিন্তু বলার সাহস পাইনি। ১৯৭১ সালে যাদের কে প্রথম সারির একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ধরা হয় তাদের কাতারের একজন আকবর হোসেন মিয়া। যার সাহসিকতা আর কঠোর নেতৃত্বে ৭১ এ গড়ে উঠেছিলো শ্রীপুর বাহিনী তথা আকবর বাহিনী। ১৩৩৪ বাংলা সনের ২৫ কার্তিক এই মহা মানুষটির জন্ম হয় মাগুরা জেলার শ্রীপুরের খামারপাড়া নামক এক অজো পাড়া গায়ে। মেধা আর সাহসিকতার জন্য এলাকায় ছিলো তার যথেষ্ঠ সুনাম। সবার বিপদের বন্ধ ছিলেন এই মানুষটি। ইংরাজি ১৯৫০ সালে তিনি ম্যাট্রিক পাশ করার পরে চাকুরি পান তৎকালীন পুলিশ বাহিনীতে। কিন্তু তার বাবা জনাব গোলাম কাদের মিয়ার অসম্মতিতে তিনি ১৯৫১ সালে রয়েল পাকিস্থানের বিমান বাহিনীতে যোগ দেন। এরপর তিনি দক্ষতার সাথে জিসিআই কর্পোরাল পদে উন্নীত হন।
পাকিস্থানিদের বৈষম্যমুলক আচরন তিনি কখনোই সহ্য করতে পারতেন না। আর বাঙ্গালীদের উপর পাকিস্থানের এই বৈষম্য সহ্য করতে না পেরে চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়ে ফিরে আসেন নিজ গ্রামে। ১৯৬৪ সালে তিনি আবার রাজনীতিতে সক্রিয় হন এবং বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের শ্রীপুর সাখার সাধারন সম্পাদক নির্বাচিত হন। সাধারন মানুষের কাছে তিনি এতই জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন যে ১৯৬৫ সাল থেকে টানা ২৪ বছর এলাকার চেয়ারম্যান নির্বাচিত ছিলেন। তিনি সেই সময়েই মাগুরা জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি(৩) মনোনিত হন। আকবর হোসেন মিয়া তখন সমগ্র মাগুরা জেলায় একজন প্রিয় মানুষ এবং সাহসী মানুষের নাম।
ছাত্র আন্দোলন থেকে শুরু করে দেশের জন্য তার রাজনৈতিক বিচরন ছিলো চোখে পড়া মত। রাজনীতি ও জনপ্রতিনিধিত্বের পথ ধরেই সক্রিয়ভাবে অংশ নেন ছেষট্টির ছয় দফা, ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানসহ সব আন্দোলন-সংগ্রামে। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষণকে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের আহ্বান হিসেবে নিয়ে নিজ এলাকায় মুক্তিবাহিনী গড়ার তাগিদ অনুভব করেন তিনি।এর পর পাকিস্থানীদের বর্বরতা শুরু হলে তিনি আর বসে থাকতে পারেননি। এলাকার অল্পকিছু মানুষ নিয়েই দেশ রক্ষার জন্য মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন গড়ে তোলেন এক বিশাল মুক্তি বাহিনী যার নাম দেয়া হয় শ্রীপুর বাহিনী তথা আকবর বাহিনী।
মুক্তিযুদ্ধ শুরুর প্রাক্কালে আকবর হোসেন মিয়া সহযোদ্ধাদের নিয়ে শ্রীপুরেই ছিলেন। যুদ্ধের জন্যে মানসিকভাবে তিনি তৈরিও হয়ে থাকেন। ২৫ মার্চ রাতে পাক আর্মিরা ঢাকায় নিরীহ বাঙালির ওপর অতর্কিত হামলা চালালে মাগুরা শহর অরক্ষিত হয়ে পড়ে। একপর্যায়ে মাগুরার রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দও মাগুরা ত্যাগ করে ভারতে চলে যান। কিন্তু রুখে দাঁড়ান আকবর হোসেন। পরিবার পরিজনকে ফেলে রেখে শুধু দেশ প্রেমের কারণে জীবনকে হাতের মুঠোয় ধরে নিজ থানা শ্রীপুরের খামারপাড়া গ্রামের খন্দকার সুজায়েত, মৌলভী নাজায়েত, বরিশাট গ্রামের মোল্ল্যা নবুয়ত আলী, শ্রীপুরের জোয়ার্দ্দার আ. রহিম, কাজলীর মোল্লা সাহাদত হোসেনসহ আরো অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে নিয়ে মাগুরার সর্বত্র পাক হানাদারদের প্রতিরোধের পরিকল্পনা নেন। এরই ধারাবাহিকতায় মুক্তিযোদ্ধাদের বড় একটি দল নিয়ে প্রথমে মাগুরাস্থ আনসার ক্যাম্প দখলে নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ ক্যাম্প শুরু করেন। মুহুর্তেই আকবর হোসেনের সাহসী নেতৃত্বের কথা ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। মাগুরার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে তরুণরা এসে তাঁর দলে ভীড় জমাতে থাকে। দ্রুতই তিনি মাগুরার মুক্তিযদ্ধের স্বপক্ষের দেশপ্রেমিক সাধারণ জনতার কাছে এক অন্যরকম আস্থায় পরিণত হন। এদিকে তিনি সহসাই কাছে পান একদল সাহসী মুক্তিযোদ্ধা।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন দক্ষিন পশ্চিম অঞ্চলের প্রধান সেনা নায়ক মেজর আবুল মঞ্জুর একটা চিঠির মাধ্যমে ৩১ অক্টোবর ৭১ সনে তার বাহিনীর এই নামকরন করে একটা চিঠি পাঠান। তার অধীনে প্রায় এক হাজার নিয়মিত এবং অনিয়মিত মুক্তিযোদ্ধা ছিলো যাদের কমান্ডার ছিলেন তিনি। এ ছাড়া মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি আতাউল গনি ওসমানীর নির্দেশে ১৯৭১ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ডেপুটি চিফ কমান্ডার একে খন্দকার আকবর বাহিনীকে স্বীকৃতি দিয়ে সনদ প্রদান করেন। ২০১১-১২ সালের জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের অষ্টম শ্রেণীর ‘বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়’ পাঠ্যবইয়ে মুক্তিযুদ্ধে এই বাহিনীর বীরত্বের কথা অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধের প্রান পুরুষ প্রয়াত জনাব আকরব হোসেন মিয়ার সাহসী নেতৃত্বে বড় বড় ২৭ টা যুদ্ধে মুক্তিবাহিনী অংশগ্রহন করে। যে মানুষটির নাম শুনলে তখনকার বর্ববর পাকিরা ভয়ে কাঁপতো আজ সেই মানুষটি আমাদের মাঝে বেঁচে নেই। প্রায় দু বছর আগে তিনি আমাদের সবাইকে কাঁদিয়ে চলে যান পরোপারে। কিন্তু কি পেয়েছিলেন রাষ্ট্রের কাছ থেকে এই মানুষটি! বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে তিনি যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়লেন। ১৯৭১ এর ৭ ডিসেম্বার নিজ জেলা মাগুরাকে শত্রু মুক্ত করলেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে তার বীরোচিত ভূমিকার কারণে মাগুরার পাশাপাশি রাজবাড়ী, ঝিনাইদহ, ফরিদপুর, কুষ্টিয়ায় তার বাহিনী ‘আকবর বাহিনী’ হিসেবে পেয়েছিল স্বতন্ত্র স্বীকৃতি।
কিন্তু স্বাধীনতার পরে রাষ্ট্র তাকে আসলে কতটুকু সম্মান দিয়েছিলো! ৭১ এ মুক্তি যুদ্ধের কান্ডারী, মাগুরা জেলা আওয়ামী লীগের একজন কান্ডারি আসলে সম্মান স্বরুপ কি পেয়েছিলেন! চোখের সামনে দেখেছি তার হাতে গড়া শ্রীপুরের স্কুল কলেজ মাদ্রাসাগুলোকে। ৭১ সালের পর থেকে মাগুরা তথা শ্রীপুরের আওয়ামী রাজনীতির গোড়াপত্তনই বলতে গেলে এই কিংবদন্তির হাতে। মুক্তিযুদ্ধে জেলা ভিত্তিক এতবড় একজন সমর নায়ক এবং একজন নিষ্ঠাবান রাজনৈতিক নেতা হিসেবে মাগুরাবাসী আশা করেছিলো তিনি আওয়ামী লীগ থেকে একজন মন্ত্রি বা এমপি হবেন! যদিও তিনি এসব কখনোই কামনা করেন নি। নি:স্বার্থ ভাবে জনসেবা করে গেছেন। এলাকার মানুষের কাছে সম্মান পেলেও তিনি পাননি রাষ্ট্রিও ভাবে বড় কোন সম্মান।
দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে নেতৃত্বে তিনি যেমন ছিলেন এক অনুকরণীয় চরিত্র, তেমনি আপাদমস্তক সৎ সজ্জন হিসেবে সাধারণ মানুষের কাছে ছিলেন নমস্য। একই সঙ্গে ছিলেন রুচিশীল, আধুনিক এবং স্বপ্নবাদী অসাম্প্রদায়িক এক মানুষ। সবসময় কাজ করতে ভালোবাসতেন। নতুন নতুন স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা করার স্বপ্ন দেখতেন। তরুণদেরও সেইভাবে উদ্দীপ্ত করতেন। আলোকিত সমাজ নির্মাণের লক্ষ্যেই তিনি এলাকায় একাধিক কিন্ডারগার্টেন স্কুল-কলেজ, লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠায় নেতৃত্ব দেন। সততা এবং সত্যবাদিতায় তিনি ছিলেন অনন্য। দলীয় বৃত্তে কখনোই বন্দি থাকেননি। আর তাই সর্বমহলে ছিলেন শ্রদ্ধেয় এক মানুষ। মৃত্যু পর্যন্ত সৎ ও সততার মহান পুরস্কার নিয়েই তিনি চিরকালের জন্য বিদায় নেন।
প্রজ্ঞাবান ও পরহেজগার মানুষ হিসেবেও তিনি ছিলেন অনুকরণীয়। মুক্তিযুদ্ধকালেও তিনি কখনও নামাজ বাদ দেননি। যুদ্ধক্ষেত্রে সবসময় টুপি পরিহিত অবস্থায় থাকতেন। অনেক সময় তাই পাকসেনারা তাকে চিনতে পারত না। মুক্তিযুদ্ধের যে লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ছিল তা তার ব্যক্তিগত জীবনে সম্পূর্ণরূপে প্রতিফলিত ছিল। কখনোই তাই মিথ্যার কাছে নতি স্বীকার করেননি। কখনোই ন্যায়নীতিকে বিসর্জন দিয়ে নিজের জন্য সামান্যতম লাভ খুঁজতে যাননি। যখনই যা করেছেন সেটা এলাকাবাসীর কল্যাণেই করেছেন। ন্যায়-ন্যায্যতার প্রশ্নে কখনোই আপস করেননি। সাধারণ মানুষের মতো তিনি ভ্যানে চড়ে চলাফেরা করতেন।
লম্বা শ্মশ্রুমণ্ডিত অধিনায়ক আকবর হোসেন ছিলেন সত্যিই বাংলাদেশেরই এক প্রতিচ্ছবি। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ৮৯ বছর বয়সেও তিনি মাথা উঁচু করে হাঁটতেন। তার অপরিসীম ত্যাগ আর ভালোবাসা জড়িয়ে আছে এই বাংলাদেশে। কিন্তু এই মানুষটি রাষ্ট্রের কাছ থেকে সেই ভালোবাসার যথার্থ মূল্যায়ন পাননি।

আমি বিশ্বাস করি বর্তমান সরকার মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সব থেকে বড় শক্তি। এই সরকার ক্ষমতায় আসার পরে মুক্তিযোদ্ধাদেরকে যে সম্মান দিয়েছে তা স্বাধীনতা পরবর্তী নজির বিহীন ঘটনা। কিন্তু একটা আফসোস ভেতরেই রয়েই গেছে। প্রয়াত জনাব আকবর হোসেন মিয়া রাষ্ট্রিয় ভাবে তার যোগ্য কোন সম্মানই পাননি। এতবড় একজন বীর, যার নেতৃত্বে শ্রীপুর বাহিনী তথা আকবর বাহিনী গড়ে উঠেছিলো মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে এবং যার বীরত্বেই শ্রীপুর শত্রু মুক্ত হয়েছিলো সেই মানুষটি রাষ্ট্রিয় ভাবে বড় কোন সম্মান পাবে না এটা অনেক বড় হতাশার কথা। তিনি কি স্বাধীনতা পদক পাওয়ার যোগ্য নন! কিন্তু ইতিহাস তো সেটা বলছে না।
আর একটা আফসোস মনের ভেতরে বার বার আমাকে আঘাত করে। দেশের জন্য বা শ্রীপুরের মানুষের জন্য যে মহা মানুষটি নিজের জীবন বাজি রেখে যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছিলো, সেই শ্রীপুরের মানুষ কি কখনো মনে করেছে রাষ্ট্রিয় ভাবে তার একটা সম্মান পাওয়ার দরকার ছিলো? শ্রীপুরের মানুষ কি পারতো না রাষ্ট্রের কাছে তার জন্য আকুতি জানাতে!
