নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সবার অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে আমি কোন ব্লগার নই মন চায় তাই লিখি তথ্য-উপাত্ত সবার সাথে শেয়ার করি ।\nজব এর পাশাপাশি এয়ার টিকেট ও ট্রাভেল ভিসার ব্যাবসা করি ।\nধন্যবাদ\n

তানজীর আহমেদ সিয়াম

তানজীর আহমেদ সিয়াম

তানজীর আহমেদ সিয়াম › বিস্তারিত পোস্টঃ

কুড়ানো ( পর্ব ২৮ ) মেজর আবু তাহের মোহাম্মদ হায়দার / এ,টি,এম, হায়দার অথবা মেজর হায়দার

৩০ শে জুলাই, ২০১৮ দুপুর ১২:১২

একাত্তরে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী তাঁর কেশাগ্র স্পর্শ করতে পারেনি। কিন্তু তাঁকে আমরা বাঁচিয়েও রাখিনি। স্বাধীন ও সার্বভৌম সেই রাষ্ট্রেই তাঁকে হত্যা করা হয়, যে রাষ্ট্র অর্জনের জন্য তিনি প্রবল বিক্রমে লড়েছিলেন ও লড়াই করিয়েছিলেন অগণিত দুঃসাহসী গেরিলা যোদ্ধাকে।



হ্যাঁ, বলছি মেজর আবু তাহের মোহাম্মদ হায়দারের কথা। এ,টি,এম, হায়দার অথবা মেজর হায়দার নামেই যিনি কিংবদন্তী হয়ে আছেন।

মো. ইসরাইল মিয়া ও হাকিমুন্নেসার পুত্র এটিএম হায়দারের জন্ম কলকাতার ভবানীপুরে, ১৯৪২ সালের ১২ জানুয়ারি। দুই ভাই ও তিন বোনের মধ্যে হায়দারের স্থান দ্বিতীয়। পাবনা জেলার বীণাপানি স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণের পর ১৯৫৮ সালে কিশোরগঞ্জ রামানন্দ হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিক, ১৯৬১ সালে কিশোরগঞ্জ গুরুদয়াল সরকারি কলেজ থেকে আইএ এবং ১৯৬৩ সালে লাহোর ইসলামিয়া কলেজ থেকে বিএসসি পাস করেন।

লাহোরের পাঞ্জাব ইউনিভার্সিটি থেকে পরিসংখ্যানে এমএসসি প্রথম পর্ব সমাপ্তির পর সামরিক বাহিনীতে কমিশন্ড পদে মনোনীত হন। ১৯৬৫ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কমিশন লাভ করেন। তিনি প্রথমে কাকুলে ট্রেনিং নেন এবং কমিশন প্রাপ্তির পর গোলন্দাজ বাহিনীর অফিসার হিসেবে নিয়োজিত হন। চেরাটে এমএসজি (স্পেশাল সার্ভিস গ্রুপ) ট্রেনিংয়ে অত্যন্ত কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়ে একজন দক্ষ গেরিলা কমান্ডার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন।

কমান্ডো ট্রেনিংয়ে ৩৬০ জনের মধ্যে মাত্র দুজন বাঙালি অফিসার ছিলেন। কমিশন প্রাপ্তির পর ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত তিনি, তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের মুলতান ক্যান্টনমেন্টে কর্মরত ছিলেন। ১৯৬৯ সালের শেষের দিকে তৃতীয় কমান্ডো ব্যাটালিয়নের একজন ক্যাপ্টেন হিসেবে তাঁকে কুমিল্লা সেনানিবাসে পাঠানো হয়। ১৯৭১ সালের জানুয়ারিতে তাঁকে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়। ১৫-২০ দিন পর পুনরায় কুমিল্লায় নিয়োগ করা হয়।

১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ কুমিল্লা সেনানিবাস ত্যাগ করেন এবং ব্রাহ্মণবাড়ীয়ায় চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অফিসারদের সঙ্গে মিলিত হন। সেখান থেকে তিনি তেলিয়াপাড়া যান এবং কিছু সংখ্যক সৈন্যসহ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করেন। তিনি ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়কসহ মুসল্লী রেলওয়ে সেতু বিস্ফোরকের সাহায্যে উড়িয়ে দেন। এরপর তিনি মেলাঘরে সেক্টর কমান্ডার খালেদ মোশাররফের অধীনে সেকেন্ড কমান্ডার নিযুক্ত হন। ক্যাপ্টেন হায়দার মেলাঘরে ছাত্রদের নিয়ে একটি কোম্পানি গঠন করেন এবং গেরিলাদের কমান্ডো ও বিস্ফোরক বিষয়ক প্রশিক্ষণ দানের দায়িত্ব পালন করেন।

আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অবদান নিয়ে আমাদের বলার কিছু নেই। সেক্টর ২ এর অধীনে পরিচালিত গেরিলা অপারেশনগুলো এবং তাঁর হাতে গড়া গেরিলা'গণ সেই উজ্জ্বলতম অবদানের সাক্ষ্য হিসেবে ইতিহাসের পাতায় জাজ্বল্যমান।

১৯৭৫ সাল, স্বাধীন দেশের বয়স তখনো ৪ বছর হয়নি। ৬ই নভেম্বর (১৯৭৫) বাবার টেলিগ্রাম পেয়ে পারিবারিক কাজে বান্দরবানের রামু থেকে ঢাকায় এসেছিলেন হায়দার। সেদিন দুপুরে তিনি জেনারেল ওসমানী ও সেনাবাহিনীর কয়েকজন বন্ধুর সাথে দেখা করেন। একই দিন সন্ধ্যায় তাঁর প্রিয় সেক্টর কমান্ডার এবং নতুন সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল খালেদ মোশাররফের সাথে তার যোগাযোগ হয়। সে রাতে তাঁর সাথে বঙ্গভবনে যান।

তথাকথিত সিপাহী বিপ্লবের খবর পেয়ে ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর রাত ১২ টায় বঙ্গভবনে জেনারেল খালেদ, কর্নেল হুদা ও কর্ণেল হায়দারকে সঙ্গে নিয়ে প্রথমে ব্রিগেডিয়ার নুরুজ্জামানের বাসায় যান। সেখান থেকে ভোর প্রায় ৩ টায় জেনারেল খালেদ কর্নেল হুদা ও কর্ণেল হায়দার শেরে বাংলা নগরে অবস্থিত ১০ম বেঙ্গল রেজিমেন্টে যান! উল্লেখ্য এই রেজিমেন্টের তৎকালীন কমান্ডিং অফিসার ছিলেন কর্নেল নওয়াজিস।

৭ই নভেম্বর ভোরবেলা, কথিত সিপাহী বিদ্রোহের প্রবল ঢেউ ১০ম বেঙ্গলে এসে পড়ে। পরিস্থিতি কর্নেল নওয়াজিসের নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যায়। আফিসার মেসে বসে খালেদ মোশাররফ,হায়দার এবং হুদা সকালের নাস্তা করছিলেন।

এমন সময় মেজর জলিল (জাসদ নেতা ও মুক্তিযোদ্ধা মেজর জলিল নন), ক্যাপ্টেন আসাদ কয়েকজন উত্তেজিত সৈনিক নিয়ে মেসের ভিতর প্রবেশ করে। তার সাথে একজন হাবিলদারও ছিল।ওই মেজর জলিল চিৎকার দিয়ে জেনারেল খালেদকে বলল-"আমরা তোমার বিচার চাই"!

জেনারেল খালেদ শান্তকণ্ঠে জবাব দিলেন," ঠিক আছে , তোমরা আমার বিচার করো। আমাকে জিয়ার কাছে নিয়ে চলো।"

স্বয়ংক্রিয় রাইফেল বাগিয়ে হাবিলদার চিৎকার করে বললো-"আমরা এখানেই তোমার বিচার করবো।"

ধীর স্থির জেনারেল খালেদ বললেন, " ঠিক আছে, তোমরা আমার বিচার করো"

খালেদ দু'হাত দিয়ে মুখ ঢাকলেন।

একটি ব্রাস ফায়ার।

মেঝেতে লুটিয়ে পড়লেন সেনাবাহিনীর চৌকস অফিসার বীর মুক্তিযোদ্ধা জেনারেল খালেদ মোশাররফ যার ললাটে ছিল বীরযোদ্ধার জয়টিকা, মাথায় ছিল মুক্তিযুদ্ধের বীর উত্তমের শিরোপা আর মাথার বাম পাশে ছিলো পাকিস্তানী গোলন্দাজ বাহিনীর কামানের গোলার গভীর ক্ষতচিহ্ন।

