![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দুনিয়ার খবর রেখে শান্তি পাই।
বিগত দুই দশকের আন্তর্জাতিক নীতি ও আঞ্চলিক কৌশল পাকিস্তানের পক্ষে এক বিশাল চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। ১ / ১১-এর এবং তৎপরবর্তী আফগান যুদ্ধের ফলে আন্তর্জাতিক শক্তিগুলু পাকিস্তানকে একচেটিয়াভাবে ‘গ্লোবাল ইসলামিক সন্ত্রাসের (ডোনাল্ড ট্রাম্পের শব্দ ব্যবহার করার) লেন্সের মাধ্যমে দেখতে শুরু করে। বিষয়টি আরও খারাপ হওয়া শুরু করে যখন পাকিস্থানকে আভ্যন্তরীণ সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করতে হয়েছিল। যাতে হাজার হাজার নিরীহ মানুষ নিহত হয়েছিল এবং ব্যায় করতে হয়েছিল বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার।এতে পাকিস্থানের অর্থনীতি প্রায় দেউলিয়া হয়ে যায়।বিষয়টি পাকিস্থানের জন্য আরো খারাপ হয়ে উঠে যখন ভারতের নেতৃত্বে পাকিস্থানের শত্রুরা ওয়াশিংটনে লবিং করতে শুরু করে।লবিস্টেরা ওয়াশিংটনকে এটা বুঝাতে সক্ষম হয় যে পাকিস্থানকে আর দক্ষিন এশিয়া বা সাবকন্টিনেন্ট নীতিতে দেখা যাবে না।পাকিস্থানকে দেখতে হবে আফগান নীতিতে।
ফলস্বরূপ, ওয়াশিংটনে মূলত ভারতের তদবিরের কারণে ২০০৮ সালে পাকিস্থানের বিষয়ে মার্কিন নীতিতে একটি টেকটনিক পরিবর্তন হয়েছিল, যখন এই অঞ্চলে রাষ্ট্রপতি ওবামার বিশেষ প্রতিনিধি রিচার্ড হলব্রুক আফগানিস্তানের সাথে পাকিস্তানকে একই পলিসিতে রেখে "আফ-পাক"(Af-Pak) শব্দটি ব্যবহার শুরু করেছিলেন, আফগানিস্থানের সাথে পাকিস্থানকে একই রাজনৈতিক ও সামরিক পরিস্থিতি বিবেচনায় একই পলিসি প্রনয়ন করেছিলেন।এটি বিশ্বব্যাপী প্ল্যাটফর্মে পাকিস্তানের জন্য চরম আঘাত ছিল।
তবে পাকিস্থানের জন্য এই সেটব্যাক থেকেও বড় ধাক্কা ছিল পাকিস্থান বিরুধী লবিঙয়ে ভারতের বিজয়। এবং বিশ্বজুড়ে সন্ত্রাসের কারখানা হিসাবে পাকিস্তানকে চিত্রিত করার (মিথ্যা) আখ্যান।আরও বড় কথা,মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘Af-Pak’ নীতি প্রবর্তনের সাথে সাথে ভারত আন্তর্জাতিক মঞ্চে শান্তির চারণভূমির সন্ধানে সফলভাবে পাকিস্তান থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছিল।মার্কিন যুক্তরাস্ট্রের কাছে দক্ষিন এশিয়ার নীতি শুধু ভারত,পাকিস্থান,বাংলাদেশের মধ্যে আর সীমাবদ্ধ থাকলো না।তারা এটাকে আফগানিস্থান এবং মধ্যপ্রাচ্যের সীমানা অবধী বিস্তৃত করলো।তাদের কাছে এই পুরু অঞ্চল পরিগনিত হল ট্রাবল রিজন এবং সন্ত্রাসের চারনভুমি হিসেবে।প্রাসঙ্গিকভাবে বাংলাদেশের একটা অগণতান্ত্রিক সরকার ব্যাবস্থা কায়েম এই পলিসির বাস্তবায়ন।