গত ৩১ আগষ্ট শ্রীপুরে বর্তমান সরকারের দুজন বড় মন্ত্রী এসেছিলেন শ্রীপুরে। যে ডিগ্রি কলেজে সমাবেশ হয়েছে সেই কলেজটি ও মুক্তিযুদ্ধের একটা অঞ্চলের সমর নায়ক প্রয়াত জনাব আকবর হোসেন মিয়া! তারই প্রতিষ্ঠিত কলেজে দাড়িয়ে একবার ও কি এই মহা মানুষটির নাম উচ্চারন করা হয়েছিলো! অথবা তার যোগ্য উত্তরসুরি হিসেবে তার সন্তান জনাব কুতুবুল ইসলাম কুটি মিয়াকে মঞ্চে একটি চেয়ার দেয়া হয়েছিলো? ওখানে যারা বসেছিলো তারা কেউ কি জনাব কুবুল্লাহ কুটি মিয়ার যোগ্যতা ও জনসমর্থনের ধারে কাছে আছে! আমি কার কাছে এই আফসোস টুকু জানাবো? রাষ্ট্রের কাছে নাকি শ্রীপুরের অকৃতজ্ঞ মানুষের কাছে! শ্রীপুরের মানুষ ও তাকে বেমালুম ভুলে গেলো! সেদিনের জনসভায় কোন মন্ত্রির মুখে অথবা এলাকার কোন নেতার মুখে উচ্চারিত হয়নি আকবর হোসেন মিয়ার নাম! এটা কত বড় লজ্জার এবং ঘৃনার হতে পারে তা ভাষায় প্রকাশ করার ক্ষমতা আমার নেই। মাঝে মাঝে নিজেকেই নির্বোধ বলে মনে হয়, মনে হয় আমরা তার পরবর্তী প্রজন্ম হিসেবে একটা কলঙ্কিত ইতিহাস মাত্র।
যার হাতে গড়া শ্রীপুর ডিগ্রি কলেজ, সেই কলেজের জনসভায় তার নামটি পর্যন্ত উচ্চারিত হলো না, তাকে নিয়ে প্রদান করা হলো না কোন শোকার্ত স্লোগান! এটাই কি বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নে সোনার বাংলা! এটাই কি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার প্র্যাপ্য! রাজনীতি করার অধিকার সবার আছে এবং রাজনৈতিক ভাবে পছন্দ অপছন্দ থাকতেই পারে তাই বলে এতবড় একজন বীরকে অসম্মান করার অধিকার তো কারো নেই! সেদিনের জন সভায় মঞ্চে যেসব নেতাদের চেয়ারে বসা দেখেছি তাদের বেসির ভাগই তো শ্রীপুরের মানুষ। তারা কি করে এই মানুষটি অথবা এই মানুষটির পরিবারকে মনে রাখলো না। তাহলে কি বলবো প্রয়াত জনাব আকবর হোসেন মিয়ার দেশের জন্য বা শ্রীপুর বাসীর জন্য কোন অবদান নেই বা তার যোগ্য সন্তান জনাব কুতুবুল্লাহ কুটি মিয়ার কোন অবদান নেই।
আমি আসলে রাজনৈতিক ভাবে কোন প্রকার দ্বিধা দন্দের কথা বলতে চাই না। আমি একজন যোগ্য মানুষের সঠিক মুল্যায়নের কথা বলতে চাই। আজ যারা শ্রীপুরের রাজনীতিতে কর্তার আসনে বসতে চান তাদের কাছে প্রশ্ন করতে চাই, আপনারা আসলেই কি কাউকে যোগ্য সম্মানটুকু দিতে জানেন! শুধুমাত্র নিজেদের স্বার্থ আর ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার জন্য সব ধরনের অপকৌশল আর ঘৃন্যতম রাজনীতির খেলা খেলতে পারেন। নিজেদের অযোগ্যতাকে যোগ্য হিসেবে প্রমান করার জন্য এমন কোন অশালীন কৃত্তি নেই যা আপনারা করছেন না! আপনারা যারা শ্রীপুরের নেতা হিসেবে সেদিনের জনসভায় উপস্থিত ছিলেন তাদের কেউ বুকে হাত দিয়ে বলতে পারেন অন্তর থেকে সাধারন মানুষের ভালোবাসা আপনাদের প্রতি আছে!