কামরার ভেতরেই গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণত্যাগ করলেন আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার অন্যতম আসামী, মুক্তিযুদ্ধে ৮নং সেক্টরের সাবসেক্টর কমান্ডার কর্নেল নাজমুল হুদা বীর বিক্রম।

কর্নেল হায়দার ছুটে বেরিয়ে যান কিন্তু সৈনিকদের হাতে বারান্দায় ধরা পড়েন । উত্তেজিত সৈনিকদের হাতে তিনি নির্দয়ভাবে লাঞ্ছিত হন। তাকে সিপাহীরা কিল ঘুষি লাথি মারতে মারতে দোতলা থেকে নিচে নামিয়ে এনে ব্রাশ ফায়ারে হত্যা করে।”

এই কাপুরোষিত হত্যাকাণ্ডের কোনো বিচার আজো হয়নি। এমন জঘন্য ঘৃণ্য হত্যাকাণ্ডের বিচারে, সেনাবাহিনী ও বিচার বিভাগের কি কোন দায়ই নেই?

১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১, বিজয়ের মুহূর্তে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে ছিলেন মেজর হায়দার। যুদ্ধজয়ী মেজর হায়দার পরাজিত পাক বাহিনীর কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা দিয়ে আত্মসমর্পন মঞ্চে নিয়ে যান, কিন্ত স্বাধীন দেশে নিজ বাহিনীর কর্মরত কিছু সেনাই তাঁকে হত্যা করেছিলো।

যিনি ছিলেন একজন “বীর উত্তম”।

তথ্যসূত্রঃ

মুক্তিযুদ্ধে মেজর হায়দার ও তার বিয়োগান্ত বিদায়ঃ জহিরুল ইসলাম

কর্নেল হুদা ও আমার যুদ্ধঃ নিলুফার হুদা

তিনটি সেনা অভ্যুত্থান ও কিছু না বলা কথাঃ কর্ণেল এম এ হামিদ

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে জুলাই, ২০১৮ দুপুর ১:১১

রাকু হাসান বলেছেন: খুব ভাল লিখেছেন ,তিনি খালেদ মোশারফ স্যারের খুব কাছে ছিলেন ,বলতে গেলে সার্বক্ষণিক সাহায্যকারী । গেরলাদের ট্রেনিং তিনিই দিয়েছিলেন খালেদ মোশারফ এর নির্দেশে । অবদান ভুলার নয় । ভাল থাকুন আপনি ক্যাপ্টেন হায়দার ।

২| ৩০ শে জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৩:৩৩

টারজান০০০০৭ বলেছেন: যখন স্কিন টাইট প্যান্টের ফ্যাশন ছিল তখন আমরা মেজর হায়দারের নিয়াজির সাথে ছবিটা দেখাইয়া বলিতাম, দেখ ৭১ সালে কি স্মার্ট আছিল !! আহ, কত সূর্যসন্তান অকারণ রক্তপাতে হারিয়ে গেল !

৩| ৩০ শে জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৩:৪৪

রাজীব নুর বলেছেন: জানলাম।

৪| ৩০ শে জুলাই, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৪১

বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: নো কমেন্টস...

৫| ৩০ শে জুলাই, ২০১৮ রাত ১০:১৩

প্রশ্নবোধক (?) বলেছেন: আমি দুঃখিত। এরা থাকলে অন্তত দাদাগীরি চলত না।

৬| ৩১ শে জুলাই, ২০১৮ সকাল ১০:১৫

তানজীর আহমেদ সিয়াম বলেছেন: সবাইলে অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে লেখাটি পড়ার জন্য :)

৭| ০২ রা আগস্ট, ২০১৮ দুপুর ১:০৪

গরল বলেছেন: এই লোকটিই বঙ্গবন্ধু হত্যার কুশিলব, ধূর্ততা করে সফল হয়েছিলেন কিন্তু টিকতে পারেন নাই কারণ ঠগের উপরও বাটপার আছে।

৮| ০২ রা আগস্ট, ২০১৮ দুপুর ১:৫৮

গরল বলেছেন: ওহ দু:খিত, আমি ভেবেসিলাম কর্ণেল তাহের।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.