এর পরিবর্তে ভারত স্থান পেল পেন্টাগনের চতুর্ভুজীয় সুরক্ষা সংলাপের অংশে যেটা Quad নামে পরিচিত।এটা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ২০০৭ সালে এবং এর সদস্য হল অস্ট্রেলিয়া, ভারত, জাপান এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।এই Quad এর উদ্ধেশ্য ছিল প্রশান্ত মহাসাগর এবং ভারত মহাসাগরে আধিপত্য বিস্তার করা।সত্যি কথা বলতে হলে এটার জন্য ভারতকে এককভাবে দোষারোপ করা উচিতও নয়।ভারতের এই পলিসতে যাবতীয় রসদ যুগিয়েছিল পারভেজ মোশারফ এবং তৎপররবর্তি সরকারগুলু।পাকিস্থান তখনো তাঁর পররাষ্ট্রনীতি ঠিক করার থেকেও বেশি যে কাজটি করেছিল সেটি হল সভ্যতার দন্দে একটা ভারসাম্য অবস্থা খোঁজার চেষ্টা এবং দুনিয়ার সামনে নিজেকে মধ্যপন্থী দেশ হিসেবে পরিচয় করানো।পারভেজ মোশাররফের পরের বছরগুলিতে, পিপিপি এবং পিএমএল (এন) সরকারগুলি তাদের পররাষ্ট্রনীতিতে একেবারে লেজেগুবড়ে ছিল। জাতীয় স্বার্থের বিপরীতে ওয়াশিংটনের লবিস্টদের ব্যক্তিগত কারিশমা প্রচারের জন্য কাজে লাগানো শাসকদের কাছ থেকে আর কী আশা করা যায়?জেনারেল কিয়ানি এর বিপরীতে গিয়ে তখনো ঐতিহাসিক প্রবণতা রক্ষার জন্য "ভাল তালিবান" এবং "খারাপ তালেবান" মধ্যে বিভাজন রেখা টেনেছিলেন।কারন তিনি হয়ত বুঝেছিলেন তালেবানদের হাতে আফগানিস্থানের ভবিষ্যৎ রক্ষিত।এবং তালেবান ছাড়া আফগানিস্থানের কতৃত্ব মার্কিন এবং ভারত থেকে বের করা যাবে না।যেটা রাজনৈতিক নেতারা বুঝতে ব্যার্থ হয়েছিলেন।এসব কিছুর পরেই জেনারেল রাহেল শরিফের আমলে একটা গুনগত পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয় APS পেশোয়ার ঘটনার পরেই।যেখানে পাকিস্থান সামরিক বাহিনী সফলভাবে সন্ত্রাসবিরুধী অভিযান পরিচালনা করেছিল।এবং আন্তর্জাতিক মঞ্চে পাকিস্থান,ভারতের কাছে কতটুকুন জায়গা হারিয়েছিল সেই বিষয়ে এক নতুন উপলব্দি আসে।এরপর সেই জায়গা পুনরুদ্ধারের কৌশল প্রনয়ন করা হয় নতুন আঞ্চলিক স্ট্র্যাটেজি বিশেষত চীনের সহায়তায় সিপিইসি প্রকল্পের মাধ্যমে।
পাকিস্থান যখন নতুন পররাষ্ট্রনীতি বাস্তবায়নের জন্য চেষ্টা করছিল তখন ভারত তাঁর বৈশ্বিক এজেন্ডাকে আরো এগিয়ে নিয়ে যায়।বিশেষত এটি এই অঞ্চলে নিজেকে আমেরিকার কৌশলগত অংশীদার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা।আরো সহজ ভাবে বললে এই অঞ্চলে নিজেকে মার্কিনীদের কাছে চীনের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করানোর চেষ্টা করা।