গত সংসদ নির্বাচনের আগের নির্বাচনে প্রয়াত আকবর হোসেন মিয়ার যোগ্য উত্তরসুরি জনাব কুতুবুল্লাহ কুটি মিয়া সতন্ত্র প্রার্থি হিসেবে সংসদ নির্বাচনে মাগুরা-১ আসন থেকে সবার থেকে বেশি ভোট পেয়েও রাজনৈতিক কৌশলগত কারনে নির্বাচিত হতে পারেনি। ওই নির্বাচনে মাগুরার মানুষ উপলব্দি করেছিলো সাধারন মানুষ আসলে কাকে চায়। মাগুরার শ্রীপুরের মানুষ তাকে ভোট দিয়ে সেদিনই প্রমান করে দিয়েছিলো জনাব কুটি মিয়া সেই কিংবদন্তির যোগ্য উত্তরসুরি। সেদিন ও কিন্তু অনেকেই ভেতরে ভেতরে তার বিরুদ্ধাচারন করেছিলো। কিন্তু তাতে তারা লাভবান হতে পারেনি। সাধারন মানুষই প্রমান করেছিলো কার যোগ্যতা কতটুকু। প্রয়াত জনাব আকবর হোসেন মিয়ার সেই সুযোগ্য সন্তানকে শ্রীপুরের ওই সমাবেশে সে ভাবে দাওয়াত পর্যন্ত করা হয়নি। তাকে মঞ্চে ডেকে নেয়া হয়নি।
জনাব আকবর হোসেন মিয়ার পুত্র কুটি মিয়া তার রাজনৈতিক জীবদ্দশায় বেসি ক্ষমতা পাওয়ার আশায় কখনো এ দ্বার থেকে ও দ্বারে দৌড়াতে দেখিনি। নিজের ব্যক্তি সত্বাকে বিকিয়ে দিয়ে ক্ষমতার লোভে নিজের অবস্থান থেকে সরে দাড়ায়নি শ্রীপুরের অন্য কোন নেতার মত। আর এরকম শিক্ষা আকবর হোসেন মিয়া তার সন্তানকে শিখিয়ে যায়নি। ক্ষমতার লোভে কারো সাথে বিবাদে জড়ানোর শিক্ষাও তিনি তার সন্তানকে দিয়ে যাননি।সেই মহা মানুষটির নাম আকবর হোসেন মিয়া। যার সন্তানদের কে তিনি সে ভাবেই মানুষ করে গেছেন। ইতিহাস কখনো ভুল ব্যাক্ষা দেয় না, ইতিহাস কখনো সমাজ এবং রাজনীতিকে কলঙ্কিত করে না। যে ইতিহাস মানুষ সৃষ্টি করে সেই মানুষই সমাজকে কলঙ্কিত করে। প্রয়াত জনাব আকবর হোসেন মিয়া এখন একটা ইতিহাস যাকে কলঙ্কিত করছে মানুষ অসম্মান করে। যার পেছনে রয়েছে শধুই রাজনৈতিক দন্দ, অপক্ষমতা আর অপকৌশল সমাজতন্ত্রের সুত্র যেখানে সুবিধাবাদি আর খারাপ মানুষগুলোই বার বার জয়ি হচ্ছে। আর অপমানিত ও অসম্মানিত হয়ে আকবর হোসেন মিয়ার মত মহান মানুষেরা।
সমাজ এবং সাধারন মানুষ যাকে চায় আমি নিশ্চয় তার বিপক্ষে কথা বলবো না। আমি তার পক্ষেই কথা বলতে চাই যাকে সমাজ ব্যাপক ভাবে গ্রহনযোগ্যতা দিয়ে থাকবে। ভালো এবং যোগ্য মানুষকে সঠিক ভাবে মুল্যায়ন করা আমাদের দায়িত্ব। সেটা সমাজ এবং দেশের জন্যই মঙ্গল। অপক্ষমতা চর্চার প্রভাবে যেমন ধংশ হয় একটি সমাজ ঠিক সে কারনেই ধংশ হয় একটি দেশ। আর সেই অপক্ষমতার চর্চাই চলছে বর্তমান শ্রীপুরের রাজনীতিতে যেখানে তুমুল ভাবে অসম্মান করা হচ্ছে আকবর বাহিনী প্রধান প্রয়াত আকবর হোসেন মিয়াকে। যার শেষ নিদর্শন শ্রীপুর ডিগ্রি কলেজে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর জনসমাবেশ! আকবর হোসেন মিয়ার নামটি পর্যন্ত স্মরণ করা হলো না সেই সমাবেশে।
আমি বিবাদ করতে চাই না, আমার উদেশ্য বিবাদ করার জন্য নয়। যে মানুষটি শ্রীপুরের রাজনীতির পট পরিবর্তন করেছিলেন, যে মানুষটি নিজের জীবন বাজি রেখে দেশ রক্ষার জন্য অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিলেন, যে মানুষটি সারা জীবন সাধারন মানুষের সেবা করে গেলেন আর সেই মানুষটিকেই রাষ্ট্র বেমালুম ভুলে গেল!