এবং মার্কিনীদের কৌশলগত অংশীদার হিসেবে ভারত আফগানিস্থান,ভারত মহাসাগর এবং তার বাইরেও নিজের অবস্থান পাকাপোক্ত করার চেষ্টা করছে।ভারতের পক্ষে সবচেয়ে কনক্রিট সিদ্ধন্তটি আসে ৩০শে মে ২০১৮ সালে।যখন তৎকালীন মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব জিম ম্যাটিস মার্কিন প্যাসিফিক কমান্ডের নাম পরিবর্তন করে নতুন নাম দেন ইন্দো প্যাসিফিক কমান্ড।এর মাধ্যমে প্রশান্ত মহাসগরে ভারতকে অতিরিক্ত সুবিধা দেওয়া হয় যেটার উদ্ধেশ্য হল চীনকে কাউন্টার করা।এটি ওয়াশিংটনের একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতি পরিবর্তন ছিল।দিল্লী পেন্টাগনকে নিশ্চিত করেছিল যে এটি প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনের প্রভাব বিস্তার রোধ করতে সাহায্য করবে।পাশাপাশি এই অঞ্চলজুড়ে চীনের অর্থনৈতিক স্বার্থকে অস্থিতিশীল করে তুলবে -বিশেষত সিপিইসি প্রকল্পটিকে। এভাবে গিলগিট-বালতিস্তানে অনুপ্রবেশ এবং সিপিসিআই সরবরাহ ব্যবস্থাকে ব্যাহত করার হুমকি দেয় ভারত।
ভারত যে প্রতিশ্রুতি পেন্টাগনকে দিয়েছিল সেটা কি সে রক্ষা করতে পারছে?ভারত কি এই অঞ্চলে চীনের ক্রমবর্ধমান শক্তিশালী হয়ে উঠা ঠেকাতে পেরেছে?ভারত দাবি করেছিল এটা তারা করতে পারবে।
তবে গত কয়েক সপ্তাহে ভারতের অক্ষমতা ধীরে ধীরে প্রকাশ পেতে শুরু করেছে।প্যানগং হ্রদ এবং গ্যালওয়ান উপত্যকায় গুরুত্বপূর্ণ ভ্যানটেজ পয়েন্ট দাবি করে চীন যেমন ভারত-অধিকৃত লাদাখের সীমান্ত পেরিয়ে অনুপ্রবেশ করেছে, তখনও ভারতের পক্ষ থেকে কোন প্রতিরোধ দেখা যায়নি। এমনকি চীনকে চ্যালেঞ্জ করার সাহসও দেখায়নি।শেষ অবধি চ্যালেঞ্জ করতে গিয়ে তাদের ৩০ এর অধিক সৈন্য হারিয়েছে।১৯৬৭ সালের পর এই প্রথম চীনের হাতে ভারত সৈন্য হারালো।ভারত আলোচনার মাধ্যমে এটার সমাধান চাইলে চীন লাদাখের যে অংশ দখলে নিয়েছে সেটা ফিরিয়ে দিতে অস্বীকার করছে।শুধু তাই নয়, চীনা পদক্ষেপে উত্সাহিত, নেপালও ভারতীয় সীমানায় সীমান্ত দাবি করেছে এবং নাগাল্যান্ড এর পূর্ব অঞ্চলগুলি নেপালের মানচিত্রে অন্তর্ভুক্ত করে নতুন মানচিত্র প্রকাশ করেছে।
বিষয়টি ভারতের জন্য আরো খারাপ হয়ে উঠে যখন চীন ভারত থেকে কোন সত্যিকারের চ্যালেঞ্জ বা হস্তক্ষেপ ছাড়াই ভারত মহাসাগর (গোয়াদর সহ) জুড়ে তাদের প্রভাব (সামরিক উপস্থিতি) প্রসারিত করে চলেছে। প্রকৃতপক্ষে, ভারতের নিকটবর্তী অনেক অঞ্চলে (উদাঃ শ্রীলঙ্কায়) যেখানে চীন দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ করেছে, যা ভারতীয় নৌবাহিনীকে অবরোধে মধ্যে ফেলে দিতে পারে।