আমার উদেশ্য আসলে কাউকে অসম্মান করে কথা বলা নয়। আমার উদেশ্য মাগুরা তথা শ্রীপুরের এই কিংবদন্তিকে তার যোগ্য সম্মান ফিরিয়ে দেয়া। এবং তার এই সম্মান ফিরিয়ে দিতে হলে আগে সমগ্র শ্রীপুরবাসীকে এক হতে হবে, রাষ্ট্রের কাছে আপনাদের চাওয়াটা পৌছাতে হবে। রাজনৈতিক ভাবে হেয়ো করা বা যোগ্য ব্যক্তিকে অসম্মান করার জন্য সব জায়গাতেই এক শ্রেনীর মানুষ থাকে। কারন এই মানুষ গুলো নিজ স্বার্থ আর ক্ষমতাকে অপকৌশলে নিজের করে নেয়ার জন্য যোগ্য ব্যক্তিকে অসম্মান করবে এটাই স্বাভাবিক। যার সংখ্যা এখন শ্রীপুরে নেহাত কম নয়। আমি তাদের বা তাদের চরিত্র নিয়ে বিতর্কে যেতে চাই না।
কিন্তু রাষ্ট্রের কাছে আমার প্রশ্ন প্রয়াত জনাব আকবর হোসেন মিয়া কি রাষ্ট্রিয় ভাবে বড় ধরনের সম্মান বা পদক পেতে পারে না। বর্তমান সরকার মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার। সরকার ক্ষমতায় আসার পর মুক্তিযোদ্ধদের কে যে সম্মান দিয়েছেন তা বিগত কোন সরকারই দিতে পারেনি বা দেয়ার ইচ্ছাও পোষন করেনি। কেননা তারা কখনো বাংলাদেশের স্বাধীনতা চান নি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর প্রানের মধ্যো একটা আশা জেগেছিলো মুক্তিযোদ্ধদের কে যে ভাবে সম্মান এবং শ্রদ্ধা পাওয়ার আসনে অধিষ্ঠিত করছিলো তখন ভেবেছিলাম প্রথম সারিতে আমাদের শ্রীপুরে এই মহা মানুষটি স্থান পাবেন। ভেতরের জমানো অভিমান আর ভাঙ্গলো না। গত দুবছর হলো আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সেই মহান মানুষটি পরাপারে চলে গেছেন আমাদের সবাইকে কাঁদিয়ে। বেঁচে থাকতে তিনি বড় ধরনের কোর রাষ্ট্রিয় সম্মান পাননি অথবা শ্রীপুরের কোন মানুষ রাষ্ট্রের কাছে আবেদন জানায়নি তার যোগ্য সম্মানটুকু আদায় করে নেয়ার জন্য। বরং এই শ্রীপুরের কিছু মানুষ শুধুমাত্র ক্ষমতার লোভে তাকে দিনের পর দিন অসম্মান করে গেছে।
নিজেকে শ্রীপুরের একজন মানুষ ভাবতে বড় লজ্জা হয়, লজ্জা হয় আমি অথবা আমরা এই মহা মানুষটির পরবর্তী প্রজন্ম! এই মানুষটির মৃত্যর পর শ্রীপুরে তাকে নিয়ে হয়নি বড় কোন শোক সমাবেশ। পরবর্তী প্রজন্মকে এই মানুষটি সম্পর্কে জানানোর জন্য নেয়া হয়নি কোন বড় উদ্যোগ। বরং তার বিরুদ্ধাচারন করা কিছু অপরাজনৈতিক শক্তি তার নামটিকেই মুছে দেয়ার চেষ্টা করছে প্রতিনিয়ত। ‘আকবর বাহিনী’ শব্দটুকু তারা কোন ভাবেই মানতে পারছে না! এখানে কেন এমন ঘৃন্য রাজনীতি! শ্রীপুরের বুকে দাড়িয়ে কেউ জোর গলায় বলতে পারবেন তার সমকক্ষ কেউ আছেন অথবা তার জনসমর্থনের ধারে কাছে কেউ আছেন। রাজনৈতিক মতভেদ সবার থাকবেই তাই বলে যোগ্য মানুষকে অসম্মান করার অধিকার তো আমাদের কারো নেই।