এখন জানার বিষয় তাহলে যখন আসল পরিস্থিতি এটাই তখন ইন্দো প্যাসিফিক ধারনাটির কি হল?ওয়াশিংটন এবং বিশ্বজুড়ে পরিচিত সিনিয়র পলিসি সার্কেলে এখন জিজ্ঞাস্য বিষয় হল ভারত যদি চীন থেকে নিজের (দাবি করা) অঞ্চল পুনরুদ্ধার করতে না পারে তাহলে প্রশান্ত মহাসাগরে (চীনের বিরুদ্ধে) ভারত কী সুবিধা দিতে পারে?যদি ভারতের সেনাবাহিনী লাদাখে চীনা সেনাবাহিনীর মুখোমুখি না হতে পারে তবে ভারত কি সত্যিই দক্ষিণ চীন সাগরে যুদ্ধ জাহাজ প্রেরণ করতে পারবে? নাকি পারবে ভারত মহাসাগরের গভীর নীল জলের মধ্যে যুদ্ধ জাহাজ পাঠাতে? সিকিমের উপসাগরীয় স্থানগুলিতে কি সিইপিসি রুটগুলু কি সে রুখতে পারবে?ভারত যদি চীনের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে না পারে - বিশেষত এখন যখন মার্কিন যুক্তরাস্ট্রের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ভারতকে তাহলে - ‘ইন্দো প্রশান্ত মহাসাগরীয় কৌশলটি প্রনয়নের করার উদ্দেশ্য কী? এই পরিস্থিতিতে, ভারত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটা লাইয়াবিলিটি।ভারত কেবল চীনকেই মোকাবেলা করতে পারবে না, বরং এটি এই অঞ্চলের শক্তিশালী পশ্চিম জোটগুলির মিথকে ধ্বংস করতে সহায়তা করতে পারে।
ভারতের ব্লাফটা ঠিক এখানেই।চীন একটা বুলেট খরচ না করেই(ভারতীয় সামরিক বাহিনীর স্টেটমেন্ট) ভারতকে তার আগের জায়গায় ফিরিয়ে দিয়েছে।হতে পারে ভারত দক্ষিন এশিয়ার উন্নয়নশীল অর্থনীতি কিন্তু ইন্দো –প্যাসিফিক অঞ্চলে চীনের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর যোগ্যতা ভারতের নেই।এটা আরেকবার প্রমানিত হল।
২৯ শে জানুয়ারি, ২০২১ দুপুর ১:৫০
মোহাম্মদ মোস্তফা রিপন বলেছেন: ধন্যবাদ।দোয়ার দরখাস্ত রইলো।
©somewhere in net ltd.
১|
২৯ শে জানুয়ারি, ২০২১ দুপুর ১২:৩২
খায়রুল আহসান বলেছেন: চমৎকার আলোচনা করেছেন।
'প্যাসিফিক কমান্ড' কে 'ইন্দো প্যাসিফিক কমান্ড' এ রূপান্তর করা এবং তদনুযায়ী 'ইন্দো প্যাসিফিক কৌশল' প্রণয়ন কালক্রমে একটি ভুল কৌশল বলে গণ্য হবে বলে আমার মনে হয়।
নির্বাচন এবং তার ফলাফল নিয়ে সংঘটিত সাম্প্রতিক ঘটনাবলী আমেরিকাকে বিশ্বনেতৃত্ব থেকে স্থানচ্যূত হবার অশনি সংকেত দিচ্ছে।
ব্লগে আপনাকে সুস্বাগতম জানাচ্ছি। শুভ এবং নিরাপদ হোক আপনার এ ব্লগযাত্রা!
"ক্রিটিক্যাল থিঙ্কিং এবাউট ওয়ার্ল্ড পলিটিক্স। মেইনস্ট্রিম মিডিয়ার কিছুই বিশ্বাস করি না" - আপন পরিচিতিতে লেখা আপনার এ কথাগুলো দেখেই এ পোস্টে এলাম। আপনার অন্যান্য পোস্টসমূহও ধীরে ধীরে পড়বো বলে আশা রাখছি।