মাগুরা তথা শ্রীপুরের আওয়ামী রাজনীতির গোড়া পত্তন যার হাত ধলে, যার হাত ধরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন পাকিদের বধ করা হয়েছিলো, শ্রীপুরকে শত্রু মুক্ত করা হয়েছিলো, যার হাত ধরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো শ্রীপুরের সমগ্র উন্নয়ন, স্কুল কলেজ মাদ্রাসা! সেই মানুষটিকে শ্রীপুরবাসী কি করে ভুলে যেতে পারে। কি করে রাষ্ট্র সেই মানুষটিকে একটা রাষ্ট্রিয় সম্মাননতা দিতে ভুলে যায়!
আজ আমার এই আকুতি শুধু মাত্র রাষ্ট্রের কাছে, আমার আকুতি শ্রীপুরের সমস্ত মানুষের কাছে। যে মানুষটি আমাদের কে এত কিছু দিলো, যে মানুষটি দেশ এবং মানুষের জন্য এতবড় ত্যাগ স্বীকার করলো তার জন্য রাষ্ট্রের কি কোন দায়বদ্ধতা নেই! তার জন্য কি শ্রীপুরবাসীর দায়বদ্ধতা নেই। আমরা কি সমস্ত বিদ্বেষ ভুলে তার জন্য রাষ্ট্রের কাছে আবেদন করতে পারি না! আমি বিশ্বাস করি শ্রীপুরের শত ভাগ মানুষ প্রয়াত আকবর হোসেন মিয়াকে মনের ভেতরে লালন করে। তাকে স্মরন করে বুক ভরে নি:শ্বাস নিতে পারেন। আর সেই নির্মল নিশ্বাসটা রাষ্ট্রের কাছে পৌছানো সমগ্র শ্রীপুরবাসীর নৈতিক দায়িত্ব। আমি বিশ্বাস করি শ্রীপুরের প্রতিটা মানুষ অন্তর থেকে কামনা করে রাষ্ট্র আকবর হোসেন মিয়াকে তার যোগ্য সম্মানটুকু দেবে। মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের জন্য তাকে স্বাধীনতা পুরস্কার অথবা এই রকম কোন সম্মাননা প্রদান করবে। আর এই স্বপ্ন বুকে নিয়ে আমি এখন পর্যন্ত আশায় বুক বেঁধে আছি।
আমি আশা ছাড়িনি, আমি আশা ছাড়তে চাই না। আমি স্বপ্ন দেখি একদিন শ্রীপুরের সমগ্র মানুষ জেগে উঠবে। আমি স্বপ্ন দেখি সমস্ত দ্বিধা দন্দ, বিদ্বেষ ভুলে শ্রীপুরের সমস্ত মানুষ রাষ্ট্রের কাছে আবেদন জানাবে ওই মহা মানুষটিকে রাষ্ট্রিয় ভাবে বড় কোন সম্মান জানানোর জন্য। শ্রীপুরের সব নতুন প্রজন্ম এক হয়ে রাষ্ট্রের কাছে আবেদন জানাবে। ইতিহাসের পাতায় শ্রীপুরের নাম লেখা হবে যার বীরত্বে থাকবে প্রয়াত শ্রীপুর বাহিনী তথা আকবর বাহিনী প্রধান, সাধারন মানুষের কাঙ্খিত শ্রদ্ধার মানুষ, নতুন প্রজন্মের অহংকার জনাব আকবর হোসেন মিয়া।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.